শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বলপূর্বক বন্ধ করতে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বেআইনি কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সরকার সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে।’
বুধবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বলপূর্বক বন্ধ করতেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বেআইনি কাজ করছেন। কারফিউ চলাকালে এলাকা ভাগ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্লক রেইড পরিচালনা করছে। তারা নির্বিচারে ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে অভিভাবক, তরুণ সমাজ এবং জনমনে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করছে।
‘তবে এসব করে কোনো লাভ হয়নি। বরং সরকারের কূটকৌশল উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছেন জনগণের সমর্থনে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে।
‘এসব করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বরভাবে নস্যাৎ করতে গিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক অভিভাবক এখনও তার শিক্ষার্থী সন্তানের খোঁজ পাচ্ছেন না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানকে ডিবি ২৫ জুলাই রাতে তুলে নিয়ে গেলেও তার অভিভাবকরা থানা, ডিবি অফিস, বিভিন্ন হাসপাতালে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন। আর সেখান থেকে মাসরুরের বাবা ও ভাইকে ডিবি তুলে নিয়ে যায়।
‘এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর খোঁজ তাদের অভিভাবকরা না পেয়ে উদ্বিগ্ন। তারা অসহায় অবস্থায় আছেন। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে ৪/৫ দিন রেখে বেআইনি কাজ করছে গণবিরোধী সরকার।’
‘আবার আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। আইনি ভিত্তি ছাড়াই হেফাজতের এমন ঘটনা নজিরবিহীন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, “বুধবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেপ্তার-নির্যাতন করে বাধা দিয়েছে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জনগণের সমর্থনে কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পালনেও সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা প্রদান ও শিক্ষার্থীদের আটক করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহত করে।’
ফখরুল বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রমাণ থাকার পরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করে অপরাধীকে খুঁজে বেড়ানো এবং ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান উপহাস মাত্র।
‘সরকারের নির্দেশেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি করে শত শত ছাত্র-জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, এটা প্রমাণিত সত্য। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
‘সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য প্রকৃত হত্যাকারীদের না ধরে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র-গণআন্দোলন বন্ধ করতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধ, সান্ধ্য আইন জারি ও সেনাবাহিনী নামিয়ে গণগ্রেপ্তার করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার প্রতিদিনই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে, মামলা, হামলা করে এবং রিমান্ডে রেখে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মিথ্যা মামলায় আসামি কারা, অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীই জানেন না। মৃত ব্যক্তি, বিদেশি অবস্থান করছেন এমন অনেককেই এসব মামলার আসামি করা হচ্ছে। এসব ঘটনা শুধু নির্দয়, অমানবিকই নয়; সরকারের নির্লজ্জ প্রতিহিংসা ও ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন সরকার আজ ইতিহাসের নির্মম ও বর্বর হামলা, গণহত্যা চালিয়ে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে নির্বিচার হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ। দিন যতই যাচ্ছে সরকারের অস্তিত্ব সংকট ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘নির্লজ্জ সরকার যতই মিথ্যাচার, সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখুক না কেন, কোনো কিছুতেই ছাত্র-গণআন্দোলনে দিশেহারা জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না।’
আরও পড়ুন:জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার যে ভাষণ দিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তার এই ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিশন স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে যেসব সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন সরকার তা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। এটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
‘গতকাল (বুধবার) জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সংস্কার (বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার) নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করেন।
‘তিনি (ইউনূস) জাতির উদ্দেশে এই ভাষণের মাধ্যমে তার সরকারের ভিশন ব্যাপকভাবে তুলে ধরেছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সংস্কারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আমরা আশা করছি, এসব সংস্কার খুব দ্রুত সম্পন্ন হবে। সরকার দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন ও জনগণের সংসদ প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেবে।’
তিনি বলেন, ‘গণআন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসায় আমরা তাদের সাফল্য কামনা করছি। গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটতে পারে। আমরা আশা করি, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। তবে তা করতে হবে জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটা অনুধাবন করবে এবং তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে- যাতে জনগণ উপকৃত হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে তিনি কমিশনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নামও জনগণের সামনে তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ হলো নাটকবাজ দল। তারা রাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কালনাগিনী হয়ে ছোবল মারে আর দিনে ওঝাঁ হয়ে বিষ নামানোর নাটক করে।
বৃহস্পতিবার মাদারীপুর জেলায় নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা আসছে। এ পূজায় তাদের সহযোগিতা করতে হবে। কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা করা যাবে না। আগে আওয়ামী লীগ হিন্দুদের নিয়ে নাটক করেছে। এখন আর এদেশে আওয়ামী লীগ নেই। আমাদের কোনো ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে হবে।’
খেলাফত মজলিসের এই নেতা আগস্ট-বিপ্লবের চেতনা ধরে রাখতে সমমনা সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আগস্টের বিপ্লব মানেই মুক্তির বিপ্লব।’
মামুনুল হক পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়াটা কাপুরুষোচিত আচরণ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাবীন আহমাদ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্ডিবর্দীর পীর মাওলানা আলী আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মুফতি শারাফাত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসানাত জালালী, কার্যকরী সদস্য মাওলানা রুহুল আমিন খান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বুধবার রাত একটার পর রওনা হয়ে একটা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাসসকে বিষয়টি জানান।
শায়রুল বলেন, ‘মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেয়া এবং এসব নির্যাতনের তথ্য সংরক্ষণে পৃথক দুটি সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বুধবার সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই দুটি সেলের নাম ‘শিক্ষার্থী নির্যাতন বিষয়ক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ সেল’ ও ‘আইনি সহায়তা সেল’।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সেল দুটি ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া বিরোধী মত ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে।’
এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও ছাত্রদল সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।
শিক্ষার্থী নির্যাতন বিষয়ক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ সেলের সদস্যরা হলেন- আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, এ বি এম ইজাজুল কবির রুয়েল, মনজুরুল আলম রিয়াদ, খোরশেদ আলম সোহেল, আরিফুল ইসলাম, গণেশ চন্দ্র রায় ও নাহিদুজ্জামান শিপন।
আইনি সহায়তা সেলের সদস্যরা হলেন- মো. সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, এইচ এম জাহিদুল ইসলাম, মো. আল আমিন, মো. রফিকুল ইসলাম হিমেল, মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী এবং এস এম সাইফ কাদের রুবাব।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘ছাত্রলীগ ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের জন্য হলে হলে টর্চার সেল গঠন করেছিল। সেখানে প্রতিনিয়ত মুক্ত মতকে বাধাগ্রস্ত করতে ও বিরোধী মত দমনে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মাধ্যমে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। সেসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই সেল গঠন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের এসব নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে জাতির সামনে উন্মুক্ত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র-রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ন্যূনতম সুযোগ কেউ না পায়।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘স্বৈরাচার সরকার প্রধান পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মারা আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে। এজন্য আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সুতী ভিএম মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বুধবার আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুসহ সব রাজবন্দির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গোপালপুর উপজেলা ও শহর বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছি। এতে সমস্যার আংশিক সমাধান হয়েছে। আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
‘জনগণের ভোটে বিএনপি যাতে সরকার গঠন করতে পারে সেজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সরকার গঠন হলেই দেশের মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করবে। আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। সমাবেশ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
অন্যদের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উবায়দুল হক নাসির।
এতে সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রুবেল।
সমাবেশের শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু বলেন, বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন বিনিময় কর্মসূচি ও সহায়তাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজকর্ম এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়েও তারা আলোচনা করেছেন।
দেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সংকট সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিএমইএ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা বিএনপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গার্মেন্ট শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সব জায়গায় তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির স্থানীয় নেতাসহ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সার্বক্ষণিক আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। কোথাও কোথাও তারা পাহারা দিচ্ছেন।’
তারা বলেন, ‘বিএনপির স্থানীয় নেতারা আমাদের জানিয়েছেন যে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা গার্মেন্টস শিল্প রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং গার্মেন্টস শিল্পের নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।
এ সময় বিজিএমইএ নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সংকট সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিজিএমইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি রকিবুল আলম, পরিচালক শোভন ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও আবসার হোসেন, সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, কাজী মুনির, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন, আবুল কালাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য