টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলের প্রভাবে শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
গত দুই দশকে কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নং চর এলাকায় নদীগর্ভে চলে গেছে শত শত একর আবাদি জমি ও বাড়িঘর। কিন্তু ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমানে হুমকির মুখে আছে মসজিদ, মাদ্রাসা, পোস্ট অফিস, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান। ভাঙনের কারণে চরম আতঙ্ক আর হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন ৬ নম্বর চরের মানুষজন।
সরেজমিনে জানা যায়, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই দশানি নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুদিনেই বিপুল আবাদি জমিসহ অর্ধশতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে ৬ নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও দুটি মাদ্রাসা, পোস্ট অফিস, গ্রামের রাস্তা ও গোরস্তান। আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে মানুষ।
অনেকেই শঙ্কায় আছেন কখন তাদের বাড়িঘর ও জমি নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে এই এলাকার নদীপাড়ের অনেক বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও প্রতিষ্ঠান।
৬ নং চরের নদীপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ আয়নাল বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষদের কবর এখানে। মনে করছিলাম আমার কবরটাও একসাথে হবো। কিন্তু ভাংগনে তো আর গোরস্থানটা রাখবার দিতাছে না। অর্ধেক তো ভাইঙ্গা নিয়াই গেছে গা। আর অর্ধেক ভাঙতে কতহন। যারা মারা গেলো তাদের শেষ চিহ্নখানিও রাখবার পাইতাছি না এহন।’
৬ নং চরের উত্তরপাড়ার নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. আসাদ বলেন, ‘আজ দুইদিন ধইরে যে ভাঙা দিছে, আমরা জমিজমা নিয়া খুব চিন্তায় আছি। ভাঙনের শব্দে রাইতে ঘুমাই না। গত বছর একটু ঠিকঠাক করলেও, এসব আবার ভাংতাছে। মসজিদ আছে, মাদ্রাসা আছে, গোরস্থান আছে। এগুলো আপনারা যদি দেহেন তাইলে এহনি দেহন নাগবো। আপনারা একটু চেষ্টা কইরা দেহেন।’
একই গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মো. করিম মিয়া বলেন, ‘গত বছর অনেক গুইলা বাড়িঘর ভাইংগে নদীর ওইপারে গেছেগা। এ বছরের শুরুতে পাইলিং করা না গেলে তাহলে এবার থাহা কষ্ট হয়ে যাবো গা।
‘গত বছর হুছনারা এমপি আইয়া একটু বস্তা ফেলছিলো, এ বছরও ভাংতাছে। এহন যদি না বান্ধে তাইলে এহানে থাহাডা অসম্ভব হইয়া যাবো গা।’
কামারবাড়ির মো. নিরব বলেন, ‘আমাদের ৬ নং চর প্রাইমারি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, ঈদগাহ মাঠ বিলীন হইয়া যাবে নদীতে। অতি জরুরি যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে এগুলো রক্ষা পাবে। তা না হলে বিলীন হইয়া যাবো গা।’
উত্তরপাড়ার সিদ্দিক বলেন, ‘আমগরে সবকিছু ভাইংগে নিতাছে গা। আপনারা আইয়া দেইখা যান, তাইলে বুঝবেন। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে, আতঙ্কের মধ্যে আছি। আপনারা যদি একটু বাইন্ধে দেন তাইলে বাড়িঘরে থাকবার পামু। তা-না অইলে দেশ ছাইরে যাওন নাগবো গা।
আলম মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর সবকিছুই নদী নিয়ে যাইতেছে। আমাদের দাবি এখানে একটা স্থায়ী ও শক্ত বাঁধ নির্মাণ করা। কয়ডা করে বালুর বস্তা ফেলাইয়া গেলে কী হবে? আবার এসব বস্তা নদীয়ে নিয়ে যাবে।’
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ,দশানি নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শেরপুরের বেশ কয়েকটি নদীতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেগুলোর স্থায়ীভাবে ব্যবস্থার করার জন্য আমরা ডিপিপি দিয়েছি।
এই নদীর ভাঙন এলাকা আমরা পর্যবেক্ষণ করতেছি। সেখানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সমস্যা বেশি দেখা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর খাল দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রাজধানীর পানি ভবনে বুধবার আয়োজিত ‘ব্লু নেটওয়ার্ক অ্যারাউন্ড ঢাকা সিটি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘খাল দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় হতে হবে। ঢাকা শহরের খাল নিয়ে ভাবে এমন অনেক সংস্থা আছে। তাদেরকে এ কাজে যুক্ত করতে হবে।’
ঢাকা মহানগরের চারদিকে নদী, খালগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সৃষ্টি করতে অংশীজনদের নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা ওয়ার্কশপ করতে হবে। সেখানে ঢাকার প্রতিটি খালের বাস্তবচিত্র নিয়ে কথা হবে। কীভাবে খালগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হতে হবে। কোন খালগুলো ইমিডিয়েট উচ্ছেদ করতে হবে আর কোনগুলো একটু বেশি সময় নিয়ে করতে হবে, সেই বিষয়ে ওয়ার্কশপে আলোচনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের যুব দিবসে কয়েকটা খাল পরিষ্কার করা যেতে পারে, যেখানে যুবকরা সরাসরি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই প্রজন্ম পরিষ্কার কোনো খাল দেখেনি।
‘এখনও হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল দিয়ে যেতে হয়। যুব দিবসে যখন দেখবে যুবকেরা উদ্যোগ নিয়ে খাল পরিষ্কার করছে, তখন তারা বাকি খালগুলো পরিষ্কারেও উদ্যোগ নেবে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে কোন বছর আমরা কী কাজ করব, তবে এখানে দুই থেকে তিন বছরের বেশি সময় লাগার কথা না।
‘দুই-তিন মাস পর পর পরিষ্কার কার্যক্রমে নামতে হবে। আমাদের একটা খাল দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে ৩৫০ কোটি টাকা নেয়া হয়, কিন্তু এত টাকা দিয়ে নতুন একটি খাল বানানো যায়। তাই এই কার্যক্রমে ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, সরকার তা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’-এর ফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের হুমকি বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি। এটা নিয়ে ইউনেসকোর কাছে একটা স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট বিগত সরকার জমা দিয়েছে। সেখানে ইউনেসকো আপত্তি দিয়েছে। যে এলাকাটা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রক্ষিত এলাকাটা অনেকাংশেই বাদ দিয়েছে।
‘এখন সেই অ্যাসেসমেন্ট আবার নতুন করে ইউনেসকোর অবজারভেশনের আলোকে আমাদের দেখতে হচ্ছে, যাতে সুন্দরবনের পুরো এলাকা থেকে কোনো রক্ষিত জায়গা বাদ না দিই।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো বিগত সরকার ঝুঁকি কম দেখাতে পুরো রক্ষিত এলাকাকে কম দেখিয়ে অন্য জায়গা বেশি দেখিয়েছে। আর জাতীয় পর্যায়ে যে কাজ করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটা আমরা নিরপেক্ষভাবে মনিটর করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় তো আমরা মনিটর করে বলে দিই, ধলেশ্বরীর পানি পরিষ্কার, ট্যানারি নোংরা করেনি; রামপালের বাতাস খুব পরিষ্কার, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না, কিন্তু সেখানে যারা থাকে তারা কিছু অসুবিধার কথা বলছেন।
‘ফলে যে নিঃসরণটা হচ্ছে, সেটা আসলে আইনের সীমার মধ্যে আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এ জন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু করেছি।’
রিজওয়ানা বলেন, ‘শুধু সুন্দরবন নয়, শালবন বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ৪১ হাজার একর শালবন ছিল। সেটা কমতে কমতে এখন ২০ হাজার একরে চলে এসেছে।
‘আমার চেষ্টা থাকবে আমি কতটুকু বাড়াতে পারি। সেখানে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:বায়ুদূষণ কমাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস-মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সড়ক-মহাসড়ক থেকে প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
রোববার দেয়া চিঠিতে পুরনো ডিজেলচালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালু করতেও বলা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বায়ুদূষণ রোধে ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত যানবাহন প্রত্যাহার এবং ডিজেলচালিত পুরনো যানবাহনের নিঃসরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য বিআরটিএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ফিটনেসবিহীন ও ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত হয়েছে এমন যানবাহনকে রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের জন্য বিআরটিএ কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঢাকায় পুরনো ডিজেলচালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস পরীক্ষার সময় নিঃসরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।
টানা বর্ষণ আর ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সবক’টি পাহাড়ি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবল চাপে মহারশি, চেল্লাখালি ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাতটি স্থানে ভেঙে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদী বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মহারশি, সোমেশ্বরী, মৃগী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মহারশি নদীর বাঁধের খৈলকূড়ায় তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। বাঁধ উপচেও প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে ঝিনাইগাতি উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মন্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই এবং চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী গাজিরখামার সড়ক।
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির অন্তত ১০টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম।
তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছে না এসব এলাকার লোকজন। ফলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইগাতী বাজারের আকতার আলী বলেন, ‘আমার দোকানে পানি উঠেছে। এতে দুই লাখ টাকার বই নষ্ট হবে। শহর রক্ষা বাঁধ থাকলে মহারশি নদীর পানিতে তাহলে আমাদের এমন ক্ষতি হতো না।’
বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমির আলী বলেন, ‘দোকানে মধ্যে পানি সকাল থেকেই। একটু ঢল এলেই পানি বাড়ছে। আমরা ঝিনাইগাতীর মানুষ আগে থেকেই এটার ভুক্তভোগী। কিন্তু প্রশাসনিক নজর কখনোই এদিকে পড়ে না।’
ঝিনাইগাতী সদরের হোসেনে আরা বলেন, ‘রান্না করতে পারছি না। রাস্তায় পানি ওঠায় চলাচলও করতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি।’
ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, ‘আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছে। অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কেউ এদিকে দেখে না। নদীর তীর জুড়ে স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।’
নালিতাবাড়ীর রফিক বলেন, ‘এবার শহরে পানি থৈ থৈ করছে। জীবনে এই সময়ে উপজেলা শহরে এমন পানি দেখিনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।’
নালিতাবাড়ীর কৃষক খাইরুল বলেন, ‘আমাদের সব ফসল এখন পানির নিচে। এই ধান এহন খাইয়া গেলেগা আমরা বাচমু কেমনে?’
ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি অফিসার হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে চৌদ্দ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে অনেক ক্ষতি হবে।’
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘মহারশি নদীতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ফিজিবিলিটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। সকাল থেকে আমাদের টিম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আছে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান বৃষ্টির আবহ সহসাই বন্ধ হচ্ছে না। আরও সাতদিন অর্থাৎ চলমান অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মোটামুটি সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার দেয়া পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া বার্তায় আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন:উজানের পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীতে নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে তিস্তা।
সোমবার সকাল থেকে তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
ডালিয়া পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন জানান, দু’দিন আগে উজানের ঢল আর বর্ষণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছি। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তা বিধৌত লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ডুকে পড়ে। তবে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট থেকে পানি দ্রুতই নেমে যাচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা বইছে বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।
বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্টকে (বিসিএপি) সহায়তায় ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য বায়ুর গুণমান ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা।
ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের অংশ হিসেবে ক্লিন কুকিং ইনিশিয়েটিভের জন্য একটি সম্ভাব্য অনুদানসহ একটি আইডিএ ঋণের মাধ্যমে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে।
পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রোববার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার ও বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক আবদৌলায়ে সেক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তা এবং ঢাকার খাল পুনরুদ্ধারের জন্য একটি ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ তৈরির আহ্বান জানান। তিনি আরও একটি লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের জন্য সহযোগিতার সম্ভাবনার পাশাপাশি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নে সহায়তার উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টা পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সমন্বিত পদ্ধতির গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার প্রগতিশীল পরিবেশ নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই প্রচেষ্টাকে বৈশ্বিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করতে ব্যাংকের সমর্থন নিশ্চিত করেন।
আবদৌলায়ে সেক দীর্ঘমেয়াদি টেকসই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
বৈঠকে পরিবেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য