চিনি চোরাচালানে অভিযুক্ত ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলার আসামি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হীরাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ময়মনসিংহের গাঙিনারপাড় এলাকা থেকে শনিবার রাত দেড়টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আশিকুর আদালতে রোববার দুপুরে পর্নোগ্রাফি আইনে হীরাসহ তিনজনের নামে মামলা করেন এক ছাত্রী। মামলার বাদী শহরের একটি সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হোসেন হীরাকে। এ ছাড়া হীরার দুই মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের সবাই শহরের বয়লা তারাপাশা এলাকার বাসিন্দা।
কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী শিখা রাণী দাস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যা আছে এজাহারে
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় কলেজপড়ুয়া তরুণীর। দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের এক মাস পরই তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে ফের কলেজে যাওয়া শুরু করেন।
কলেজে যাওয়ার পথে প্রায়ই তাকে প্রেম নিবেদন করতেন নাজমুল হোসেন হীরা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক করেন হীরা। ওই সময় হীরা কৌশলে তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সম্পর্কের বিষয়টি হীরার মামা আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে জানান মেয়েটি। তখন সুমন ও বাবুল মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে বলেন, তাদের ভাগ্নের সঙ্গে বেশি বাড়াবাড়ি করলে শহরে থাকতে দেবেন না।
এভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মেয়েটিকে বেশ কিছুদিন থামিয়ে রাখেন তারা। পরে বাধ্য হয়েই নাজমুল হীরার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হয় মেয়েটিকে। এভাবে টানা এক মাস অতিক্রান্ত হলে আবারও হীরাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন তিনি।
একপর্যায়ে ২০২৩ সালের ৮ জুন গোপনে কাজী ডেকে বিয়েও করেন তারা। বিয়ের পরে তিনি জানতে পারেন, নাজমুল হীরা বিবাহিত; বাড়িতে তার স্ত্রী রয়েছে। বিষয়টি জানার পর মৌখিকভাবে হীরাকে তালাক দিয়ে চলে আসেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে হীরা আবারও যোগাযোগ স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক না রাখলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেন। এভাবে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করে দুইবারে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এই টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কেনেন তিনি।
এজাহারে বলা হয়, হীরার পর একই পন্থা অবলম্বন করেন তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন। তিনিও ভয় দেখিয়ে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা আদায় করে একটি আইফোন ও একটি স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন কেনেন। সুমনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল আদায় করেন নগদ তিন লাখ টাকা। তিনিও কেনেন একটি পালসার মোটরসাইকেল।
এভাবে টাকা দিতে দিতে বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তরুণী।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এতকিছুর পরও তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
মেয়েটির অভিযোগ, ‘নাজমুল হীরার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার কারণেই সে এমনটা করেছে। আর এ ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার মামা সুমন ও বাবুল।’
হীরা ও সুমনের ভাষ্য
গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হোসেন হীরা বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন, তিনি তার বিবাহিত স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে আমি নিজেও মামলা করেছি।
‘সে মামলায় আমার স্ত্রী সাক্ষী। কিছু লোকের কুপরামর্শে সে হয়তো এমনটা করেছে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ঘটনাটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ভাগ্নে হীরার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে হীরা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিল, কিন্তু এখন কী কারণে মেয়েটি ভাগ্নের বিষয় টেনে এনে বড় ভাইসহ আমাকে মামলার আসামি করেছে, সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’
চিনি চোরাচালানে অভিযুক্ত
ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে চিনি এনে দেশে বিক্রি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার স্বজন নাজমুল হীরার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নিউজবাংলায় সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হীরা নিজেও ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। সুমন-হীরা একা নন, তাদের অনুসারীরাও এ কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে।
সম্প্রতি চোরাচালানের চিনিসহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাকটি সুমন ও হীরার ঘনিষ্ঠ একজন আনেন বলে খবর চাউর হয়। অথচ মামলার আসামি করা হয় ছাত্রলীগের অন্য এক নেতাকে। ওই নেতার দাবি, চোরাই চিনিবোঝাই ট্রাক ধরিয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন।
দেশে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৪০ টাকা হলেও ভারতে দাম ৫০ রুপির মতো। ফলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনেকে চিনি নিয়ে এসে অবৈধভাবে দেশে বিক্রি করেন। সম্প্রতি সিলেট ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চিনি চোরাকারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন:ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমলে নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ দিন ধরে ঘুরে মামলা দায়ের করতে না পারা ভুক্তভোগীকে পুলিশ লাইন্স থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে তাকে বাদী করে ধর্ষণ মামলা রুজু করানো হয়েছে। আর ওই মামলাতেই সাফিউরকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য নিজে বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাতেই গত শুক্রবার রাতে সাফিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমান নামে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৬ মাস ধরে থানা ব্যারাকেই ওই নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে ওই পুলিশ সদস্য। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও সাফিউর থানা ব্যারাকের ওই নারীর রুমে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ৫ দিন ধরে ঘুরেও থানায় মামলা করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
মন্তব্য