প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও টিকিট না পাওয়ায় তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)।
বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) আমাদের অফিস বন্ধ থাকায় কতজন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন এবং কতজন সেখানে যেতে পারেননি তার চূড়ান্ত সংখ্যা আমরা এখনও পাইনি। আমরা আগামীকাল (রোববার) বলতে পারব।’
তিনি জানান, কুয়ালালামপুরে পৌঁছানোর সময়সীমা ৩১ মে শেষ হওয়ায় এবং তাদের কাছে উড়োজাহাজের টিকিট না থাকায় প্রায় তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।
শ্রমিকদের প্রবেশের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়াগামী কয়েকশ প্রবাসী শ্রমিক ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্টরা সময়মতো টিকিট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তারা উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই বিমানবন্দরে আসেন।
শনিবার বিমানবন্দরের দুটি আন্তর্জাতিক টার্মিনালের সামনে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। বৃহস্পতিবার রাতে বা তার আগেই অনেক শ্রমিক বিমানবন্দরে চলে আসেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, রিক্রুটিং এজেন্টরা তাদের ফোন ধরছেন না।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম জানান, ‘মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ শ্রমিকরা চলে যাওয়ায় বিমানবন্দরের পরিস্থিতি এখন শান্ত।’
দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনামলে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত ইর্মা ভ্যান ডুরেন সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র: বাসস
সাক্ষাৎকালে ডাচ রাষ্ট্রদূত তার দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস কৃষি, সামুদ্রিক সম্পদ, শিল্প, যুব, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, শ্রম, পরিবেশ এবং বন্যা ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী।’
অধ্যাপক ইউনুস ডাচ রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের নেতৃত্ব ও ব্যবসায়ী সম্পম্প্রদায়সহ দেশটির সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতা চান। ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনামলে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বর্তমান সরকার শিক্ষা, অর্থনীতি, শ্রম খাত, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন ও ব্যবসায় পরিবেশ- প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এমনভাবে দিতে হবে যেন তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়।’
ইর্মা ভ্যান ডুরেন উল্লেখ করেন- কৃষি, পানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সম্ভাবনাময় বেশ কিছু খাতে আরও বেশি ডাচ বিনিয়োগ নিয়ে আসার জন্য সে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানাবেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কাজী রাসেল পারভেজ ও ডাচ উপ-রাষ্ট্রদূত থিজ ওয়ুডস্ট্রা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই স্মরণসভা আয়োজনে ব্যয় হবে পাঁচ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অথবা সুবিধাজনক সময়ে স্মরণ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপদেষ্টা এই স্মরণসভা বাস্তবায়নের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
উপদেষ্টা স্মরণসভা সম্পর্কিত সব কর্মকাণ্ড সুচারুভাবে বাস্তবায়নের জন্য তার পক্ষ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছেন। স্মরণসভাটি যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সূত্র জানায়, সময় স্বল্পতার কারণে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় ক্ষমতাসম্পন্ন এক বা একাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হবে।
তবে সরাসরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুযায়ী অনুষ্ঠান আয়োজন ও এ সংশ্লিষ্ট কার্যাদি সম্পাদনের জন্য এ বিভাগের ক্রয়ের আর্থিক ঊর্ধ্বসীমার মধ্যে তা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে এ বিধিমালায় বর্ণিত মূল্যসীমার মধ্যে ক্রয়ের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশক্রমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে ক্রয় কাজ সম্পাদন করার জন্য বৈঠকে অনুমোদন চাওয়া হয়। উপদেষ্টা কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, অনুষ্ঠানটি আয়োজনে প্রয়োজনীয় অর্থ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের রাজস্ব বাজেটে সংকুলান না হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ চেয়ে ইতোমধ্যে অর্থবিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা ও মদিনা রুটে টিকিটের দাম কমিয়েছে।
পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য আগে দু’টি নির্দিষ্ট ফেয়ার ক্লাস বা রিজার্ভেশন বুকিং ডেজিগনেটর (আরবিডি) ব্যবহার করা হতো। এবার ওমরাহ যাত্রীদের টিকিট পাওয়া সহজ করতে চলমান দুটি বুকিং ক্লাসের পরিবর্তে সব বুকিং ক্লাস বা আরবিডি উন্মুক্ত করা হয়েছে। তা সব ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে উন্মুক্ত রয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের সুবাদে এখন ওমরাহ যাত্রীরা সাধারণ যাত্রীদের মতো যে কোনো আরবিডিতে ওমরাহ টিকিট কিনতে পারবেন। আর যেসব ওমরাহ যাত্রী আগে টিকিট কিনবেন তারা সর্বনিম্ন ভাড়ার সুবিধা পাবেন।
এছাড়াও যেসব যাত্রী ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে মদিনায় যাবেন তাদের জন্য আকর্ষণীয় মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের মেজরিটি হুইপ ডিক ডারবিন।
মঙ্গলবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে বাসস জানায়, হুইপ সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সিনেটে ফ্লোর নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে কয়েক দশক ধরে হয়রানির শিকার হওয়া ড. ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানান।
ডারবিন তার মন্তব্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দেয়া ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির বিকাশে ড. ইউনূসের জীবনব্যাপী কাজ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের লক্ষ্যে তার প্রথম বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করেন।
ডিক ডারবিন বলেন, ‘আমি আজ তাকে (ড. ইউনূস) আমার পূর্ণ সমর্থন দিতে যাচ্ছি। আমি তাকে বিশ্বাস করি। আমি ২০ বছর আগেও করেছি এবং আজও করছি। আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেও তাকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি।
‘আমি ড. ইউনুসকে চিনি। তিনি তার হৃদয়ে বাংলাদেশি জনগণের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণ লালন করেন এবং এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েকদিন পর অধ্যাপক ড. ইউনূস নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের শপথ নেন।
ডারবিন বলেন, ‘গত মাসে আমার বিস্ময়ের কথা কল্পনা করুন..., জনগণের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনা অবশেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যে ছাত্ররা বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছে তারা দাবি করে যে তাদের দেশের নেতা হবেন কেবলমাত্র ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই একই অর্থনীতির অধ্যাপক, যার সঙ্গে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে আমার দেখা হয়েছিল।
’আমি তার সৌভাগ্যের কথা শুনে তাকে (ড. ইউনূস) ফোন করি। তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে দেশের মানুষ এখন এই ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগাতে প্রস্তুত।’
ডারবিন জুলাই মাসে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানির নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশে তিন সহকর্মীর নেতৃত্ব দেন। এতে তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ড. ইউনূসের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে এবং তার বিরুদ্ধে আনা সন্দেহজনক অভিযোগগুলো প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বান জানিয়ে ডারবিন ও তার সহকর্মীদের একটি চিঠি পাঠানোর পর এই বিবৃতি দেয়া হয়।
এ গ্রীষ্মের শুরুতেও ডারবিন সিনেট ফ্লোরে এক বক্তব্যে ড. ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ১০০ জনেরও বেশি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক প্রচারণার নিন্দা জানিয়েছেন।
ডারবিন ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ড. ইউনূসকে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একটি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন। পরে ২০১৩ সালে ইউনূসকে এই পদক প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন:সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদের ভাষাকে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী করেছে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের স্পষ্টভাবে নিন্দা জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
সাম্প্রতিক সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবাদের ভাষাকে আরও শক্তিশালী করেছি। আমরা প্রতি মুহূর্তে যা বলছি তা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। আমরা আশা করি ভারত বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।’
সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের স্বার্থে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। কারণ এতে কোনো লাভ হয় না। বরং সম্পর্কের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
‘তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। এসব ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আমি কখনও কাউকে বলতে শুনিনি যে এটি ভারতের জন্য সুফল বয়ে আনে।’
বাংলাদেশ সরকার এর আগে ভারত সরকারকে এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে এবং সীমান্ত হত্যাকাণ্ড তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার স্বর্ণা দাশ নামে এক কিশোরী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ এ ধরনের নির্মম ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, ১৯৭৫ এর বিধানের লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে শাস্তি পাওয়া প্রবাসীদের মধ্যে আরও ১০ জন দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মোট ২২ প্রবাসী দেশে ফিরলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমা করে দেয় সে দেশের সরকার। ক্ষমা পাওয়া এসব প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে আমিরাত সরকার।
সোমবার সন্ধ্যা ও রাতে পৃথক দু’টি বিমানে করে তারা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেন, বিমানবন্দরে আসা শ্রমিকদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল বলেন, সোমবার বিকেলে ও রাতে পৃথক বিমানে করে মোট ১০ জন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। এর আগে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ১২ জন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এগুলো অব্যাহত থাকবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং আমরা এগুলো অব্যাহত রাখব।’
উপদেষ্টা এই প্রকল্পগুলো অগুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ার কোনো অবকাশ রাখেননি।
আলোচনাকালে ড. সালেহউদ্দিন ভারতীয় হাইকমিশনারকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।’
ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. সালেহউদ্দিন ভবিষ্যতে সহযোগিতার পারস্পরিক সুবিধার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সহযোগিতা বাড়বে এ প্রত্যাশায় রয়েছি।’
ভারতের বিদ্যমান তিনটি এলওসি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও বিতরণ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং ভারতীয় পক্ষ এ বিষয়ে মতামত নিয়েছে।
ভারতকে প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দুই দেশ তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় খুঁজছে।
ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন জোর দিয়ে বলেন, এগুলো বাংলাদেশের চাহিদার আলোকে শুরু করা হয়েছে। যদিও কিছু বিতরণ সমস্যা রয়েছে, আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।’
ভবিষ্যতের জন্য ভারতীয় অর্থায়নের আওতায় নতুন প্রকল্পগুলোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা আছে তা নিয়ে আমরা থেমে থাকব না। ভবিষ্যৎ প্রকল্প, সেগুলোর অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে।’
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি স্বীকার করে এটি মোকাবিলা করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও জানান, ভারতীয় হাইকমিশনার তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে উভয় পক্ষেরই যেন সুবিধা হয় এমনভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আরও মানসম্পন্ন রপ্তানিকে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা চলছে।
বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং গবেষণাগারের উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে থাকে ভারত।
ভারত বাংলাদেশে তাদের কোনো এলওসি প্রকল্প বন্ধ করেনি জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলো চলমান এবং বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত বড় উদ্যোগ। ঠিকাদাররা আবার কাজে ফিরবেন।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভার্মা বলেন, 'আমরা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছি এবং উপদেষ্টার সঙ্গে আমার বৈঠক তার প্রমাণ।’
প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা হবে।
ভারতীয় অর্থায়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন হাইকমিশনার এবং এই প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জোর অঙ্গীকার জানান।
বাংলাদেশ ও ভারত এ পর্যন্ত তিনটি লাইন অফ ক্রেডিট চুক্তি সই করেছে। প্রথমটি ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের, যা ২০১০ সালের আগস্টে সই হয়। দ্বিতীয়টি দুই বিলিয়ন ডলারের, যা ২০১৬ সালের মার্চে সই হয় এবং তৃতীয়টি সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের, যা ২০১৭ সালের মার্চে সই হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য