বাবা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) ও ছেলে হোমিও চিকিৎসক, কিন্তু ছেলের হোমিও চিকিৎসালয়ে বাবা ও ছেলে মিলে মোটা টাকার বিনিময়ে জাল কাগজ তৈরি করে বিবাহ রেজিস্ট্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে আদালতে প্রতারণার মামলাও হয়েছে কাজির নামে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ৫ নম্বর মটমড়া ইউনিয়নের কাজি মুঞ্জুর আহমেদ ও তার ছেলে হোমিও চিকিৎসক মুস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে উঠেছে এ অভিযোগ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মুন্দা গ্রামের চব্বিশ বছর বয়সি দিনমজুর এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই গ্রামের এক নারীর সঙ্গে। সম্পর্কের একপর্যায়ে পরিবারের অমতে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন এবং কাজি অফিসের খোঁজে চলে যান মটমুড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রারের ছেলে মুস্তাক আহেমেদের কার্যালয় মুস্তাক হোমিও হলে।
ওই যুবক জানান, সেখানে মুস্তাক নিজেকে কাজি হিসেবে পরিচয় দেন এবং সাত হাজার টাকায় বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেবে বলে চুক্তি করেন। সেই বিশ্বাসে তাকে টাকা পরিশোধ করলে তিনি বর কনের স্বাক্ষর নিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেন।
তার কয়েকদিন পর ওই যুবককে নিকাহনামার অনুলিপিও প্রদান করেন মুস্তাক।
যুবক বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বাবা বিয়ের কথা শুনে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে আমার বাড়িতে যায়। তার মেয়েকে ফেরত চাইলে আমি জানাই, সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী। তখন আমি বিয়ের কাগজ পত্র দেখাই। সেই কাগজ নিয়ে তার পরিবারের লোকজন সেখান থেকে চলে যায়, কিন্তু পরদিন তারা পুলিশ সঙ্গে করে নিয়ে এসে পুনরায় গিয়ে বলেন বিবাহের কাগজ পত্র নাকি জাল। এই বলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে তার বাবা বাড়িতে চলে যায়।’
পরে ওই যুবক কাগজ পত্র যাচাইবাছাই করতে গিয়ে দেখেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কাগজের বিষয়ে মুস্তাকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তার বিয়ের কাগজ তিনি পাশের জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুর ইউনিয়নের কাজির কাছ থেকে করে এনে দিয়েছেন। আমলা কাজির কাছে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তিনি এ বিষয়ে জানেন না।’
এ যুবকের মতো মুস্তাকের কাছে থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন একই উপজেলার অনেকেই, তবে লোক-লজ্জা ও স্থানীয় প্রভাবের কারণে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
অভিযোগকারী ওই যুবক আরও বলেন, ‘মুস্তাক পেশায় একজন হোমিও চিকিৎসক, তার বাবা একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার হলেও সে নিজে কাজি সেজে বিভিন্ন কাজির সিল-স্বাক্ষর জাল করে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে।’
যুবকের চাচা টাল্টু মিয়া বলেন, ‘কাজি মঞ্জুর ও তার ছেলে মুস্তাক আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে বিয়ে ও তালাকের নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে আসছে। তার বিরুদ্ধে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করব।’
স্থানীয়রা জানান, বামন্দী জামান ফিলিং স্টেশনের পেছন পাশে অবস্থিত মঞ্জুর হোমিও হলে বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন করতে এসে এমন প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই।
২০২২ সালে একই উপজেলার তেরাইল গ্রামের মো. রাশেদ বাদি হয়ে মেহেরপুর আদালতে কাজির নামে একটি প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলায় কাজি মুন্জুর আহমেদকে বিজ্ঞ আদালত কারাগারে পাঠায়। ওই মামলায় কাজি মঞ্জুর আহমেদ মাস খানেক হাজতে ছিলেন।
রাশেদ বলেন, ‘কাজি অনেক টাকার বিনিময়ে আমার সাথে বিবাহের কাবিননামা বানিয়ে আমাকে প্রতারণায় ফেলেছেন। আমাদের সেই মামলা বতর্মান এখনও আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে।’
আরেক অভিযোগকারী গ্রামের ইউপি সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের গ্রামের একজন প্রবাসে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মরদেহ পরিবারের কাছে দেশে ফেরত আনার জন্য বিয়ের কাবিন নামার প্রয়োজন হলে, মনজুর কাজির কাছে যোগাযোগ করলে তিনি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কাবিন করে দেন। অথচ প্রবাসে থাকা সেই ভাই তাদের বিয়ে কোনোদিন রেজিস্ট্রেশনই করেননি।’
অভিযুক্ত মুস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আমার বাবা মুন্জুর আহমেদ ৫ নম্বর মটমুড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার। সে হিসেবে আমাকে অনেক সময় কাজ দেখা শোনা করা লাগে এটা সঠিক, তবে অভিযোগকারীদের বিয়ের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
কাজি মুঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের জাল কাগজে কোনো বিয়ে আমরা রেজিস্ট্রি করি নাই। মানুষজন অভিযোগ করতেই পারে। মামলা হতেই পারে। আমার বয়স হয়ে গেছে তাই ছেলে আমাকে সহযোগিতা করে।’
জেল খাটার বিষয়ে বললে তিনি বলেন, ‘জেল খাটা মানে এই না যে আমি অপরাধী। মামলাটি যেহেতু এখনও বিচারাধীন আছে। এমন মামলা তো অনেকের নামেই আছে।’
মেহেরপুর জেলা কাজি সমিতির সভাপতি খাইরুল বাশার বলেন, ‘কাজির সহযোগী হয়ে কেউ সহযোগিতা করতে পারবেন, কিন্তু কাজির অনুপস্থিতিতে কোনো বিবাহ রেজিস্ট্রি করা যাবে না। জাল বিয়ে রেজিস্ট্রি করলে সেই কাজির বিরুদ্ধে জেলা রেজিস্ট্রার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এমনকি তার লাইসেন্স বাতিল করতেও পারবেন।
‘আর কাজি মঞ্জুর আহমেদ এর আগে একটি জাল বিয়ে দেয়ার কারণে কারাগারেও গিয়েছেন। বতর্মানে তিনি জামিনে আছেন।’
মেহেরপুর জেলা রেজিস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন কাজ যদি নিকাহ রেজিস্ট্রার মঞ্জুর আহমেদ করে থাকেন। তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৪১ জন জেলা জজসহ একযোগে জেলা আদালতের ২৩০ বিচারককে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা এসব বিচারকের মধ্যে রয়েছেন ৫৩ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৪০ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং ৯৬ জন সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
গতকাল সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলির আদেশ দেয়।
বদলি করা জেলা ও দায়রা জজদের আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে বর্তমান পদের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমলে নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ দিন ধরে ঘুরে মামলা দায়ের করতে না পারা ভুক্তভোগীকে পুলিশ লাইন্স থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে তাকে বাদী করে ধর্ষণ মামলা রুজু করানো হয়েছে। আর ওই মামলাতেই সাফিউরকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য নিজে বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাতেই গত শুক্রবার রাতে সাফিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমান নামে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৬ মাস ধরে থানা ব্যারাকেই ওই নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে ওই পুলিশ সদস্য। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও সাফিউর থানা ব্যারাকের ওই নারীর রুমে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ৫ দিন ধরে ঘুরেও থানায় মামলা করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
মন্তব্য