খুলনা অঞ্চলের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম শিমুল ভূঁইয়া। গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষ কেউ তার দেখা পায়নি। তারপরও ওই অঞ্চলের বিভিন্ন টেন্ডারবাজি ও হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে বার বার। এবার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে এই চরমপন্থী নেতার নাম।
পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুল ভূঁইয়া ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেছেন। হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটানো হবে সেই পরিকল্পনায়ও মূল ভূমিকা রয়েছে তার।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে আবারও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন শিমুল ভূঁইয়া। তবে এবার গ্রেপ্তারের সময়ে তার কাছ থেকে আমানুল্লাহ নামে পরিচপত্র পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিমুলকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। পরে ওই দলের সদস্যরা খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদার গ্রামে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা ও বড় ভাই লাকী ভূঁইয়ার ছেলে তানভিরকে গ্রেপ্তার করে।
সবশেষ ২০১৭ সালে খুলনা অঞ্চলের চরমপন্থীদের একটি তালিকা তৈরি করেছিল পুলিশের বিশেষ শাখা। তাতে শিমুল ভূঁইয়া ও তার ছোট ভাই শিপলু ভূঁইয়াকে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ভূঁইয়া পরিবারের সখ্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এই ভূঁইয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। শিপলু ভূঁইয়া ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর ফুলতলা উপজেলায় অনুষ্ঠিত যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী (বর্তমান ভূমিমন্ত্রী) নারায়ণ চন্দ্র চন্দের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে যুবলীগে যোগদান করেন। তাকে দলে ভেড়াতে সহযোগিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন।
শিপলু ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে দামোদর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন এবং বিজয়ী হন। তাকে জেতানোর ক্ষেত্রে শেখ আকরাম হোসেন বড় ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ আছে। ২০২১ সালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে তিনি বিজয় লাভ করেন।
এছাড়াও শিমুল ভূঁইয়ার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা খুলনা জেলা পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। সবশেষ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে কেয়া খাতুন প্রার্থী হলেও শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। ফলে রিটার্নিং অফিসার একক প্রার্থী হিসেবে মুক্তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে মনোনীত করে বিজয়ী করেছেন।
স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিমুল ভূঁইয়াকে কখনও জনসমক্ষে দেখা যায় না। পর্দার আড়ালে থাকলেও পরিবারের সঙ্গে তার সবসময় নিবিড় যোগাযোগ ছিল।
হত্যাকাণ্ডে বার বার শিমুল ভূঁইয়ার নাম
ফুলতলা উপজেলার দামোদার গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার চতুর্থ ছেলে শিমুল ভূঁইয়া। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মনাম ধারণ করেন।
পুলিশের তালিকায় ইতোপূর্বে তাকে ফজল ভূঁইয়া, শিহাব ও ফজল মোহাম্মদ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এবার গ্রেপ্তারের পর তার নতুন নাম পাওয়া গেছে সৈয়দ আমানুল্লাহ।
সবশেষ ২০২২ সালের মে মাসে আদালতে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু এবং তার দেহরক্ষী নওশের গাজী হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের চার্জশিট দাখিল করা হয়। তাতে শিমুল ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ মে রাতে ফুলতলা উপজেলার নতুন হাট এলাকায় নিজ বাড়ির বিপরীতে নিজস্ব অফিসে মিঠু ও নওশেরকে হত্যা করা হয়।
১৯৯০ সালের দিকে খুলনার ডুমুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ইমরানকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন শিমুল ভূঁইয়া। পরে গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।
কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই ১৯৯৮ সালে দামোদার ইউনিয়নের সরদার আবুল কাশেমকে হত্যায় শিমুল ভূঁয়ার নাম জড়ায়। এরপর ২০০০ সালে যশোরের অভয়নগর এলাকায় একটি হত্যা মামলায় তিনি আবারও গ্রেপ্তার হন।
২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই মামলায় জেল খাটেন শিমুল ভূঁইয়া। জেল থেকে বের হওয়ার পর থেকে তাকে পরিবারের বাইরের কেউ কখনও দেখেনি। তবে বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডে তার নাম জড়িয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে থেকেও শিমুল হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতেন। ২০১০ সালে ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল খুনের ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। বাদল হত্যা মামলাটির বিচার চলাকালে শিমুলের সেজো ভাই মুকুল ভূঁইয়া ওরফে হাতকাটা মুকুল পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন।
এছাড়া পুলিশের তালিকায় শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলায় সম্পৃক্ততা রয়েছে।
শিমুল ভূঁইয়ার উত্থান যেভাবে
শিমুল ভূঁইয়া ১৯৮৫ সালে দামোদর এমএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর খুলনার দৌলতপুরের দিবা নৈশ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীতে থাকাকালীন শিমুলের যাতায়াত ছিল ঝিনাইদহে। সেখানে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) শীর্ষ নেতা আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপনের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।
একাধিকবার জেল খাটার কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে চরমপন্থি দলে যোগ দেন শিমুল। দায়িত্ব পান খুলনা অঞ্চলের। এরপর তিনি ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া।
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চরমপন্থিরা। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে, সেই সময়ে শিমুল ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। খুলনার শীর্ষ চরমপন্থি নেতা আব্দুর রশিদ তাপু, ডুমুরিয়ার মৃণাল, শৈলেন, দেবু সবাই ছিলেন শিমুলের অধীনে। শিমুল প্রকাশ্যে না এলেও তার নামেই চলতো সবকিছু।
শিমুল থেকে আমানুল্লাহ হয়ে উঠেন যেভাবে
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর শিমুল ভূঁইয়ার কাছ থেকে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ওই পাসপোর্টটি করা হয়েছিল। তবে কিভাবে তিনি এই জালিয়াতি করলেন তার স্পষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
তবে ওই সময়ে যেহেতু তার ছোট ভাই শিপলু ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি ভিন্ন নামের জন্মনিবন্ধন তৈরি করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট করতে সহায়তা করেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
কলকাতার নিউ টাউনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করে ১৫ মে দেশে ফেরেন আমানুল্লাহ পরিচয় দেয়া এই শিমুল ভূঁইয়া। পরে রাজধানীর গুলশান থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভূঁইয়া স্বীকার করেছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে তারা খুন করেছেন। এই খুনের জন্য এমপি আনারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনের সঙ্গে তার চুক্তি হয়। আনারের সঙ্গে আক্তারুজ্জামানের স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পাচ্ছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুল্লাহ পরিচয়ধারী এই শিমুল ভূঁইয়া। কীভাবে হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হবে সেই পরিকল্পনায়ও মুখ্য ভূমিকা রাখেন এই দুর্ধর্ষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী।
প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য