বাংলাদেশ
Divided Trinamool Awami League in Jamalpur is apprehensive about fair voting
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এখনও চলমান। ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় জেলা আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচনি সহিংসতা মামলায় জেল খেটেছেন। তিনিও এবার প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন।
জামালপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুজনই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় বিভেদ চরম আকার ধারণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে দুপক্ষের নির্বাচনি কেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। দলকে প্রাধান্য না দিয়ে শুধুমাত্র একটি পদের জন্য এমন বিভক্তি স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
বিভক্তির কথা স্বীকার করলেও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংকট কাটিয়ে ওঠার আশা প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ।
নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ক্ষমতাসীন দলের চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। আর তাদের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দুই-তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে এ জেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম রেজনু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এখনও চলমান। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় জেলা আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচনি সহিংসতা মামলায় জেল খেটেছেন। তিনিও এবার প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূলে বিরোধ আরও ছড়িয়ে পড়ছে।
তবে সদর উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব খুব বেশি না থাকলেও জেলার নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রভাব তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর পড়েছে। সব মিলিয়ে তিন-চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের এই বিভেদ থেকে বিরোধী দলগুলো ফায়দা নেবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান স্বপন অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্রমেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে এবং নির্বাচনের আগমুহূর্তে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১ মে কর্মীদের মারধরসহ আমার চারটি নির্বাচনি কেন্দ্রে ভাঙচুর করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় কেন্দ্রের নির্দেশনা উপেক্ষিত। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন।
‘এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় কিছুটা বিরোধ তৈরি হয়েছে সত্যি, তবে নির্বাচনের পর তা আর থাকবে না বলে আশা করি।’
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজন কুমার চন্দ বলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচন যেহেতু দল নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়নি। অন্যান্য দল নির্বাচনে না থাকায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার ও প্রচারণায় লিপ্ত। এতে করে তাদের মধ্যে এক ধরনের বিভেদ তৈরি হয়েছে যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’
তবে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উন্মুক্ত নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করে দিনশেষে সবাইকে এক টেবিলে বসে ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সেই সঙ্গে নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠ রাখারও অনুরোধ জানান।
তার অভিযোগ, ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ব্যক্তিবিশেষ আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান স্বপনের নির্বাচনি প্রধান সমন্বয়ক জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ চৌধুরী বিভিন্ন জনসভায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী বিজন কুমার চন্দের বিপক্ষে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। সাধারণ ভোটারদের মাঝেও সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেয়ার অধিকার আছে।’
তবে নেতা-কর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে অনুরোধ করেন তিনি।
বিভেদ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার অনুশীলন। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, তাই তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এতে কোনো বিভেদ দেখছি না। প্রার্থীদের দলীয় পদ পদবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করারও কোনো অভিযোগ পাইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল আওয়ামী লীগের এক কর্মী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুজনই হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। স্বাভাবিকভাবে একজনের পক্ষে গেলে আরেকজন ক্ষুব্ধ হবেন। এমন অবস্থায় আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। দুজনই তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।’
আরেক কর্মী বলেন, ‘আমরা তৃণমূলের রাজনীতি করি পদ পদবির আশায়, কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিলে আস্থাভাজন না হওয়ার অপরাধে ভবিষ্যতে পদ না পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এক্ষেত্রে নেতা কর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরি হয়েছে। যা সংঘাতে রূপ নিচ্ছে, এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানেও শঙ্কা রয়েছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্রনিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যদি কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর।
ভোটারদের আগামী ৮ তারিখ নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
জামালপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান স্বপন ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (মোটরসাইকেল) বিজন কুমার চন্দের পক্ষে সরাসরি প্রচার চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেনসহ অন্য নেতারা। এ ছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (কাপ-পিরিচ) অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান স্বপনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান (আনারস) আবুল হোসেনের নির্বাচনি প্রচারে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখা না গেলেও অনেক নেতা-কর্মী তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।
জানা যায়, তিনি স্থানীয় এমপি অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদের আশীর্বাদপুষ্ট। দলীয় প্রার্থী আর না থাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে রফিকুল ইসলামের পক্ষেই কাজ করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
অপর প্রার্থী তালেব উদ্দিন, শিল্পপতি ও দানবীর হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। পদধারী কোনো নেতা-কর্মী তার সঙ্গে না থাকলেও নিজস্ব কর্মীদের নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি।
- ট্যাগ:
- উপজেলা-নির্বাচন
- আওয়ামী-লীগ
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন…
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ…
এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ…
আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন…
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার
বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে…
সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনে দুর্নীতি কমবে: বদিউল আলম
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন,…
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসিসহ সংশ্লিষ্টরা। ছবি: ইউএনবি
মন্তব্য