লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রেনে চড়া দামে ট্রেনের টিকিট কিনেও বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।
হাতে টিকেট থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের কাছে ‘অবৈধ যাত্রী’ সাব্যস্ত হন ওই ট্রেনে চড়া ১৩ জন।
লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেসে’ মঙ্গলবার রাতে ঘটে এমন ঘটনা।
ওই দিন ট্রেনের একটি বগির ১৩ যাত্রীকে দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে টিকিট কিনেও পড়তে হয় তোপের মুখে। ট্রেনে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ১৩ জন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, টিকিটগুলো ছিল কালোবাজারে ক্রয় করা।
ওই ট্রেনে মঙ্গলবার নাটোর যাচ্ছিলেন নিউজবাংলার গাইবান্ধার প্রতিবেদক।
কোথায় আর কীভাবে পেয়েছেন এসব টিকিট, এমন প্রশ্নের জবাবে কেবল এক নারী ছাড়া অপর ১২ যাত্রীর প্রত্যেকের মুখে ছিল, বোনারপাড়ার ‘জসিম’ নামের এক ব্যক্তির নাম।
বুড়িমারী এক্সপ্রেস মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে বোনারপাড়া স্টেশনে প্রবেশ করে রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে। সেদিন ‘ঞ’ বগিতে বেশ কিছু যাত্রী ওঠেন ওই স্টেশন থেকে।
ট্রেনে উঠেই এক নারী যাত্রীসহ চারজনের মধ্যে আসন নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়। কারণ তাদের হাতে যে টিকিট ছিল, তার প্রতিটিতে একই আসন নম্বর।
মূলত কোনটি কার আসন, সেটিই নিয়েই বিবাদের শুরু হয়। পরে উপস্থিত যাত্রীদের সহায়তায় বিষয়টির সমাধান হয় এবং কামরার ‘ঞ’ বগির ৫, ৬, ৭ ও ১১ নম্বর আসনে বসেন বিবাদে জড়ানো যাত্রীরা।
যাত্রীদের মধ্যে বিবাদ হওয়া টিকিটে দেখা যায়, চার যাত্রীর হাতে আলাদা দুটি টিকিট থাকলেও তা ছিল মূলত দুটি টিকিটেরই প্রিন্ট কপি, যার নম্বরগুলো ছিল একই।
টিকিট দুটি ১৩ এপ্রিল একই তারিখে কেনা, যার একটিতে ঞ-৫, ৬, ৭, ও ১১ এই চারটি আসন নম্বর দেয়া আছে। আর নারীর হাতের অপর টিকিটেও রয়েছে ঞ-৫ ও ৭ ও ১১ আসন নম্বর। ওই টিকিটে যাত্রীরা বোনারপাড়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত যেতে পারবেন।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ওই দিন ঢাকাগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করলে রাত একটার পর সান্তাহার-নাটোর স্টেশনের মাঝামাঝিতে ট্রেনের ‘ঞ’ বগিতে আসেন টিকিট কালেক্টর ‘টিটিই’।
ওই সময় টিকিট চেক করার একপর্যায়ে এ দুটি টিকিটসহ একই ধরনের পাঁচটি টিকিট দেখতে পান তিনি, যা দেখে ওই সব টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে চটে যান টিকিট কালেক্টর। রাগান্বিত হয়ে কোথায় আর কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে এসব টিকিট, এমন প্রশ্ন করতে থাকেন তিনি।
দুই সন্তানসহ ঢাকাগামী এক নারী জানান, তিনি তার স্বামীর সহায়তায় পেয়েছেন টিকিট। তার স্বামী কীভাবে কিনেছেন, তা জানা নেই। এ ছাড়া যাত্রী শাহীন, মুকিম ও শাকিলসহ ১২ জনই বলেন জসিম নামটি।
যাত্রীদের ভাষ্য, তারা বোনারপাড়ার জসিমের কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে কিনেছেন এসব টিকিট।
এসব টিকিট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একই তারিখে কেনা টিকিটে আসন ছিল ১৩টি, যার মধ্যে দুটি টিকিটে আট যাত্রী এবং একটিতে দুই যাত্রী ট্রেনে চড়েন। অপর দুটি টিকিটে আসন সংখ্যা সাত দেয়া থাকলেও যাত্রী ছিলেন তিনজন।
যাত্রীদের মধ্যে পাঁচজন জানান, তারা কেউ কাউকেই চেনেন না। এ ছাড়া টিকিট ক্রয়ে যে এনআইডি, মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে এবং যাদের নামে কেনা হয়েছে, তাদের চেনেন না যাত্রীদের কেউই।
টিকিট পাঁচটির মধ্যে একটিতে দেখা যায়, ১৩ এপ্রিল কেনা টিকিটের ক্রয়কারীর নাম মো. আবদুর রাজ্জাক বেরারি। আরেকটি টিকিটে দেখা যায় টিকিট ক্রয়কারীর নাম হাওয়া আকতার হাসি।
এসব টিকিটে ঢাকাগামী যাত্রীদের মধ্যে একজন শাহিন। তার বাড়ি বোনারপাড়ায়। তিনি ফার্নিচারের ব্যবসা করেন, জরুরি কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
তার কাছে থাকা টিকিটের আসন নম্বর ঞ-৫, ৬, ৭ ও ১১। টিকিট দেয়ার সময় তাকে বলা হয়েছে তার আসন নম্বর ঞ-৭।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে অপর তিনটি আসন কার। এ ছাড়া তার এ টিকিটে ক্রেতার নাম আব্দুর রাজ্জাক।
জানতে চাইলে যাত্রী শাহিন বলেন, ‘কয়েক দিন চেষ্টা করেও টিকিট পাইনি। পরে জসিমের থেকে বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনেছি। কিছু করার নাই। সবখানেই একই অবস্থা। যেতে হবে তো।’
‘আপনার হাতের টিকিটে আবদুর রাজ্জাক কে? এনআইডি আর এই মোবাইল নম্বরই বা কার?’
উল্লিখিত দুটি প্রশ্নের উত্তরে যাত্রী শাহিন বলেন, ‘মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি কার জানি না। আর আবদুর রাজ্জাককেও আমি চিনি না।’
এ ছাড়া যাত্রীদের মধ্যে ওই নারীর বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার শিমুলতাইর গ্রামে। তার স্বামী দুলু মিয়া ঢাকায় বেসরকারি চাকরি করেন। ওই নারীর হাতে যে টিকিটটি ছিল, তাতে আসন নম্বর ছিল ঞ-৫, ৭, ও ১১ নম্বর।
ওই নারী যাত্রীর দাবি, তাকে বলা হয়েছে তার আসন নম্বর ৫ ও ৭। তাহলে কোচের ১১ নম্বর আসনের যাত্রী কে, তা নিয়ে ওই নারী বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য আমার স্বামী দুটি টিকিট ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে কিনেছে। স্টেশন থেকে নয়, তবে কার থেকে কিনেছে টিকিট, তা জানা নেই।’
টিকিট কেনা আরেক যাত্রী শাকিল। তার কাছে একটি নয়, ছিল দুটি টিকিট। ওই দুই টিকিটে আসন সংখ্যা আটটি। এসব টিকিটে ঢাকা যাচ্ছিলেন শাকিলসহ আটজন।
শাকিলের হাতে থাকা দুটি টিকিটই কাউন্টার থেকে প্রিন্ট করা, যার মধ্যে ১, ৪, ২৮ ও ৩০ নম্বরের চারটি আসনের একটি টিকিটে যাত্রীর নাম দেখাচ্ছে হাওয়া বেগম।
ওই হাওয়া বেগম কে জানতে চাইলে শাকিল টিটিইকে বলেন, ‘চিনি না।’
‘তাহলে তার নামের টিকিটটি তোমার হাতে এলো কীভাবে?
টিটিইর উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে শাকিল বলেন, ‘বোনারপাড়ার জসিম ভাইয়ের থেকে প্রতিটি টিকিট ৮০০ টাকা করে কিনেছি।’
ওই সময় টিকিট কালেক্টর গোলাম হাফিজ রিজু বলেন, “এই ‘ঞ’ বগির পাঁচটি টিকিটে থাকা ১৩ যাত্রীর প্রত্যেকেই ব্ল্যাকে টিকিট কিনেছেন। বিধি মোতাবেক তারা প্রত্যেকেই অবৈধ যাত্রী।
‘কেননা তাদের কাছে থাকা টিকিট ক্রয়ে যে এনআইডি ব্যবহার করা হয়েছে, সেই নামের বা সেই এনআইডিধারী ব্যক্তি মূলত যাত্রী নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারি যেকোনোভাবে ওই আইডি বা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টিকিট ক্রয় করেছেন এবং বেশি দামে বিক্রি করেছেন।’
কে এই জসিম
ওই দিন একটি বগির ১৩ যাত্রী যার কাছ থেকে কালোবাজারে টিকিট কেনার কথা জানিয়েছেন, সেই জসিমের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার রাঘবপুর গ্রামের বাসিন্দা জসিম। তিনি একসময় বোনারপাড়া স্টেশনে ব্যবসা করতেন।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জসিম ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর টিকিট কালোবাজারে বিক্রির সময় বোনারপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে ট্রেনের চারটি টিকিট উদ্ধার করা হয়। পরে একই তারিখে রেলওয়ে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার নামে মামলা করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জসিম মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন টিকিট সব অনলাইনে। আর টিকিটে আমার নাম বা আমার নম্বর নাই। বোনারপাড়াতে মানুষকে ভালোবেসে কিছু করতে যায়া (গিয়ে) আমার নামে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। তারপর থেকে আমি অনেকটাই দূরে।’
ওই সময় তিনি বলেন, ‘বোনারপাড়া স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে সবাই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মূলত তারাই এসব টিকিট বিক্রি করে।
‘যদি কোনো সমস্যা হয়, তারা আমার (জসিম) নামটা তাদের বলতে বলে দেয়। ট্রেনে সেদিনের ঘটনা আমি শুনেছি। যাত্রীরা নাকি আমার নাম বলেছে।’
বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. খলিল মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) এবং আরপিএমপির (রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ)। তারা কী করে?
‘টিকিট এখন শতভাগ অনলাইনে। যদি কেউ আমার কথা বলে থাকে, তা মিথ্যা বলেছে। আমি জসিমকে সে রকমভাবে চিনিও না।’
কথা হয় গাইবান্ধা রেলওয়ে পুলিশের ওসি খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত জসিমকে ২০১৯ সালে কালোবাজারে টিকিট বিক্রিকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় রেলওয়ে পুলিশ। এ অভিযোগের বিষয়টিও অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।
‘এ ছাড়া ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে সবসময়ই সজাগ রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।’
এ বিষয়ে ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (লালমনিরহাট) আবদুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে শতভাগ টিকিট এখন অনলাইনে। অনেক সময় সিন্ডিকেটরা এক সিটের টিকিট একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে থাকেন।
‘সে ক্ষেত্রে ট্রেনে থাকা সংশ্লিষ্টরা যাদের টিকিটের সাথে নাম বা এনআইডির মিল পায়, তাদেরকে ওই সিটে বসিয়ে দেয় এবং অন্যজনকে জরিমানাসহ নতুন টিকিট করে দেয়া হয়।’
ওই সময় স্টেশনের আশপাশে টিকিট কালোবাজারি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘স্টেশনের আশপাশে, চিপায়চাপায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির একটি সিন্ডিকেট আছে। যারা টিকিট কেনে, তারাও বিষয়টি জানে। বিষয়টি একটি ফৌজদারি অপরাধ। ওই সব ধরার দায়িত্ব পুলিশের।’
ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়া সত্ত্বেও এখনও কালোবাজারি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি স্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন কৃষক যখন কোনো দোকানে টিকিট নিতে যান, আর সেই দোকানদার যদি সিন্ডিকেট হয়, তাহলে তার আইডি দিয়েই ওরা চারটি টিকিট ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে থাকে।’
যাত্রীদের সচেতন করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘নিজেদের এনআইডি দিয়ে টিকিট ক্রয় করে নিজেদেরই যাত্রা করতে হবে। অন্যের আইডি দিয়ে ক্রয় করা টিকিট নিয়ে ট্রেন ভ্রমণ বৈধ নয়। আমরা সবসময়ই যাত্রীদের এ ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, এ বিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কালোবাজারি নির্মূলে শতভাগ চেষ্টা করছে; তৎপর রয়েছে। টিকিট সিন্ডিকেট ধরতে রেলওয়ে পুলিশের আন্তরিকতার কমতি নেই।’
আরও পড়ুন:বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হলে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা’ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে হওয়া মামলাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৮ সালে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। পরে এ বিষয়ে কঠোর সমালোচনা হলে ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে তার বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছিল, তবুও এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা হয়।
সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ আইন নিয়ে আপত্তি ওঠে। আজ আইনটি বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাইবার আইনে হওয়া ‘স্পিচ অফেন্স’ (মুক্তমত প্রকাশ) সম্পর্কিত মামলাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এসব মামলায় কেউ গ্রেপ্তার থাকলে তিনিও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পাবেন।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর অধীনে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট পাঁচ হাজার ৮১৮টি মামলা চলমান।
বর্তমানে ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত এক হাজার ৩৪০টি মামলা চলমান। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৭৫টি মামলা চলমান।
এসব মামলার মধ্যে ৪৬১টি মামলা তদন্তকারী সংস্থার কাছে তদন্তাধীন এবং ৮৭৯টি মামলা দেশের আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
আরও পড়ুন:কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর বিধান চ্যালেঞ্জ করে আনা রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করে বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।
আইনটির ৬(২) ও ৯ ধারা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও আইনজীবী তাইয়্যেবুল ইসলাম সৌরভ। আইনটি সংবিধানের ৭, ২১, ২৬, ২৭, ৩১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ১৪৩ ও ১৪৫-এর লঙ্ঘন বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘আইনটির অধীনে কর্ম নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালতের এখতিয়ার রদ করতে পারে এমন কোনো আইন হতে পারে না। এটা চ্যালেঞ্জ করা হয়। আদালত রুল দিয়েছিলেন।’
রুলে আইনের ৬(২) এবং ৯ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। ২ সেপ্টেম্বর এ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আজ ওই রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র অনুকূলে ঢাকার লালমাটিয়ায় বন্দোবস্ত দেয়া খাসজমির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি-১ অধিশাখার উপসচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, এ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পক্ষে অনুমোদিত হয়েছিল। জমিটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাতিল হওয়া জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত, যার দাগ নম্বর সিএস ও এসএ-৬৯২, আরএস-১৮৯৫, সিটি-১১৬৬৭ এবং ১১৪১২। মোট জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক পাঁচ এক দুই শূন্য একর। এ জমির সিএস ও আরএস রেকর্ডে ‘খাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ থাকার কারণে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
রাজধানীর নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত।
পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক জানান, তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজা বৃহস্পতিবার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ আসামিকে আদালতে হাজির করেন।
ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আমুকে। তার নামে একাধিক মামলা আছে।
আমু ঝালকাঠি-২ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে মোকাররম হোসেন নামের এক জেলে নিহত হয়েছেন।
জলদস্যুরা ট্রলারসহ ১৯ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছেন।
মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া চ্যানেলে বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোকাররম হোসেন (৪৫) কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আজিমুদ্দিন সিকদারপাড়ার বাসিন্দা।
আহত অবস্থায় ফিরে আসা জয়নাল উদ্দিন নামের এক জেলে জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মুহাম্মদ ইসমাঈলের মালিকানাধীন একটি ফিশিং ট্রলার ২১ জন জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার সময় বুধবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে অস্ত্রধারী জলদস্যুরা হামলা চালায় ট্রলারে। এতে মাঝি মোকাররম গুলিবিদ্ধ হন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর জলদস্যুরা আমাকে ও গুলিবিদ্ধ মাঝি মোকাররমকে আরেকটি ট্রলারে তুলে দেয়। পরে অন্যান্য জেলেসহ ট্রলারটি অপহরণ করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।’
ভুক্তভোগী এ জেলে জানান, গুলিবিদ্ধ জেলেকে অন্য ট্রলারের সহযোগিতায় উদ্ধার করে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁশখালী এলাকায় তার মৃত্যু হয়। জেলের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
মহেশখালী থানার ওসি কায়সার হামিদ জানান, বুধবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে জলদস্যুদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ বুধবার রাতে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে।
পুঁজিবাজারে কারসাজি ও আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত ২ অক্টোবর সাকিব, তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির ও তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করে সংস্থাটি।
তদন্ত শেষে সরকারের নির্দেশে বিএফআইইউ তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তারকা অলরাউন্ডার সাকিব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আদাবর থানায় হওয়া হত্যা মামলার আসামি তিনি।
বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আমুর নির্বাচনি এলাকা ঝালকাঠি ও নলছিটিতে অনেককে উল্লাস করতে দেখা যায়। জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন অনেকে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও খোদ জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন রিজভী ঝালকাঠির বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি বিতরণ করিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঝালকাঠিতে সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের গড ফাদার ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়াণ তো আমির হোসেন আমু।
মন্তব্য