দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় অনলাইনে ক্লাস চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তীব্র দাবদাহে করণীয় নির্ধারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে তার সম্মেলন কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দেশে চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে সকল ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘অনলাইনে ক্লাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র তাপদাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরার জন্য সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল দুপুরে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে উপাচার্যের ডাকা জরুরি সভায় প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ২২ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তাপমাত্রা না কমায় তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশের সব স্কুল-কলেজে ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও সশরীরে ক্লাস স্থগিত করে অনলাইনে ক্লাস চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত সব কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাবাকে না পেয়ে ১৪ বছরের এক শিশুকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষার্থীরা শনিবার ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ উখিয়া-টেকনাফ (ডুসাট)’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে ডুসাটের সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘টেকনাফ থানা পুলিশ ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শিশুটির বাবাকে না পেয়ে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্তের স্বার্থে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফ প্রশাসনের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পাহাড়, বন, নদী, খাল ও সরকারি খাস জমি দখলকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
‘টেকনাফে নাফ নদে জেলেদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি টেকনাফ-উখিয়ার শিক্ষার হার বৃদ্ধি করে, শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
সংগঠনের আরেক সদস্য ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমরা আর শেখ হাসিনার ওসি প্রদীপের যুগে ফিরে যেতে চাই না। আমরা উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের নিরাপত্তা চাই।’
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দশটি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো:
১. সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
২. টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তদন্তের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
৪. সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ এবং চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং একজন অফিসার এক বছরের বেশি যেন দায়িত্বে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. উখিয়া ও টেকনাফে আগে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
৮. প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১০. কাউন্সিলর একরামসহ বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ড তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আদালত ওই শিশুর জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফি উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) রেজাউল করিমের ছেলে এবং হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় তার বাবাকেও আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:আল্টিমেটামে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্য কার্যালয়ের লোকজনকে বের করে দিয়ে দুটি কলাপসিবল গেট তালবদ্ধ করে রাখেন।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপাচার্যের নামফলক তুলে দিয়ে কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে দেন শিক্ষার্থী। এ সময় তারা বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
জুলাই-বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ না করা এবং বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ তুলে বুধবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এজন্য তারা বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামেন এবং উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেন।
এদিকে উপাচার্য মঙ্গলবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখলেও সাংবাদিকদেরকে তিনি এড়িয়ে চলছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মো. মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম ছিলো। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। আজকে আমরা তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি। দাবি আদায়ে এরপর ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব সংগঠনের সমন্বয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘আল্টিমেটামে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি। তিনি দ্রুত পদত্যাগ না করলে এরপর আমরা উপাচার্যের বাংলো ঘেরাও করব।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন ববি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, ‘এই উপচার্য আওয়ামী দোসরদের পুর্নবাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবশেষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও বিতর্কিত ব্যক্তিকে ট্রেজারার হিসেবে যোগদানে সহযোগিতা করেছে উপাচার্য।
‘এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজই সময়মতো করেন না। তিনি তার নিজের গতিতে চলেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষার রেজাল্ট পাচ্ছেন না, মেডিক্যালে গেলে ওষুধ মিলছে না। সার্বিক বিষয় মিলে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন করছি। আজ আমরা সব শিক্ষার্থী মিলে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছে। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি থাকবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
উপাচার্যদের পক্ষ থেকে দুই ধরনের মতামত আসায় শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই দুই পক্ষের মধ্যকার বৈঠক শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে তুলনামূলক বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। আবার নতুন প্রতিষ্ঠিত এবং তুলনামূলক কম শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতি রাখার পক্ষে মতামত দেয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযাগ কর্মকর্তা সিরাজ উদ-দৌলা খান জানান, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পাওয়া বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির বিষয়ে বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের মতামত গ্রহণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে আলোচনা করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে অংশ নেয়া উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্যরা বিভক্ত। ফলে সিদ্ধান্ত হয়নি।
‘বিষয়টি প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা ও ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছেও যেতে পারে। তা ছাড়া ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতামতও নেয়া হতে পারে।’
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক দিনে সংঘটিত সংঘর্ষ এবং উস্কানিমূলক পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সংযম প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দিনে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষ এবং উস্কানিমূলক পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে না জড়িয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রোববার মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সোমবার আদালতে আসে। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত এজাহার গ্রহণ করে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
সূত্রাপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখার সাব-ইন্সপেক্টর অনুপ দাস এ তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৭/৮ হাজার শিক্ষার্থী ২৪ নভেম্বর রোববার বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। তারা সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত সাঁজোয়া যান বা এপিসি (আর্মার পার্সনেল ক্যারিয়ার) ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেওয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে।
এছাড়া পুলিশের এপিসি কার ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরও রক্তপাত হতো বলে মনে করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেছেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শত চেষ্টা ও বসে সমাধান করার আহ্বান জানানোর পরও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো থেকে আটকানো গেল না। শিক্ষার্থীদের অ্যাগ্রেসিভনেস ও প্রস্তুতি দেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও স্ট্রিক্ট অ্যাকশনে যায়নি। কোনও প্রকার অ্যাকশনে গেলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত হতো।’
তিনি বলেন, ‘সব পক্ষকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। একত্রে দেশ গড়ার সময়ে সংঘর্ষের মতো নিন্দনীয় কাজে জড়ানো দুঃখজনক। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং ৩০ জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
পুরান ঢাকায় অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুপক্ষে অনেকে আহত হন।
আহতদের মধ্যে ৩৩ জন দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঢামেকে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- হাসিনুর রহমান, রাজিব, অনুপম দাস শাহেদুল, নোমান, শাহিদুল হুমায়ুন, ইসলাম, ফারুক, রানা, আরাফাত, সুমন, মারুফ, রুমান, মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, মিনহাজ হোসেন নাফি, গুলিবিদ্ধ আব্দুর রহমান তুহিন, মোহাম্মদ রোহান।
চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের মধ্যে ১৭ জন টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। অন্যরা বিনা টিকিটে গণ হারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘সংঘর্ষে আহত হয়ে এ পর্যন্ত ৩৩ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে এসেছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সংঘর্ষে আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৩০ জন। তারা সবাই কবি নজরুল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
তাদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তারা হলেন- নাইম, সিয়াম, মোল্লা সোহাগ, রাজিম, শরিফুল, জাহিদ, মোস্তফা, রাতুল, শফিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, সজিব বেপারী, ফয়সাল, সাগর, ইমন ও সিয়াম।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. মাহমুদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে আহত প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী এসেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। তাদের সেখানে ভর্তি হতে হবে। এখানে জরুরি বিভাগে ভর্তি আহতদের পর্যবেক্ষণে রেখে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য