প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। নাড়ীর টানে তাই ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ছে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি হয়ে যাওয়ায় এবং ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবার-পরিজনকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাড়ি ফেরার মিছিল দেখা যায়। তবে এখন ভালো মানের বাসের টিকিট পাওয়াটা অনেকটাই কঠিন।
শুক্রবার সকালে গাবতলী, কল্যাণপুর ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দে ভাগাভাগি করে নিতে অনেকেই রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। তবে ঢাকা ছাড়ার মানুষের মধ্যে নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীদে সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
বাড়ির পথে থাকা অনেকে জানান, স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় শিশু এবং পরিবারে সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কর্মজীবীরা যাবেন ছুটি শুরু হলে।
সকাল সাড়ে ১০টা, গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের আগে প্রধান সড়কে দাঁড়াতেই কানে এলো সেলফি পরিবহনের হেলপারদের হাঁকডাক, আরিচা ঘাট ২০০, আরিচা ঘাট ২০০।
এই পরিবহনের হেলপার রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার যাত্রী অনেক বেশি। আমাদের বাস আরিচা ঘাট পর্যন্ত চলে। আমাদের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। যারা পরিবহনে টিকিট পাই না তারা আমাদের বাসে যায়। আমাদের রানিং বাস। যাত্রী ভরলে আমরা বাস ছাড়ি। আমাদের বাস ভরতে কখনো ২০ মিনিট আবার কখনো ৩০-৪০ মিনিটও লাগে।
গবতলী বাস টার্মিলানের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ দিনের মতো বাস কাউন্টার থেকে তেমন একটা হাঁকডাক নেই। বাস সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ইদের আগের দিন পর্যন্ত বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তাই যাত্রী ডাকতে তোড়জোর কম।
চুয়াডাঙ্গাগামী পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের যাত্রীর চাপ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে। আপাতত ইদ পর্যন্ত আমাদের টিকিট নেই। যেগুলো টিকিট আছে সেটা বিক্রি হবে না। এগুলো আমরা রেখে দিই আমাদের খুব পরিচিত মানুষ ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য।
জে আর পরিবহনের কাউন্টারে ম্যানেজার নয়ন বলেন, এখন আমাদের কোনো ঝামেলা নেই। এখনকার টিকিট সব আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। যাত্রীরা তাদের সময় অনুয়াযী চলে আসে আমরা গাড়িতে তুলে দিই। এখন পর্যন্ত আমাদের গাড়ির সিডিউল অনুয়াযীই চলছে।
তবে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী জামান এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের গাড়ি ফুল হয়নি, পেছনের দুই- তিন সিট ফাঁকা গেছে। আগামী ২-৩ দিনেরও সব টিকিট বিক্রি করতে পারিনি।
কথা হয় ঝিনাইদহগামী যাত্রী আসিফ মোস্তফা মিথুনের সাথে। তিনি বলেন, ঈদের আগে ঝামেলা হবে ভেবেই আগে ভাগেই পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আমার টিকিক ২ সপ্তাহেরও আগে কাটা ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই ঈদ এলেই বাসের টিকিট ডাবল হয়ে য়ায়। এটা বহন করা আমাদের কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নিরুপায় বলে আমরা বাধ্য হয়ে ডাবল দামেই টিকিট কিনি। সাধারণ দিনে যেই এসি বাসে আমি ৫০০-৬০০ টাকায় যাই শুক্রবার সেই সিটের মূল্য ১২০০ টাকা। এখন আমি আমার পরিবারের চার সাদস্য মিলে যাচ্ছি এখানে আমার প্রায় ৫ হাজার খরচ হয়ে গেছে। সরকারের এখানে হস্তক্ষেপ করা উচিত।
কুষ্টিয়াগামী যাত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ভোগান্তি এড়াতে আমি আর আমার ছেলে আগেই চলে যাচ্ছি। আমার জামাইয়ের ছুটি শুরু হবে ইদের আগের দিন, তাই তিনি আমাদের সাথে যাচ্ছেন না।
কথা হয় মাগুরাগামী যাত্রী রাজু আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, ঝামেলা এড়াতে আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। এখন আরামে বাড়ি চলে যাব। তবে এই আরাম ২ বছর আগেও ছিলো না। আগে বাড়ি যেতে আরিচা ঘাটে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন পদ্মা সেতু হওয়াতে অনেক গাড়ি ওইদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই আরিচা ঘার এখন অনেক ফাঁকা।
গাবতলীর মতো সকালে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রীদের ব্যাপক যাত্রী উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিটা কাউন্টারেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। আর অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য ফুটপাত দেয়া হয়েছে বাঁশ আর ত্রিপলের তৈরি অস্থায়ী যাত্র ছাউনি।
তবে শুক্রবার বিকেলে মহাখলী বাস টার্মিনালে গাবতলী ও কল্যাণপুরের মতো যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বেশি বিক্রি হওয়ায় টার্মিনালে রানিং যাত্রীর চাপ কম বলে দাবি করেছেন বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এই টার্মিনালে দূরপাল্লার পরিবহনের ইদের আগ পর্যন্ত টিকিট শেষ হয়ে গেলেও স্বল্প দূরত্বের জেলাগামী বাসের টিকিট পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।
রংপুরগামী যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ইদের আনন্দ শুরু হয় সেইদিন, যেদিন আমি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুক দিই। ওই দিন থেকে শুধু মনে হয় কবে বাড়ি যাব। এবার ট্রেনে টিকিট না পেয়ে বেশ কিছু দিন আগে আমি অনলাইনে বাসের টিকিট বুক দিয়েছিলাম। আর কিছুক্ষণ পরেই আমার বাস ছাড়বে।
সোলাইমান সেলিম নামে টাঙ্গাইলগামী যাত্রী বলেন, ইদে আমাদের টিকিট নিয়ে কখনোই ঝামেলা পোহাতে হয় না। অগ্রিম টিকিটও কাটতে হয় না। মহাখালী এলেই বাস পাওয়া যায়।
সোলাইমান সেলিমের মতো ময়মানসিং গামী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমারা ময়মানসিংয়ের মনুষ ইদে টিকিট নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি গাজীপুর পার হওয়া নিয়ে। ৮-১০ বছর ইদের সময় এই গাজীপুরেই আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যেতো। তবে এখন রাস্তা অনেক ভালো হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাড়ি যাচ্ছি তাই অন্য রকম এক আনন্দ হচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম কেন জানতে চাইলে বগুড়া- নাঁওগাগামী একতা পরিবহনের কাউন্টারে থাকা বিল্পব হোসেন বলেন, এবার ইদে আমাদের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু আমাদের একার না, এই টার্মিনালের প্রায় সব বাসের টিকিটই অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তাই যাদের বাসের সময় হয় কেবল তারাই টার্মিনালে আসছে। তার যাত্রীর চাপ কম মনে হচ্ছে।
ঢাকা-রংপুরগামী এস আর ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার মোহাম্মাদ মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মূলত ইদের চাপ শুরু হয়েছে। তবে আমাদের বাসের টিকি অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ টিকিটই অনলাইনে কেটেছে যাত্রীরা। এখন কেউ টিকি ক্যানসেল না করলে নতুন টিকিট দিতে পারব না।
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় আইশৃংখলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম দেখা গেছে। এ ছাড়া টার্মিনালের কেন্দ্রীয় মাইকে যাত্রীদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক ঘোষণাও দিতে দেখা গেছে।
রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনালের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) রাত ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আশরাফুল আলম (৩২) গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার কালনী গ্রামের প্রয়াত মকসেদ আলীর ছেলে।
নিহতের চাচাতো ভাই হাসান আল আরিফ জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে আশরাফুল মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিন নম্বর টার্মিনালের সামনে একটি অজ্ঞাতনামা পিকআপ ভ্যান তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান হাসান। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ সদস্য ইসমাইল জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
সাধারণত বৃষ্টি হলে কিংবা ছুটির দিনগুলোতে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও জনসমাগম কম থাকায় বাতাসের মানে উন্নতি দেখা যায়। তবে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি, এরপর গতকালের ছুটি শেষেও আজ সকালে ঢাকার বাতাসের মানে অবনতি লক্ষ করা গেছে। এমনকি গতকালের তুলনায়ও শহরটির বাতাসের মান কমেছে।
শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে একিউআই স্কোর ৯৭ নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার ত্রয়োদশ স্থানে রয়েছে ঢাকা।
একিউআই স্কোর ৫০ থেকে ১০০ মধ্যে থাকলে তা ‘মাঝারি’ বলে গণ্য করা হয়। তবে মাঝারি হলেও ঢাকার বাতাস আজ সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গতকাল একই সময়ে ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ৮৫। আজ তার থেকে বেড়ে ৯৭ হয়েছে। বৃষ্টিতে ঢাকার মানে পরিবর্তন আসার কথা থাকলেও বেশ কয়েকদিন ধরেই শহরটির বাতাস ‘মাঝারি’ পর্যায়েই রয়েছে। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
এদিকে, ঢাকার মতো প্রায়ই তালিকার প্রথম দিকে থাকা পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের দিল্লির বাতাসের মানেও তেমন ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়নি। ১১৫ ও ১০৫ স্কোর নিয়ে লাহোর ও দিল্লির বাতাস ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে উঠেছে।
একই সময়ে ২৩১ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে কঙ্গোর কিনশাসা। এরপর ১৭৭ ও ১৬০ স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা ও চিলির সান্তিয়াগো।
সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। কণা দূষণের এই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
ঢাকার বকশীবাজারে মৌমিতা পরিবহনের বাসের ঢাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর বাবা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে ওই পরিবহনের ১০টি বাস আটকে রেখেছেন একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) থেকে বাসগুলো আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিহত জহুরুল হক সেলিম (৫২) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাতের বাবা। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে মৌমিতা পরিবহনের দুটি বাসের মাঝে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন রিফাতের বাবা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জাবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মৌমিতা পরিবহনের দুটি বাস যাত্রী তুলতে গিয়ে প্রতিযোগিতা করার সময় দুই বাসের মাঝে পিষ্ট হয় ভুক্তভোগী।
রিফাতের সহপাঠীরা জানান, তিনি পরিবারের বড় ছেলে। তার ক্যান্সারে আক্রান্ত একটা ছোট ভাই আছে, যার বয়স ১৩। রিফাতের বাবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি তার ছোট ছেলে জুবায়েরের চিকিৎসা ও টাকা সংগ্রহের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন।
এর আগে, জুবায়েরের চিকিৎসার জন্য জাবিতে কয়েক দফায় টাকা সংগ্রহের কথাও জানান শিক্ষার্থীরা।
রিফাতের সহপাঠী হাসিবুল হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ রিফাতের বাবার অকালমৃত্যুতে মর্মাহত। রাষ্ট্রের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। রিফাতের ছোট ভাই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, তার চিকিৎসা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য ঘাতক মৌমিতা পরিবহনের বাস মালিকপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বাস সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এতে বিভাগের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মৌমিতা পরিবহনের ১০টি বাস আটক করেছে। দ্রুত সমাধান না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসুচিতে যাব।’
জব্দ হওয়া একটি বাসের চালক আব্দুল কাদের ইউএনবিকে বলেন, ‘ডেইরি গেইটে যখন আমাদের বাসগুলো আটকাচ্ছিল তার আগ পর্যন্ত কিছুই জানতাম না। পরে জানতে পারলাম, এক ছাত্রের বাবা মারা গেছেন আমাদের একটি বাসের চাপায়, তাই আটকাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে শিক্ষার্থীরা আমাদের মোবাইল ফোন ও চাবি নিয়েছিল, কিন্তু বিকেল ৫টার দিকে ফোনগুলো ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি আর এখন পর্যন্ত টাকাও দাবি করেনি। এগুলো আমাদের বিষয় না। মালিকের সঙ্গে কথা বলে তারা সমস্যা সমাধান করুক।’
মৌমিতা পরিবহনের সাভার অঞ্চলের লাইনম্যান সুমন মিয়া ইউএনবিকে জানান, তাদের মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি সমাধান করবেন। সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রশিদুল আলম বলেন, ‘এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা যে, আমাদের একজন শিক্ষার্থীর বাবা ঢাকায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটলেও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে এখানে বাস আটক করেছে। বাসমালিকদের সঙ্গে এখনও আমাদের যোগাযোগ হয়নি। কীভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা যায় তা ভাবা হচ্ছে।’
বাস মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে কার্যকরী একটা সমাধানে যাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়ার্ডভিত্তিক ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
বুধবার (৯ জুলাই) ডিএসসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করার কারণে আজ এসব এলাকায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। এ সময় দক্ষিণ-পূর্ব বা দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিমি বেগে বাতাসসহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া, গত ২৪ ঘন্টায় রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বৃষ্টিপাত আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ডিএসসিসির আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় ওয়ার্ডভিত্তিক ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। পাশপাশি ডিএসসিসির আওতাভুক্ত এলাকায় কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (০১৭০৯৯০০৮৮৮) নম্বরে জানানোর জন্য জনগণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের মদিনা থেকে ৩৮৭ জন হজযাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট অবতরণের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি১৩৮ ফ্লাইটটি শাহ আমানতে অবতরণের পর এ গোলযোগ দেখা দেয়। এরপর ত্রুটি সারিয়ে যাত্রীদের নিরাপদে নমিয়ে আনা হয়।
বিষয়টি নিশ্চত করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, আজ সকালে অবতরণের পর রানওয়ে-২৩ প্রান্তে গিয়ে ফ্লাইটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে থেমে যায় এবং আর চলতে পারে না।
এরপর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিমানটিকে টাগকারের মাধ্যমে রানওয়ে থেকে সেটিকে সরিয়ে অ্যাপ্রোনে নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় রানওয়ে সাময়িক বন্ধ থাকলেও বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং ফ্লাইটে থাকা সব হজযাত্রী নিরাপদেই ছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক আজ শনিবার (০৫ জুলাই) সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর উদ্যান সংলগ্ন ডিএসসিসি অঞ্চল-০৪ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংসে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া এঁর উপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী উপর্যুক্ত অভিযানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় শুরু হওয়া এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থানা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ছয় শতাধিক কর্মী এবং স্থানীয় সোসাইটির জনগণ এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএসসিসির অঞ্চল-০৪ ভুক্ত ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৪২ ও ৪৩ নং ওয়ার্ড এলাকায় ড্রেন, নর্দমা ও ফুটপাতের ময়লা পরিষ্কার ও মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
পরিচ্ছন্নতা প্রোগ্রাম চলাকালীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, "ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ ব্যতিত বিশাল জনসংখ্যার এই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।আমরা যদি নিজেরা সচেতন হই, অন্তত নিজের আঙিনা নিজে পরিষ্কার করি তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।" সরকার 'ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অনান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা-২০২৫' প্রণয়ন করছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, নির্দেশিকায় সরকারের এবং নাগরিকদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, "ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিশেষ মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের এটি আমাদের চতুর্থ পর্ব। বিশেষ এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি।" বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি নিয়মিত কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন, এডাল্টিসাইডিংয়ে ব্যবহৃত প্রতিটি ফগার মেশিন প্রতি কীটনাশক ৩০ লিটার থেকে দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৬০ লিটার করা হয়েছে। এছাড়া, মশার ঔষধ ছিটানো নিশ্চিতকরণে অঞ্চলভিত্তিক তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য