প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। নাড়ীর টানে তাই ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ছে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি হয়ে যাওয়ায় এবং ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবার-পরিজনকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাড়ি ফেরার মিছিল দেখা যায়। তবে এখন ভালো মানের বাসের টিকিট পাওয়াটা অনেকটাই কঠিন।
শুক্রবার সকালে গাবতলী, কল্যাণপুর ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দে ভাগাভাগি করে নিতে অনেকেই রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। তবে ঢাকা ছাড়ার মানুষের মধ্যে নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীদে সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
বাড়ির পথে থাকা অনেকে জানান, স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় শিশু এবং পরিবারে সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কর্মজীবীরা যাবেন ছুটি শুরু হলে।
সকাল সাড়ে ১০টা, গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের আগে প্রধান সড়কে দাঁড়াতেই কানে এলো সেলফি পরিবহনের হেলপারদের হাঁকডাক, আরিচা ঘাট ২০০, আরিচা ঘাট ২০০।
এই পরিবহনের হেলপার রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার যাত্রী অনেক বেশি। আমাদের বাস আরিচা ঘাট পর্যন্ত চলে। আমাদের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। যারা পরিবহনে টিকিট পাই না তারা আমাদের বাসে যায়। আমাদের রানিং বাস। যাত্রী ভরলে আমরা বাস ছাড়ি। আমাদের বাস ভরতে কখনো ২০ মিনিট আবার কখনো ৩০-৪০ মিনিটও লাগে।
গবতলী বাস টার্মিলানের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ দিনের মতো বাস কাউন্টার থেকে তেমন একটা হাঁকডাক নেই। বাস সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ইদের আগের দিন পর্যন্ত বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তাই যাত্রী ডাকতে তোড়জোর কম।
চুয়াডাঙ্গাগামী পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের যাত্রীর চাপ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে। আপাতত ইদ পর্যন্ত আমাদের টিকিট নেই। যেগুলো টিকিট আছে সেটা বিক্রি হবে না। এগুলো আমরা রেখে দিই আমাদের খুব পরিচিত মানুষ ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য।
জে আর পরিবহনের কাউন্টারে ম্যানেজার নয়ন বলেন, এখন আমাদের কোনো ঝামেলা নেই। এখনকার টিকিট সব আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। যাত্রীরা তাদের সময় অনুয়াযী চলে আসে আমরা গাড়িতে তুলে দিই। এখন পর্যন্ত আমাদের গাড়ির সিডিউল অনুয়াযীই চলছে।
তবে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী জামান এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের গাড়ি ফুল হয়নি, পেছনের দুই- তিন সিট ফাঁকা গেছে। আগামী ২-৩ দিনেরও সব টিকিট বিক্রি করতে পারিনি।
কথা হয় ঝিনাইদহগামী যাত্রী আসিফ মোস্তফা মিথুনের সাথে। তিনি বলেন, ঈদের আগে ঝামেলা হবে ভেবেই আগে ভাগেই পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আমার টিকিক ২ সপ্তাহেরও আগে কাটা ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই ঈদ এলেই বাসের টিকিট ডাবল হয়ে য়ায়। এটা বহন করা আমাদের কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নিরুপায় বলে আমরা বাধ্য হয়ে ডাবল দামেই টিকিট কিনি। সাধারণ দিনে যেই এসি বাসে আমি ৫০০-৬০০ টাকায় যাই শুক্রবার সেই সিটের মূল্য ১২০০ টাকা। এখন আমি আমার পরিবারের চার সাদস্য মিলে যাচ্ছি এখানে আমার প্রায় ৫ হাজার খরচ হয়ে গেছে। সরকারের এখানে হস্তক্ষেপ করা উচিত।
কুষ্টিয়াগামী যাত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ভোগান্তি এড়াতে আমি আর আমার ছেলে আগেই চলে যাচ্ছি। আমার জামাইয়ের ছুটি শুরু হবে ইদের আগের দিন, তাই তিনি আমাদের সাথে যাচ্ছেন না।
কথা হয় মাগুরাগামী যাত্রী রাজু আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, ঝামেলা এড়াতে আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। এখন আরামে বাড়ি চলে যাব। তবে এই আরাম ২ বছর আগেও ছিলো না। আগে বাড়ি যেতে আরিচা ঘাটে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন পদ্মা সেতু হওয়াতে অনেক গাড়ি ওইদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই আরিচা ঘার এখন অনেক ফাঁকা।
গাবতলীর মতো সকালে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রীদের ব্যাপক যাত্রী উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিটা কাউন্টারেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। আর অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য ফুটপাত দেয়া হয়েছে বাঁশ আর ত্রিপলের তৈরি অস্থায়ী যাত্র ছাউনি।
তবে শুক্রবার বিকেলে মহাখলী বাস টার্মিনালে গাবতলী ও কল্যাণপুরের মতো যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বেশি বিক্রি হওয়ায় টার্মিনালে রানিং যাত্রীর চাপ কম বলে দাবি করেছেন বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এই টার্মিনালে দূরপাল্লার পরিবহনের ইদের আগ পর্যন্ত টিকিট শেষ হয়ে গেলেও স্বল্প দূরত্বের জেলাগামী বাসের টিকিট পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।
রংপুরগামী যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ইদের আনন্দ শুরু হয় সেইদিন, যেদিন আমি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুক দিই। ওই দিন থেকে শুধু মনে হয় কবে বাড়ি যাব। এবার ট্রেনে টিকিট না পেয়ে বেশ কিছু দিন আগে আমি অনলাইনে বাসের টিকিট বুক দিয়েছিলাম। আর কিছুক্ষণ পরেই আমার বাস ছাড়বে।
সোলাইমান সেলিম নামে টাঙ্গাইলগামী যাত্রী বলেন, ইদে আমাদের টিকিট নিয়ে কখনোই ঝামেলা পোহাতে হয় না। অগ্রিম টিকিটও কাটতে হয় না। মহাখালী এলেই বাস পাওয়া যায়।
সোলাইমান সেলিমের মতো ময়মানসিং গামী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমারা ময়মানসিংয়ের মনুষ ইদে টিকিট নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি গাজীপুর পার হওয়া নিয়ে। ৮-১০ বছর ইদের সময় এই গাজীপুরেই আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যেতো। তবে এখন রাস্তা অনেক ভালো হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাড়ি যাচ্ছি তাই অন্য রকম এক আনন্দ হচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম কেন জানতে চাইলে বগুড়া- নাঁওগাগামী একতা পরিবহনের কাউন্টারে থাকা বিল্পব হোসেন বলেন, এবার ইদে আমাদের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু আমাদের একার না, এই টার্মিনালের প্রায় সব বাসের টিকিটই অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তাই যাদের বাসের সময় হয় কেবল তারাই টার্মিনালে আসছে। তার যাত্রীর চাপ কম মনে হচ্ছে।
ঢাকা-রংপুরগামী এস আর ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার মোহাম্মাদ মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মূলত ইদের চাপ শুরু হয়েছে। তবে আমাদের বাসের টিকি অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ টিকিটই অনলাইনে কেটেছে যাত্রীরা। এখন কেউ টিকি ক্যানসেল না করলে নতুন টিকিট দিতে পারব না।
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় আইশৃংখলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম দেখা গেছে। এ ছাড়া টার্মিনালের কেন্দ্রীয় মাইকে যাত্রীদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক ঘোষণাও দিতে দেখা গেছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩১৩টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১০২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বুধবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবি বাস্তাবায়নের দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীর ও বাসচালকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— প্রভাবশালী গোষ্ঠী কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তারা পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে প্রকৌশল পেশায় প্রবেশের পথ সংকুচিত করছে। এ ছাড়া চাকরি ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল, তাদের পদবি পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল ও বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি বাতিল, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে নিম্নপদে নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবলকে কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিষিদ্ধ ও আইনানুগভাবে নিশ্চিত করা।
এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন।
উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ের নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতায় একাডেমিক কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা।
সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার মামলায় আজ সোমবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবু আলম শহীদ খান ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৬৭টি মামলা করেছে ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোববার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
রাজধানীর শাহবাগে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে সড়কে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ পানি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরে বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘মার্চ টু ঢাকা’ অনুযায়ী আজ (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন। এর ফলে সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মন্তব্য