আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অগ্রিম টিকিটের বেচা বিক্রি তেমন নেই। ঈদযাত্রা শুরু হলেও টিকিট কাউন্টারগুলোতে কাঙ্খিত যাত্রীর দেখা মেলেনি।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কপথে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এক সময়ের ভরসাস্থল নদীপথের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে ঢিমেতালে।
আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে আশানুরূপ যাত্রীর দেখা না পেয়ে বরাবরের মতোই হতাশ লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও অনেকটাই সুনসান অবস্থা বিরাজ করছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায়। লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও এখনও তেমন সাড়া মিলছে না যাত্রীদের। টার্মিনাল এলাকায়ও নেই তেমন হাঁকডাক। কিছু যাত্রী এলেও সক্ষমতার তুলনায় তার সংখ্যা নগণ্য।
লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন ঢাকা থেকে অন্তত অর্ধ লাখ মানুষ লঞ্চে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেত। কিন্তু এখন তা অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা বরিশাল রুটে ৩৮ টি নিয়মিত লঞ্চ সহ ঈদের বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে। তবে এখনো আশানুরূপ টিকিট বিক্রি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তারা।
যাত্রীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চের টিকিটের তেমন চাহিদা নেই। তবে রোটেশনের কারণে ট্রিপে লঞ্চ কম থাকায় ছুটির দিনগুলোর আগে যাত্রীচাপ থাকে ঢাকা-বরিশাল রুটে। তখন কালোবাজার ছাড়া টিকিট পাওয়া দায়। তবে কালোবাজারির হাতে কিছু লঞ্চের টিকিট চলে যাওয়ার অভিযোগও যাত্রীরা জানিয়েছেন।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যেসব লঞ্চ দিয়ে ঈদ যাতায়াত পরিচালিত হবে, সেগুলোর মোট যাত্রীধারণ ক্ষমতা প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার। তবে ঈদের চাপ সামাল দিতে এসব লঞ্চে প্রতিদিন বাড়তি মানুষ পরিবহনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন আনুমানিক এক লাখ ৭৪ হাজার একমুখী যাত্রী পরিবহন করবে এসব লঞ্চ। ঈদ শেষে ফেরার পথে একই সংখ্যক মানুষ ঢাকায় ফিরবে।
প্রতিদিন সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৩১টি নৌপথে নিয়মিত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তা দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে। ঈদের আগে-পরের প্রায় ১৫ দিন ছোটবড় মিলিয়ে ১৭৫টি লঞ্চ যাতায়াত করবে। আগে ঢাকা থেকে ৪১টি নৌপথে লঞ্চসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন নৌযান চলত। নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে অনিয়মের কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলগামী ১০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ৩১টি নৌপথে ১৭৫টি লঞ্চে ঈদযাত্রীদের আনা-নেয়া করা হবে। ঘরমুখী মানুষকে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে দিতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস।
এবার ঈদে নৌপথে সাড়ে ২২ লাখ যাত্রীর ঢাকা ছাড়ার কথা। তবে ঈদে নৌপথে বাড়তি ভাড়া নেয়া হবে না বলে দাবি করছে মালিকপক্ষ। অবশ্য পর্যাপ্ত টিকিট বিক্রির ধুম না দেখে হতাশা প্রকাশ করছেন তারা। এর পরও আশা রাখছেন লঞ্চ ছাড়ার আগ মুহূর্তে টিকিট বিক্রির চাপ বাড়বে।
এবার যারা নৌপথে বিভিন্ন লঞ্চে গন্তব্যে যাবেন তাদের বেশির ভাগই বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী। বাকি যাত্রীরা যাবেন চাঁদপুর, মাদারীপুর শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তবে ঈদে সদরঘাট থেকে চাঁদপুর ও ইলিশা এই দুই রুটে লঞ্চ চলাচল বেশি। যাত্রীও মোটামুটি বেশ ভালো। চাঁদপুরের যাত্রীদের পাশাপাশি নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের যাত্রী থাকায় এ রুটের লঞ্চে মোটামুটি যাত্রী থাকে।
লঞ্চের টিকিট বিক্রেতারা জানান, ঈদকেন্দ্রিক লঞ্চে যাত্রী এখনো বাড়েনি। কিছু কিছু লঞ্চে কয়েকটি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে ২৫ রমজান থেকে ঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা মামুনুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত কেবিনের কোনো চাপ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে হয় কিনা তা আমরা এখনো জানিনা। গতবারের যে চাপটা ছিল এখন আর ওই চাপটা নেই। এখন টিকিট বিক্রি আগের তুলনায় কম হচ্ছে।
এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের স্টাফ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের আগে ৭ এপ্রিল ট্রিপ আছে। এখনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। অগ্রিম টিকিট ছাড়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। টিকিট পেতে হলে যাত্রীদের ট্রিপের দুই দিন আগে এসে খোঁজ নিতে হবে।
সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার স্টাফ শাকিল হোসেন জানান, গত বছর যে রকম চাপ ছিল, এবার তেমনটা নেই। টিকিট বিক্রি অনেকটাই কম হচ্ছে এবার।
এমভি পূবালী-৬ এর টিকেট বিক্রয়কর্মী জাকারিয়া ইসলাম বলেন, এখনও উল্লেখযোগ্য ঈদ যাত্রী পাচ্ছি না। অল্প কিছু পাচ্ছি। তাতে যে আমাদের লঞ্চ পূর্ণ হয়, ব্যাপারটা এমনও না। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে- এটা ঠিক। আর অগ্রিম টিকেট নিতে আসছে বেশি।
হতশা প্রকাশ করে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১৮ লঞ্চের সুপারভাইজার মোখলেছুর রহমান বলেন, সারাদিন লঞ্চে বসে থাকি। দুপুর পর্যন্ত একটিও অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সড়কপথে যাচ্ছেন। এজন্য এখন ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় কম।
একই সুরে এম ভি ওয়ালিদ-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার জিয়াউল হক বলেন, অন্যান্য রুটের তুলনায় আমাদের রুটেই যাত্রী কিছুটা বেশি। তবে ঈদ কেন্দ্রিক যাত্রীদের যে চাপ আসে এটা এখনো শুরু হয়নি। ঈদের ২-৩ দিন আগে চাপ থাকবে বলে আশা করছি। তবে ঘোষণা দিয়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় না। মালিকদের থেকেও ওরকম কোনো নির্দেশনা নেই। তবে টিকিট চাইলে আমরা দিতে পারছি। আগের দিনের সেই সদরঘাট এখন আর নেই। অগ্রিম টিকিটের চাপও নেই।
লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম খান বলেন, সাধারণ সময়ে যাত্রী টানতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেয়া হয়। সরকারি ভাড়া ৪৫০ টাকার মতো আছে। আমাদের এখন ভাড়া আছে ৩৫০ টাকা। আর ঈদের আগ মুহূর্তে এটা সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নিবে। এর বেশি কোনোভাবেই নয়।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে নৌপথের যাত্রী অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এরপরও নৌপথে ঈদে ঘরমুখী মানুষের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, লঞ্চে এখন ভিড় কম। যাত্রী না থাকার কারণে যেসব লঞ্চ বন্ধ ছিল চাপ বাড়লে সেসব চলবে। অগ্রিম টিকিট হয় কেবিনের ক্ষেত্রে। যাদের অগ্রিম টিকিট প্রয়োজন, পরিচয় আছে তারা ফোনে বুকিং নিচ্ছে।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, নানাবিধ কারণে বর্তমানে লঞ্চ সংখ্যা কমে গিয়েছে। এখন ৪১টি রুটে প্রায় ৬০টির মতো লঞ্চ চলছে। ঈদের চাপ এখনো শুরু হয়নি। ২৫ রমজানের পর যাত্রীদের চাপ বাড়বে। চাপ সামাল দিতে বিশেষ লঞ্চ চলবে। এ চাপের উপর নির্ভর করছে যেসব রুটে এখন লঞ্চ চলছে না সেসব রুটেও কি লঞ্চ চলবে বা কতটি লঞ্চ চলবে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র্যাব, মেট্রোপলিটন পুলিশ, নৌ-পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস দল উপস্থিত থাকবে।
টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, ঈদকে ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্র যেন কোনোভাবেই মানুষকে বিপদে ফেলতে না পারে- সবকিছু আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। পুলিশের টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। টার্মিনালে সবসময় পুলিশ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা থাকবে, সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে, আর টার্মিনালে র্যাবের সদস্যরাও অবস্থান করবেন। ঈদের আগ মুহূর্তে ভিড় হতে পারে। আর সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতেই ঢাকার বায়ুমানে উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিনের মতো আজও ঢাকার বাতাস যেকোনো প্রকার অস্বাস্থ্যকর শ্রেণি থেকে বেশ দূরে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল দশটার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৭৯, একিউআই সূচকে যা ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।
সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে ১০০ পর্যন্ত একিউআই স্কোর ‘মাঝারি’।
এই সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুমানও ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে ছিল, তবে তা ঢাকার চেয়ে কিছুটা খারাপ ছিল। দিল্লির বাতাসের সূচক ছিল তখন ৯০ এবং দূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় অবস্থান ছিল ১৭তম।
তবে অবশেষে আজ দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকার শীর্ষ পাঁচ থেকে বের হতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। একই সময়ে ১২৪ স্কোর নিয়ে তালিকার অষ্টম স্থানে অবস্থান করছিল শহরটি। বেশ কিছুদিন পর আজ সকালে লাহোরের বায়ুমানে এত উন্নতি হয়েছে। সাধারণত ১৫০-এর নিচে নামে না লাহোরের একিউআই স্কোর।
আজ সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল চিলির সান্তিয়াগো। শহরটির সূচক ছিল ১৬২। ১৬০, ১৫৬ ও ১৫৪ স্কোর নিয়ে তার পরের তিন শহর ছিল উগান্ডার কাম্পালা, বাহরাইনের মানামা ও কঙ্গোর কিনশাসা। শীর্ষ চার শহরের বায়ুমানই ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’। পঞ্চম স্থানে থাকা মিসরের কায়রোর বাতাসের স্কোর ছিল এই সময় ১৩২, অর্থাৎ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’।
কণা দূষণের এই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী পার্বত্য ফল উৎসব ও মেলা।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকছে।
আজ বিকেলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য কমপ্লেক্সে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পাহাড়ি সংস্থা পাহাড়ি ফলমূল নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
মেলা উপলক্ষে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান- বিজয় সরণি, সার্ক ফোয়ারা, রমনা পার্ক, বেইলি রোডের পশ্চিম পাশে রমনা পার্ক সংলগ্ন ও পূর্ব পাশে অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন, টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স-এর সম্মুখে একটি বেলুন স্থাপন করা হয়েছে।
রাজধানীর ৩৩ বেইলি রোডে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন এই মেলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ২৫ (পঁচিশ) জন সদস্য আজ সোমবার নগর ভবনে উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভার শুরুতে ০৫ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কর্পোরেশনের সভার কার্য বিবরণী দৃঢ়ীকরণ এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্য সূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি. দা.) জনাব আলী মনসুর। পরবর্তীতে, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন প্রদান করেন।
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন প্রদান করায় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানীত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।”
সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওসমূহের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬০০/- (ছয় শত) টাকা হতে ৮০০/- (আট শত) টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি তিনতলাবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয়গণ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মতিঝিলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীর ৩০ লক্ষ টাকা ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র মতিঝিল থানা পুলিশ। এ সময় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত হাইয়েস গাড়ি ও নগদ ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. শামিম রহমান (২৯), মো. মিজান রহমান (৫১) ও রবিউল ইসলাম জুয়েল (৪২)।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৭-২৯ জুন ঢাকা ও ঝালকাঠিতে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময় শামিমের হেফাজতে থাকা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হাইয়েস গাড়ি, মিজানের কাছ থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও জুয়েলের কাছ থেকে নয় হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি’র মতিঝিল থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুন রাজধানীর ওয়ারীর নবাবপুরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মো. খলিল মিয়া (২৬) ও ইব্রাহীম হোসেন রিফাত (২৪) নামের দুই ব্যক্তি নগদ ৩০ লক্ষ টাকা মতিঝিল সিটি ব্যাংক শাখায় জমা দেওয়ার জন্য একটি স্কুটিতে করে রওয়ানা দেন।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের সামনে পৌঁছা মাত্রই ৬/৭ জনের একটি দল নিজেদের ডিবি পরিচয়ে তাদেরকে ডিবি লেখা একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়।
পরে দুজনকে মারধর করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে হাত-পা বেঁধে সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে পালিয়ে যান।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সাইনবোর্ডের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাইদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপি’র মতিঝিল থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মিজানের নামে ঝালকাঠির রাজাপুর ও নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানায় আরো দুটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও লুন্ঠন হওয়া অন্যান্য টাকা উদ্ধারসহ আত্মগোপনে থাকা ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রাজধানীর হাজারীবাগের একটি বাসায় পানির ট্যাংক পরিষ্কারের সময় বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় হাজারীবাগের জিগাতলা ট্যানারি মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
আহতরা হলেন- মো. জিয়াউর রহমান (৪৫) ও তার দুই মেয়ে ফারিয়া (৮) ও রাইফা (৪) এবং ট্যাংক পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক বেলাল হোসেন (২৮)।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শাহপরান জানান, চাচার বাসায় বেলাল হোসেন নামের এক শ্রমিক ট্যাংক পরিষ্কার করছিলেন, এ সময় চাচা জিয়াউর রহমান ট্যাংকে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব চালু করার পরই এ বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাংকের ভেতরে জমে থাকা গ্যাস থেকে এমনটা হয়েছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘বেলাল হোসেনের শরীরের ১৭ শতাংশ, জিয়াউর রহমানের ৪ শতাংশ, ফারিয়ার ৫ শতাংশ এবং রাইফার ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।’
বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত (২৩), তার আত্মীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নাইমুল হক (৩২) এবং জাবেদ আলম খান (৫৫)।
উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানাধীন আজমপুর মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা পাথরবোঝাই একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন বলে জানান তিনি। ওসি বলেন, অপরজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই মারা যান।
তিনি আরও জানান, মরদেহগুলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
নিহতরা কাছাকাছি একটি হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে এবং এর চালক রাকিবুল ইসলামকে (৪২) আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
রাজধানীর উত্তরায় ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘হোটেল মিলিনা’ নামের একটি আবাসিক হোটেল দখলের চেষ্টা করা হয়। এমন অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
রোববার র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার দুপুরে শফিক মোল্লা নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে হোটেল মিলিনিার মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পূর্বের ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সেসময় ১০টি মোটরসাইকেলে করে কমপক্ষে ২৪ জন জোরপূর্বক হোটেলটি দখল করতে যায়।
এ সময় দূর থেকে ওই ঘটনার কিছু ছবি ধারণ করেন র্যাব-১ এর এক গোয়েন্দা সদস্য। ছবি ধারণের সময় ‘মব’ সৃষ্টিকারীরা র্যাব সদস্যদের ঘেরাও করে এবং ছবি তুলতে বাধা দেয়। এ ঘটনার পর র্যাব-১ এবং উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া এবং ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে মোট ৯ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন, মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৮), মো. শফিক মোল্লা (৩০), মো. আরিফুল ইসলাম (৩০), মো. তন্ময় হোসেন শাওন (২৭), মো. রবিউল ইসলাম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন আশিক (২৭), মো. সাইফুল ইসলাম সাগর (২৭), মো. জালাল খান (৩০) ও মো. আমির (২১)।
আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য