একাত্তর সালে দেশের মাটিকে শত্রুমুক্ত করতে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলার দামাল ছেলেরা। যখন শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দিচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, ঠিক তখন দাফন করার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় সহযোদ্ধারা যেখানে পারছেন তাদেরকে কবর দিচ্ছিলেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন।
এই আগুনঝরা দিনে আনসারের এক জওয়ান শহীদদের মরদেহ মর্যাদার সঙ্গে দাফন করার জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি সুনামগঞ্জের আবুল কালাম ওরফে মধু মিয়া। যুদ্ধে শহীদদের জন্য মধু মিয়া কবরের জায়গা খুঁজতে থাকেন। বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে নিজের দখলে থাকা সরকারি খাস জায়গাকেই উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি।
১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন মন্তাজ মিয়া। জামালগঞ্জের কামলাবাজ গ্রামে বাড়ি মন্তাজ মিয়ার। আনসার বাহিনীর এই তরুণ দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার অদম্য বাসনায় যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
বালাট সাব-সেক্টরের এই যোদ্ধা মৃত্যুর আগে মীরেরচর গ্রামের কাঁচা মিয়াকে নিজের পাঞ্জাবি ও চশমা দিয়ে বলেছিলেন, যুদ্ধে যদি আমি মারা যাই তবে আমার বৃদ্ধ মাতাকে এই দুটো জিনিস দিয়ে দেবেন। এর কিছুদিন রেই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন মন্তাজ মিয়া। মধু মিয়া শহীদ মন্তাজের খবর জানতে পেরে ছুটে যান তার সঙ্গী সাথী নিয়ে।
আর এই শহীদ মন্তাজ মিয়াকে দাফন করেই কার্যক্রম শুরু হয় সুনামগঞ্জ সদরের ডলুরা শহীদ স্মৃতি সৌধের। তারপর আর থেমে থাকেননি মধু মিয়া। যেখানেই খবর পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন সেখানেই তিনি ছুটে গেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের এ অঞ্চলের এমএনএ দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর মধু মিয়ার কাজের স্বীকৃতি দেন। দাফন কাফনের পাশাপাশি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতালে পাঠানো এবং প্রত্যেক শহীদকে তাদের ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী দাফন কাফনের ব্যবস্থাসহ দাহ করার জন্য তাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেন।
আত্মনিবেদিত মধু মিয়া তার এই মহৎ কাজের অংশীদার করতে নিয়ে আসেন মুন্সী তারু মিয়াকে, যিনি মাওলানা হিসাবে জানাজা পড়াতেন। কবর দিতে ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতালে পাঠাতে সাহায্য করতেন আফসার উদ্দিন, কিতাব আলী, আব্দুর রহিম, মগল মিয়া, হযরত আলী ও মাফিজ উদ্দিন। হিন্দু মুক্তিযোদ্ধাদের দাহ করতে পুরোহিত হিসাবে কাজ করার জন্য নিয়ে আসেন নেপু ঠাকুরকে। এরাই ছিলেন প্রবাসী সরকারের ৯ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটি।
মধু মিয়ার লেখাপড়া পাঠশালা পর্যন্ত হলেও তিনি ডায়েরিতে লিখে রাখতেন শহীদদের নাম এবং কোথায় কোন যুদ্ধে তারা শহীদ হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে কাউকে দিয়ে এ তথ্যগুলো লিখিয়ে রেখেছেন। আর এটাই হয়েছে আজ ইতিহাস।
মধু মিয়ার ডায়েরি থেকে জানা যায়, ৪২ জন মুসলিম শহীদকে দাফন করা হয়েছে এবং ৬ জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধাকে ডলুরাতে দাহ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যেমন সুনামগঞ্জ জেলার মুক্তিযোদ্ধা আছেন ঠিক তেমনি অন্যান্য জেলার মুক্তিযোদ্ধাও আছেন। ডলুরায় যে সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধারা শায়িত আছেন তারা হলেন মন্তাজ মিয়া,রহিম বকস,জবান আলী,সুরুজ মিয়া,হরকুম উল্ল্যাহ,জয়নাল আবেদীন,মহরম আলী,আব্দুর রহমান,আব্দুছ ছাত্তার,আজমান আলী,আবেদ আলী,আতাহার আলী,লাল মিয়া,চান্দ মিয়া,সিদ্দিক মিয়া,আবু বকর সিদ্দিক,সায়েদুর রহমান,আব্দুল হামিদ খান,আব্দুল খালেক,যোগেন্দ্র দাস,শ্রীকান্ত দাস,অরবিন্দ রায়,কুবীন্দ্রনাথ দাস,সালাউদ্দিন,তাহের মিয়া,আব্দুল হক,মুজিবুর রহমান,নূরুল হক,আব্দুল করিম,সুরুজ মিয়া,সাজু মিয়া,ধনুমিয়া,ফজলুল হক,শামছুল ইসলাম,কেন্তু মিয়া,সিরাজ মিয়া,সমছু মিয়া,তারা মিয়া,দানু মিয়া,মন্নাফ মিয়া,রহিম মিয়া,আলী আহমদ। মধু মিয়ার এই ডায়েরিটি স্থান পেয়েছে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
স্বাধীনতার পর দেশের শহীদ মুত্তিযোদ্ধাদের কবরকে সংরক্ষিত করার জন্য প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধরনা দিযেছেন মধু মিয়া। কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়। ৮২ ফুট লম্বা, ৮১ ফুট প্রস্থ ও ৫ ফুট উচ্চতার এই দেয়াল তৈরি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের আরেক বীর সেনানী সাব সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) এ,এস, হেলালউদ্দিন শহীদদের নাম মার্বেল পাথরে খোদাই করে লিখে গেইটে বসিয়ে দেন এবং শহীদদের আত্মীয় স্বজনদের রাত্রি যাপনের জন্য গেস্ট হাউজ নির্মাণের জন্য অনুদান দেন।
২০০৪ সালের ১৫ মার্চ মধু মিয়া মারা যাওয়ার পর ডলুরা শহীদ স্মুতিসৌধের ভেতরেই তাকে দাফন করা হয়। ৪২ জন শহীদ এবং তিনি এক সাথে ঘুমিয়ে আছেন।বর্তমানে জেলা প্রশাসন,জেলা পরিষদ,উপজেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় কবর পাকা করণ ও সৌন্দর্য্য বর্ধণ,স্মৃতি ফলক নির্মাণ, মূল ফটকে স্থায়ী তোড়ন নির্মাণ, বিদ্যুতিক লাইট পোষ্টের বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা,সমাধীর পাশের মাঠে পাশে মুক্তমঞ্চ নির্মাণ,মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য্য নির্মাণ, বসার জন্য ছাউনী নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
ডলুরা শহীদ মিনারকে ঘিরে রাস্তা ঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ায় মানুষ সহজেই কবর জিয়ারত করতে পারছেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারণে বেড়েছে দর্শনার্থীর ভিড়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মধুমিয়ার আত্মত্যাগের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে সুনামগঞ্জের মঙ্গলকাটা বাজার থেকে ডলুরা শহীদ মিনার পর্যন্ত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মধুমিয়া সড়ক’র নাম করণের দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য