কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়, ‘সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের’৷ যখন ১৯৭১ সালে দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক আর অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে মানুষ। পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে দিশেহারা সবাই। এল সাত মার্চ ১৯৭১। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতা অপেক্ষায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এলেন এবং বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’ সেই অনানুষ্ঠানিক ঘোষণাই আনুষ্ঠানিকতা পায় সে বছরের ২৬ মার্চ।
আজ বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ২৬ মার্চ দিনটি বাঙ্গালির কাছে একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানীরা শুরু করে গণহত্যা। সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। এই ঘোষণার পরে নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের সিড়ি বেয়ে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
প্রতিবছর বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় দিনটি পালন করে জাতি। স্মরণ করে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি।
এবারও দিনটি উদযাপনে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দেশের রাজনিতক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যথাযথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুবের মসনদ। বীর বাঙ্গালি অস্ত্র ধরো-বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গ্রাম-শহর, জনপদ।
বাঙালির ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করতে না পেরে ১৯৭০ সালে নির্বাচন দেয় সরকার। জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের৷
বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শি সিদ্ধান্তে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়৷ আওয়ামী লীগের তৎকালীন শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন৷ এদিকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ৷ ওই রাতেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ৷ ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ জন্ম হয় বাংলাদেশের৷ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙ্গালি ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটি আজ সূর্যোদয় ক্ষণেবঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। আরও রয়েছে-সকাল পাঁচটা ৫৬ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের অব্যবহিত পর)। সকাল সাতটায় ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা সভা
মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সকাল ১০টায় রাজধানীর বাসাবোতে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, সকাল ১০:৩০ মিনিটে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে।
সকাল এগারটায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
২৭ মার্চ
সকাল ১১টায় হবে আলোচনা সভা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ-এর কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে যথাযথ মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহজ হবে । আর নির্বাচনের সময় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে ।
তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, এখনও আছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি ও সার্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া অনেক ঘটনা সত্য নয়, তবে গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক থাকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক অপরাধে সিমকার্ড ব্যবহার হয় অন্যের নামে। নির্বাচনের আগেই সিমকার্ডের সংখ্যা কমানো হবে। এক ব্যক্তির নামে ১০টা থেকে ৫টা/৭টা, পরে ২টায় নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল কিছু সমস্যার সমাধান করলে এবং জনগণ সচেতন থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এলাকায় গণ্ডগোল বা অপরাধ প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।’
নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র: বাসস
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: জোরপূর্বক গুম মোকাবিলায় বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিচারকদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার লিখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের বিচার। তাদের এই প্রস্তাবটি মনে রাখা উচিত।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান জানান, কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এই পর্বে গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠন, গুম প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুম সংক্রান্ত মামলার জটিলতা নিরসনে মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভিক্টিমদের সাইকোলজিক্যাল ও লিগ্যাল সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, ভিকটিমদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, চিহ্নিত মামলাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভিক্টিমদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ম্যাজিস্ট্রেটদের মিথ্যা মামলা নিরসন সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিমার বাইরে করা পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, ওষুধ, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিকারকরা কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাহীনতা, গুদাম ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির অভিযোগ জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি বলেছে, ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, ফলমূল, হিমায়িত খাদ্য ও অন্যান্য রপ্তানিকারক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি চুক্তি ও অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইএবি সভাপতি বলেন, আগুনের ঘটনাটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অঘটন আর না ঘটে।
এ সময় কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ ও সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ, গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলে পুনরায় জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।”
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের সফল আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বডিওর্ন ক্যামেরা কেনা হবে এবং এ বিষয়ে সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক কিছু বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এসব ঘটনা তদন্তের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানো এবং বিমান ও বিমানবন্দরে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বাসস
নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ফাইল ছবি
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
মন্তব্য