জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে এক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নিচ্ছেন পাঁচ হাজার টাকা। আর যিনি টাকা নিচ্ছেন তিনি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর-পাটিচরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। সম্প্রতি এমন লেনদেনের কিছু ছবি ধারণ করেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।
শুধু এই একটি অভিযোগই নয়, এ ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অঢেল ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ।
সেবাপ্রার্থীরা জানান, গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই ভূমি অফিসে তার আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। চাহিদামতো ঘুষ না দিলে মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। আবার কেউ টাকা দিতে না চাইলে নানা শুরু করেন তালবাহনা। সেবা গ্রহীতাদের ভূমি অফিসের বারান্দায় ঘুরতে হয় দিনের পর দিন।
গোলাম কিবরিয়ার অফিশিয়াল কাজ নোটিশ জারি ও ভূমি জরিপ হলেও অনেক সেবাগ্রহীতারা বাধ্য হন তার মাধ্যমে খাজনা-খারিজসহ অন্যান্য কাজ করতে।
উপজেলার নেপালপুর গ্রামের কারিমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া আমার জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। তারপর দিনের পর দিন আমাকে ঘুরাতে থাকে। আমার জমি খারিজ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমাকেই গরম দেখায় ফোন বন্ধ করে রাখে। এভাবেই আমাকে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে।’
ভূমি অফিসে গিয়ে কথা হয় আব্দুল্লাহ প্রামাণিক নামের এক সেবাগ্রহীতার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি হোল্ডিং খুলতে। তার পর কিবরিয়া বলল, এখন হবে না পরে এসো। তার পর এখানে আরেক কর্মকর্তাকে বললাম, তিনিও কোনো কাজ করে দেয়নি। এ ভূমি অফিসে প্রতিটি কাজের জন্যই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কোনো সেবা মেলে না। নইলে ঘুরতে হবে দিন, মাস, এমনকি বছর।’
ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘উপজেলা অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসগুলো কবরের পাশে করা উচিত। যাতে করে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেয়া এবং সাধারণ মানুষদের হয়রানি করার আগে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে। যখন আমার মতো মুক্তিযোদ্ধার কাছেও ঘুষ দাবি ও হয়রানি করা হয়। তখন সাধারণ মানুষ তো আরও নিরুপায়।’
তিনি বলেন, প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সরেজমিনে খোঁজ নিতে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নাম প্রকাশে না শর্তে কথা হয় একাধিক প্রতিবেশীর সঙ্গে।
তারা বলেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর আগে চাকরিতে যোগদান করেন গোলাম কিবরিয়া। তার পর থেকেই নিজেকে প্রভাবশালী মনে করেন নিজেকে। প্রতিবেশী হওয়ার পরও তার কাছে সেবা নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। প্রতিটি কাজেই ঘুষ নেন তিনি।
তারা আরও জানান, নিরুপায় হয়ে চাহিদামতো টাকা দিয়েই কাজ করে নিতে হয়। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।
এ সময় স্থানীয়রা তাদের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।
অভিযোগের বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর বক্তব্য নিতে গেলে, ভূমি অফিসে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা নেই না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পপি খাতুন বলেন, ‘ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাটে ছয় বছর বয়সী শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যা করেছের তার সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার। আর এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন তার মা। রোববার ভোরে শিশুটি মরদেহ মারজিয়ার মা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন।
এমনটি জানিয়েছেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল। তিনি জানান, এই ঘটনায় গৃ্হশিক্ষিকা মার্জিয়া এবং তার মা আলিফজান বিবি ও তার আরেক দাদি কুতুবজানকে আটক করা হয়। তারা মুনতাহাদের পাশের বাসার বাসিন্দা।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন ও ইসলাম উদ্দিনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও অপরজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
শিশু মুনতাহা আটদিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার ভোর ৪টার দিকে নিজেদের পুকুর থেকে ওর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুনতাহার সাবেক প্রাইভেট শিক্ষিকা ওকে অপহরণ করে হত্যা করেন। প্রতিবেশী ও মুনতাহার শিক্ষক সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ায় ক্ষোভ ছিল তার পরিবারের ওপর। এছাড়া মার্জিয়ার ওপর চুরির অপবাদ দেয়ায় সেই ক্ষোভ থেকেও তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
মুনতাহা কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। শিশুটি ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়। তার সন্ধান চেয়ে দেশ-বিদেশে অনেকে পুরস্কারও ঘোষণা করেন।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা মুনতাহার হাউস টিউটরকে ধরে নিয়ে আসি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিলো। তখন হাউস টিউটরের বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য রাতেই আমরা মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের বলি।
‘ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে দেন ওই হাউস টিউটরের মা আলিফজান বিবি। স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে আমাদের খবর দেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং হাউস টিউটরের মা ও তার নানিকে ধরে নিয়ে আসি।’
মরদেহের গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল ও শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে হাউস টিউটর ও তার মা মুনতাহাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। পূর্ববিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।’
মুনতাহার চাচা কয়সর আহমেদ জানান, সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুনতাহাকে অপহরণ করে হত্যা করে। পরে বাড়ির পাশে ডোবায় কাদায় পুঁতে রাখে। ভোরের দিকে সুমির মা আলিফজান বিবি সেই লাশ সরিয়ে নিতে গেলে জনতার হাতে আটক হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলে রাখা হয়। সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে মুনতাহা। পরে প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর থেকে তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই গৃহশিক্ষিকা সুমির ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আর দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মুনতাহা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিল না।
‘শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে করেন। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে মাটি খোঁড়া আছে কী না খোঁজ নিতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের তথ্যমতে মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোড়া কোনো জায়গা আছে কী না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখে স্থানীয়রা তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান তারা।
‘আটকের পর আলিফজান বিবি জানিয়েছেন যে মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন তারা।’
আফসার উদ্দিন আরও বলেন, ‘মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশী ছিল। এক সময় ভিক্ষা করতেন মার্জিয়ার মা ও নানি। স্বামী-পরিত্যক্তা মার্জিয়া বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতেন। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি সাদেকপুর। এই ইউনিয়নের একটি দাঙ্গাবাজ গ্রাম মৌটুপী। সাত হাজার মানুষের ওই গ্রামে রয়েছে দুটি প্রভাবশালী পরিবার- কর্তা বংশ আর সরকার বংশ।
সাদেকপুর ইউনিয়নে দুই বংশের নেতারাই বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার বংশের লোক। এর আগে তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হক কর্তা বংশের লোক। দুই বংশের দুই চেয়ারম্যান এখন তাদের নিজ নিজ বংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে দুই বংশের ১৭ জন খুন হয়েছেন। এতে কমপক্ষে শতবার সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বার বার মারামারি-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া নামে সরকার বাড়ির এক ব্যক্তি খুন হন। আহত হন অন্তত ৫০ জন। এর কয়েক দিন আগে ইকবাল মিয়া নামে একই বংশের এক যুবক খুন হন।
গত ঈদুল আজহার পরদিন নাদিম মিয়া নামে কর্তা বংশের এক ব্যক্তি খুন হন। এর আগে ২০০৫ সালে সরকার বাড়ির সরকার সাফায়েত উল্লাহ চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই ওবাইদুল্লাহ ও হেদায়েত উল্লাহ ও তার এক চাচা সায়দুল্লাহ মিয়া কর্তা বংশের লোকজনের হাতে খুন হয়।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এভাবে আরও বেশকিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ-ভাংচুর লেগেই আছে। এসব খুন-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও অর্ধশত মামলা আদালতে চলমান। আসামির সংখ্যা দুই বংশের কয়েক শ’ হবে।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, দুই বংশের নেতৃত্ব দেয়া দু’জন বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান কেউ এলাকায় থাকেন না। নিজেদের বাড়িঘর থাকলেও তারা ভৈরব শহরে বসবাস করেন। আর প্রভাব বিস্তারের জন্য নেপথ্যে থেকে এলাকায় ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখেন।
একাধিক খুনের মামলার আসামি সরকার বংশের ‘মাথা’ মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার ও কর্তা বংশের ‘কর্তা’ তোফাজ্জল হক। তারা কখনও আদালত থেকে জামিন নেন, আবার কখনও নেন না। পুলিশের ভাষায় তারা পলাতক।
মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মৌটুপী গ্রামে যায় না। ঝগড়া-সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিখ ওই গ্রামে যেতে চায় না। কারণ দাঙ্গাবাজ গ্রামে যেতে পুলিশও ভয় পায়। কখনও গেলেও ব্যাপক আয়োজন করে অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে দল বেঁধে যেতে হয়। নয়তো উল্টো পুলিশকেই হামলার শিকার হতে হয়।
স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বহুবার চেষ্টা করেও দুই বংশের বিরোধ মীমাংসা করতে পারেননি। বিশেষ করে দুই চেয়ারম্যান মীমাংসায় সম্মতি দেন না। তারা মামলা জিইয়ে রাখতেই যেন বেশি আগ্রহী। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত। কারণ মামলা হলেই তাদের অর্থ-বাণিজ্য জমে ওঠে। কোনো পক্ষ কোনো ঘটনায় মামলা করলে আসামি করার ভয় দেখিয়ে তারা লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। আবার চার্জশিট থেকে নাম প্রত্যাহারের নামেও চলে তাদের ‘বাণিজ্য’। তবে তারা দু’জনই এসব কথা অস্বীকার করেছেন।
মৌটুপী গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা অন্য বংশের লোক হয়েও এসবের বাইরে থেকে বাঁচতে পারি না। কোনো না কোনো বংশকে সমর্থন করতে হয়।
‘গত ৫৪ বছরে এই গ্রামে কমপক্ষে দেড় ডজন খুন হয়েছে, আহত হয়েছে হাজারের উপরে। মামলা হয়েছে শত শত। এসব বিরোধের হোতা দুই বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ ও তোফাজ্জল হক।’
একই গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মৌটুপী গ্রামে দুজন নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ ধরে ঝগড়া-বিবাদ ও খুনোখুনি চলছে। এই দু’জনই ঝগড়ার হোতা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে মৌটুপী গ্রাম নীরব হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কর্তা বাড়ির নাদিম খুন হলে সরকার বাড়ির অন্তত দুশ’ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পালিয়ে যায় সরকার বাড়ির শত শত পরিবারের লোকজন। পরে সরকার বংশের ইকবাল খুন হলে কর্তা বংশের শতাধিক বাড়িঘর লুটপাট হয়।
‘গত বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি এলে আবারও সংঘর্ষ বাধে। খুন হন কাইয়ূম। মানুষ বলছে, দুই চেয়ারম্যানকে পরবাসে পাঠালে গ্রামের বিরোধ থামবে, নতুবা নয়।’
এ বিষয়ে সরকার বংশের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্তা বাড়ির বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক এই বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে। তারা আমার দুই ভাই ও চাচাকে হত্যা করেছে। গত শুক্রবারের সংঘর্ষের নায়ক সে, আমি নই। গ্রামের যেকোনো মীমাংসায় আমি রাজি। কিন্ত তোফাজ্জল হক মীমাংসায় রাজি নয়। গ্রামের দাঙ্গার জন্য সে-ই দায়ী।’
অপরদিকে কর্তা বংশের বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, ‘৫৪ বছর আগে সাফায়েতের বাবা আমার বংশের কফিল উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে। ক’দিন আগে খুন করল আমার ভাই নাদিমকে। আরও কয়েকজনকে খুন করেছে। আমি গ্রামে থাকি না, থাকি ভৈরব শহরে। অথচ একাধিক ঘটনায় সাফায়েত আমাকে মামলার আসামি করেছে। তাহলে কিভাবে মীমাংসা করব।’
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামের দুই চেয়ারম্যানের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার চলছে জানলাম। স্থানীয় জনগণ মৌটুপীকে দাঙ্গাবাজ গ্রাম বলে ডাকে।
‘আমি দুই মাস হলো এই থানায় যোগদান করেছি। এরই মধ্যে একজন খুন হলো মৌটুপী গ্রামে। এ নিয়ে দুই বংশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা দমন ও নিয়ন্ত্রণে আমি চেষ্টা করছি।’
ভারতীয় সংবাদ আউটলেট ‘দ্য ওয়্যার’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিভাবে একটি সফল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে এবং এটি ভবিষ্যতে প্রতিবেশী ভারতের একটি শক্তিশালী মিত্র হয়ে উঠতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে।
ভারতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিনোদ খোসলা ২৭ অক্টোবর নিবন্ধটি লিখেছেন।
স্বনামধন্য ভারতীয়-আমেরিকান এই ব্যবসায়ী মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনায় পৌঁছতে পারলে তাতে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
নিবন্ধে তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে একজন গর্বিত আমেরিকান ও ভারতের সন্তান হিসেবে তা নিয়ে আমি আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন।
খোসলা বলেন, ইউনূস, যাকে আমি বন্ধু মনে করি এবং কয়েক দশক ধরে চিনি; শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের অনুরোধে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নতুন আইডিয়ার শক্তিতে বিশ্বাসী ও টেকসই উদ্যোগ এবং এর প্রভাব নিয়ে আগ্রহী এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউনূস তার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তাতে আমি বিস্মিত। আমি আমার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বে সব প্রাণের জন্য মঙ্গলজনক এমন প্রযুক্তির জন্য কাজ করি।
‘ড. ইউনূস অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মডেলগুলোর একটি সিরিজ তৈরি করেছেন।’
বিনোদ খোসলা উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে ড. ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার দরিদ্র নারীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
‘বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘আমি জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহী। অধ্যাপক ইউনূস ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যেটি এক দশমিক আট মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং এক মিলিয়ন ক্লিন কুক স্টোভ ইনস্টল করেছে। এটিও মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেই হয়েছে।
‘গ্রামীণ ব্যাংকের অবদানও এখানে স্মরণীয়, যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি দরিদ্র নারীকে ৩৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ক্ষুদ্রঋণ থেকে অনেকেই উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। ভারত এবং অন্য অনেক দেশেও একই মডেলে কাজ হয়েছে।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোক বাস করেন। এটি এমন একটি দেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস করে। অথচ এই দেশটির আয়তন ইলিনয় রাজ্যের সমান।’
ভারতীয় এই ব্যবসায়ী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’
খোসলা ড. ইউনূসের মূল্যবোধ, তার কাজের পদ্ধতি ও প্রাথমিকভাবে তার নেতৃত্বের ফলাফল নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দুই মাসে তিনি পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়েছেন, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর সুরক্ষায় সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে (যেটি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল)।
‘তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কার্যকরভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং নিউ ইয়র্কে থাকাকালীন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন।’
‘এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
খোসলা বলেন, ‘আমি তাকে তার ক্যারিয়ার জুড়ে যে মূল্যবোধ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখেছি, নতুন ভূমিকায় কাজ করার সময়ও তিনি তা প্রয়োগ করেছেন। সেগুলো হলো- মূল বিষয়গুলোতে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করার জন্য পরীক্ষা করা, নাগরিকদের (বিশেষ করে যুবকদের) ব্যবহারিক ও গঠনমূলক কাজে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করা, ধর্ম-লিঙ্গ-জাতি নির্বিশেষে সব মানুষকে সম্মান করা। তিনি বাস্তববাদী ও সেসঙ্গে প্রচণ্ড উদ্যমী (৮৪ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও)।’
ড. ইউনুসের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে ভারতীয় এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘একটি সরকারকে নেতৃত্ব দেয়া সামাজিক ব্যবসা ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালানোর চেয়ে বহুগুণ বেশি কঠিন হতে পারে। ক্ষমতা হারানো-পূর্ববর্তী সরকার দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত একটি গোষ্ঠীও চায় তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক। ‘বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি দ্রুত ফিরতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি ইউনূস তার কাজ করে যেতে পারবেন।’
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে ৯২ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৯৮ জন বিশ্বনেতার এক চিঠিতে নিজেও সই করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন বিনোদ খোসলা। তিনি বলেন, ‘সেখানে বলা হয়েছিল- অধ্যাপক ইউনূসকে শেষ পর্যন্ত সমগ্র দেশের, বিশেষ করে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য মুক্ত হতে দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত, যে আহ্বান তিনি ছয় দশক ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে এবং সাফল্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছেন।’
‘এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
বিনোদ খোসলা বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত অধ্যাপক ইউনূসের এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন ভূমিকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখার দিকে মনোনিবেশ করা। কারণ বাংলাদেশের সম্ভাবনায় পৌঁছানোতেই ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষিত হবে।’ সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:
নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় এক মাস ধরে বেড়া দিয়ে ৯টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্থানীয় হাসান মল্লিকসহ প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির নির্দেশে এ বেড়া দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক মাস আগে রাস্তার পাশে বেলাল মল্লিকের লাউ-কুমড়ার গাছ খায় একটি ছাগল। সে ছাগলকে বেলাল মল্লিক মারধর করলে প্রাণীটির একটি পা জখম হয়।
ওই ঘটনা শুনে ছাগলের মালিক হাসান মল্লিক ক্ষিপ্ত হয়ে বেলালকে মারধর করেন এবং স্থানীয় কিছু মাতুব্বরের পরামর্শে বেলাল মল্লিক, তার প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনসহ ৯টি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার তিন দিকে বেড়া দেন।
এমন পরিস্থিতিতে বেলাল মল্লিক গত ৪ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ করেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই চলে যায়। এতে হাসান মল্লিক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
বেলাল মল্লিকের অভিযোগ, তিনি এক রাতে প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে বিলের মধ্যে মাছ ধরতে গেলে সেটি টের পেয়ে যান হাসান মল্লিক। পরে হাসান, জব্বার, দুলাল এবং তাদের পরিবারের নারীদের সঙ্গে নিয়ে বেলাল মল্লিককে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়। ওই রাতেই বেলালকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বেলাল মল্লিকের অভিযোগ, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে পরিবার নিয়ে তিনি অবরুদ্ধ। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তার ভাষ্য, বেড়া দেয়া লোকজন বর্তমানে চাঁদা দাবিও করছেন। চাঁদার টাকা না দিলে এইবার আর বেঁচে থাকার সুযোগও দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়িও যেতে পারছি না। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে আইনগত সহযোগিতা চাই।’
এ বিষয়ে হাসান ও জব্বারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, মাতুব্বরের হুকুমে তারা বেড়া দিয়েছেন। তার অনুমতি ছাড়া বেড়া কখনোই সরাবেন না। তা ছাড়া ছাগলকে মারধরের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
স্থানীয় মাতুব্বর আক্কাস আলী বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা সম্ভব ছিল, তবে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে নওগাঁর ভীমপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দীন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বেড়া সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আজ পর্যন্ত যে বেড়া সরিয়ে নেয়া হয়নি, তা আমার জানা নেই। পরবর্তী সময়ে কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আনলোডিং ড্রেজার দিয়ে যুবলীগ নেতার বালু উত্তোলনের কারণে পানির চাপে একটি সড়ক ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, বাঁশগাঁও-নয়ানগর সড়কের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন পাঁচ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ভুলু মুন্সীসহ আরও কয়েকজন ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের ব্যবসা করার কারণে রাস্তাটি ভেঙে যায়।
ঘটনাস্থলে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশগাঁও-নয়ানগর সড়কের বাঁশগাঁও কবরস্থানের আনুমানিক ১৫০ ফুট সামনে সড়কটির ৩০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে পাশের খালে পড়েছে। ওই সময় কয়েকজন মানুষকে রাস্তা মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়।
মেরামতে আসা লোকজন জানান, ভুলু মুন্সী তাদের রাস্তা মেরামতের কাজ করতে পাঠান।
সড়কটি মেরামতের কাজ করা শ্রমিক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ভুলু ভাই আমাদের রাস্তাটি মেরামত করতে বলেছেন। তিনি যাবতীয় সকল মালামাল কিনে দিয়েছেন।
‘আমরা শুধু তার হুকুম বাস্তবায়ন করছি। এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না।’
খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর, বালুরচর, মিয়াবাড়ী, গজারিয়া ও গোসাইরচর গ্রামের অন্তত ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ প্রতিদিন সড়কটি ব্যবহার করত। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের গজারিয়া ডকইয়ার্ড ও বেইজ এবং গজারিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাও এটি। রাস্তাটি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলকারীরা।
কী বলছেন স্থানীয়রা
স্থানীয় কয়েকজন জানান, সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ভুলু মুন্সীসহ আরও কয়েকজন ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের ব্যবসা শুরু করেন। গজারিয়া গ্রামের বেনজিরসহ আরও কয়েকজনের জমিতে বালু ফেলার পর পানির চাপে সড়কটির একাংশে ফাটল ধরে। পানির চাপ আরও বাড়তে থাকলে শনিবার রাতে সড়কের অংশটি ভেঙে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন প্রধান বলেন, ‘শনিবার রাতের কোনো এক সময় পানির চাপে রাস্তাটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে কয়েকটি গ্রামের মানুষ রীতিমতো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে কাদা-পানি মাড়িয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি মেরামত করা দরকার।’
নয়ানগর গ্রামের বাসিন্দা ও গজারিয়া পাইলট মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়াম বলে, ‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে আমাদের স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে। বিকল্প পথে গজারিয়া বাজার ঘুরে স্কুলে যেতে ভাড়া ও সময় বেশি লাগে।’
যুবদল নেতা ও এলজিইডির ভাষ্য
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা ভুলু মুন্সী বলেন, ‘ড্রেজার ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত না।’
ভেঙে যাওয়া সড়ক কেন সংস্কার করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই রাস্তা দিয়ে আমার কিছু পাথর যাবে। রাস্তা ভেঙে পড়েছে। পাথর নিতে পারছি না। তাই নিজের স্বার্থে কোস্ট গার্ডের সঙ্গে মিলে রাস্তাটি সংস্কার করছি।’
ভাঙা সড়কের বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গজারিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সামিউল আরেফিন বলেন, ‘সড়ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি আমরা জেনেছিলাম। এরপর সেই সড়কটি সংস্কার করার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বলা হয়েছে, তবে সড়কটি বালু ভরাটের পানির কারণে রাস্তাটি ভেঙেছে, এমনটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) গত জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপির ৪৩ নেতা। দলের নির্দেশনা অমান্য করায় তাদের সে সময় আজীবন বহিস্কার করে বিএনপি। এদের মধ্যে সাতজন কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলদের অপসারণের পর বিপাকে পড়েছেন সিসিকের এ সাত কাউন্সিলর। আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এসব নেতা এখন জনপ্রতিনিধিত্বও হারিয়েছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে সিলেটসহ দেশের ১২ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, গত জুনের নির্বাচনে দলীয় সমর্থন ছাড়াই বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত সাত নেতা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ছয়জন ও এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে তারা কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও ৫ আগস্টের পর মোড় ঘুরে যায়।
ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সিসিকের আওয়ামী লীগ দলীয় সব মেয়রসহ কাউন্সিলররা আত্মোগপনে চলে যান। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েও যান। এরপর থেকে সিসিকে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন বিএনপিদলীয় কাউন্সিলররা।
৫ আগস্টের পর থেকে সিসিকের সব কর্মকাণ্ডে বিএনপিদলীয় এ কাউন্সিলরদের সামনের সারিতে দেখা যায়। সিসিকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন, তবে এই ক্ষমতা বেশি দিন চর্চা করার সুযোগ পাননি তারা। ২৭ সেপ্টেম্বর সব কাউন্সিলরদের অপসারণ করে মন্ত্রনালয়।
গত নির্বাচনে সিসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। অন্যদিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম মুমিন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল এ ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হন।
২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হন ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল রকিব তুহিন। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন। এ ছাড়া মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি মোছাম্মৎ রুহেনা খানম মুক্তা সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি তো দলকে বহিষ্কার করিনি।
‘আমি এখনও বিএনপির কর্মী। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বহিষ্কার-তিরস্কার এগুলো রাজনীতিরই অংশ। অনেক নেতাকে অতীতে বিএনপি বহিস্কার করেছিল। এখন তারা দলের উচ্চপদে আছেন। আমিও আশা করি অতীতের অবদান স্মরণ করে দল আমাকে ফিরিয়ে নেবে।’
শামীম বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম জনগণের চাপে। আমার এলাকার জনগণ আওয়ামী লীগের গুন্ডাতন্ত্র থেকে মুক্তি চাইছিল।
‘তাই তারা জোর করে আমাকে প্রার্থী করে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আরও পড়ুন:১৮২৩ সাল। জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের বাবা পাল বংশের কাছে থেকে একটি মাটির দোতলা বাড়ি কেনেন। জমিদারি চালানো হতো সেই বাড়ি থেকে।
জমিদারির সময়ে সুদূর ভারত থেকে শিল্পী নিয়ে এসে এই বাড়ির উঠানে বসানো হতো নাটকের আসর। বসত যাত্রাপালার আসরও।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম বাজারে রায় বাড়ির জমিদার বাড়িটি এখন মাটির ডুপ্লেক্স বাড়ি। ব্যাক্তি মালিকানায় থাকলেও দূরদুরান্ত থেকে পর্যটক আসেন বাড়িটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
রায় বাড়ির বংশধর বুরন রায় এবং বাবন রায় ২০২১ সালে জমিজমা বিক্রি করে নাটোরে চলে যান। বর্তমানে ক্রয়সূত্রে বাড়িটির মালিক আসকার ইবনে সুলতান শান্ত।
বাড়িটি সংস্কার ও আধুনিকায়নে শান্ত স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারিগরদের শৈল্পিকতাকে অগ্রাধিকার দেন। সৌন্দর্য সবাই যেন উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য বাড়িটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
‘রাইজিং হেরিটেজ প্যালেস’ নামের বাড়িটিতে এখনও ১৮২৩ সালের মাটির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। বাড়ির দেয়ালগুলোতে মাটির স্তর দিয়ে নানা শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আসকার ইবনে সুলতান শান্ত জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার আদিবাসী পল্লি থেকে ৮০ থেকে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ দ্বিজেন বর্মন তার ২০ জনের একটি টিম নিয়ে চার মাস শিল্পকর্মের কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় কারিগর দিয়ে প্রায় দুই বছরে সময়ের ব্যবধানে এমন রূপ দিতে পেরেছেন।
তিনি আরও জানান, বাড়িটিতে অভ্যন্তরীণ দুটি মাটির সিঁড়ি রয়েছে, যা প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। আর সংস্কারের পর বাইরে থেকে সবার চলাচলে সুবিধার্থে সিঁড়ি করা হয়েছে।
বাড়ির মালিক বলেন, ‘প্রতিদিন লোকজন আসেন মাটির এ ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখতে, তবে ছুটির দিনে ভিড় বাড়ে। সবাই এসে ছবি ওঠায়, ভিডিও বানায়। সকলের জন্য উন্মুক্ত করা থাকে সবসময়। আমাদেরও ভালো লাগে।
‘সবাই এসে বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখছে। আমরা কাউকে নিষেধ, বারণ করিনি।’
ভিডিওগ্রাফার আশিক খান বাড়িটির চিত্র ধারণ করতে এসে বলেন, ‘পুরাতন মাটির বাড়িকে এমন ডুপ্লেক্স বাড়িতে রূপ দেয়ার শৈল্পিক নিদর্শন দেখতে ছুটে এসেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তায় আমরা বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারি।’
সাদিয়া জাহান জান্নাত নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে নওগাঁ শহর থেকে এখানে এসেছি। বাড়িটি দেখে মনে হলো যেন সেই প্রাচীন যুগের জমিদার বা রাজা-বাদশাদের বাড়িতে এসেছি।
‘কী চমৎকার কারুকাজ। সত্যিই সব মিলে অসাধারণ।’
বাড়িটিতে আছে পানির ফোয়ারা ও বসার সুব্যবস্থা। এতে শুধু পর্যটকরাই নন, বর-কনেরা ছবি তুলতেও আসেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য