জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি এলাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। জাহাজটি এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজরদারি করছে। তবে সামরিক অভিযান বা জোরপূর্বক জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে রাজি নয় জিম্মি জাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপ।
কেএসআরএম গ্রুপ সূত্র নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সবশেষ অবস্থান অনুযায়ী জাহাজটি এখন সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রেখেছে দস্যুরা।
বাংলাদেশি ওই জাহাজের কাছে ইইউ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের খবর এমন সময়ে এসেছে, যার এক দিন আগে দস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রথমবার যোগাযোগ করেছে। মালিকপক্ষ জাহাজসহ নাবিকদের ছাড়িয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
ইইউ নেভাল ফোর্সের এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিওচিত্র এবং তিনটি স্থিরচিত্র প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ইইউ নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টার মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজটি বাংলাদেশের জিম্মি জাহাজের কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে।
যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যেতেও দেখা যায় ওইসব ভিডিওতে।
এদিকে জাহাজ ও এর ক্রুদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে এখনই কোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ চায় না এমভি আবদুল্লাহর মালিকানা প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম।
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ইইউর একটি যুদ্ধজাহাজ আমাদের জাহাজের কাছাকাছি অবস্থান করে নজরদারি করছে। তবে কেএসআরএম কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ বা সামরিক অভিযান সমর্থন করে না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। যাতে নাবিকরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারেন।’
জানা গেছে, এর আগে ইইউ নেভাল ফোর্স জিম্মি জাহাজটি উদ্ধারে অভিযানের কথা জানালেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মতি দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইইউ নেভাল ফোর্স যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশি জাহাজে অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত বাস্তবতার আলোকে জিম্মি জাহাজে সামরিক অভিযানের সম্মতি দেয়নি।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা ছাড়া বিকল্প নেই। যেকোনো সামরিক অভিযান নাবিক, জাহাজ ও জাহাজের পণ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
‘তবে এটা ঠিক, যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কারণে দস্যুদের ওপর একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হবে। এতে জিম্মি সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারে।’
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটির শরণার্থীবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মন্ত্রী হাক্কানি ছাড়া আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
তালেবানের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মন্ত্রী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম এপিকে জানিয়েছেন, আত্মঘাতী হামলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, কাবুলের শরণার্থী মন্ত্রণালয়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর হাক্কানি শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি হাক্কানি নেওয়ার্কেরও একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন।
আরও পড়ুন:সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আবু মোহাম্মদ আল জোলানি। হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) প্রধান বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শাসক বাশার আল আসাদের অনুগতদের নির্মূলের মাধ্যমে নির্মূলের মাধ্যমে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে।
সূত্রের উল্লেখ করে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে এইচটিএস নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে জোলানির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিলো কিনা তা জানাতে পারেনি বার্তা সংস্থাটি।
এইচটিএস, সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসসহ সিরিয়ায় সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর এক ও অভিন্ন শত্রু ছিলেন বাশার আল আসাদ। আসাদ পরিবারের শেষ প্রেসিডেন্টের পতনের পর এখন তাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জাতি ও গোত্রগত বিভেদ ভুলে সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলা।
রাজধানী দামেস্কে থেমে থেমে বিজয় উল্লাস চলছে। এর মাঝেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও কাজ করছে। কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের মাঝে একটি সমন্বয় গড়ে তোলা যায় সেটিই সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের।
তাছাড়া বিদ্রোহীদের মাঝে ঐক্য ধরে রাখাও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস দেরাজোর প্রদেশের কিছুটা অংশ দখল করে তুর্কিয়ে সমর্থিত মিলিশিয়াদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছে। এর মাঝেই পিবিএস নিউজ বলছে, পেন্টাগনের শীর্ষ এক জেনারেল যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এসব ঘটনা থেকে এমনটা আশঙ্কা করা অমূলক নয় যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই বড় আকার নিতে পারে।
ইদলিব-ভিত্তিক ‘সিরিয়ান স্যালভেশন’ সরকারের প্রধান মোহাম্মদ আল-বশিরকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো। এ অবস্থায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ ও বাশার আল আসাদের অনুগতদের নির্মূলের মাধ্যমে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন আবু মোহাম্মদ আল জোলানি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে কুর্দিদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না তাহরির আল শাম। তারা সহিংসতা এড়িয়ে দেশটিকে গড়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদী।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ব্লিংকেন তাকে জানিয়েছেন- দামেস্কে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমারা ভবিষ্যতে এইচটিএস প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জোলানির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন:সামরিক আইন পরিচালনায় ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে জেলহাজতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন।
বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার এএফপি এ খবর জানায় ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করেন এবং সংসদে সেনা ও হেলিকপ্টার পাঠান, কিন্তু পরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন।
বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় উপর্যুপরি বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশটির একাধিক সেনা ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক ট্যাংক দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক ও কাতার পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গোলান মালভূমি একটি আরব ভূখণ্ড এবং ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়ি সতর্ক করে বলেছেন, এই আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতি স্পষ্ট আঘাত। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসরায়েলের দখলদারত্বের নীতি মধ্যপ্রাচ্যে আরও সহিংসতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অস্ত্র যাতে অন্য কোনো শত্রুর হাতে না যায় সে লক্ষ্যে ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার নির্ধারিত বাফার জোনের বাইরে সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবেশ করেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা বলেছেন, দামেস্ক অভিমুখে ইসরায়েলি ট্যাংকের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন মিথ্যা। আইডিএফের সৈন্যরা বাফার জোনে অবস্থান করছে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত চায় না। তবে সিরিয়ার সামরিক অস্ত্র যাতে শত্রুর হাতে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে গত তিনদিন ধরে সিরিয়াজুড়ে সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
সোমবার রাতে সিরিয়ায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে দু’শতাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
তবে মঙ্গলবার অন্তত তিনটি নিরাপত্তা সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা বাফার জোন অতিক্রম করেছে।
সিরীয় একটি সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা ইতোমধ্যে কাতানা শহরে পৌঁছে গেছে। এই শহরটি বাফার জোন থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে ও দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার জোরদার ও সুরক্ষার লক্ষ্যে কাজ করে।
মঙ্গলবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় বলা হয়েছে, সোমবার বিকেলে মানবাধিকার কাউন্সিলের সাংগঠনিক অধিবেশনে ২০২৫ সালের কর্মকাণ্ড নির্ধারণী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেনেভায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মানবাধিকার কাউন্সিলের ব্যুরোতে কাজ করবেন।
মানবাধিকার কাউন্সিলের কার্যালয়ে একজন প্রেসিডেন্ট এবং চারজন ভাইস প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপের (এপিজি) প্রতিনিধিত্বকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংস্থায় কাজ করার সময় এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
এপিজি সর্বসম্মতিক্রমে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বাংলাদেশের প্রার্থিতা সমর্থন করে এবং কাউন্সিলের বৃহত্তর সদস্যপদ বিবেচনার জন্য মনোনয়ন দেয়।
অবশেষে প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সমাপ্ত হয়, যখন বাংলাদেশ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য কাউন্সিল সদস্যদের সর্বসম্মত সমর্থন অর্জন করে।
২০০৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের এই মর্যাদাপূর্ণ মানবাধিকার সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস এবং বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ও ক্রমবর্ধমান প্রভাবের স্বীকৃতির আরেকটি উদাহরণ।
জ্ঞানের নানা শাখায় অবদান বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকা করেছে প্রভাবশালী বিজ্ঞান বিষয়ক ব্রিটিশ সাময়িকী ‘নেচার’। ২০২৪ সালের এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সাময়িকীটি সোমবার ‘দ্য রেভ্যুলিউশনারি ইকোনমিস্ট হু বিকাম দ্য আনলাইকলি লিডারস অফ বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রাখা তালিকাভুক্ত ১০ ব্যক্তির তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ বিক্ষোভের পর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ছাত্রনেতারা শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। নেতৃত্বের কাজটি ড. ইউনূসের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ছয় দশকের কর্মজীবনে দারিদ্র্য বিমোচনে লড়াই করার জন্য ধারণার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার কাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমস্যা নির্ধারণ করে তা সমাধানের জন্য গবেষণা করা।
ড. ইউনূসের সঙ্গে ৩০ বছর ধরে কাজ করা অ্যালেক্স কাউন্টস বলেছেন, ‘তার বয়স আশির কোটায়। তবে তার শারীরিক ও মানসিক শক্তি এখনও অটুট। তিনি একজন সহানুভূতিশীল মানুষ এবং তার যোগাযোগ পদ্ধতিও দুর্দান্ত।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. ইউনূস। এরপর পড়াশুনার জন্য ১৯৬০-এর দশকে পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি পরিবেশগত অর্থনীতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস জর্জেসকু-রোগেনের অধীনে পড়াশোনা করেন। তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন ইউনূস। দেশ গঠনে নিজের ভূমিকার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি। ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রোক্রেডিটের জন্য পরিচিত পেয়েছেন ড. ইউনূস। ওই ক্ষুদ্রঋণের পরিমাণ ১০০ ডলার বা তার চেয়ে কম। তিনি দেখিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ সমাজের প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য বদলে কেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক থাকাকালীন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেন ড. ইউনূস। তিনি একটি মডেল তৈরি করেন যেখানে ব্যবসার মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে খুব অল্প পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে এই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে তার এই উদ্ভাবন। তবে এর অনেক সমালোচকও রয়েছে।
তবে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের সংস্কারে নেতৃত্ব দেয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ড. ইউনূস কি ছাত্রদের সংস্কারের দাবি পূরণে সক্ষম হবেন? বিশেষ করে দুর্নীতির অবসান, নাগরিকদের অধিকার, কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কি সফল হবেন?
কার্যত সবাই এখন এ প্রশ্নটি করছে। এসবের পাশাপাশি ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
হোয়াইট হাউসে রোববার দেয়া বক্তব্যে জো বাইডেন বাশারের ক্ষমতাচ্যুতিকে সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্থান হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনে সিরীয় নাগরিকদের সামনে ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। এই কাজে সিরীয় নাগরিকদের সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।’
সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটনকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর উত্থানের বিরুদ্ধে সব সময় সজাগ থাকতে হবে।
জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী নতুন করে হামলা চালিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘সিরীয় সরকারের পতন ন্যায়বিচারের মৌলিক ফল। সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ভোগান্তিতে থাকা জনগণের জন্য এই বিজয় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেয়া প্রেসিডেন্ট বাশারের পরিণতি কী হওয়া উচিত- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, ‘বাশার আল আসাদকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য