সাভারের আশুলিয়ায় কর্মহীন যুবকদের চাকরি দেয়ার নামে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। শুধু তাই নয়, আবাসন সুবিধা দেয়ার নামে এসব যুবকদের আটকে রেখে নির্যাতনেরও অভিযোগ আছে নাম সর্বস্ব ভুয়া এ প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে।
প্রতারণার শিকার যুবকরা জানান, থানায় অভিযোগ করেও সুরাহা না পেয়ে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা বিভিন্ন সময় প্রতারক প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়ে লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হচ্ছেন।
এমনি এক ভুক্তভোগী মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার পূর্ব আটি গ্রামের ইউছুব দেওয়ানের ছেলে জাহিদ হাসান। তার খালাত ভাই একই এলাকার মারুফ দেওয়ানসহ এরকম শত শত ভুক্তভোগীর সন্ধান মিলেছে অনুসন্ধানে।
পুলিশ বলছে, এ প্রতারক চক্র ইতোপূর্বে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হলেও নাম ও এলাকা বদলে নতুন নামে শুরু করে প্রতারণা।
ভুক্তভোগী মানিকগঞ্জের জাহিদ হাসান বলেন, ‘কয়েক মাস আগে জামগড়া এলাকায় তার খালাতো ভাই মারুফ দেওয়ান ও আমি ৭০ হাজার টাকা চাকরির জন্য প্রদান করি। আমাদের ভালো বেতনের চাকরি দিবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় কোম্পানির ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম ও লিডার রাকিব হাসান জুয়েল, বাপ্পীসহ বেশ কয়েকজন প্রতারক।
‘এরপর একটি মেসে ৪০ থেকে ৫০ জনসহ আমাদেরকে গাদাগাদি করে রুমে থাকতে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের কোনো বেতন ও কাজ না দিয়ে সারা দিন অহেতুক বিষয়ে ট্রেনিংয়ের নামে সময় পার করতে থাকে তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি বেতনের জন্য তাগাদা দিলে আমাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি, হুমকি ও লাঞ্ছিত করে। আমাকে সাদা কাগজে জোরপূর্বক টিপসই রেখে দেয় তারা। পরে সেখান থেকে পালিয়ে আমি মানিকগঞ্জ চলে আসি। পরবর্তীতে আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাইনি।’
বরিশালের উজিরপুরের নাসির বেপারীর ছেলে নাদিম হোসেন বলেন, ‘গত মাসে আমার বন্ধু বাপ্পীর মাধ্যমে বিএসএন গ্লোবাল লিমিটেড নামে আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটা কোম্পানিতে চাকরির জন্য আসি। তখন আমাকে ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানির ম্যানেজার তরিকুল ও রাকিবসহ কয়েকজন ৪০ হাজার টাকা নেয়, কিন্তু চাকরি না দিয়ে আমাদের উল্টাপাল্টা ট্রেনিং করিয়ে শুধু সময় পার করতে থাকে।
‘পরে আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও লাঞ্ছিত করে তারা। একপর্যায়ে আমি সেখান থেকে পালিয়ে ঢাকার পল্টনে আমার মামার বাসায় চলে আসি।’
তিনি আরও জানান, আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি ফ্ল্যাটে তাদের ১৬ থেকে ১৭ জনকে আটকে রেখে নামমাত্র খাওয়া দেয়া হতো। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেয়া হতো। অনেকেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে গেছেন।
প্রতারণার শিকার নাদিমের মামা ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাগিনা ও তার বন্ধুকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিএসএন গ্লোবাল একটি নাম সর্বস্ব কোম্পানি। পরে ওদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে কৌশলে ঢাকায় আমার বাসায় পালিয়ে আসে নাদিম। এরপর গত শুক্রবার আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানে আমিসহ গেলে তারা টাকা পরিশোধ করবে বলে নানা টালবাহানা করে।’
এখনই এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কখনও ডিএক্সএন আবার কখনও বিএসএনসহ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে যুবকদের চাকরির প্রলোভর দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। কয়েক মাস এক এলাকায় অবস্থান করার পর তাদের প্রতারণা জানাজানি হয়ে গেলে ও অফিসে ভুক্তভোগীরা আসতে শুরু করলে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে তারা। সঙ্গে পাল্টে ফেলে প্রতিষ্ঠানের নামও।
এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে তাদের হতে হয় লাঞ্ছিত। ঘটে অপ্রীতিকর মারামারির মতো ঘটনাও।
আরও জানা গেছে, এদিকে প্রায় এক সপ্তাহ আগে আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকায় ইদ্রিসের বাড়ির দ্বিতীয় তলার বিএসএন গ্লোবাল লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা গেলে তাদের প্রথমে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন প্রতিষ্ঠানের লিডার রাকিবসহ কয়েকজন। ওই সময় ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কথা জানতে পেরে সেখানে আরও ভুক্তভোগী ও তাদের স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে ম্যানেজার তরিকুল কৌশলে পালিয়ে যান।
তবে পরবর্তী সময় প্রতারক কোম্পানির সত্যতা পেয়ে নিজেরাই তালা ঝুলিয়ে দেয়ার কথা জানান ভবন মালিক ও তার ছেলেরা।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতারক কোম্পানির লোকজন স্থানীয় রিয়াজ নামে এক যুবকের সঙ্গে বিবাদে জড়িযে পড়লে ঘটে মারামারির ঘটনা। এতে কোম্পানির ম্যানেজার তরিকুল, লিডার রাকিব হাসান, ভবন মালিকের ছেলে রাকিব, স্থানীয় যুবক রিয়াজ ও গাউছসহ অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তরিকুল গুরুতর বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, ‘প্রতারণা করে মানুষের কাছে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা কয়েকজন সাংবাদিক বিএসএন নামে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে অন্য ভুক্তভোগীর লোকজন, ভবন মালিক ও প্রতারক কোম্পানির দায়িত্বরতরা উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিক আমরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করেছি।’
প্রতারক কোম্পানির লোকজনের মারধরে আহত স্থানীয় যুবক রিয়াজ বলেন, ‘এখানে প্রতারক কোম্পানি খুলে মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে এমন খোঁজ পেয়ে আমি কিছুদিন পূর্বে সেখানে গিয়েছিলাম। আমার পরিচিত মেহেদী নামে একজন ওখানে চাকরির জন্য ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। কোম্পানির লোকজন সেই টাকা দিবে বলে নানা টালবাহানা করে আসছিল। পরে গত শনিবার তাদের অফিসের সামনে থেকে আমাকে তারা ডেকে ভেতরে নিয়ে আটকে মারধর করে।’
মারধরে আহত অভিযুক্ত রাকিব হাসান বলেন, ‘রিয়াজ নামে ওই যুবক আমাদের অফিসে প্রবেশ করে টাকা দাবি করে আমাকে মারধর করেছে। এর আগেও তাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি।’
যদিও তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
ইতোপূর্বে বিএসএন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম নিজেদের বৈধতা আছে দাবি করলেও কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। পরবর্তী সময় ভুক্তভোগী জাহিদ, মারুফ ও নাহিদসহ প্রতারিত বেশ কয়েকজনের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার কথা জানান তিনি।
তরিকুল বলেন, ‘আগে জামগড়ায় আমাদের অফিস ছিল ডিএক্সএন। ওখানেন জাহাঙ্গীর নামে আমার এক বন্ধু পার্টনার ছিল। মাস খানেকের বেশি হইছে আমরা ওখান থেকে চলে আসছি। এখন যারা যারা অভিযোগ দিতেছে তাদের টাকা আমরা ফেরত দেব।’
আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, ‘প্রতারক কোম্পানিতে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণে সব অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত তাদের মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলম বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া বাসসকে খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেন। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগে এ মামলা হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।
২০২৩ সালের ১৯ মার্চ বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ মামলার বিচার চলাকালীন ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন:খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বুধবার তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। আগে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের মতো দলকে নির্মূল করা উচিত।
এর আগে মঙ্গলবার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে আহত হন অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা জেলা শাখার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন এরই মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে সোমবার রাতে চাপাতি দিয়ে দম্পতির ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফুটপাতের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ওই ঘটনায় জড়িত মোবারক (২৪) ও রবিকে (২১) গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান।
ওসি জানান, অভিযুক্তদের বহনকারী মোটরসাইকেল একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে গ্রেপ্তারকৃতরা ওই দম্পতির সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে চালক অজ্ঞাত এক সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে চাপাতি বের করে ওই দম্পতির ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ধরে ফেলে এবং মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। চাপাতি হাতে হামলাকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পুলিশ তাকে একটি চক্রের সদস্য হিসেবে শনাক্ত করে।
আহত দুজন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন বাদী হয়ে মামলা করেন।
আরও পড়ুন:দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার এক বৈঠক শেষে এমন দাবি করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। আরও ভালো করার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। যতদিন ডেভিলরা থাকবে, ততদিন অপারেশন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। সব লেভেলে যেন দুর্নীতি কমে, সে জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’
ওই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। গাজীপুর জিএমপি, শিল্প পুলিশে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবও সংশ্লিষ্ট ডিসি দিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বৃদ্ধি করার জন্য বলেছেন।
‘নৌ পুলিশ বৃদ্ধি করার জন্য বলেছেন। গাজীপুরে জনবল বৃদ্ধির কথা বলেছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের জনবল বৃদ্ধির জন্য বলেছেন।’
পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র না দেওয়া এবং এসপি ও ওসিদের এসিআর লেখার প্রস্তাব করেছিলেন ডিসিরা। এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ আলোচনার সময় ছিল খুব কম।’
আরও পড়ুন:ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম, স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম এবং মেয়ে জেরিন করিমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব সোমবার এ আদেশ দেন।
আবেদনে দুদক বলেছে, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কোম্পানির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবেদনে দুদক উল্লেখ করে, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেয় আর্থিক খাতের গোয়েন্দা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
তারও আগে ওরিয়নের মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর তথ্য দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।
এদিকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তার স্ত্রী কে ইউ জোহরা জেসমিনসহ ৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত।
নাহিদের বিষয়ে আবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎপূর্বক বিদেশে অর্থ পাচারসহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের আভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
দুদকের আবেদনে আরও বলা হয়, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তার স্ত্রী কে ইউ জোহরা জেসমিন দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকসহ ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে মঙ্গলবার তাদের হাজির করা হয়।
সকাল ১০ টার পর ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখন রয়েছেন আত্মগোপনে।
এদিকে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন:ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক জায়গায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান জেলা প্রশাসকরা।
‘জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) অধ্যাদেশ পরিবর্তন হচ্ছে। তারপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখাতে বরাদ্দ নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাযথভাবে যেন পুনর্বাসন কার্যক্রম চলে। এখন থেকে ইউএনওরা টিনসহ কিছু সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কিনবেন।’
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যত্থানের পর সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে মনে করি। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
‘এ মাসের মধ্যেই জুলাই অধিদপ্তর গঠন হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করা সবাই জুলাই শহীদ। আর আহতরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত হবেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য