বাংলা একাডেমি থেকে বিনা মূল্যে বইমেলায় তিনটি খাবারের দোকান বরাদ্দ নিয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে শাহবাগ থানা পুলিশ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বলেছে, তারা খাবারের কোনো দোকান নেয়নি।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমি বলছে, খরচপাতির কথা বলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বিনা মূল্যে তিনটি দোকান নিয়েছে।
বাংলা একাডেমির সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, হাত খরচের কথা বলে ছাত্রলীগ একটি আর বইমেলায় স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোলরুম তৈরির খরচ এবং এখানে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন খরচের কথা বলে শাহবাগ থানা পুলিশ দুইটি খাবারের দোকান বিনা মূল্যে বরাদ্দ নিয়েছে।
ওই সূত্রের ভাষ্য, বইমেলায় আসা দর্শনার্থীদের খাবারের চাহিদা মেটাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের শেষ প্রান্তে ১৬টি প্রতিষ্ঠান এবং একজন ব্যক্তিকে ২১টি খাবারের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে পাঁচটি দোকান। প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো হলো ছাত্রলীগ, কালী মন্দির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও শাহবাগ থানা পুলিশ। এর মধ্যে শুধু শাহবাগ থানা পুলিশই দুটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছে।
বাংলা একাডেমির সূত্রটি জানায়, ছাত্রলীগকে দেয়া ৮ নম্বর দোকানটি বরাদ্দ হয় মেহেদী হাসানের নামে। কালী মন্দিরকে দেয়া ১৫ নম্বর দোকানটি বরাদ্দ হয়েছে কালী মন্দিরের নামে। ডিএমপিকে দেয়া ১৭ নম্বর দোকানটি বরাদ্দ হয়েছে মেট্রো মেকার্সের নামে। আর শাহবাগ থানাকে দেয়া ২০ ও ২১ নম্বর দোকানটি শাহবাগ থানার নামেই বরাদ্দ হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছাত্রলীগকে দেয়া ৮ নম্বর দোকানটি বর্তমানে পরিচালনা করছেন উজ্জ্বল নামের একজন। তিনি দোকানটি কিনে নিয়েছেন আড়াই লাখ টাকায়। উজ্জ্বল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, যিনি থাকেন কবি জসিমউদ্দীন হলের ২১৯ নম্বর কক্ষে। আর শাহবাগ থানা পুলিশের নামে বরাদ্দ হওয়া দোকানগুলো পরিচালনা করছেন বিল্লাল নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি দোকান কিনে নিয়েছেন ১১ লাখ টাকায়। দোকানে থাকা ম্যানেজার শাহিন ও সাব্বির টাকার অঙ্কের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে বিল্লালের ব্যবসা আছে। গত বছরও তিনি শাহবাগ থানার নামে বরাদ্দ হওয়া দোকান দুটি কিনে নিয়েছিলেন।
এত টাকায় দোকান কিনে নেয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রতি বছর বাংলা একাডেমির খাবারের দোকানগুলোর দাম একটু বেশি থাকে, কিন্তু এ বছর সেটি কমানো হয়েছে। এর আগেই গত বছরের দামে শাহবাগ থানা পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন বিল্লাল। এ ছাড়া পুলিশের দোকান হলে একটু অতিরিক্ত সুবিধাও পাওয়া যায়। অন্য দোকানগুলোর নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও এই দুটি দোকানের থাকে না নির্দিষ্ট সীমানা। যতটুকু ইচ্ছা জায়গা নিজের করে নেয়া যায়।
বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বইমেলার খাবার ও সংশ্লিষ্ট স্টল এবং মোবাইল ফোন টাওয়ারের স্থান বরাদ্দ ও তত্ত্বাবধান কমিটির আহ্বায়ক মো. হাসান কবীর।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত খাবারের স্টলগুলোকে আমরা নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ দিই, তবে শাহবাগ থানা পুলিশের স্টল দুইটা তারা আমাদের সাথে কথা বলে নিজেদের মতো করে বাড়িয়ে নিয়েছে।’
হাসান কবীর বলেন, ‘অন্য স্টলগুলো থেকে পুলিশের স্টল দুইটা একটু বেশি সুবিধা ভোগ করছে, এটা স্বীকার করতে আমাদের অসুবিধা নেই। বাস্তবতাও আসলে তাই। তারা প্রতিবার একটু অন্যরকমভাবেই এসব স্টল নেয়।’
শাহবাগ থানা পুলিশকে বিনা মূল্যে দুইটি খাবার দোকান বরাদ্দের বিষয়ে ড. কবীর বলেন, “প্রতিবার তাদের একটা দেয়া হয়। এবার খরচ বেশি হচ্ছে বলে দুইটা নিয়েছে, তবে তাদের জন্য কোনো কাগজপত্র নেই।
“তারা (পুলিশ) আমাদের বলেছে, ‘মেলায় পুলিশ কন্ট্রোলরুম তৈরির খরচ এবং সেখানে আসা পুলিশ অফিসারদের আপ্যায়নের জন্য তারা তেমন কোনো বরাদ্দ পান না। আর এবার তাদের খরচ নাকি একটু বেড়ে গেছে। তাই আমরা যেন তাদের দুইটা খাবারের স্টল দিই।’ এ জন্য আমরা দিয়েছি। এরপর সেটা বিক্রি করে যেই টাকা পাওয়া যাবে, সেটা দিয়ে তাদের এসব খরচ চালানো হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন তারা।”
মেলায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাকি সংস্থাগুলোও যদি এভাবে বিনা মূল্যে দোকান বরাদ্দ চায় তাদের দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘র্যাব বা অন্য সংস্থাগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ফোর্স তো বেশি থাকে পুলিশের। তাদের দায়-দায়িত্বও বেশি। তাই তাদের এই সুবিধা দেয়া হয়েছে।
‘বাকিদেরও যদি এই সুবিধা দিতে হয়, তাহলে তো আমরা কিছুই করতে পারব না। সবাইকে দিতে দিতেই তো সব শেষ হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে বিনা মূল্যে খাবারের স্টল নেয়া এবং ১১ লাখ টাকায় বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেননি শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা একাডেমি থেকে খাবারের কোনো দোকান নিইনি। আর বিক্রির তো প্রশ্নই আসে না।’
‘শয়ন ও সাদ্দাম জানেন’
ছাত্রলীগকে বিনা মূল্যে খাবারের দোকান বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে কথা হয় বাংলা একাডেমির হিসাব রক্ষণ ও বাজেট উপবিভাগের উপপরিচালক কামাল উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে এই দোকান দেয়ার বিষয়ে শয়ন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন) সাহেবের সাথেও কথা হয়েছে; সাদ্দাম (কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতিসাদ্দাম হোসেন) সাহেবও জানে। এই স্টল নেয়ার জন্য একটা পক্ষ এসেছিল। এরপর তাদের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিকে ফোন দেয়া হয়েছিল। এ সময় সাদ্দাম সাহেবকেও ফোন দেয়া হয়েছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যদি বলে আমাকেও একটা স্টল দাও, তখন তো ঝামেলা হয়ে যাবে। এ জন্য দুইজনের সাথেই কথা বলে শুধুমাত্র একটা দোকান দেয়া হয়েছে।’
ছাত্রলীগকে কেন বিনা মূল্যে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে খাবার ও সংশ্লিষ্ট স্টল এবং মোবাইল ফোন টাওয়ারের স্থান বরাদ্দ ও তত্ত্বাবধান কমিটির আহ্বায়ক মো. হাসান কবীর বলেন, ‘দেশ চালায় কারা? পুলিশ আর ছাত্রলীগই তো চালায়। তো তাদেরকে সমীহ করতে হবে না? তাদেরকে আমরা অনেক কিছু দিইনি।
‘সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একটা স্টল দিয়েছি। না হয় অনেক গ্রুপকে দিতে হতো।’
হাসান কবীর বলেন, “তারা (ছাত্রলীগ) আমাদের বলেছে, ‘আমরা ছাত্র মানুষ। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। আমাদের হাত খরচ লাগে।’ তখন আমরা বলেছি, ‘তাহলে আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্র বা লোকাল যেই নামে আসেন না কেন, আমরা শুধু একটা স্টলই দিতে পারব।’ তাদেরকে এও বলেছি, ‘আপনারা দায়িত্ব নেন, ছাত্রলীগের নামে যেন আর কেউ না আসে।’ তারা আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, ‘কেউই আসবে না। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করব।’”
এগুলো (বিনা মূল্যে দোকান বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি করা) ঠিক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো ঠিক না। এগুলো ভুল।’
ছাত্রলীগের ভাষ্য
খাবারের স্টল নেয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, “এটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আর এটি করারও কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র স্টল ‘মাতৃভূমি প্রকাশনা’ স্টল। এটিকে কেন্দ্র করেই যে আড্ডা বইমেলায়, এটিই আমাদের একমাত্র কর্মসূচি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়ন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার জানা নেই।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ‘বইমেলায় ছাত্রলীগের খাবারের স্টল থাকার প্রশ্নই আসে না। এগুলোর সাথে কারও যুক্ত থাকার কোনো সুযোগ বা অবকাশও নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে এগুলোর সাথে জড়িত থাকলে সেটার দায় ছাত্রলীগ নেবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘বাংলা একাডেমি থেকে আমি কোনো খাবারের স্টল নিইনি, এটা কনফার্ম। এগুলো আমার রাজনৈতিক শিক্ষার মধ্যে পড়ে না, তবে আমার প্রেসিডেন্ট (মাজহারুল কবির শয়ন) নিয়েছে কি না, সেটা আমি বলতে পারব না।’
ছাত্রলীগের নামে খাবারের স্টল বরাদ্দ নেয়া বিব্রত করছে কি না জানতে চাইলে সৈকত বলেন, ‘অবশ্যই এটি আমাকে বিব্রত করছে। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে; বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য কাজ করবে।
‘সেখানে আমরা দোকানদারি করতে যাব কেন? এটি তো আমাদের কাজ না। যারা এসব করছে, তারা সংগঠনের নীতি-আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ে জড়িত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রতিবেশী এক মুদি দোকানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর ৬৫ বছর বয়সী আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানতে পারি। খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।
‘রাত ৯টার দিকে অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার শিশুটির ফুফু জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাড়ির পাশের মুদি দোকানে যায় শিশুটি। দোকানের মালিক শিশুটিকে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দোকানের ভেতরে নিয়ে যান। সে সময় তিনি শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। হঠাৎ তিনি (ফুফু) সেখানে উপস্থিত হলে হাতেনাতে বিষয়টি ধরে ফেলেন।
ফুফুর অভিযোগ, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে উল্টো মুদি দোকানি ও তার ছেলেরা তার ওপর চড়াও হন। অভিযুক্তের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ধর্ষণের অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা উল্টো নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
শিশুটি বলে, ‘শুধু আমি একা না, দাদার দোকানে যারাই যায় আশেপাশে কেউ না থাকলে তিনি বাচ্চাদের তার কোলে নিয়ে বসায়। বিস্কুট দেয়, বেলুন দেয়। তারপর শরীরে হাত দেয়।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মুদি দোকানির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আগেও পাওয়া গিয়েছিল। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত দোকানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে প্রদত্ত ‘নো অর্ডার’ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় ‘নো অর্ডার’ মর্মে আদেশ প্রচারিত হয়ে থাকে। বিষয়টির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা অনেক সময়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
“ফলে ‘নো অর্ডার’-এর প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট হতে কোনো মামলায় ‘নো অর্ডার’ মর্মে আদেশ প্রচারিত হলে আবেদনকারীর প্রার্থিত প্রতিকার মঞ্জুর করা হয়নি এবং চেম্বার কোর্ট বিতর্কিত আদেশ বা রায়ের বিষয়ে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই আবেদনটি নিষ্পত্তি করেছেন মর্মে গণ্য করতে হবে।”
জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে থাকা ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দুদকের আলাদা দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
মির্জা আজমের নামে ১৮টি ও স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে ১৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া তাদের ১৯ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অষ্টম সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে আগামীকাল স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে বিষয় করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি, টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘ঈদ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হবে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বস্তিতে অভিযান বৃদ্ধি করা হবে।’
ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।
ঢাকা জেলার আদালত পরিদর্শক আকতার হোসেন বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন মো. সজিব, মো. রাকিব ও শাওন ওরফে ভ্যালকা শাওন। এ ছাড়া লাশ গুমের ঘটনায় তাদের তিনজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
এদিকে আলী আকবর ও মো. রিয়াজ নামে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা তিন আসামি রাকিব, রিয়াজ ও শাওনকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে দণ্ডিত রাকিব এবং শাওনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডিত সজিব পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১১ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আঁটিবাজার এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। ডিউটি চলাকালে সকাল পৌনে ৮টার দিকে জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের সামনে পুকুরের পানিতে একজনের লাশ পানিতে ভাসছে। পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় পুলিশ মামলা করে তদন্ত শুরু করে। প্রথমে ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার বান্ধবী বৃষ্টি আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, এটা তার বান্ধবী মারিয়ার লাশ।
স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ শাওনকে গ্রেপ্তার করে। শাওন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। সেখানে জানান, তিনি, মো. রাকিব, মো. সজিব, মো. আলী আকবর মিলে ভিকটিম মারিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের পানিতে ফেলে রাখেন। পরে রাকিব এবং সজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও একই কথা বলে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক অলক কুমার দে। মামলার বিচার চলাকালে ১৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে দেশব্যাপী সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বি।; গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পের মালিকপক্ষ তথা বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশ একত্রে বসে ঈদের পূর্বেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি, বোনাস ইত্যাদি পরিশোধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষের ঈদ উপলক্ষে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা নিশ্চিত করতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি নারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হবে। মার্কেটগুলোতে বিশেষ রাত্রিকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল মার্কেট সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
‘এ ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ নিশ্চিতকল্পে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, লঞ্চ/ফেরি ঘাটসমূহে অনিয়ম ও অবৈধ সিরিয়াল প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করা এবং পরিবহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বলা হয়, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু এবং ফ্লাইওভারসহ টোল প্লাজাগুলোতে যানজট নিরসনে ইটিসিসহ (ইলেট্রিক টোল কালেকশন) দ্রুত টোল আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যানজট নিরসনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চিহ্নিত ১৫৫ স্পটে আইপি/সিসি ক্যামেরা স্থাপনপূর্বক ঈদুল ফিতরের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময় মনিটরিং জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করা যেতে পারে।
‘যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঈদের পূর্বের সাত দিন ও পরের সাত দিন সুনির্দিষ্ট পূর্ব তথ্য ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সড়কের উপরে মোটরযান তথা যানবাহন থামানো যাবে না। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহনকারী বা যাত্রীবাহী যানবাহন ব্যতীত স্থলবন্দর ও নৌবন্দরসহ যেকোনো জায়গা থেকে ছেড়ে আসা নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ও লম্বা যানবাহনগুলোকে ঈদের পূর্বের তিন দিন এবং পরের তিন দিন যেন মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে বা নৌরুটে ফেরি পারাপার করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঈদের আগে পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন নদীতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে আকস্মিক দুর্ঘটনায় উদ্ধারকার্য পরিচালনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম, রেসকিউ বোট, ডুবুরি, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদিসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রয়োজনে কোস্ট গার্ডের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে।
‘দুর্ঘটনা কবলিত অথবা রাস্তা/সেতুতে কোনো গাড়ি নষ্ট হলে দ্রুত দুর্ঘটনা কবলিত/অকেজো গাড়ি অপসারণ/রেকারিং করে পার্শ্ববর্তী খালি জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। যমুনা ও পদ্মা সেতুসহ যানজটপ্রবণ এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক রেকারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
এ ছাড়াও ঈদের সময় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কন্ট্রোলরুম স্থাপন করতে হবে। সব কন্ট্রোল রুমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের (০১৩২০০০১২২৩) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় সমন্বয় জোরদার করতে হবে।
আরও পড়ুন:চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য