বইমেলায় সমগ্র জাতির রুচি, মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ মেলায় একটি জাতির অতীত ও বর্তমানের পরিচয় শুধু নয়, পূর্বাভাস পাওয়া যায় ভবিষ্যৎটি কেমন হবে সেটির বিষয়েও। অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এ প্রতিদিন প্রায় শ খানেক বই বের হচ্ছে। তার মধ্যে কতটি বই মানুষের চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে বা কতটি বই মানসম্মত সেটি এখন অবশ্য বিবেচ্য বিষয়।
শিষ্টজনেরা বলছেন, কত বেশিসংখ্যক নতুন বই মেলায় এলো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানের দিক থেকে কত গুরুত্বপূর্ণ নতুন বই বের হলো, কত বেশি ক্ল্যাসিক পুনর্মুদিত হলো, ছাপা, বাঁধাই প্রভৃতির মান কতটা উন্নত সেগুলো।
ফেসবুকে কারও ভালো ফলোয়ার থাকলেই তারা বই বের করে ফেলছেন আর তার অনুসারীরা সেসব বই কিনতে প্রতিদিন ভিড় জমায় মেলায়। আর এসব দেখেই তাদের বই প্রকাশে উৎসাহী হচ্ছেন অনেক প্রকাশক। এক প্রকাশক তো বলেই ফেললেন; বইয়ের মান নয় বইটি কত বিক্রি হচ্ছে সেটিই তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এই পরিস্থিতি উত্তরণে লেখকরা বলছেন, কোনটা সাহিত্য আর কোনটা সাহিত্য নয়, সেটা বোঝা উচিত। কোনটা সৃজনশীল বই, কোনটা মননশীল বই আর কোনটা সৃজনশীল-মননশীল কোনো বর্গেই পড়ে না, সেটাও বোঝা উচিত। যত দিন পর্যন্ত না আমাদের প্রকাশকরা সচেতন হবেন, তত দিন পর্যন্ত একুশে বইমেলা এসব চটুল বইয়ে সয়লাবই থাকবে।
আলোচিত তিশা-মুশতাক দম্পতির বই প্রকাশ করেছে মিজান প্রকাশনী। এই প্রকাশনীর প্রকাশক আ.ন.ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘যারা একটু সেলিব্রিটি তাদের অনেককে আমি বলে রাখছি, ভাই তাড়াতাড়ি বই লেখেন। আপনার বই আমি প্রকাশ করবো। আর লিখতে না পারলে আমাকে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ২৫ জন নতুন লেখকের বই প্রকাশ করি।’
প্রকাশ করার জন্য মানসম্মত বই না পেলে কী করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব বই মানসম্মত হবে এরকম তো কোনো কথা নেই। ২৫টার মধ্যে ১০টা ভালো হলে আর পাঁচটা ভালো বিক্রি হলে তো হয়েছেই। বিক্রির জন্য পাঁচটি বই-ই যথেষ্ট। প্রয়োজনে আর ২০টি বইয়ে লস দেব। আমরা মূলত বিক্রিকেই প্রাধান্য দেই।’
তিশা-মুশতাকের বই ছাপানোর কারণ সম্পর্কে মিজানুর রহমান বলেন, ‘গতবছর তিশা-মুশতাকের বই আমি প্রকাশ করেছি। তখন ১ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। তাই এই বছর আমরা তার বই আবার প্রকাশ করেছি।’
আপনার প্রকাশনীর সম্পাদনা পরিষদ কয় সদস্যের- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের। তারা হলেন, লেখক নুরুল হক আর এনায়েত রসুল।’
বাকি তিনজন কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন যাকে পাওয়া যায় তখন তাকে নিয়ে নেই।’
পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করার ক্ষেত্রে তারা কোন বিষয়টি প্রাধান্য দেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বই দেই সেই বই-ই তারা অ্যাপ্রুভ করে। তবে মানও যাচাই-বাছাই করে। তবে আমাদের বইয়ে ভুল কম।’
বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে নজর দেয়া উচিত জানতে চাইলে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বইয়ের বিষয়বস্তুর দিকে নজর দেয়া উচিত। বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে কি না বা বইটির বিষয়বস্তু পাঠকের উপযোগী কি না সেসব বিষয় দেখে আমরা বই প্রকাশ করি। যেসব বই পাঠককে বিনোদনও দেবে না আবার কেনো জ্ঞানও অর্জন করা যাবে না সেসব বই কী কাজে লাগবে আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘ভাইরাল লেখকের বই কখনো টিকে থাকে না। তারা সাময়িকভাবে আসে আর কিছুদিন হইচই করে এরপর আবার চলে যায়। তাই এগুলো নিয়ে আমরা আশাহত না। যারা ভালো লেখক, যাদের বইয়ের কনটেন্ট ভালো তাদের বই টিকে থাকে।’
এই প্রকাশক বলেন, ‘সবার আসলে লেখক হওয়া উচিত না। ভালো লেখকের এখন পর্যাপ্ত অভাব। আমরা ভাষা আন্দোলন বা গবেষণধর্মী কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাই না। গল্প উপন্যাসের দিকে না ঝুঁকে তরুণ প্রজন্মের বিষয়ভিত্তিক বইয়ের দিকে ঝোঁকা উচিত।’
আলোচিত-সমালোচিত ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর প্রথম বই বন্দিনি প্রকাশ করেছে আহমদ পাবলিশিং হাউজ। এই হাউজের পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডা. সাবরিনার বইয়ের লেখার মান ভালো। আমরা লেখা দেখেই বই প্রকাশ করেছি। বিক্রিও হয়েছে অনেক। সেলিব্রিটি ভাইরাল কি না এসব বিষয় আমাদের মূল লক্ষ্য না। আমাদের সম্পাদনা পরিষদ রয়েছে তারা যাচাই-বাছাই করেই বই প্রকাশের জন্য নির্বাচিত করেন।’
সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘পাণ্ডুলিপি প্রকাশের বিষয়ে ব্যতিক্রমী বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর লেখার মানের ওপর প্রাধান্য থাকে সবচেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে সম্পাদকের ভূমিকা অনেক পরে। প্রকাশক যখন বইটি ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় তখন সম্পাদকীয় বোর্ডের বিষয়টি আসবে। বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশকের ইচ্ছাটাই মুখ্য। তবে সেক্ষেত্রে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বইটি বের করা হচ্ছে সেটি হচ্ছে মূল বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘লেখালেখি করার স্বাধীনতা সবার আছে। তবে লেখাটা কি আসলে প্রকাশের উপযুক্ত হলো কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকের ভূমিকাই সব। কোন বইটি প্রকাশ করা হলো সেটি পাঠক উপযোগী কি না সেটির দায়ভার যতটা না সেই লেখকের তার বেশি যে বইটি বের করলো সেই প্রকাশকের।’
অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সম্পাদনা ছাড়া আমরা কোনো বই প্রকাশ করি না। প্রকাশক যখন মনে করে বইটি প্রকাশের উপযোগী হয় তখনই তা প্রিন্টে যায়।’
বই লেখকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে বই লেখার অধিকার সবার আছে। সেটি পাঠক কিভাবে গ্রহণ করবে সেটি তাদের বিষয়। এখন অনেক বই-ই সম্পাদনা ছাড়া বের হচ্ছে। অনেক প্রকাশনীরই নিজস্ব সম্পাদকীয় বোর্ড নেই, প্রুফ রিডার নেই। প্রকাশকদের দৈন্যদশার কারণে এমনটা হচ্ছে। সাহিত্যের এই দিকটার খুবই করুণ দশা।’
এদিকে শুক্রবারের মেলা ছিলোলোকে লোকারণ্য। বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, গত শুক্রবারের চেয়ে এই শুক্রবারের ভিড় অনেক বেশি। বিক্রিও হচ্ছে গত শুক্রবারের চেয়ে ভালো। তবে ভিড় অনুযায়ী বিক্রি তেমন হচ্ছে না। আর এটি নিয়ে দুঃখিতও নন প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল থাকার কারণে ঢাকার এক প্রান্ত উত্তরা থেকে পাঠকরা সহজে মেলায় চলে আসতে পারছেন। এ জন্য ভিড়টাও একটু বেশি। তবে সে অনুযায়ী বিক্রি না হলেও এ জন্য আমি দুঃখিত না। মানুষ বইমেলামুখী হচ্ছে এটাই সস্তির খবর। এটাই দরকার ছিল।’
প্রতি শুক্রবারের মতো এই শুক্রবারের শিশুপ্রহরও জমিয়ে তুলেছে সিসিমপুর। বেশ কদিন আগে পহেলা ফাগুন শেষ হয়ে গেলেও মা-বাবাকে নিয়ে বাসন্তি সাজে মেলায় এসেছে অনেক ছোট্ট সোনামনিরা। তাদের হৈ-হুল্লোড় আর দৌড়াদৌড়িতে অনেক মা-বাবাও তাদের শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছেন।
মিরপুর থেকে চার বছরের বাচ্চা তানহাকে নিয়ে আসা বাবা রাসেল মজুমদার বলেন, ‘বাচ্চা বাসায় থাকার কারণে খেলার বা মাঠে দৌড়াদৌড়ির সুযোগ পায় না। তাই মেলায় নিয়ে এসেছি। এখানে তার দৌড়াদৌড়ি আর সিসিমপুরের চরিত্র হালুম টুকটুকি ইকুকে সরাসরি দেখে তার মধ্যে যে খুশির উচ্ছাস দেখতে পাচ্ছি সেটি আমাকেও আনন্দিত করছে।’
১৬তম দিনে নতুন বই ২৯৮টি
এদিন মেলায় এসেছে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৯৮টি নতুন বই। এটি এখন পর্যন্ত নতুন বই আসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা
সকাল দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ক-শাখায় প্রথম হয়েছে ফারহিনা মোস্তাক আযওয়া, দ্বিতীয় হয়েছে অংকিতা সাহা রুদ্র এবং তৃতীয় হয়েছে ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া। খ-শাখায় প্রথম হয়েছে সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, দ্বিতীয় হয়েছেন সুবহা আলম এবং তৃতীয় হয়েছে অন্বেষা পণ্ডিত এবং গ-শাখায় প্রথম হয়েছে সিমরিন শাহীন রূপকথা, দ্বিতীয় হয়েছে আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং তৃতীয় হয়েছন তাজকিয়া তাহরীম শাশা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন।
বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারিসুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশের মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক আব্দুল মালিক আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি কেবল ভালো চিকিৎসকই ছিলেন না, একজন অসাধারণ শিক্ষক ও জনদরদী মানুষও ছিলেন। তার কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. এম আবদুল আলীম, কথাসাহিত্যিক নাহার মনিকা, কবি স্নিগ্ধা বাউল এবং শিশুসাহিত্যিক অপু বড়ুয়া।
শনিবারের বইমেলা
শনিবার মেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। সকাল এগারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: শহীদ সাবের এবং স্মরণ: পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন গিয়াস উদ্দিন, সুভাষ সিংহ রায়, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য