মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের ফলে মর্টারশেল ও বুলেট উড়ে আসায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফ সীমান্তে ও বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে। দফায় দফায় গোলাগুলির শব্দে কাজ বন্ধ রেখেছেন সীমান্তের চাষিরা। সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন সীমান্তের লোকজন
টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া ও জাদিমোরা গ্রামের মাঝামাঝি লালদিয়া সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আবারও থেমে থেমে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ গ্রামটি হ্নীলা ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। ওই সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোমবার ভোররাত ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত লালদিয়া সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের জামবনিয়া, রাইম্মবিল, পেরাংপুরু ও কাইনবন্যা এলাকায় থেমে থেমে মর্টারশেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি হয়েছে।’
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ করে মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ ভেসে আসছে। এটি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, তবে টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজরদারিতে রয়েছে।’
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে চলছে তুমুল লড়াই। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকায়। মর্টারশেল ও বিরামহীন গোলাগুলির শব্দে ঘুম নেই সীমান্তের কয়েক হাজার বাসিন্দার।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, বাইশফারি, ফাত্রাঝিরি, বাজাবুনিয়া, রেজু আমতলি, গর্জবনিয়াসহ সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম। মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুমের তুমব্রু গ্রামে। বাইশফাঁড়ি সময় সীমান্তে অন্তত ৫০০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মিডিয়া সেল থেকে সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে দেয়া বার্তায় বলা হয়, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে।’
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে তিন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মর্টারশেল ও গুলি থেমে নেই। কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। কিছু লোক এপারে ঢুকে বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এতে আমরাও ভয়ে আছি।’
তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা ফজল করিম বলেন, ‘সীমান্তে রাতদিন আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। অনেকে আবার ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি জীবনে কখনোই দেখি নাই।’
কক্সবাজারের দিকে নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার জন্য চলে যাচ্ছেন ফজলুল কবীর। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে আমি কক্সবাজার আমার ভাইয়ের বাড়িতে চলে যাচ্ছি। এখানে গোলাগুলির কারণে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন গোলাগুলি হচ্ছে। আমার বাড়ির পাশে অনেকের ঘরে গুলি পড়ছে।’
আরেকজন ইয়াসমিন চলে যাচ্ছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘এখানে আর এক মুহূর্তের জন্যেও থাকা সম্ভব না। তাই আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে যাচ্ছি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে।’
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘রোববার থেকে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গুলিবর্ষণের পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকে ফায়ার হচ্ছে। ভয়ে গ্রাম ছাড়ছে হাজার হাজার মানুষ।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তে ব্যাপক মর্টারশেল ও গোলাগুলি চলছে আজও। আমরা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সীমান্তে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বলেছি। সবাই মিলে আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি।’
এ বিষয়ে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তবে তাদের সংখ্যা আপাতত বলা সম্ভব নয়। তারা দফায় দফায় আশ্রয় নেয়ার জন্য ছুটে আসছেন। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি বদ্ধপরিকর।’
আরও পড়ুন:বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছেন টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিকরা।
এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং তিন ঘণ্টা ধরে এ অবস্থা চলে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মহাসড়কে চলাচলকারী লোকজন।
সকাল ৯টার পর তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতন-ভাতা পাননি। এ কারণে বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘টিঅ্যান্ডজেড কারখানার শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে মহাসড়কে নেমে এলে যানজট লেগে যায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।’
কুমিল্লা নগরে চিকিৎসকের ভুলে এক প্রসূতির মূত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
নগরের ঝাউতলার এইচআর হসপিটালে শুক্রবার রাত আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ইসরাত জাহান এরিন (২০) কুমিল্লা সদর উপজেলার শিমপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের মেয়ে। বছরখানেক আগে শিমপুরের পাশের ভুবনঘর গ্রামের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইসমিত পাশা দিদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
স্বামী দিদার অভিযোগ করেন, চিকিৎসক মারজান সুলতানা নিঝুম অস্ত্রোপচারে সময় এরিনের নাড়ি কেটে ফেলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
তিনি আর্তনাদ করে বলেন, ‘একজন চিকিৎসকের ভুলে আমার স্ত্রী মারা গেল। সদ্য জন্ম নেয়া ছেলেটিও মাকে হারাল।’
এরিনের মামা হাসনাত জানান, এরিন সন্তানসম্ভবা ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে নগরের ঝাউতলার এইচআর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতেই তার ভাগনির অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক নিঝুম।
তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে এরিনের অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসক পালস খুঁজে না পেলে তাকে আইসিউতে নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে এরিনের স্বজনরা পার্শ্ববর্তী মুন হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পর এরিনের পেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় এরিনের।
হাসনাতের অভিযোগ, চিকিৎসক একটি নাড়ি কেটে ফেলায় তার ভাগনির মৃত্যু হয়েছে।
এরিনের বাবা মোবারক হোসাইন বলেন, ‘তারা আমার মেয়ের নাড়ি কেটে ফেলেছে। আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় পার করেছে। নার্সরা অনেক দুর্ব্যবহার করেছে।
‘তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি আমি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
চিকিৎসক মারজান সুলতানা নিঝুমকে কল করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার রাতে ঘটনা শোনামাত্রই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার শনিবার সকালে জানান, তিনি ঘটনা শুনে তদন্ত দল গঠন করেছেন। তদন্তে দোষী সাব্যস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
নগরের দক্ষিণ খুলশীর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভিআইপি হাউজিং সোসাইটি জামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে শুক্রবার তিনি এ সেবার কথা উল্লেখ করেন।
মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘নগরীর মেমন হাসপাতালের ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল স্থাপন করেছি। কারও ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে সেখানে বিনা মূল্যে এনএস-১ এন্টিজেন টেস্ট করাতে পারবেন।
‘ফ্রি টেস্টের পাশাপাশি আক্রান্তদের সেবা দিতে প্রস্তুত আমাদের চিকিৎসকরা। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম চালু করা হয়েছে এবং মশার লার্ভা ধ্বংস করতে স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়, যা ডেঙ্গু রোগ বিস্তারের জন্য দায়ী। এ জন্য বাড়ির আঙিনার কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না।
‘ছাদে বা বারান্দায় ফুলের টব বা পানির টব খালি রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যা নগরবাসীর সচেতনতার মধ্য দিয়ে সম্ভব।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম মহানগরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন।
এক্সপ্রেসওয়ের ইপিজেড থানার বে-শপিং সেন্টার এলাকায় শুক্রবার রাত ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন মোহাম্মদ মোক্তার (২৮) ও মোহাম্মদ রুবেল (৩৬), যারা নগরের সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজারের দিকে যাওয়ার সময় ইপিজেড এলাকায় দুর্ঘটনায় ঘটে। ধারণা করছি, মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে আসার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কবাতির খুঁটিতে ধাক্কা গেলে দুই আরোহী ছিটকে পড়ে যায়।
‘দুইজনই ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। একজন খুঁটিতে আটকে ছিলেন, অন্যজন রাস্তায় ছিটকে পড়েছিলেন।’
ওসি আরও বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি এবং পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এটিই প্রথম সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু।
এর আগে ছিনতাইকারী ‘ফাঁদ’ সুতাতে আটকে এক যুবক আহত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের সমালোচনা করে দেশে বৈষম্যহীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিুর রহমান।
শুক্রবার সকালে নীলফামারীর বড় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছরে দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। সব ধরনের, সব বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
‘তারা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলো সিলগালা করে দিয়েছিল। ঘরে বসেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা শান্তি পায়নি। ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধীর মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে বিচারের নামে খুন করা হয়েছে।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পরই ঝাল মিটিয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। তারা তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭জন চৌকস, সাহসী ও দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। হত্যা করেছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের।’
তিনি বলেন, ‘রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘাতকদের পিলখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সুষ্টি করা হয়েছিল। ঘাতকদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেয়া হয়নি। সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।’
জামায়াত আমির বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামী। মিথ্যা মামলায় তাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে হত্যার অভিযোগ করেন ডা. শফিকুর।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের শাসনামলে ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। যুদ্ধপারাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যে মামলা হয়েছিল, সেখানে একটি মামলাও তাদের বিরুদ্ধে ছিল না।
‘এছাড়া শেখ মুজিব সরকার সে সময় যাচাই-বাচাই করে ১৯৫ জনের যে তালিকা করেছিল তাদের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের সীমানার ভেতরের কোনো নাগরিক ছিল না।’
ডা. শফিকুর বলেন, ‘৫ আগস্ট যখন পরিবর্তন এলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীকে অনুরোধ করেছি ধৈর্য্য ধরার জন্য। দেশবাসী আমাদের কথা শুনেছে।
‘আওয়ামী লীগ নির্দয় হতে পারে, খুনি হতে পারে। কিন্তু দেশের ১৮ কোটি মানুষ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক।’
জামায়াত আমির বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন পালাবেন না। তিনি চলে গেলেন তার প্রিয় দেশে। তারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা তাদের সম্মান করি। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে অনুরোধ করব- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫০টির অধিক মামলা হয়েছে। আমাদের বিচারালয় যখন তাকে চাইবে তখন তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেবো না। আমরা ঘুষ খাবো না, কাউকে খেতেও দেবো না। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই- যে সমাজে লেখাপড়া করার পর ‘আমরা শিক্ষিত বেকার’ শব্দটি আমাদের কানে আসবে না।
‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সমাজের উন্নয়নে নারীরা অবদান রাখতে পারেন। নারীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ও মর্যাদার সঙ্গে জাতি গঠনে অবদান রাখবেন।’
নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল প্রমুখ।
আরও পড়ুন:ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুস সালাম হত্যা মামলার আসামি তিনি। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকার সাভারে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে সাবেক এমপিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের বরাত দিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জামায়াতের কর্মী হত্যা ছাড়াও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকের নামে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদের বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের দুটি মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামে-বেনামে বিগত সময়ে ক্রয়কৃত সম্পদের দলিলপত্র অনুসন্ধান করে অনুলিপি দিতে জেলা রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ তথ্য বৃহস্পতিবার রাতে নিশ্চিত করেন দিনাজপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাজেদুল হক।
তিনি বলেন, গত ৬ নভেম্বর বিকেলে ডাকযোগে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশপত্র দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় থেকে পেয়েছেন।
দিনাজপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, তার স্ত্রী নাদিরা সুলতানা, দুই মেয়ে ইশরাক মারজিয়া ও রাইসা মুমতাহিনা এবং এক ছেলে রাফিদুর রহিমের নামে-বেনামে দিনাজপুর সদর ও জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কোনো জমি, অবকাঠামো, মিল, কারখানা বা অন্য কোনো মূল্যবান সম্পদ কেনা হয়ে থাকলে ওই দলিলের অনুলিপি অনুসন্ধান করে তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য