উদ্দেশ্য ছিল চুরি। চুরি করার সময় দেখে ফেলায় হত্যা করা হয় প্রবাসীর স্ত্রী এবং তার ১০ বছরের শিশুকে। পাবনার চাটমোহর উপজেলার চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- উপজেলার দিঘুলিয়া গ্রামের ২৬ বছর বয়সী মো. সাদ্দাম হোসেন ও তার ভাই ৩৭ বছর বয়সী মো. হোসেন আলী এবং রাজবাড়ী জেলার সদর থানার খানখানাপুর দত্তপাড়ার ২৮ বছর বয়সী মো. হুমায়ন মিজী ওরফে হৃদয়।
আসামিদের মধ্যে মো. সাদ্দাম হোসেন ২০২২ সালের অক্টোবরে চাটমোহরের ফৈলজানা এলাকায় একজন সিএনজি ড্রাইভার হত্যা মামলাসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৫ বছর বয়সী লাবনী খাতুন ও ৮ বছরের রিয়াদ হোসেন দিঘুলিয়ার আব্দুর রশিদের স্ত্রী ও সন্তান।
পুলিশ সুপার জানান, আব্দুর রশিদ গত ৭ বছর যাবত মালয়েশিয়া থাকেন। প্রবাসী রশিদের স্ত্রী লাবনী খাতুন তার বাড়ি নির্মাণের জন্য কয়েক দিন আগে প্রায় ২৫ হাজার ইট কেনেন এবং ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করে বাড়িতে রাখেন।
গত ২৫ জানুয়ারি লাবনী তার ১০ বছরের ছেলে রিয়াদকে নিয়ে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরের দিন সকালে ঘরের দরজা খোলা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো দেখে সবাই তাদের খোঁজাখুজি শুরু করে। একপর্যায়ে লাবনীর ছাগল রাখার ঘরে লাবনীর মরদেহ এবং বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে শিশু রিয়াদের মরদেহ গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারে তদন্তে নামে।
ওসি বলেন, ‘নিহত লাবনী খাতুন বিপুল টাকায় ইট কেনা এবং ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের খবরে আসামিদের ধারনা হয়, তাদের কাছে অনেক টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার আছে। এই ধারনা নিয়ে আসামি মো. হোসেন আলী ভুক্তভোগীদের বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করেন। পরবর্তীতে তার ছোট ভাই সাদ্দাম তাদের পূর্বপরিচিত ফরিদপুর জেলার আরেক দূর্ধর্ষ চোর হুমায়ুন কবির হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ২৫ জানুয়ারি রাতে ওই বাড়িতে চুরি করতে যান।
‘এক পর্যায়ে লাবনী খাতুন ও তার সন্তান রিয়াদ টের পেয়ে গেলে তারা সঙ্গে সঙ্গে তাদের হত্যা করেন এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য রিয়াদের মরদেহ বাড়ির পাশের গাছে ঝুলিয়ে রাখেন এবং লাবনীর লাশ গোয়াল ঘরে ফেলে রাখেন। পরে স্বর্ণের আংটি, হার, হাতের বালা, কানের দুল, দুই জোড়া রুপার নুপুরসহ বিভিন্নি মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্তের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু বক্কর সিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাসিবুল বেনজির, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমরান মাহমুদ তুহিন, সদর থানার ওসি রওশন আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত জসীম উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম নিজউবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাড্ডা থানায় একটি মারামারির ঘটনায় জসীম উদ্দীন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গ্রেপ্তার আসামিকে বাড্ডা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ২৫ জনকে সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানকে হত্যাচেষ্টার মামলা থেকে খালাস দিয়েছে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
পুলিশ বুধবার মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় বিএনপি চেয়ারপারসনসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালতের মহানগর হাকিম (এমএম) শরিফুর রহমান।
খালাস পাওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের ব্যানারে শাহজাহান খানের নেতৃত্বে শত শত মানুষ গুলশান এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করে। এ সময় মামলার আসামিরা সমাবেশে বোমা নিক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
ঢাকা জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বাদী হয়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
তবে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী ও প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবদুস সোবহান।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কৃষককে অপহরণ করেছে অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ সময় সোহেল, কায়সার উদ্দিন ও মো. সাকিব নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। এতে কম্বনিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া পাড়া পাহাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
অপহৃতরা হলেন- হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মাবুদের ছেলে জাকির হোসেন ও ভুলু মিয়ার ছেলে জহির। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়রা দলবেঁধে পাহাড়ে অপহৃতদের উদ্ধার করতে গেলে ডাকাত দল তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে দুজনকে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশে সোপর্দ করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
তিনি বলেন, অপহরণের শিকারদের উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িতদের ধরে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুদ্দীন আল মোবারক বলেন, ‘পুলিশের একার পক্ষে গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহরণ রোধ করা সম্ভব নয়। টিম গঠন করে যৌথবাহিনী অভিযান চালালে অপহরণ রোধ করা সম্ভব হবে। তাই অপহরণ রোধে যৌথবাহিনী গঠন করে পাহাড়ে অভিযান চালানোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
আরও পড়ুন:পার্বত্য শান্তি চুক্তির অনুষ্ঠানে আসা না আসা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দুটি দলের মধ্যে কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধ চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে সাজেকে পাঁচ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়দা আক্তার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিনের জন্য সাজেক ভ্রমণে নিরুসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েকদিন ধরে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমা জেএসএস ও প্রসীত দলের ইপিডিএফ দফায় দফায় গোলাগুলিতে জড়িয়েছে। তবে আঞ্চলিক এই দু’দলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একজনের প্রাণহাণির খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
সাজেকে আটকা পড়া গাড়িচালকরা বলেন, সকালে খাগড়াছড়ি থেকে ২৭টি গাড়ি সাজেকে গেছে। এই গাড়িগুলোতে করে আসা চার শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে যায়। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিকেলে পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে আসেনি।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, সাজেক ও মাচালং সড়কের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শীপপাড়া নামক এলাকায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এই গোলাগুলির ঘটনার কারণে কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। রাতে পাঁচ শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
রাঙ্গামটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, দুই আঞ্চলিক দলের গোলাগুলির ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিন সাজেকে পর্যটক ভ্রমণকে নিরুসাহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা আছেন তাদেরকে নিরাপদে আজ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তোলা তার দেহাবশেষের ডিএনএ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলেছে।
এমন প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হারিছ চৌধুরীকে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী স্থানে দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ সংক্রান্ত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছে।
ঢাকার সাভারে ২০২১ সালে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা মরদেহটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর।
এর আগে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়।
সাভারের একটি মাদ্রাসার কবরে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে সমাহিত হারিছ চৌধুরীর মরদেহ (দেহাবশেষ) তুলে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
হারিছ চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় শনাক্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচালককে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী সাভারে ২০২১ সালে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে দাফন করা মরদেহটি (দেহাবশেষ) গত ১৬ অক্টোবর কবর থেকে তোলা হয়। দেহাবশেষ উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা। পরে হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে ইতিবাচক ফল আসে, যার মধ্য দিয়ে হারিছ চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হয়।
রিটে আর্জি ছিল, সাভারের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ যা আছে তা তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করে তার প্রকৃত পরিচয় নির্ধারণ। তার শেষ ইচ্ছা ছিল- বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানসহ নিজ বাড়িতে দাফন করা।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইছা।
রিটের পক্ষে আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, হারিছ চৌধুরীর মেয়ের নমুনর সঙ্গে মরদেহের ডিএনএ মিলেছে। অর্থাৎ মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী। দেহাবশেষ বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাকে তার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী দাফনের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
রিটের পক্ষে আইনজীবী বলেন, তৎকালীন সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য হারিছ চৌধুরী আত্মগোপনে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে ঢাকা শহরেই ছিলেন তিনি। আমৃত্যু ঢাকা শহরেই ছিলেন।
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু তৎকালীন সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপে তার মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার অদূরে সাভারের একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাকে কবর দিতে বাধ্য করা হয়। সরকার সে সময় তার প্রকৃত পরিচয় অনুযায়ী কোনো মৃত্যুসনদ দেয়নি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মানও দেয়া হয়নি।
এর আগে ২০২১ সালে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে সাভারে জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে বলেন, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে- হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।
তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে যেন কখনও প্রশ্ন না ওঠে সেটা ডিটারমিন করার জন্য রিট করেছি। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে- সন্তান হিসেবে এটা খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। এখনও মানুষ জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি মারা গেছেন! আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি।’
আরও পড়ুন:বিচার শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে পাঠাতে ভারতের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য হবে ভারত।
গত ৩০ নভেম্বর নিক্কেই এশিয়াকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা, সংবিধান এবং বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। জানুয়ারির মধ্যে ওই কমিশনগুলোর সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার বাস্তবায়ন করার কথা জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এ সংস্কার বাস্তবায়নে সময় লাগবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই সংস্কার বাস্তবায়নে সময় লাগবে। কেননা ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে আমরা একদম শূন্য থেকে শুরু করেছি।”
নির্বাচন ঠিক কখন হবে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ভর করছে সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর। এর ফলাফলই সময় নির্ধারণ করে দেবে।’
সাধারণ নির্বাচনে ড. ইউনূস প্রার্থী হবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘না, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি সবসময়ই রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছরের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কয়েক শ শিক্ষার্থী নিহত হন। এরপরই শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন হাসিনার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ‘তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
‘অক্টোবরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং তার বেশ কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।’
এ বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় হলে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ভারতকে অবহিত করা হবে বলে জানান ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘বিচার শেষে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় এলে আমরা ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে হস্তান্তরের অনুরোধ জানাব।’
এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত এ আইন মেনে কাজ করতে বাধ্য হবে।’
আরও পড়ুন:ইমাম হোসেন তাঈম হত্যা মামলায় বুধবার যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সকালে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানি শেষে এ আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
পাশাপাশি আবুলকে আগামী ১২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়।
আইনজীবী মোহাম্মদ আবুল হাসান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার পক্ষে আজ ওকালতনামা দাখিল করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে সময়ের আবেদন করা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করেছেন।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, শহীদ ইমাম হোসেন তাঈমকে কাছ থেকে গুলি করার পর থানায় নিয়ে মুখমণ্ডল বিকৃত করে মৃত্যু নিশ্চিত করার ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলায় আবুল হাসান এজাহারভুক্ত আসামি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য