দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শনিবার রাতে দেশের পাঁচ জেলা থেকে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে এসব ঘটনাগুলো ঘটেছে।
সিলেটের চারটি কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
ভোটের আগের রাতে সিলেটের চারটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আতঙ্কিত হয়ে কেন্দ্রের ভেতর থেকে হুড়োহুড়ি করে বাইরে বেরিয়ে পড়েন সেখানকার দায়িত্বরতরা।
এ ছাড়া নগরের শাহজালাল ব্রিজের ওপর অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মশাল জ্বালিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মিছিল করতেও দেখা গিয়েছে।
শনিবার রাত আটটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রাত আটটার পর থেকে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, দক্ষিণ সুরমার সিলাম পিএল মাল্টিলেটারাল হাইস্কুল কেন্দ্র এবং টুকের বাজার এলাকার হাজী আব্দুস সাত্তার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় অগ্নিসংযোগের ভয়ে এসব কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা বাইরে বেরিয়ে আসেন।
রাত পৌনে আটটার দিকে সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডে মশাল মিছিল বের করে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। মিছিল শুরুর পরপর বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর মিছিলটি নগরীর শাহী ঈদগাহের দিকে এগোতে থাকলে দরটির নেতা-কর্মীরা আরও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
সে সময় কিছু সময়ের জন্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা জ্বলন্ত মশাল রাস্তায় ফেলে তারা সটকে পড়েন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মশাল সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।
অপরদিকে একই সময় সিলেট নগরীর শাহজালাল ব্রিজের উপর অগ্নিসংযোগ করেন সিলেট যুবদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা ব্রিজের ওপর কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণ এবং ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এসব ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি। এখনও সিলেটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
কালকিনিতে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
মাদারীপুরের কালকিনিতে একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে আরও একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত ৮টার দিকে কালকিনি উপজেলার ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এটি গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬ শ’ ৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ শ’ ৭০ জন, আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৮শ’ ২২ জন।
একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে সরকারি রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনি সরঞ্জামাদি নিয়ে ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রে পৌঁছান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে রাতে হঠাৎ কেন্দ্রের সামনে ককটেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
খবর পেয়ে কালকিনি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
কালকিনি থানার ওসি সরদার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’
মাদারীপুর-৩ আসনের সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে মূলত ককটেল বিস্ফোরণ হয়। উদ্ধার হওয়া ককটেলটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দক্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উদ্ধার হওয়া ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করা হবে।
সুনামগঞ্জের ভোটকেন্দ্রসহ পৃথক ৪ স্থানে আগুন
সুনামগঞ্জে ধর্মপাশায় পৃথক তিনটি স্থানে খড়ের গাদায় এবং মধ্যনগরে একটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ধর্মপাশা-বাদশাগঞ্জ সড়কের পাশে মোদাহরপুর ও আহম্মদপুর গ্রামের পৃথক তিনটি খড়ের গাদায় আগুন দেয় দুর্বত্তরা। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ধর্মপাশা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ধর্মপাশা থানার ওসি শামসুদ্দোহা বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে দুর্বৃত্তরা। ধর্মপাশার কোনো ভোটকেন্দ্র বা কোথাও যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশের সর্তক অবস্থান রয়েছে।’
অপরদিকে ওইদিন রাত ৩টার দিকে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দুর্বৃত্তরা।
মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, মধ্যনগরের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাত তিনটার দিকে পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষের জানালা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে দ্রুত আগুন নেভানোর ফলে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই এই অগ্নি সংযোগ করতে পারে বলে জানান তিনি।
নোয়াখালীতে হঠাৎ বিপুল ককটেল বিস্ফোরণ, জনমনে আতঙ্ক
ভোটের আগের রাতে নোয়াখালীতে বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিসিস্থিতি স্বাভাবিক করা চেষ্টা করেন।
শনিবার রাত ১০টা থেকে জেলা শহর মাইজদী ও আশেপাশের ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন স্থানে এসব ককটেল ও পটকার শব্দ পাওয়া যায়।
কাদির হানিফ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাত ১০টার পর কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আমারা তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন।’
শুধারাম মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। জড়িতদের ধরার চেষ্টা করছি।’
হবিগঞ্জে বিপুল ককটেল বিস্ফোরণ
শনিবার ভোটের আগের রাতে জেলা নির্বাচন অফিসসহ হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
শায়েস্তানগর সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পর শনিবার রাত ৮টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণের পর শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থান নেন পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
নিউজবাংলার সিলেট, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য ও ছবি নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুস সালাম হত্যা মামলার আসামি তিনি। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকার সাভারে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে সাবেক এমপিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের বরাত দিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জামায়াতের কর্মী হত্যা ছাড়াও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকের নামে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদের বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের দুটি মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামে-বেনামে বিগত সময়ে ক্রয়কৃত সম্পদের দলিলপত্র অনুসন্ধান করে অনুলিপি দিতে জেলা রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ তথ্য বৃহস্পতিবার রাতে নিশ্চিত করেন দিনাজপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাজেদুল হক।
তিনি বলেন, গত ৬ নভেম্বর বিকেলে ডাকযোগে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশপত্র দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় থেকে পেয়েছেন।
দিনাজপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, তার স্ত্রী নাদিরা সুলতানা, দুই মেয়ে ইশরাক মারজিয়া ও রাইসা মুমতাহিনা এবং এক ছেলে রাফিদুর রহিমের নামে-বেনামে দিনাজপুর সদর ও জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কোনো জমি, অবকাঠামো, মিল, কারখানা বা অন্য কোনো মূল্যবান সম্পদ কেনা হয়ে থাকলে ওই দলিলের অনুলিপি অনুসন্ধান করে তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিস্ফোরক মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে আওয়ামী লীগের এক নেতার কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলমের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বেলাল হোসেন সৌখিন নামের বিএনপির ওই নেতা। এ ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায়।
মোবাইল ফোনে বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাবেক ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে সৌখিন এই চাঁদা দাবি করেন। এ বিষয়ে দুই নেতার কথোপকথনের এক মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
চাঁদা দাবি করা বেলাল হোসেন সৌখিন বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক। আর সামছুল আলম খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
জানা যায়, সোমবার (৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গোবরচাঁপা হাট নামক স্থানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া অবিস্ফোরিত ছয়টি ককটেল উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের ৪০ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর এই মামলার বাদী হলেন বেলাল হোসেন সৌখিন।
এই মামলায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাবর আলীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানতে চাইলে সামছুল আলম খান বলেন, ‘বিএনপি নেতা সৌখিন আমার কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করার কারণে গোবরচাঁপা হাটে ঘটে যাওয়া ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় আমাকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতেই প্রমাণ এটি এক সাজানো মিথ্যা মামলা। আমি এর তীব্র প্রতিবাদসহ সঠিক বিচার দাবি করছি।’
বেলাল হোসেন সৌখিন এ বিষয়ে বলেন, “ঘটনাটি অনেক আগের। উপজেলা পরিষদ বাতিল হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মানিককে এল লাখ টাকা দেয়ার খবর পাই। সেই জন্যই আমিও তাকে ফোন করে বলেছি মানিককে দিলে আমাকেও দুই লাখ টাকা দিতে হবে। আর ‘চেয়ারম্যানের মরণ মোর হাতে ছিল’ এমন ডায়ালগটার প্রশংসা করলে তিনি হাসতে থাকেন।”
এদিকে বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক। মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘দলের নেতাদের সাথে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেই ব্যবস্থা নেবো।’
স্থানীয় বিএনপির আরেক নেতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এই মামলা তাদের কাছে এখন চাঁদা আদায়ের রসিদ হয়ে গেছে।’
জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি চৌধুরী টিপু মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ওই কল রেকর্ডের ঘটনা এখনকার না, মামলার অনেক আগের। বিষয়টি গতকাল আমি জেনেছি। তবে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যে বা যারা এ ধরনের কাজ করবে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সম্প্রতি হওয়া বিস্ফোরক মামলার তদন্ত সঠিকভাবেই করা হবে জানান থানার ওসি শাহজাহান আলী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনের অডিও ক্লিপটি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাদের কথোপকথন পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
সৌখিন: হ্যালো, ভাই আমি চ্যাংলার সৌখিন।
সামছুল আলম: হ্যা ভাই, ভালো ভাই?
সৌখিন: চিনতে পারছেন?
সামছুল আলম: হ্যাঁ ভাই চিনতে পারছি, ‘ক’।
সৌখিন: আপনি ওই ম্যানক্যাক (মানিককে) বলে ওই ইয়ে দিছেন। দুই লাখ টাকা বলে দিছেন ম্যানক্যাক?
সামছুল আলম: কোনো ট্যাকাপয়সা আছে ভাই? এলা গুজব, কুটি থ্যাকা শুনলি ক।
সৌখিন: আমি শুনলাম ম্যানক্যাক আপনে দু্ই লাখ টাকা দিছেন।
সামছুল আলম: না না না ভাই।
সৌখিন: তে ম্যানক্যা আপনাক বাঁচাতে পারবে?
সামছুল আলম: বাঁচা-মরা এখন আল্লাহ্’র হাতে ভাই। আল্লাহ্ এখন ভাগ্যে কী লিখে রেখেছে!
সৌখিন: আল্লাহ্’র হাতে ঠিক আছে। কিন্তু আল্লাহ্ যে আমার হাতে লিখে রেখেছে আপনার…, এটার কী হবে কন।
সামছুল আলম: তাই, না?
সৌখিন: হ্যাঁ, তে আপনি ম্যানক্যার সাথে যোগাযোগ করবেন, আর আমি … ফ্যালাবো? ভাগ মিলতেছে না।
সামছুল আলম: না ভাই, না না না।
সৌখিন: আপনি আমার এই নম্বরে বিকাশ, নগদ সব আছে। আপনি এক লাখ তাহলে এখানে পাঠায়ে দেন।
সামছুল আলমের হা হা হা করে হাসি।
সৌখিন: তাহলে আপনে মনে করেন ম্যানক্যাক টাকা দিবেন মানে? ম্যানক্যা দলের কে? ওই সাওয়ার ব্যাটা দলের কে?
সামছুল আলম: না ভাই না, এগুলো মিথ্যে কথা ভাই।
সৌখিন: তাহলে এলা গুজ উঠে কেন? আপনে তাহলে ম্যানক্যাকে ফোন করেন। পাশে থেকে আরেকজনকে বলতে শোনা যায়- সে কোন জায়গায় আছে খোঁজ নাও। সঙ্গে সঙ্গে তার সুরে জানতে চান- আপনি কোথায় আছেন? না হলে আপনি কই আছেন কন তো?
সামছুল আলম: না ভাই, এলা মিথ্যে কথা।
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হলে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা’ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে হওয়া মামলাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৮ সালে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। পরে এ বিষয়ে কঠোর সমালোচনা হলে ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে তার বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছিল, তবুও এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা হয়।
সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ আইন নিয়ে আপত্তি ওঠে। আজ আইনটি বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাইবার আইনে হওয়া ‘স্পিচ অফেন্স’ (মুক্তমত প্রকাশ) সম্পর্কিত মামলাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এসব মামলায় কেউ গ্রেপ্তার থাকলে তিনিও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পাবেন।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর অধীনে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট পাঁচ হাজার ৮১৮টি মামলা চলমান।
বর্তমানে ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত এক হাজার ৩৪০টি মামলা চলমান। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৭৫টি মামলা চলমান।
এসব মামলার মধ্যে ৪৬১টি মামলা তদন্তকারী সংস্থার কাছে তদন্তাধীন এবং ৮৭৯টি মামলা দেশের আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
আরও পড়ুন:কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর বিধান চ্যালেঞ্জ করে আনা রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করে বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।
আইনটির ৬(২) ও ৯ ধারা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও আইনজীবী তাইয়্যেবুল ইসলাম সৌরভ। আইনটি সংবিধানের ৭, ২১, ২৬, ২৭, ৩১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ১৪৩ ও ১৪৫-এর লঙ্ঘন বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘আইনটির অধীনে কর্ম নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালতের এখতিয়ার রদ করতে পারে এমন কোনো আইন হতে পারে না। এটা চ্যালেঞ্জ করা হয়। আদালত রুল দিয়েছিলেন।’
রুলে আইনের ৬(২) এবং ৯ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। ২ সেপ্টেম্বর এ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আজ ওই রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র অনুকূলে ঢাকার লালমাটিয়ায় বন্দোবস্ত দেয়া খাসজমির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি-১ অধিশাখার উপসচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, এ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পক্ষে অনুমোদিত হয়েছিল। জমিটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাতিল হওয়া জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত, যার দাগ নম্বর সিএস ও এসএ-৬৯২, আরএস-১৮৯৫, সিটি-১১৬৬৭ এবং ১১৪১২। মোট জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক পাঁচ এক দুই শূন্য একর। এ জমির সিএস ও আরএস রেকর্ডে ‘খাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ থাকার কারণে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
রাজধানীর নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত।
পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক জানান, তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজা বৃহস্পতিবার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ আসামিকে আদালতে হাজির করেন।
ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আমুকে। তার নামে একাধিক মামলা আছে।
আমু ঝালকাঠি-২ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য