দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শনিবার রাতে দেশের পাঁচ জেলা থেকে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে এসব ঘটনাগুলো ঘটেছে।
সিলেটের চারটি কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
ভোটের আগের রাতে সিলেটের চারটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আতঙ্কিত হয়ে কেন্দ্রের ভেতর থেকে হুড়োহুড়ি করে বাইরে বেরিয়ে পড়েন সেখানকার দায়িত্বরতরা।
এ ছাড়া নগরের শাহজালাল ব্রিজের ওপর অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মশাল জ্বালিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মিছিল করতেও দেখা গিয়েছে।
শনিবার রাত আটটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রাত আটটার পর থেকে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, দক্ষিণ সুরমার সিলাম পিএল মাল্টিলেটারাল হাইস্কুল কেন্দ্র এবং টুকের বাজার এলাকার হাজী আব্দুস সাত্তার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় অগ্নিসংযোগের ভয়ে এসব কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা বাইরে বেরিয়ে আসেন।
রাত পৌনে আটটার দিকে সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডে মশাল মিছিল বের করে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। মিছিল শুরুর পরপর বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর মিছিলটি নগরীর শাহী ঈদগাহের দিকে এগোতে থাকলে দরটির নেতা-কর্মীরা আরও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
সে সময় কিছু সময়ের জন্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা জ্বলন্ত মশাল রাস্তায় ফেলে তারা সটকে পড়েন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মশাল সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।
অপরদিকে একই সময় সিলেট নগরীর শাহজালাল ব্রিজের উপর অগ্নিসংযোগ করেন সিলেট যুবদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা ব্রিজের ওপর কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণ এবং ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এসব ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি। এখনও সিলেটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
কালকিনিতে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
মাদারীপুরের কালকিনিতে একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে আরও একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত ৮টার দিকে কালকিনি উপজেলার ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এটি গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬ শ’ ৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ শ’ ৭০ জন, আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৮শ’ ২২ জন।
একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে সরকারি রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনি সরঞ্জামাদি নিয়ে ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রে পৌঁছান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে রাতে হঠাৎ কেন্দ্রের সামনে ককটেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
খবর পেয়ে কালকিনি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
কালকিনি থানার ওসি সরদার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’
মাদারীপুর-৩ আসনের সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে মূলত ককটেল বিস্ফোরণ হয়। উদ্ধার হওয়া ককটেলটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দক্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উদ্ধার হওয়া ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করা হবে।
সুনামগঞ্জের ভোটকেন্দ্রসহ পৃথক ৪ স্থানে আগুন
সুনামগঞ্জে ধর্মপাশায় পৃথক তিনটি স্থানে খড়ের গাদায় এবং মধ্যনগরে একটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ধর্মপাশা-বাদশাগঞ্জ সড়কের পাশে মোদাহরপুর ও আহম্মদপুর গ্রামের পৃথক তিনটি খড়ের গাদায় আগুন দেয় দুর্বত্তরা। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ধর্মপাশা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ধর্মপাশা থানার ওসি শামসুদ্দোহা বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে দুর্বৃত্তরা। ধর্মপাশার কোনো ভোটকেন্দ্র বা কোথাও যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশের সর্তক অবস্থান রয়েছে।’
অপরদিকে ওইদিন রাত ৩টার দিকে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দুর্বৃত্তরা।
মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, মধ্যনগরের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাত তিনটার দিকে পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষের জানালা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে দ্রুত আগুন নেভানোর ফলে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই এই অগ্নি সংযোগ করতে পারে বলে জানান তিনি।
নোয়াখালীতে হঠাৎ বিপুল ককটেল বিস্ফোরণ, জনমনে আতঙ্ক
ভোটের আগের রাতে নোয়াখালীতে বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিসিস্থিতি স্বাভাবিক করা চেষ্টা করেন।
শনিবার রাত ১০টা থেকে জেলা শহর মাইজদী ও আশেপাশের ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন স্থানে এসব ককটেল ও পটকার শব্দ পাওয়া যায়।
কাদির হানিফ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাত ১০টার পর কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আমারা তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন।’
শুধারাম মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। জড়িতদের ধরার চেষ্টা করছি।’
হবিগঞ্জে বিপুল ককটেল বিস্ফোরণ
শনিবার ভোটের আগের রাতে জেলা নির্বাচন অফিসসহ হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
শায়েস্তানগর সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পর শনিবার রাত ৮টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণের পর শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থান নেন পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
নিউজবাংলার সিলেট, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য ও ছবি নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য