ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে দুজন আসন্ন নির্বাচনে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে নির্বাচনি দায়িত্বে রয়েছেন।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থকের করা লিখিত অভিযোগের পর সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে একজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার চাতলপাড়ের কৃষি ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ মোকাদ্দিস হোসেন, তিনি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছিলেন; ভলাকুট ইউনিয়নের বালিখোলা কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার মোহাম্মদ হোসেন, যিনি নির্বাচনে পতইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত ভান্ডাররক্ষক জামাল আহমেদ। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে একাধিক জায়গায় প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে তাদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএম ফরহাদ হোসেন। ভোটে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কলার ছড়ি প্রতীকের বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একে একরামুজ্জামান।
গত বুধবার এবং শুক্রবার ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নৌকার পক্ষে প্রচার চালানোসহ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মোহাম্মদ ইমরানুল ইসলাম। অভিযোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
শুক্রবারের লিখিত অভিযোগে ইমরানুল লিখেছেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত ভান্ডাররক্ষক নিয়মিত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সভা, মিছিল ও উঠান বৈঠক করছেন যা সরকারি চাকরিজীবী আইনের পরিপন্থি। তাকে নির্বাচনি কাজে দায়িত্ব না দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এ ছাড়া গত বুধবার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবার আরও একটি অভিযোগত্র দাখিল করেন তিনি। ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘কৃষিব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকাদ্দিস নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সভা, মিছিল ও উঠান বৈঠক করছেন। তিনি এলাকার সাধারণ মানুষকে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য হুমকি দিচ্ছেন। ভোট সুষ্ঠু হবে না, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটে বিজয়ী হলেও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন মোকাদ্দিস।
‘২০১৮ সালের নির্বাচনে চাতলপাড়ে নৌকার পক্ষে জোরপূর্বক ভোট প্রদানের সময় জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হন তিনি। কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার মোহাম্মদ হোসেনও নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ মোকাদ্দিস হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাতলপাড়ের কাঠালকান্দি গ্রামে এলাকাবাসী একটি সভা করে। আমার বাবা-চাচাসহ আত্মীয়-স্বজনের চাপে আমিও সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম। অন্য কোনো প্রচারে আমি অংশ নেইনি।
জামাল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। আমি কারও পক্ষে কোনো প্রচারে অংশ নেইনি এবং যাইনি। এ ছাড়া আমাকে নির্বাচনের কোনো দায়িত্বেও রাখা হয়নি।’
জানতে চাইলে মোহাম্মদ হোসেনও অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানা হয়েছে।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোহাম্মদ মোকাদ্দিসকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। জামাল আহমেদকে শুরু থেকে কোনো দায়িত্বে রাখা হয়নি। মোহাম্মদ হোসেনের বিষয়টি মনে পড়ছে না।’
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সরকার ঘোষিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখান করে ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
কর্মবিরতির কারণে এ অঞ্চলের অনেক কারখানায় বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ বলছে, আশুলিয়ায় আজ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করার দাবিতে কাজ বন্ধ বা শ্রমিকরা কাজ না করে চলে গেছে, এমন কারখানার সংখ্যা ৩৫টি।
আশুলিয়ার নরসিংহপুর ও আশপাশের এসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানা সূত্রে জানা যায়, হা-মীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম, সেতারা গ্রুপ, নিউ এইজ, ডেকো, ব্যান্ডো ডিজাইন, ভিনটেজ, নীট এশিয়া, মানতা, ডেবুনিয়ার, অরবিটেক্স, এএম ডিজাইন, ইসলাম গার্মেন্টস, দ্য রোজ, অ্যাপারেলস গ্যালরি, এথিক্যালসহ বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এলেও ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন।
শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে নাসা ও ট্রাউজার লাইন শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
শ্রমিকরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা ঝামেলা না করলেও বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা কর্মবিরতি পালন করেন এবং কেউ কেউ কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।
এর আগে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবারও আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
নীট এশিয়ার একজন শ্রমিক বলেন, ‘গত ৩ দিন যাবতই আমাদের কারখানায় ঝমেলা চলছে। শ্রমিকরা কাজ করে না।
‘আশপাশের কারখানার সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও একই দাবিতে আন্দোলন করছি; দাবি বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ করার।’
দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাধন কুমার বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) শ্রমিকরা আমাদের কারখানায় কাজ করেছিল, কিন্তু আজ কারখানায় এলেও আর কাজ করেনি। পরে অবশ্য আমরা কথা বলার পর শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু আশেপাশের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আমরা আর চালাতে পারিনি।’
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকরা। তাই তারা কাজ বন্ধ করে বসে আছে, তবে কোনো প্রকার অরাজকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা তারা করছেন না।
‘এ অঞ্চলের ১৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর কাজ না করে চলে গেছে এমন কারখানার সংখ্যা ১৫ থেকে ১৬টি।’
আরও পড়ুন:নওগাঁয় চার মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে খাদ্যশস্যের (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রি।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ঘেরাও করে ওএমএস কার্যক্রম চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষরা।
ওই সময় বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড হাতে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় তাদের। পরে জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল কবিরের আশ্বাসে সেখান থেকে সরে যান তারা।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের আগে নওগাঁ পৌরসভা এলাকায় ১৮টি কেন্দ্রে ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে চাল ও আটা দিত সরকার। ৫ আগস্টের পর ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে হঠাৎই ১৫টি কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চরম বিপাকে পড়েন তারা। তাই অনতিবিলম্বে ওএমএস সবকটি কেন্দ্র চালু করতে হবে।
শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আসা বিক্ষোভে অংশ নেয়া রিকশাচালক সোহেল রানা বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, সেটা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য। ওএমএস কর্মসূচি চালু অবস্থায় কম দামে চাল ও আটা কিনে কিছুটা সামাল দিতাম। সেই চাল, আটা টানা ৪ মাস যাবত পাচ্ছি না। তাই দুই বেলা শান্তিতে পেট ভরে খাওয়া হচ্ছে না।
‘বাধ্য হয়ে পেটের ক্ষুধায় ফুড অফিসে এসে দাঁড়িয়েছি। কী কারণে এটি বন্ধ রয়েছে, সেই কারণ কর্মকর্তাদের কেউই স্পষ্টভাবে বলতে চাইছেন না।’
শহরের ইঁদুর বটতলী এলাকা থেকে আসা মানোয়ারা বেগম বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে বৃদ্ধ বয়সে এসেও রাস্তার আনাচ-কানাচে বসে বিভিন্ন ফলমূল বিক্রি করে আয় করি। সেই রোজগার দিয়ে ৫৪ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। তাই ওএমএসই শেষ ভরসা ছিল।
‘গরিবের সেই চাল-আটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। নয়তো আমাদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটানো ছাড়া উপায় থাকবে না।’
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল কবির বলেন, ‘বন্ধ থাকা ওএমএস কেন্দ্র চালুর দাবি নিয়ে অফিস চত্বরে আসা ভোক্তাদের কথা শুনেছি। তাদের দাবির বিষয়গুলো জেলা ওএমএস কমিটি বরাবর উত্থাপন করা হবে। শিগগিরই ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিয়ে এই সংকট সমাধান করা হবে।’
জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও নওগাঁর জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর নওগাঁ পৌরসভা এলাকার অধিকাংশ ওএমএস ডিলার সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে যৌথ মতামতের ভিত্তিতে ১৫টি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছিল।
‘সেই সাথে নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়। যেহেতু তারা বিক্ষোভ করেছেন, প্রয়োজনে যৌথ মতামতের ভিত্তিতে আবারও কেন্দ্রগুলো চালু করা হবে।’
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতকে যথাযথভাবে আইনগত আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি আরও বলেন, ‘ভারত আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং প্রত্যর্পণের একটি আইনগতভাবে বৈধ এবং যথাযথ অনুরোধের সম্মান করে থাকলে, আমরা অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য আহ্বান জানাব।’
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই আমরা জানি যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি বিদ্যমান। এ বিষয়ে এরই মধ্যে যা কিছুই বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা জানি এবং সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে ভারত আগামীতে কী করতে যাচ্ছে, তার কোনো প্রাক-বিচার এখনই আমরা করতে চাই না।
‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ আনা এবং তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য ভারতকে জানানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব এখন এই ট্রাইব্যুনালের এবং এর চিফ প্রসিকিউটরের।’
কোনো কারণে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা যায় কি না কিংবা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা নেয়া যায় কি না, সেটি নিয়ে আলোচনা করছেন বলে জানান ক্যাডম্যান।
তিনি বলেন, ‘বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন। আমি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ইইউ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি।
‘যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, সেহেতু এখানে অনেকের সমর্থন পাওয়ার সুযোগই আমাদের রয়েছে বলে আমরা আশাবাদী।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মনকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার (সচিব) অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পলি কর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অভিযোগকারী আকচা ইউপি সচিব মোছাম্মৎ রিজওয়ানা মুস্তারী বর্ণা বুধবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন একই ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান এবং জোরপূর্বক চেক বইতে স্বাক্ষর করার অভিযোগ তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে। এ কারণে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।
একই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে, সেহেতু ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাধীন ৩ নং আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারায় বর্ণিত অপরাধে একই আইনের ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তার স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
এ বিষয়ে আকচা ইউপি সচিব রিজওয়ানা মুস্তারী বর্ণা বলেন, ‘চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন চলতি বছরের গত ৬ এপ্রিল অফিস বন্ধ থাকার পরও আমাকে পরিষদে ডেকে আনেন এবং চেক বহিতে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি আমাকে অনেক ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করলে আমি পরের দিন ৭ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। তিনি অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেন।
‘প্রাথমিকভাবে তদন্তে চেয়ারম্যানের অপরাধ প্রমাণিত হয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা সময় লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমান বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করেছে। আশা করি এমন অপরাধের ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করলে কোনো চেয়ারম্যান জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো কাজ করার সাহস পাবেন না। সেই সাথে আমাদের প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করেছে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।’
যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর/প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অভিনেত্রী শমী কায়সারকে একটি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক এই সভাপতিকে তিন মাসের জামিন দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।
আদালতে শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরা-পূর্ব থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সে মামলায় শমী কায়সারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিম্ন আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন শমি কায়সার।
অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে দেয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ।
একই সঙ্গে এ মামলায় তাদের দেয়া সাত বছরের দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ইমেজকে ক্ষুণ্ন করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন।
‘আজকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আমাদের লিভ দিয়েছেন (আপিলের জন্য অনুমতি)। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদক ও আমাদের আপিলের সারসংক্ষেপ দিতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাত বছরের দণ্ড স্থগিত করেছেন। এই মামলায় দুইজন আসামি। দুইজনের ক্ষেত্রেই সাজা স্থগিত করা হয়েছে।’
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে অভিযোগপত্রের বাইরের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য একটি নির্মাণ কোম্পানির চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এ টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন।
এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেয় আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন মামুনও আপিল করেন।
দুই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
একই মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। আজ এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য