আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল সবসময় মানুষের মন জয় করে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছে, যে কারণে কখনও ভোট চুরির প্রয়োজন হয়নি।
বছরের প্রথম দিন সোমবার রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৫ বছরে তার সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সে জন্যই মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আগামীতেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না, কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে...এটা আমার কথা না, হাইকোর্টের রায় আছে যে, বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। যাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ, তারাই ভোট চুরি করে। তারা ভোট চুরি ছাড়া জিততে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেটি প্রমাণিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ভোট চুরি করতে পারবে না বলে নির্বাচনে আসেনি।
২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে এলেও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, দলটিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা আন্দোলনেও সফল হতে পারবে না।
নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা বিএনপির নেই মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এখন তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। কেন নির্বাচন বানচাল করবে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে উন্নয়ন হয়েছে। পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে ও সংবিধান লঙ্ঘন করে। তারা মানুষের ভাগ্য গড়েনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষ শান্তিতে আছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
তিনি বলেন, “আমরাই ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। জিয়াউর রহমান যখন ভোট চুরির জন্য ‘হ্যাঁ-না’ ভোট করেছিলেন, আওয়ামী লীগ তখন জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে দিয়েছে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগানটিও আমাদের দেয়া। আমরাই জনগণের হাতে ভোটাধিকার এনে দিয়েছি।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুনেছি, সে নাকি ক্যাসিনো থেকে টাকা কামাই করে। জুয়া খেলে টাকা কামাই করে। সে টাকা দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একমাত্র শক্তির উৎস বাংলাদেশের জনগণ। বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করতে আমি প্রস্তুত। বোমা-গ্রেনেড কিছুই আমাকে থামাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, “তাদের (বিএনপি) আমলে ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলতেও ভয় পেতেন। সে সময় অনেকে লুকাতেন, ভয় পেতেন...তারা (বিএনপি) ঠিক সেই অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘পাশাপাশি এ দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের যে গতিটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করেছিলেন, সেটিও থেমে যায়। সেই যে ২৭৭ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় জিয়ার আমলে ও এরশাদের আমলে...কোনো আমলেই সেই মাথাপিছু আয় আর বৃদ্ধি পায়নি; বরং জিয়ার আমলে প্রতি বছর তা মাইনাস হতে থাকে। তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য না গড়লেও ক্ষমতাসীনদের ভাগ্য গড়ে ক্ষমতার উৎকৃষ্টতা বিলিয়ে ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরেন। এসব উন্নয়নের কারণে ঢাকাবাসী আবারও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বক্তৃতা শেষে ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৫টি আসনে নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন দলীয় প্রধান। তাদের ‘রত্ন’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ঢাকাবাসীর জন্য ১৫টি রত্ন দিয়েছি।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-১০ আসনে নৌকার প্রার্থী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে চারটি সমুদ্র বন্দরকে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র শুক্রবার আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানায়।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত বার্তায় আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়, ‘সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
‘এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।’
সতর্কবার্তায় চার বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলেদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
‘উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরে আসছেন শুক্রবার।
বিমানবন্দরে গার্ড অফ অনার দেয়া হবে তাকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বেলা আড়াইটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল থাকবে।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন।
পরবর্তী সময়ে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে আলোচনা করবেন, যেখানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সম্পর্কিত বিস্তৃত বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বৈঠক বাংলাদেশ চলমান রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার সহায়তা কামনা করবে। পাশাপাশি আসিয়ান কাঠামোর মধ্যে একটি ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সফরসূচি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে যৌথ বিবৃতি দেয়া হবে।
ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আনোয়ার ইব্রাহিমই প্রথম সরকারপ্রধান যিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত সফর শেষে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি হবে বিদেশি কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের সংস্কারে পাঁচটি কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্থার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্থার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। পরে প্রজ্ঞাপনগুলো গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আট সদস্যের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্থার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদারকে।
নয় সদস্যের পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনকে।
আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবুল নাঈম মমিনুর রহমান।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এই কমিশনটিও আট সদস্যবিশিষ্ট।
এছাড়া আট সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরী।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ সরকারের মধ্যে ‘বন্দি হস্তান্তর’ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন দেয়া হয়।
উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দণ্ডিত ব্যক্তিদের স্থানান্তর চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবও নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এগুলো হয়ে গেলে আমরা মালদ্বীপ বা কাতারে সাজাপ্রাপ্ত আমাদের বাংলাদেশি ভাই-বোনদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হব।’
সংবাদ সম্মেলনে উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের সঙ্গে ‘সাজাপ্রাপ্তদের স্থানান্তর’ সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের।
২০১৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালদ্বীপ থেকে ‘বন্দি স্থানান্তর’ সংক্রান্ত একটি খসড়া চুক্তির প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রস্তাবিত চুক্তি সই হলে বাংলাদেশ মালদ্বীপ থেকে সাজাপ্রাপ্ত ও কারাবন্দি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে।
চুক্তিটি ১০ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে এবং দুই দেশ সম্মত হলে এটি আরও ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যেতে পারে।
উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দণ্ডিত ব্যক্তিদের স্থানান্তর চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবও নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল কাতারের আমিরের বাংলাদেশ সফরের সময় দু’দেশের সরকারের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়।
চুক্তিটি এক বছরের জন্য কার্যকর থাকবে এবং যদি কোনো অংশ এটি শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ না করে তবে এটি আরও এক বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারত ও নেপালের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বৃহস্পতিবার ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি সই হয়েছে।
চুক্তির আওতায় জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), নেপালের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম লিমিটেডের (এনভিভিএন) প্রতিনিধিরা চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচমন্ত্রী দীপক খাড়কা, বাংলাদেশের পানিসম্পদ সচিব নজমুল আহসান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এই চুক্তি আঞ্চলিক জ্বালানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের বিষয় নয়; বরং আমাদের দেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদি এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াও।’
এর আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সঙ্গে সিংহ দরবারে সাক্ষাৎ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা। এ সময় দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
এই ঐতিহাসিক বিদ্যুৎ চুক্তি সইয়ের সাক্ষী হতে পরিবেশ উপদেষ্টা দু’দিনের সফরে নেপালে অবস্থান করছেন। এটি বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
আরও পড়ুন:টাইম ম্যাগাজিনের ‘টাইম-১০০ নেক্সট’ ২০২৪-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের নাম। প্রতি বছর বিশ্বের প্রভাবশালী একশ’ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করে থাকে প্রখ্যাত এই সাময়িকী।
তালিকাটি বুধবার (২ অক্টোবর) প্রকাশ করা হয়। এতে উদীয়মান নেতা ক্যাটাগরিতে নাম রয়েছে নাহিদ ইসলামের। সূত্র: বাসস
টাইম ম্যাগাজিনে নাহিদ ইসলাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘২৬ বছর না পেরুতেই বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। যেসব ছাত্রনেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা নাহিদ ইসলাম তাদের অন্যতম।
‘অনেক প্রতিবাদী নেতার অন্যতম, তিনি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে নির্যাতিত হওয়ার পর আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এর কিছুদিন পরই তিনি শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি পৌঁছে দেন- হাসিনাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।’
টাইম লিখেছে, ‘নাহিদ ইসলাম বলেন- কেউ ভাবেনি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।’
ম্যাগাজিনটি আরও লিখেছে, “তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়তো সামনে অপেক্ষা করছে। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ‘জেন-জেড উপদেষ্টা’র মধ্যে নাহিদ ইসলাম একজন।
“তাদের কাজ- ক্রমে অধিকতর কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ক্ষয়িত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মেরামত করা।”
ম্যাগাজিনটি নাহিদ ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মহামারীর মতো ছড়ানো রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালানো ঠেকাতে ব্যর্থতায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আংশিক দায় রয়েছে। তবে পরিস্থিতির জন্য সংস্থাটিকে এককভাবে দায়ী করা উচিত নয়।
বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় বিজিবি সদর দপ্তরে এই সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক বলেন, ‘বিজিবি এখন পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত ২২ জনকে আটক করেছে। এসব গ্রেপ্তারের পরও আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।’
‘পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার জন্য বিজিবি দায়বদ্ধ হলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত কিনা তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।’
মেজর জেনারেল সিদ্দিকী জোর দিয়ে বলেন, ‘কারা কোন সীমান্ত অতিক্রম করেছে তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত হওয়া দরকার। এ বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না।’
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে গত ৬ আগস্ট বিজিবিকে সহায়তা করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এটি একটি উদ্যোগ যা স্বাধীনভাবে এবং বাইরের কোনো নির্দেশনা ছাড়াই নেয়া হয়েছিল।
‘আমরা এটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী সব প্রতিষ্ঠান যদি তাদের তথ্য শেয়ার করে, তাহলে আমাদের এই প্রচেষ্টা অনেক বেশি কার্যকর হবে।’
আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে যে গুঞ্জন চলছে সে কথাও উল্লেখ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘সবাই কি পালিয়ে গেছে? আমার এরকম মনে হয় না। কেউ কেউ এখনও দেশের এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন।’
মেজর জেনারেল সিদ্দিকী সাংবাদিকদের কাছে থাকা যেকোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য শেয়ার করে বিজিবিকে সহায়তা করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘আপনাদের কাছেও তথ্য আছে। দয়া করে বিজিবিকে জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব। এসব পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
বিজিবি মহাপরিচালক পুনর্ব্যক্ত করেন, বিজিবি সীমান্ত রক্ষায় তাদের ভূমিকা পালনে নিবেদিত এবং চলমান সমস্যা কার্যকরভাবে সমাধানের জন্য সব স্টেকহোল্ডারকে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য