বিএনপি ২০২২ সালটি যেভাবে শেষ করেছিল ২০২৩ সালের শুরুটাও ছিল তেমন। দলটির নেতা-কর্মীরা রাজপথে সক্রিয় থেকে সারা দেশে নিয়মিত মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির সমর্থকরা আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ১৭ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসার উচ্চাশা জাগিয়ে তুলেছিল।
বিএনপি সারা বছর যা কিছু করেছে তার লক্ষ্য ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন। আর সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু যদি নির্বাচনটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় তবে তা নয়।
কিছু প্রভাবশালী বিদেশি সরকার, বিশেষত ওয়াশিংটন তাদের লক্ষ্য অর্জনে আন্দোলনে গতি বাড়াতে কাজ করেছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বছরটি বিএনপির জন্য চরম হতাশায় শেষ হয়েছে। গত দু’মাসে তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নতুন করে দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই হয় কারাগারে নয়তো পলাতক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে ব্যর্থ হওয়ায় ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আগামী বছরগুলোতে রাজনীতিতে ফিরে আসা এবং নেতা-কর্মীদের পুনরুজ্জীবিত করা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
বিএনপি আগামীতে চরম নেতৃত্ব সংকটের মুখোমুখি হবে- এমন আশঙ্কাও করেন তাদের অনেকে। কারণ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং প্রায় ২৬ হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে গেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামীতে দলকে পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিএনপিকে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে আসতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘বিএনপির অহিংস আন্দোলন ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্য অর্জনে সফল না হলেও এটি প্রায় সব বিরোধী দল এ দাবিকে সমর্থন করে।
‘বিএনপির প্রতিটি সমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে তাদের সমর্থন বেড়েছে। সংগঠনটিকে বিভক্ত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা নেতৃত্বের বড় সাফল্য।’
ড. রিয়াজ বলেন, ‘বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর সরকারের কর্মকাণ্ডে এটা স্পষ্ট হয়, তারা আসলে বিএনপিকে বাইরে রেখেই একটি নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সুতরাং বিএনপি বর্জন করতে চায় কি না, তা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হচ্ছে।
‘আমাদের জোর দিয়ে বলতে হবে, বিএনপি একা নির্বাচন বর্জন করছে না। বিএনপির অনুপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে, এই নির্বাচন একটি পাতানো অনুষ্ঠান।’
তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে এবং দেড় হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করার কারণে বিএনপি একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
‘তবে এটা দুর্ঘটনাবশত নয়, দলকে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনার অংশ। ২৮ অক্টোবর থেকে এর কর্মসূচিগুলো আকর্ষণ হারাচ্ছে। তবে ৭ জানুয়ারির পর এটি কী কৌশল গ্রহণ করে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপিকে রাজপথে ফিরে আসতে হবে এবং জনসমাবেশে অংশ নিতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন।
তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারির পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কেমন হবে তার সঙ্গে বিএনপির ভবিষ্যৎ জড়িত। তাদের ভবিষ্যৎ অন্যান্য বিরোধী দল থেকে আলাদা হবে না। যে কেউ বিএনপিকে বিলুপ্তপ্রায় শক্তি বলে অভিহিত করতে চায়, সেটি স্পষ্টতই ভুল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে সরকার তাদের রাজনৈতিক সুযোগ দেয়ায় বিএনপি ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে।
‘সরকার যেমন ভেবেছিল, বিএনপি রাজপথে সক্রিয় থাকলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না; তাই তারা আবারও কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিএনপির রাজনীতি সঠিক পথেই চলছে এবং দলটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তুলতে পারে।’
অধ্যাপক আলী রিয়াজের সঙ্গে একমত পোষণ করে ড. বেপারী বলেন, ‘বিএনপিকে সব বাধা অতিক্রম করে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
‘বিএনপি যদি সঠিক কৌশল নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে তারা সফল হতে পারে।’
বিএনপির আন্দোলনের বিবর্তন
২০২৩ সালকে নির্বাচনি বছর হিসেবে বিবেচনা করে জানুয়ারির শুরু থেকেই সমাবেশ ও বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন ইউনিট এবং সহযোগী সংগঠনগুলোও সংস্কার করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করায় দলটি সাফল্য অর্জন করে।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ২৭ জুলাই যুগপৎ এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ তিন ডজনেরও বেশি দল যুগপৎভাবে রোডমার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলের সমর্থকদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
টার্নিং পয়েন্ট ২৮ অক্টোবর
আগের কর্মসূচিগুলোতে দলের সাফল্যের সুবাদে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে অভূতপূর্বভাবে এই সমাবেশ শুরু হলেও পুলিশ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত ও কয়েক শ’ আহত হওয়ার পর তা মাঝপথে ভণ্ডুল হয়ে যায়।
সংঘর্ষের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অভিযান শুরু করে এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। শেষ পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতিতে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের অধিকাংশ কার্যালয় তালাবদ্ধ রাখা হয়। ১৬ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিজয় শোভাযাত্রা বের করলেও তারা তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলেনি।
বিএনপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই মাসে পুলিশ দলটির প্রায় ২৪ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ২৫ জন নেতা-কর্মী।
এছাড়া পাঁচ থেকে দশ বছর আগের বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির তিন ভাইস চেয়ারম্যানসহ দেড় হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে সাজা দেয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা ও রায় দেয়া হয়।
ফিরে এল হরতাল-অবরোধ
২৮ অক্টোবর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিএনপির আন্দোলন গতি হারানোয় দীর্ঘদিন পর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করে দলটি।
বিরোধী দলগুলো ২৯ অক্টোবর থেকে ১২ দফায় ২৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ এবং চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল পালন করে। অবশেষে বিরোধী দল ২০ ডিসেম্বর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়, যা কার্যত জনগণের মধ্যে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা না করার আহ্বানের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২০২৩ সাল শেষ ও ২০২৪ সাল শুরু করতে যাচ্ছে দলটি।
নির্বাচন বর্জন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় নির্বাচন বর্জন করছে দলটি।
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরসহ প্রায় ২৪ জন মধ্যম পর্যায়ের নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২৮ অক্টোবরের সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার শাহজাহান ওমর জামিনে মুক্তি পাওয়ার একদিন পর আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বিএনপির শরিকদের মধ্যে কেবল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপির নেতারা দাবি করেন, সরকার দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে অথবা ভয়াবহ পরিণতির ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করেছে। তবে শাহজাহান ওমর ছাড়া অন্য কোনো বড় নেতা চাপের মুখে বিএনপি ছাড়েননি।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কা
লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদায়ী বছর জুড়ে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা নিয়েছেন।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ৯ আগস্ট শেষবারের মতো বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি বৃদ্ধি এবং লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শন্ট (টিআইপিএস) নামে পরিচিত হেপাটিক পদ্ধতি সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
সফল হেপাটিক অপারেশনের পর থেকে খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি হলেও তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেননি। সূত্র: ইউএনবি
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের প্রথম দিন কেন অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামী, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ।’
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী।
গতকালের বৈঠকে কেন অংশ নেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়ে ও প্রশ্ন করে আমরা একটি বিবৃতি দিয়েছি। সেটি হচ্ছে তার লন্ডন সফরের বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান। এটা আমাদের সংগঠনের সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন গিয়েছিলেন পুরস্কার আনতে ও পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে। পাশাপাশি, বিএনপির ভারপ্রাপ্তপ্রধানের (তারেক রহমান) সঙ্গে লন্ডনে তার বৈঠক হয়েছে। সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনি যে কথা বলেছিলেন, সে বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমরা ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছিলাম।’
জামায়াতের আপত্তির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির কথা বলা হয়েছে, সেটাও আমাদের প্রস্তাবের মধ্যে আছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো—প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। এখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, সেটা হতে পারে। বিএনপির দাবি ছিল—আলোচনা করে যদি মনে করেন, নির্বাচন তারিখ পরিবর্তন হতে পারে, সেটা নিয়ে আপত্তি নেই। যেহেতু তিনি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে অঙ্গীকার করেছেন, বাংলাদেশে এসে আবার কথাবার্তা বলে পুনর্বিবেচনা করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি।’
‘একটি দলের প্রতিনিধির সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন—যেটা আমাদের অবাক করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটির আর কোনো উদহারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন দেশে প্রধান বিরোধী দল কিংবা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করা বিভিন্ন দলের সাথে বৈঠক হয়। কারণ, তারা তখন একটা স্ট্যাটাস পায়। বাংলাদেশে শতাধিক রাজনৈতিক দল আছে। এখন প্রধান উপদেষ্টা যার সঙ্গে কথা বলবেন, তার সঙ্গে কী একটি যৌথ বিবৃতি দেবেন? এটা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এটা সঠিক ছিল না। এতে বাকি সব দল যেমন বিব্রত হয়েছে, আমরাও তেমনটি অনুভব করছি।’
যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিতে আপত্তি জামায়াতের
একটি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলন নিয়েই জামায়াতের আপত্তি ছিলে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘কেবল জামায়াতে ইসলামী না, বাকি সব দলও বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ও যৌথ সংবাদ সম্মেলন—এখানেই আমাদের আপত্তি। বিএনপির বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
‘এতে আমাদের মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আর এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে যে সংস্কার কমিশন আছে, তাতে তারা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না। এটা অনেকটা পর্বতের মুষিক প্রসব করার মতো হবে। কার্যকারিতা হারাবে। সেখানে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আমরা গতকাল আসিনি।’
অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জামায়াতের সাথে যোগাযোগ
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যে মান-অভিমান করেছে, তা ভাঙাতে দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে তারা আস্বস্ত হয়ে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে এসে অংশ নিয়েছেন।
এমন তথ্য দিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, ‘এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গতকাল দুপুরে আমাদের আমীরে জামায়াতের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা আমাদের কথা বলেছি, তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছেন—আশ্বস্ত করেছেন, তার সরকার নিরপেক্ষ থাকবে। কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি তারা অনুরক্ত না। আগামীতে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করবেন ও বিষয়ে আরও যত্নবান হবেন।’
‘সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা অচলাবস্থা চাই না, সবসময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু কোনো কিছুর ব্যত্যয় হলে আমাদের কথা বলতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
যেসব দল ক্ষমতায় যেতে পারছে না, নির্বাহী ক্ষমতা বিভক্ত করে তারা সরকারের হাত-পা বেঁধে দিতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারবে, কোন দল পারবে না; জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে সেসব দেখা উচিত না। দেশের জন্য যেটা ভালো হবে, সেটা হওয়া উচিত।’
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যদি কঠোর না হয়, তাহলে আরেকটি শেখ হাসিনামার্কা নির্বাচন এ দেশকে রক্ষা করতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংযত হতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়ে গেছে, আমরা প্রস্তুত আছি,’—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কী, সেটা তিনি (উপদেষ্টা) বোঝেননি। যিনি একটি ভবনের তালা খোলার ব্যবস্থা করতে পারেননি একমাসেও, ৩০০টি আসনের আইনশৃঙ্খলা তিনি কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটা বিস্ময়ের বিষয়।’
‘আমি তাকে সংযতভাবে কথা বলার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও বোঝার চেষ্টা করার অনুরোধ করছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে এই নায়েবে আমীর।
নারীদের জন্য ১০০ আসন নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা সংখ্যানুপাতিক হারে হতে হবে। আগে সেটা সমাধান না করে এ বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই।’
এনসিসি গঠনের বিষয়ে একমত
এদিকে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির এই নেতা বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে বলছি, আমরা এনসিসির পক্ষে। এমন একটি সাংবিধানিক ভারসাম্যপূর্ণ কমিটি বা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত, তারা সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।’
‘সেখানে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা থাকবেন, স্পিকার ও উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের (যদি হয়) ডেপুটি স্পিকার থাকবেন। এমন একটি কাঠামোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মূলপ্রস্তাব ছিল, সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি থাকবেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আপত্তি করেছি এই জন্য যে একজন দেশের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন, আরেকজন বিচারবিভাগীয় প্রধান। কাজেই তাদের এই কমিটিতে নিয়ে এলে এখানে যদি কোনো বিরোধ তৈরি হয়, তাহলে সেটা মীমাংসা করার আর কোনো সংস্থা থাকে না।
‘সেকারণে আমরা বলেছি, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ রেখে একটিকে গঠন করার কথা। অনেকে এদিক-ওদিক বলেছেন। কিন্তু প্রায় দুয়েকটি দল ছাড়া বাকি সবাই এনসিসি গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। পাশাপাশি, তিন বাহিনীর প্রধানদেরও এটির বাইরে থাকা ভালো বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী,’ বলেন তাহের।
এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়েতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি। বিএনপি ও এনসিপির মাঝে জামায়াতের জন্য সংরক্ষিত আসনটি মধ্যাহ্নভোজের আগ পর্যন্ত ছিল ফাঁকা।
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়ায় নানা রাজনৈতিক দল নানা মত দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াতের বনিবনা না হওয়ায় মঙ্গলবারের আলোচনায় তারা যোগ দেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন জামায়াত আলোচনায় যোগ দেয়নি সেই উত্তর কমিশনই ভালো দিতে পারবে।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি জামায়াত আজকের বৈঠক প্রতীকী বয়কট করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াত হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই আলোচনায় অংশ নেয়নি।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকের আলোচনায় জামায়াতের থাকা উচিত ছিল। তারা এই আলোচনা বয়কট করেছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি। যদি মধ্যাহ্নভোজের পরেও জামায়াত আলোচনায় না আসে তাহলে পুরো ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা বেশিরভাগ বিষয়েই একমত হয়েছি। কিন্তু নারীদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার প্রয়োজন দেখি না। নারীর ক্ষমতায়ন আমরাও চাই, কিন্তু কোনো বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না।’
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করছে, নারী আসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনার প্রথম পর্যায়ে জামায়াত যোগ দেয়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের সভার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই একমত বলে জানিয়েছে তিনি।
বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
‘এছাড়া সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত,’ বলেন তিনি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না এমন মত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’
নারীদের ১০০ সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। আশা করছি, আজকের আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সমাধানে আসা যাবে ‘
এছাড়া জুলাই সনদের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ইশতেহার গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
মন্তব্য