বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। বিদায়ী বছরজুড়ে নানা ঘটনায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, প্রক্টরসহ ১৯ জনের গণপদত্যাগ, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার পদে নতুন মুখ, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন, সাংবাদিক হেনস্তা, দফায় দফায় ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর সংঘর্ষসহ আলোচিত-বিতর্কিত নানা ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় থেকেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বছরজুড়ে চবির আলোচিত কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
১৮২ দিন পর চারুকলার শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা
শহর থেকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে গত বছরের ২ নভেম্বর আন্দোলনে নামে চবি চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন পর্ষদের সমঝোতার চেষ্টাতেও তাদের ক্লাসে ফেরাতে সক্ষম হয়নি কেউ।
আন্দোলনের মধ্যেই সিন্ডিকেট ডেকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সংস্কারকাজের জন্য চারুকলা ক্যাম্পাস ও হোস্টেল এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর আরও দুই দফায় বাড়ানো হয় চারুকলা বন্ধের মেয়াদ। সর্বশেষ স্থানান্তর আন্দোলনের ১৮২ দিন পরে ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।
রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে নতুন রেজিস্ট্রার
কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে পূর্ণকালীন রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের দাবিতে ১ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু করেন চবি কর্মকর্তারা। আন্দোলনের মুখে পরের দিন চার দিনের ছুটিতে যান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান, তবে চার দিনের ছুটি শেষ হলেও অধ্যাপক মনিরুল আর রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেননি।
এর মধ্যেই মনিরুল পদত্যাগপত্র জমা দেন। সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নূর আহমদ।
প্রথমবারের মতো চবিতে গবেষণা মেলা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণার বৈচিত্র্যকে সবার সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) যৌথ উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল’ শীর্ষক মেলার আয়োজন করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১টি বিভাগ, ২৪টি ল্যাবরেটরি ও চট্টগ্রাম বিভাগের আরও ২০টি প্রতিষ্ঠান।
প্রক্টরসহ ১৯ জনের পদত্যাগ
এ বছরের মার্চে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রশাসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রক্টরিয়াল টিমের একটি বড় অংশ, বিভিন্ন হলের প্রভোস্টসহ ১৯ জন একযোগে গণপদত্যাগ করেন। একসঙ্গে এতজনের পদত্যাগ চবিজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রক্টরের পদত্যাগের ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানেই ওই দিন নতুন প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. নূরুল আজিম সিকদার। নিয়োগের পর তাকে নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক।
৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২৬ মার্চ এ সম্মাননা দেয়া হয়। আগের বছরও ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয় চবি কর্তৃপক্ষ।
ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষপানে দুই ছাত্রীর মৃত্যু
চলতি বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে গলায় ফাঁস দেয়া এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রীর নাম রোকেয়া খাতুন।
দেড় মাস পর ১৫ মে তেলাপোকার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়। সুমি ত্রিপুরা নামের ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২ শিক্ষার্থীর ঝুলিতে যুক্তরাজ্যের ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’
সামাজিক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সম্মানজনক ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল হাসান লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এবং নিশাত সুলতানা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।
বিতর্কিত প্রার্থীর নিয়োগ আটকে দেয় চবির সিন্ডিকেট
বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পালি বিভাগে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়াকে নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পরিকল্পনা কমিটি।
ফলক থেকে মোছা হয় সাবেক প্রভোস্টের নাম
গত ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল চালুর দিন বঙ্গমাতার মুর্যালের উদ্বোধনের ফলক থেকে মুছে দেয়া হয় হলটির সাবেক প্রভোস্ট ড. প্রকাশ দাশগুপ্তের নাম। ফলকটিতে দেখা যায়, ভিসি শিরীণ আখতারের নাম ছাড়া বাকি অংশ রং দিয়ে মুছে দেয়া হয়। এটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।
‘গলা চেপে ধরব’: চবি অধ্যাপককে ডিন
গত ২৫ জুলাই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় দুই শিক্ষকের মধ্যে হট্টগোল ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের সময় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আরেক অধ্যাপককে ‘গলা চেপে ধরব’ বলে তেড়ে যান বলে অভিযোগ উঠে। অভিযোগ তোলেন প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. গোলাম কবীর। এ ঘটনায় সুবিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি দেন গোলাম কবীর।
ক্ষমা চেয়ে চবি ছাত্রলীগের ৯ নেতা-কর্মীর দায়মুক্তি
সংঘর্ষ, ভাঙচুর, মারামারি, সাংবাদিক হেনস্তাসহ বিভিন্ন ঘটনায় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ৯ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তবে আগস্টের শুরুতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে চিঠি পাঠানো হয়। প্রক্টর বলেন, ‘তারা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছে।’
শাটলে দুর্ঘটনা, চবিজুড়ে তাণ্ডব
গত ৭ সেপ্টেম্বর শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন আহত হন। ঘটনার আকস্মিকতায় ফুঁসে উঠেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই ছড়ানো হয় শিক্ষার্থী মৃত্যুর গুজব।
মৃত্যুর গুজবে তাণ্ডব চালানো হয় চবির বিভিন্ন জায়গায়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আগুন জ্বালিয়ে ফটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান। রাত ১১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের ভাঙচুর করেন তারা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর ও ক্যাম্পাস ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ভাঙচুরের ঘটনায় দুইটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই মামলায় সাতজন করে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করা হয়।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা-হেনস্তা: দোষীদের ‘মানবিক কারণে’ ক্ষমা
চলতি বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিককে হেনস্তা ও মারধর করা হয়। তারা হলে দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আক্তার, ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদ ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহ।
সাংবাদিক হামলার ঘটনায় দফায় দফায় আন্দোলনে নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। দোস্ত মোহাম্মদের ওপর হামলার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ছয় মাস বহিষ্কার করা হলেও কয়েক মাস পরে মানবিক কারণে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। অপর দুই সাংবাদিক হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় এখনও বিচার হয়নি।
ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত
দফায় দফায় সংঘর্ষ ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আগে কমিটি ইস্যুতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপের সদস্যরা।
সংঘর্ষ সংঘাতে বারবার আলোচনায় ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো
তুচ্ছ ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বছরজুড়ে বারবারে সংঘর্ষ ও সংঘাতে লিপ্ত হয়ে খবরের শিরোনাম হন শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো। এতে কমপক্ষে দেড় শতাধিক কর্মী আহত হন। এ ছাড়াও নানা ঘটনা ও দাবিতে অনেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক ও হলে তালা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
দুই দফা নোটিশ দিয়ে হলত্যাগের নির্দেশ
সংস্কার ও উন্নয়নকাজের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলো ২৩ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
দফায় দফায় সংঘর্ষের পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর অছাত্র ও বহিষ্কৃতের সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন।
লোকপ্রশাসন বিভাগ: ফেসবুকে ‘অগ্রহণযোগ্য মতামত’ প্রকাশ করলে ছাত্রত্ব বাতিল
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট ও কমেন্টে ‘অগ্রহণযোগ্য মতামত’ প্রকাশ নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিভাগের চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন আহমদ। বিভাগের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে (ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) দেয়া এ সংক্রান্ত একটি স্ক্রিনশট ১৯ অক্টোবর ফাঁস হলে শুরু হয় সমালোচনা।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন
আইন ও বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে গত ১৮ ডিসেম্বর উপাচার্যের কাছে যায় চবি শিক্ষক সমিতি। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লঙ্ঘন, তবে ওই দিন দাবি না মানায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে টানা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি।
টানা তিন দিন অবস্থান কর্মসূচি শেষে চতুর্থ দিন প্রতীকী গণঅনশন করেন তারা। শীতের ছুটির পর পরবর্তী কর্মসূচি জানাবেন বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। তবে এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে শিক্ষকদের আরেকাংশ।
ফের যৌন হয়রানির অভিযোগ
গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে বাগদত্তাসহ যৌন হয়রানি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন।
২০২২ সালের ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ‘হতাশার মোড়’ থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন কয়েকজন। এ সময় ওই ছাত্রীকে মারধর ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে নিপীড়নকারীরা।
যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় মামলা করে ওই ছাত্রী। পাশাপাশি যৌন নিপীড়নে জড়িত আসামিদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিষিদ্ধ করে চবি প্রশাসন, তবে জামিন পেয়েই ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন আসামিরা।
আরও পড়ুন:নতুন বছর, নতুন সম্ভাবনা এবং বাঙালিয়ানার ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উদ্যাপন করল পহেলা বৈশাখ ১৪৩২। রাজধানীর প্রগতি সরণি, বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন এই প্রাণবন্ত উৎসবে। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল বৈশাখী রঙে রাঙানো আলোকসজ্জা, মুখরিত পরিবেশ এবং বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত মানুষের উপস্থিতি।
আয়োজনের মধ্যে ছিল সংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, হস্তশিল্প প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল, নৃত্য, শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বৈশাখী সাংস্কৃতিক পটভূমির ওপর আলোচনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান, প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফত, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক, উপ-উপাচার্য ড. জি ইউ আহসান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ এস এম জি ফারুক এবং বিভাগীয় প্রধানরা।
পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে এবং এক অনন্য মিলনমেলায় পরিণত হয়। সাংস্কৃতিক মনোরম পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোডম্যাপ অনুযায়ী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। তবে নির্বাচন কমিশন কতদিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে তা রোডম্যাপে উল্লেখ নেই।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই রোডম্যাপ এর কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন মনে করে, ডাকসু প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদেরও ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। সে কারণেই বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুচারুভাবে আয়োজনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এবং অগ্রগতি সংবলিত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হলো।
গণমাধ্যমে পাঠানো রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, ডাকসু নিয়ে অংশীজনদের আলোচনা শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
একই মাসে ডাকসু সংশোধিত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করে তা ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এর আগে এ বিষয়ে ছয়টি সভা করা হয়। এই গঠনতন্ত্র এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, গত জানুয়ারি মাসে ‘ডাকসু ইলেকশন কোড অব কনডাক্ট রিভিউ কমিটি’ করা হয়। তারা সাতটি সভা করে। এটিও চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন তা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, মে মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। একই সঙ্গে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। একই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস), ‘বি’ ইউনিট (কলা ও আইন অনুষদ), ‘সি’ ইউনিট (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) এবং ‘ডি’ ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, শাখা পরিবর্তন) ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবিবার দুপুরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’ ইউনিটের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লগইন করে নিজ নিজ ফলাফল দেখতে পারবেন। এ ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.jnu.ac.bd অথবা https://jnuadmission.com অথবা www.admission.jnu.ac.bd -এ জানা যাবে।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আগামী ৮ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উল্লিখিত ওয়েবসাইটে (www.admission.jnu.ac.bd) লগইন করে বিষয় পছন্দ (Subject Choice) দিতে পারবেন।
‘এ’ ইউনিটের তিন শিফটে মোট আসন ৮৬০টি। সবগুলো আসন বিজ্ঞান বিভাগের জন্য।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৮৪টি। দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৮৭টি। তৃতীয় শিফটে মোট আসন ২৮৯টি।
এ ইউনিটে ৮৬০ আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় বসেন ৪৪ হাজার ২২৩ জন।
‘বি’ ইউনিটের তিনটি শিফটে আসন ৭৮৫টি। প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিকে ২১৬, বাণিজ্যে ৩৭, এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৪১টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯২টি, যার মধ্যে মানবিকে ২১৮, বাণিজ্যে ৩৫ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৩৯টি।
তৃতীয় শিফটে মোট আসন ১৯৯টি, যার মধ্যে মানবিকে ১২৪, বাণিজ্যে ১০ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৫টি।
‘সি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন ৫২০টি।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৩০টি, যার মধ্যে শুধু বাণিজ্য বিভাগে ২৩০টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯০টি, যার মধ্যে বাণিজ্যে ২৩১, মানবিকে ১৬ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৪৪টি।
‘ডি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন ৫৯০টি।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিকে ১৯২, বাণিজ্যে ৩৩ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৯টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯৬টি, যার মধ্যে মানবিকে ১৯৩, বাণিজ্যে ৩২ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৭১টি।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ডি’ ইউনিট, ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘বি’ ইউনিট, ২২ ফেব্রুয়ারি ‘এ’ ইউনিট এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
রাত দুইটায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, জুলাই গণহত্যায় আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত এবং প্রধান উপদেষ্টার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে হল থেকে রাস্তায় বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে একদল শিক্ষার্থী।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শুরু হয়ে মলচত্বর, ভিসি চত্বর হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চায় না ছাত্রজনতা। আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া মানে জুলাই শহীদের সঙ্গে প্রতারণা করা।
মিছিলে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম বলেন, আওয়ামী লীগকে ফেরাতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রে যারা মদদ দেবে, তারা যেই হোক না কেন, ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়াবে।
ঢাবির ছাত্রী তাবাসসুম বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। দেড় হাজার মানুষ হত্যার পর তারা ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। অথচ সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অন্তর্ভুক্ত করতে এখন থেকে নানা ফন্দি-ফিকির হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবে না ছাত্রসমাজ।
যতদিন পর্যন্ত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ না হবে, ততদিন পর্যন্ত লড়াই চলবে জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার হতেই হবে। গণভোটের মাধ্যমে হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি শুক্রবার বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাইমুর রহমান সীমান্তের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় মৃত্যু হয় তার।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন বলে জানান তার সহপাঠীরা। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুমাইয়া ফারাহ খান বলেন, ‘আজ ভোর ৫টায় সীমান্ত শ্যামলীতে কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। সে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। আমরা যতটুকু জেনেছি গত দুই দিন আগে পেটে ব্যথা নিয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়।
‘গতকাল ওর একটা সাজার্রি করার কথা ছিল। ওর বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছে। মা এবং বোন আছে। বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওদের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। তবে ওকে দাফনের জন্য কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
সীমান্তের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যে ১২৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
এ তালিকায় চিহ্নিত অনেক হামলাকারীর নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী।
বহিষ্কৃত এসব শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১২৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই তালিকায় রয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান ও ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নসহ আরও অনেকে।
তালিকায় নাম নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবি জুবায়ের বলেন, ‘তানভীর হাসান সৈকত, ইউনুসসহ স্পষ্ট ফুটেজ থাকা অনেক সন্ত্রাসীর নামই লিস্টে নাই। কাদের ইশারায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, প্রশাসনকে তা স্পষ্ট জানাতে হবে। অপূর্ণাঙ্গ এই লিস্ট আমরা মানি না।’
সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা ১২৮ জনের লিস্ট কারা তৈরি করছে, এইটা আমরা জানতে চাই। চোখের সামনে আমাদের যারা জসীম উদ্দীন হলের মাঠে ফেলে আমাকে আর হামজা ভাইকে পিটিয়ে মাথা ফাটানো মেহেদী হাসান শান্তের নাম নাই। আমার বোনদের যারা ভিসি চত্বরে পেটাল, তাদের নাম আসে নাই।’
তিনি লিখেন, ‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হইলো একটা সিঙ্গেল নারীকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করে নাই। অথচ নির্যাতনের মাত্রা হিসাব করলে এরা পুরুষ ছাত্রলীগের থেকেও ভয়ংকর ছিল। নারী ছাত্রলীগার সন্ত্রাসীদের কারা শেল্টার দিচ্ছে?’
স্মৃতি আফরোজ সুমি লিখেন, ‘বহিষ্কৃতদের তালিকা করার তদন্তের দায়িত্ব কি কোনো লীগারকে দেওয়া হয়েছিলো? লিস্ট দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। না হলে স্পষ্ট ফুটেজ, প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রতি হল থেকে ১০ থেকে ১৫ জনের নাম বাদ পড়ে কীভাবে?’
সুমাইয়া ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সবচেয়ে অমানবিক কাজ ছিল ঢাকা মেডিক্যালে হামলা। সেই হামলায় বেশির ভাগ হামলাকারী ছিল জগন্নাথ হলের। অথচ জগন্নাথ হল থেকে মাত্র দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রিভু মন্ডল, রাজিব বিশ্বাসের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও বাদ পড়ে গেল!’
এদিকে এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন এবি জুবায়ের।
১২৮ জনের তালিকায় দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই ছিলেন না, এমন নামও এসেছে।
তাদের কীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এসবসহ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ১৬ মার্চ (রবিবার) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাবির জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেওয়াজ অনুযায়ী তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ‘একজন প্রাক্তন উপাচার্য ও অধ্যাপকের মৃত্যুতে পরিবারের সম্মতিক্রমে জানাজার সময় ও স্থান সম্পর্কে সকলকে অবহিত করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে মাইকিং, শোকবার্তা প্রকাশ, কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ মোনাজাতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত সকল প্রথা অনুসরণ করা হয়েছে।
‘উল্লেখ্য, পরিবারের সিদ্ধান্তক্রমেই অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা ও দাফনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবারের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অসুস্থ হয়ে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পরের দিন ৭ মার্চ শুক্রবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান হাসপাতালে তাকে দেখতে যান এবং তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
‘ইন্তেকালের পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এবং প্রশাসনের অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ মরহুমের জানাজা ও দাফন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন এবং দাফন প্রক্রিয়ায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য