নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার নেতৃত্বে শুক্রবার ঢাকা জজ কোর্ট ও ন্যাশনাল মেডিক্যালের জনসন রোডের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালিত হয়।
জবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, ‘ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমান ডামি নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছেন সেটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা লিফলেট বিতরণ করেছি এবং করছি।
‘এই সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, অর্জিত গণতন্ত্র গুম, খুন ও নির্যাতনের মাধ্যমে সব কিছুই হত্যা করেছে। সাধারণ মানুষ এখন সচেতন। তারা এই প্রহসনের নির্বাচন মানে না।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সব সভা সমাবেশ বন্ধ করে তারা আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করছে। অবৈধ তফসিল বাতিল করে যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি না মানে তাহলে জবি ছাত্রদলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী রাজপথের উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে।’
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, ‘যাদের ইতিহাসই হচ্ছে গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল গঠন করা, তারা তো এ রকম একদলীয় ডামি নির্বাচনই করবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে, ৭ তারিখের ভোটকেন্দ্র বর্জন করবে।
‘আমরা আশা রাখি এই অবৈধ সরকার ১৮ কোটি জনগণের স্বার্থের কথা মনে রেখে অতি দ্রুত পদত্যাগ করবে। নতুবা বিএনপিসহ সকল গণতন্ত্রকামী দল যে এক দফা আন্দোলনে নেমেছে, সে আন্দোলন যেকোনো মূল্যে সফল করার জন্য রাজপথে যা করা দরকার তাই করবে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই বিজয়ী হোন না কেন ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।
শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিক দুই পার্টিরই সিনিয়র লিডারদের খুব ভালো সম্পর্ক। তার বন্ধু দু’দলের মধ্যেই আছেন। সম্পর্ক অনেকখানি নির্ভর করে ব্যক্তিগত অ্যাটাচমেন্টের ওপর।
‘ড. ইউনূস একজন গ্লোবাল লিডার। তাই যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই বিজয়ী হোন না কেন তা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের (বাংলাদেশের) সম্পর্ক ভালো। আমরা চাচ্ছি তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তাতে আমরা সারা বিশ্বের সাপোর্ট পেয়েছি। পতিত স্বৈরাচার সরকারের সঙ্গে ভারত থাকা সত্ত্বেও তা কোনো কাজে আসেনি। জনগণ জেগে উঠলে কোনো অপশক্তিই টেকে না।’
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্যপরিষদ নয়জন সংখ্যালঘু মারা যাওয়ার বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় এখানে রিলিজিয়াস মোটিভেশনের চেয়ে পলিটিক্যাল অ্যাফিলিয়েশন বা অন্য কোনো কারণ ছিল। লবিস্টরা হয়তো এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন। বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বক্তব্য ভোটের রাজনীতির কৌশল। কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আমেরিকায় অবস্থানরত ভারতীয়রা বেশিরভাগই কমলাকে সমর্থন দেয়ায় ট্রাম্প ভারতীয় হিন্দুদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘আগামী মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না’ শীর্ষক ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন প্রফেসর ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, প্রফেসর ড. এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, আশিকুর রহমান অপু ও মো. আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেয়া হয়।
রাজধানী ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রেখেই আলাদা প্রশাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ঢাবির অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে ফের দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের মূল দাবি থেকে সরে আসব না। সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দাবি, সেটি আমাদের থাকবেই। মন্ত্রণালয় সাত কলেজের বিষয়ে যে কমিটি করেছে, সে কমিটি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে।’
দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার কথাও বলেন এই শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাত কলেজ নিয়ে যেকোনো ধরনের চক্রান্ত প্রতিরোধ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ‘অবিবেচক’ বক্তব্য প্রত্যাহার, কমিটি বাতিল, কমিশন গঠন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
একইসঙ্গে সাত কলেজের সব ক্যাম্পাসে দাবির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান যে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকছে। তবে তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে তাদের বিষয়টা আলাদাভাবে দেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাত কলেজের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। তাদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজ আলাদাভাবে করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘সাত কলেজের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রার ও ডেডিকেটেড কর্মকর্তা থাকবেন। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে করা হবে।’
এ বিষয়ে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বস্তুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপদেষ্টাদের বৈঠকে সাত কলেজের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেস সচিবের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রাজধানী ঢাকার বড় সাতটি কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ আলাদা একটি ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। তবে এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে এই সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন, কথা বলেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই একটি জায়গা ঠিক করা হবে, যেখানে সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মগুলো করা যায়।
তিনি বলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হবে। আলাদা রেজিস্ট্রারসহ সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শফিকুল আলম বলেন, সরকার আশা করছে এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্দোলন আজ থেকে শেষ হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই সাতটি সরকারি কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
এর আগে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ছিল। সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্তোর কথা জানানো হলো।
আরও পড়ুন:বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ক্যাম্পাস। যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট সংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা৷
সকাল ১০টায় অবরোধ করে ৮ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১১টার মধ্যে বাসচালক ও মালিক গ্রেপ্তার না হলে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে মহাসড়কেই মাইশা ফৌজিয়া মিমের জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। জানাজায় নিহত মাইশার বাবা-মামাসহ পরিবারের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশালের জেলা প্রশাসক কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক ছাড়তে রাজি হননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের দশটি দাবির একটিও পূরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত খুনি বাসচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। বাস মালিককেও হাজির করতে পারেননি তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়ক ছাড়ব না।’
অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের একজন রুবেল মোল্ল্যা বলেন, ‘আমাদের বোন নিহত হয়েছে গতকাল। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত ঘাতক বাসচালককে আটক করতে পারেনি। বাস মালিককেও আনতে পারেনি। এমনকি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থাও হয়নি।
‘এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। আর যেন এভাবে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে না ঝরে সে জন্য ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ আমরা সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান চাই।’
নিহত ছাত্রীর বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বড় হয়েছেন ঢাকায় মায়ের সঙ্গে মামাদের তত্ত্বাবধানে। মাইশার বাবা মোহাম্মদ আলী সবার কাছে তার সন্তানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান এবং এই হত্যার যথাযথ বিচার দাবি করেন।
জানাজা শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ‘জানাজা নামাজ শেষে দুপুর ১২টার পর নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া দশ দফা দাবি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা অধিকাংশ দাবি আদায় করেছি। কিছু দাবির কাজ চলমান। শিক্ষার্থীদের আমরা আশ্বস্ত করেছি সব দাবি আমরা পূরণ করব অতি দ্রুত।’
বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের করা দাবি অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছি। সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালককে আটক করতে বুধবার রাত থেকেই আমাদের পুলিশ কমিশনার তৎপর আছেন। আমরা আজ রাতের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করব। স্পিডব্রেকার দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি আমারও দাবি। আমি গতকাল রাত থেকেই দাবিগুলো পূরণে কাজ করছি। ইতোমধ্য কিছু কাজ আমরা করেছি৷
‘বিআরটিএ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সড়কে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাসচালক ও সহকারীকে ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। আশা করছি শিগগির তাদেরকে আটক করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই না এভাবে আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে ঝরুক। তার জন্য যা করার প্রয়োজন আমি করব।’
জানা গেছে, ঢাকায় পারিবারিকভাবে মামাদের তত্ত্বাবধানে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভোলা রোডে পুলিশ বক্সের পাশে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক পার হওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলসের একটি পরিবহন মাইশাকে চাপা দেয়। শেরে বাংলা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল বুধবার পুনরায় সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। ৫ ঘণ্টা অবরোধ শেষে এই ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছেড়ে গেছেন তারা।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশন গঠনের দাবিতে মঙ্গলবার প্রায় ৫ ঘণ্টা রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে আগামীকাল বুধবার ফের ‘ব্লকেড’ ঘোষণা করে এদিনের মতো তারা অবরোধ তুলে নেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আজ সকাল ১১টা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সফল হয়েছে। আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ‘আমলাতান্ত্রিক’ কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
“সারাদিন আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চললেও এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও আমরা অবগত নই।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অবিলম্বে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় আবারও সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শান্তিপূর্ণ ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। একইসঙ্গে আজকের মতো ব্লকেড কর্মসূচি এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো।’
‘যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই। ’২৪-এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা। আমি তাদের পক্ষে থাকব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ছাত্রলীগের পদধারী সদস্যদের গণ হারে গ্রেপ্তার সমর্থনযোগ্য নয়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত ৮টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে সারজিস লেখেন, ‘[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের] ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণ হারে গ্রেফতার কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সাথে রাজপথে জীবন বাজি রেখে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি এ আচরণ ঠিক নয়। আন্দোলন সফল না হলে এই শিক্ষার্থীদেরই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো এবং তাদেরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হতো।
পোস্টের শুরুতে তিনি জানান, তার এ বক্তব্য কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের পদধারী সদস্যদেরকে কেন্দ্র করে।
‘১ জুলাইয়ের পূর্বে এবং ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এ আন্দোলনটা [কোটা সংস্কার আন্দোলন] মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই [এগিয়ে] নিয়ে গিয়েছে।’
যে সিস্টেমের কারণে এসব শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগে যুক্ত হয়েছে, সে সিস্টেমের জন্য সবাই দায়ী বলে উল্লেখ করেন সারজিস।
তিনি লিখেন- কারণ, আপনারা হলে ও ক্যাম্পাসে… ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি। ওরা যদি সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয়, তবে আপনিও গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন।’
‘বরং যখনই সুযোগ হয়েছে, ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন,’ লেখেন সারজিস।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ৮০ শতাংশ ছাত্র যদি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্তসাপেক্ষে শাস্তি হোক।
‘কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণ হারে গ্রেপ্তার হবে; এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই। ’২৪-এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা। আমি তাদের পক্ষে থাকব।’
আরও পড়ুন:ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, রুম দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) ৭৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে ১৪ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রয়েছেন।
পাশাপাশি ৮৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আর ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর মুচলেকা দিয়েছেন ১১ শিক্ষার্থী।
সোমবার দুপুরে কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে বিভিন্ন সময়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ৭৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজনকে দু’বছর, ৫৪ জনকে এক বছর এবং বাকি ১৪ জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।’
এর আগে গত বছরের ১৬ মার্চ চার শিক্ষার্থীকে হোস্টেলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে চমেক কর্তৃপক্ষ।
সবশেষ কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় তা তদন্তে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও একক কর্তৃত্ব ও গোষ্ঠীগত আধিপত্যের জন্য ছাত্র রাজনীতির নাম ব্যবহার করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে অবৈধভাবে প্রবেশ, রুম দখল, অঙ্গীকার ভঙ্গ, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। এসব কারণে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। তাদের কয়েকজনকে আগে কয়েকবার বহিষ্কারও করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য