চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ১০টিতেই নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়েই আওয়ামী লীগের। এ অবস্থায় নির্বাচনি প্রচার নিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছেন ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ভোটের প্রচার নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
কেউ দলীয় প্রার্থীর আবার কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তৃণমূলেও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন কর্মীরা। এ অবস্থায় এবার নৌকার প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের একচ্ছত্র সমর্থন পাচ্ছেন না। ফলে দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
কোনো কোনো আসনে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা পরস্পর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এবার নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দলের বাইরে অন্যান্য মতের ভোটারদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার জন্য দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথটিও উন্মুক্ত করে দেয়। এ কারণে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ১০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন।
চট্টগ্রামের ১০টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা সমানে সমান বলে অভিমত অনেকের। ফলে এসব আসনে দলীয় প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সঙ্গে সমানতালে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন। এখানেও দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান সমান তালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতা মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর প্রচারণায় নেতাকর্মীরা সরব।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুনের বিপরীতে এতোদিন শক্ত প্রতিপক্ষ কেউ না থাকলেও বুধবার হাইকোর্টের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন লায়ন মোহাম্মদ ইমরান। এরপরই তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলম এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ। দলীয় নেতাকর্মীরাও তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন তার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরব ভোটের মাঠে। এখানে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিশাল অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কর্মীদের বড় অংশ লতিফবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এ আসনে ভোটের প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সমানতালে মাঠে সক্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরী। সেখানেও নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে নৌকার আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সঙ্গে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান। এই আসনের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটনও পিছিয়ে নেই ভোটের প্রচারে।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিপরীতে শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ নেই। আওয়ামী লীগের এসব প্রার্থী অনেকটাই নির্ভার।
আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে রাজাপুর উপজেলায় মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মিলন মাহমুদ বাচ্চু ২১ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে এবং কাঠালিয়া উপজেলায় দোয়াত কলম প্রতীকের এমাদুল হক মনির ২০ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সরকারের গেজেট এবং শপথ অনুষ্ঠানের পরেই এই দুই মসনদে বসবেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ ছাড়া কাঠালিয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াজী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা আক্তার বিন্দু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাতে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাজাপুরেরর মিলন মাহমুদ বাচ্চু এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর কাঁঠালিয়ায় এমাদুল হক মনির এবার টানা দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও ছিলেন। তারা সেখানকার সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমরের লোক। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বিএনপির অনুসারীরা (ওমর সেনা) শাহজাহান ওরমরকে তাদের দলের লোক মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ১১০ বছর বয়সী এরফান ফকির। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগা এ ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমন অবস্থায় রোববার দুই ভাতিজার কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে গিয়ে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের ভোট।
গরমের মধ্যে আংগারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দেন এরফান। যে স্কুলটিতে তিনি ভোট দিয়েছেন, সেটি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন এ ব্যক্তি। স্কুলের পাশের মসজিদ নির্মাণকাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরফান ফকির বলেন, ‘জীবনে কোনো ভোটই মিস করি নাই। তাই শতকষ্টের মধ্যেও এবার আসছি ভোট দিতে। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি না জানি না।’
এ বয়সে ভোট দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এরফান।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানে ভোট দিতে এলাম।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দীপংকর চন্দ্র শীল বলেন, ‘সকাল থেকে আমার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি যে, উনার মতো (এরফান ফকির) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিকে আমি নিজে বুথে নিয়ে তার ভোটটা প্রয়োগ করাতে পেরেছি।
‘যেহেতু তার হাত এবং পাঁ কাপতেছিল, সেহেতু তিনি যেখানে সিল মারতে বলেছেন, আমি সেখানেই সিল মেরে উনাকে দেখিয়েছি। ১১০ বছর বয়সী উনার মতো একজন ভোটার আমার কেন্দ্রে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছে। তাতে আমি ধন্য হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
উপজেলাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯টি উপজেলায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোটের এলাকায় টহলে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮ জন ভোটার এক হাজার ১৮১ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে দেশের উপজেলাগুলোয় ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুন তা শেষ হবে, তবে কয়েকটি উপজেলায় মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছর।
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) ভোটগ্রহণ হবে রোববার। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গত ২৯ মে এই দুই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ কারণে তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা লেগেই আছে।
সর্বশেষ বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজাপুরের পুটিয়াখালিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজাপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এর আগেও কাঠালিয়া এবং রাজাপুর উপজেলায় প্রার্থীদের সমর্থকরা কয়েক দফায় বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আমির হোসেন আমু এমপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতা। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও রয়েছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (নলছিটি ও সদর) ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই নির্বাচনের আগেও ঝালকাঠি সদরে এমপি আমু সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এতোটাই কম ছিল যা চোখে পড়ার মতো।
সেই ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই রাজাপুরে ভোটের আগ মুহূর্তে এ ধরনের হামলার পর কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন নারীসহ বেশির ভাগ ভোটাররা। ঝালকাঠি সদরের মতো একই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায়ও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজাপুরের ভোটারদের পক্ষে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, তবে প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কেন্দ্রে যেতে আমাদের অনীহা।’
সাধারণ ভোটার শাহেদ আলি, পেশায় রিকশা চালক। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চালান নিজের সংসার।
তিনি বলেন, ‘মারামারি হইলে যদি মোরা আহত হই, হেলে মোগো ডাক্তার খরচ কেউ দেবে না। তাই ভোট দিতেও যামুনা।’
শাহেদ আলির মতো সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না। ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারিয়েছেন এখানকার ভোটাররা, তবে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল পিপিএম বলেন, ‘আগামী ৯ জুন রাজাপুর ও কাঠালিয়ার প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য শান্তিময় পরিবেশ ভোটারদেরকে উপহার দেয়া হবে। ভোটের আগের দিন থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে দুই উপজেলায়।’
আরও পড়ুন:বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন ভোট গণনা চলছে।
সিইসি বলেন, ‘৬০ উপজেলায় ভোট হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ২৮ জনকে গ্রেপ্তার ও ৯ জনকে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘এছাড়া ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভৈরব উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। তবে ইভিএমে ভালো কাজ হয়েছে।’
ভোট নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, এটা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) বিচার বিশ্লেষণ করবো না।
উপজেলায নির্বাচন আয়োজনে এবার চার ধাপে ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল দেয় ইসি। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ ধাপের ৬০টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
এ দিন ভোরে মারা যান উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের রামপুর চতিলা গ্রামে আলমগীর হোসেন ও আবুল কাশেম। সকাল ১০টায় চতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পর্যায়ক্রমে তাদের জানাজা নামাজ হয়।
স্কুলটিতে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সকাল ৮টা থেকে ভোট চলছিল। এমতাবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার খানেক মানুষ অংশ নেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুশফিকুর রহমান সেলিম এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাব ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তারা অনেকটা অলস সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় জানাজা নামাজে গ্রামের হাজার খানেক মানুষকে স্কুল মাঠে উপস্থিত হতে দেখে তারা অনুপ্রাণিত হন। কারণ তারা অধিকাংশই ছিলেন ওই কেন্দ্রের ভোটার।
ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭৮ জন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতাধিক ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র জেলা নির্বাচনি অফিসার মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক।’
আরও পড়ুন:সিলেটে উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে আক্রান্ত উপজেলাগুলোর দুটি কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। এই দুটি উপজেলায়ই বুধবার ভোটগ্রহণ চলছে।
সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের নৌকায় করে আসতে দেখা গেছে, তবে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম চোখে পড়ে।
জকিগঞ্জের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের কক্ষের সামনে পাঁচ থেকে ছয়জন দাঁড়ানো। নারী ভোটারদের কক্ষের সামনে ছিলেন দুজন।
এ ছাড়া প্রেমনগর গ্রামের পুরুষ ভোটারদের ২ নম্বর কক্ষে পৌনে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে দুটি।
উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আসার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় করে অনেক ভোটারকে কেন্দ্রে আসতে দেখা যায়।
এই কেন্দ্রের ভোটার রজত দেব বলেন, ‘বন্যার কারণে সড়ক ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হওয়ারই উপায় নেই। প্রার্থীর লোকজন বাড়িতে নৌকা পাঠিয়েছেন। তাই ভোট দিতে আসছি।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জ্যোতিষ মজুমদার বলেন, ‘বন্যার কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। এ ছাড়া সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে।’
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। এ উপজেলার ১১৩টি গ্রাম এখন পর্যন্ত প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ১৪৭ জন। উপজেলার ৫৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০৮ জন মানুষ অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলাতেও পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। বন্যায় এই উপজেলায় ১৯০টি গ্রাম এখনও প্লাবিত। এসব এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬১০ জন। বুধবার পর্যন্ত ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪১ জন অবস্থান করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কানাইঘাট উপজেলায় দুই লাখ আট হাজার ৯৯৯ জন ভোটার রয়েছেন। এছাড়া জকিগঞ্জে মোট ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৫১৩ জন।
দুই উপজেলায় ২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে জকিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন। অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, ‘পানি উঠে যাওয়ায় জকিগঞ্জের পাঁচটি ও কানাইঘাটের চারটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকিগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য