দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসন থেকে এবার ৩৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রার্থীর অধিকাংশের স্ত্রীর স্বর্ণাংলকার নেই। কোনো কোনো প্রার্থীর স্ত্রীর অর্থ-সম্পদ বলতে নেই কিছুই।
খুলনা-১ আসনে লড়ছেন ছয়জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডলের স্ত্রীর শুধু ৩ দশমিক ৩৪ একর কৃষি জমি রয়েছে। তার স্ত্রীর কোনো স্বর্ণালংকার নেই। ১৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও তা ননী গোপাল মণ্ডলের নামে।
তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী চন্দ্র প্রামানিকের নামে ৪৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রী একেবারে সম্পদহীন। ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায়ের নিজ নামে ১০ লাখ টাকার স্বর্ণ অলংকারদি থাকলেও তার স্ত্রীর কিছুই নেই। তবে জাতীয় পার্টির লাঙলের প্রার্থী কাজী হাসানুর রশিদের স্ত্রীর কিছুটা ধনী। তার নামে ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া আর কিছুই নেই।
খুলনা-২ আসন থেকে লড়ছেন ছয়জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিনের স্ত্রীর প্রচুর অর্থ সম্পদ রয়েছে। তার নগদ ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৮০ টাকা, ব্যাংকে ১৪ কোটি ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৪ টাকা, শেয়ার ২৩ কোটি ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র রয়েছে ২৫ লাখ টাকার, গাড়ি রয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৫ টাকার, কক্সবাজারে জমি রয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার, ঢাকায় বাড়ি রয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার ৬৩৫ টাকার ও গুলশানে ফ্লাট রয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এত সম্পদ থাকলেও তার স্বর্ণালংকার রয়েছে মাত্র ১৩ লাখ টাকার।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের দেবদাস সরকারের স্ত্রীর অর্থ-সম্পদ-স্বর্ণ কিছুই নেই। সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটে (মুক্তিজোট) ছড়ি প্রতীকের বাবু কুমার রায়ের নিজ নামে ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কিছুই নেই। বিএনএম’র নোঙরের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিনের স্ত্রীর মাত্র ৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. গাউসুল আজমের নিজ নামে ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কিছুই নেই। তবে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমানের স্ত্রীর ২০ হাজার টাকা স্বর্ণ রয়েছে।
খুলনা-৩ আসন থেকে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেনের নিজ নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রীর নামে স্বর্ণ রয়েছে ১০ হাজার টাকার।
জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের এসএম সাব্বির হোসেনের স্ত্রীর ৫ ভরি স্বর্ণ ব্যতীত আর কিছু নেই। জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নিজ নামে ১০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর নেই। এ ছাড়া ঈগল প্রতীক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথীর নিজ নামে ৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
খুলনা-৪ আসন থেকে এবার লড়ছেন ১২ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদীর স্ত্রীও প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক। তার নগদ ১ কোটি ৮৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭১ টাকা, ব্যাংকে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩০ টাকা, শেয়ারে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩ হাজার ৭০৯ টাকা, অন্যান খাতে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৩৬৭ টাকা ও ৩৪ লাখ টাকার বাড়ি রয়েছে। তার স্বর্ণালংকার রয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। তবে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নিজের নামে রয়েছে ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকার স্বর্ণ। এদিকে স্ত্রীর থেকেও বেশি অলংকারের মালিক শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী।
ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. ফরহাদ আহমেদের নিজ নামে ১৮ ভরি স্বর্ণ থাকলেও, স্ত্রীর কোনো অলংকার নেই। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের শেখ হাবিবুর রহমান ও সোফা প্রতীকে এমডি এহসানুল হকের স্ত্রীর কোনো স্বর্ণ নেই।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাবের মনিরা সুলতানেরও কোনো অলঙ্কার নেই। ইসলামী ঐক্যজোটের মিনারের রিয়াজ উদ্দীন খানের নিজ নামে ২০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কিছুই নেই।
বিএনএম প্রার্থী নোঙর প্রতীকের এস এম আজমল হোসেনের নিজ নামে ৭০ ভরি ও স্ত্রীর নামে ৯০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে মো. জুয়েল রানার স্ত্রীর ৮ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।ঈগল প্রতীকে মো. রেজভী আলমের নিজ নামে অজ্ঞাত মূলের কিছু স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রীর কোনো অলঙ্কার নেই। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মোত্তজা রশিদী দারার নিজ নামে ৬ তোলা ও তার স্ত্রীর নামে ১২ তোলা স্বর্ণ রয়েছে।
খুলনার-৫ আসনে লড়ছেন ৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নারায়ন চন্দ্র চন্দের স্ত্রীর অর্থ সম্পদের পরিমাণটাও বেশ ভাল। তার নগদ ৭৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৩ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ২৭ লাখ টাকা রয়েছে। তিনি বিয়ের সময়ে ১৫ ভরি স্বর্ণ উপহার পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার সাবেক মন্ত্রী স্বামী কখনো তাকে কোনো অলঙ্কার কিনে উপহার দেননি।
জাতীয় পাটির লাঙলের মো. শাহীদ আলমের স্ত্রীর এক ভরি ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের শেখ সেলিম আকতারের স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেনের নিজ নামে বা তার স্ত্রীর নামে কোনো স্বর্ণ নেই।
খুলনা-৬ আসনে লড়ছেন ৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানের নিজ নামে এক ভরি ও তার স্ত্রীর নামে সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. শফিকুল ইসলাম মধুর স্ত্রীর কাছে নগদ ১৫ লাখ টাকা থাকলেও কোনো স্বর্ণ নেই। তবে মধুর নিজ নামে ১৪ তোলা স্বর্ণ রয়েছে, যা তিনি উপহার পেয়েছিলেন।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের মো. আবু সুফিয়ান নিজের নামে এক ভরি স্বর্ণ কিনেছিলেন। তবে স্ত্রীকে কখনো স্বর্ণ কিনে দেননি। তার স্ত্রী বিয়ের সময়ে ১৫ ভরি অলংকার উপহার পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী মির্জা গোলাম আজমের স্ত্রীর স্বর্ণ রয়েছে মাত্র ১০ তোলা, বিএনএম প্রার্থী নোঙরের এস এম নেওয়াজ মোরশেদের ৩০ তোলা স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রীর রয়েছে মাত্র ২০ তোলা।
তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের মো. নাদির উদ্দিন খানের ২ ভরি ও তার স্ত্রীর ৭ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জি এম মাহবুবুল আলমের স্ত্রীর নগদ ৩ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে রাজাপুর উপজেলায় মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মিলন মাহমুদ বাচ্চু ২১ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে এবং কাঠালিয়া উপজেলায় দোয়াত কলম প্রতীকের এমাদুল হক মনির ২০ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সরকারের গেজেট এবং শপথ অনুষ্ঠানের পরেই এই দুই মসনদে বসবেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ ছাড়া কাঠালিয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াজী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা আক্তার বিন্দু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাতে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাজাপুরেরর মিলন মাহমুদ বাচ্চু এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর কাঁঠালিয়ায় এমাদুল হক মনির এবার টানা দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও ছিলেন। তারা সেখানকার সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমরের লোক। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বিএনপির অনুসারীরা (ওমর সেনা) শাহজাহান ওরমরকে তাদের দলের লোক মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ১১০ বছর বয়সী এরফান ফকির। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগা এ ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমন অবস্থায় রোববার দুই ভাতিজার কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে গিয়ে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের ভোট।
গরমের মধ্যে আংগারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দেন এরফান। যে স্কুলটিতে তিনি ভোট দিয়েছেন, সেটি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন এ ব্যক্তি। স্কুলের পাশের মসজিদ নির্মাণকাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরফান ফকির বলেন, ‘জীবনে কোনো ভোটই মিস করি নাই। তাই শতকষ্টের মধ্যেও এবার আসছি ভোট দিতে। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি না জানি না।’
এ বয়সে ভোট দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এরফান।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানে ভোট দিতে এলাম।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দীপংকর চন্দ্র শীল বলেন, ‘সকাল থেকে আমার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি যে, উনার মতো (এরফান ফকির) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিকে আমি নিজে বুথে নিয়ে তার ভোটটা প্রয়োগ করাতে পেরেছি।
‘যেহেতু তার হাত এবং পাঁ কাপতেছিল, সেহেতু তিনি যেখানে সিল মারতে বলেছেন, আমি সেখানেই সিল মেরে উনাকে দেখিয়েছি। ১১০ বছর বয়সী উনার মতো একজন ভোটার আমার কেন্দ্রে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছে। তাতে আমি ধন্য হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
উপজেলাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯টি উপজেলায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোটের এলাকায় টহলে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮ জন ভোটার এক হাজার ১৮১ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে দেশের উপজেলাগুলোয় ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুন তা শেষ হবে, তবে কয়েকটি উপজেলায় মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছর।
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) ভোটগ্রহণ হবে রোববার। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গত ২৯ মে এই দুই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ কারণে তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা লেগেই আছে।
সর্বশেষ বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজাপুরের পুটিয়াখালিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজাপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এর আগেও কাঠালিয়া এবং রাজাপুর উপজেলায় প্রার্থীদের সমর্থকরা কয়েক দফায় বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আমির হোসেন আমু এমপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতা। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও রয়েছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (নলছিটি ও সদর) ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই নির্বাচনের আগেও ঝালকাঠি সদরে এমপি আমু সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এতোটাই কম ছিল যা চোখে পড়ার মতো।
সেই ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই রাজাপুরে ভোটের আগ মুহূর্তে এ ধরনের হামলার পর কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন নারীসহ বেশির ভাগ ভোটাররা। ঝালকাঠি সদরের মতো একই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায়ও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজাপুরের ভোটারদের পক্ষে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, তবে প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কেন্দ্রে যেতে আমাদের অনীহা।’
সাধারণ ভোটার শাহেদ আলি, পেশায় রিকশা চালক। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চালান নিজের সংসার।
তিনি বলেন, ‘মারামারি হইলে যদি মোরা আহত হই, হেলে মোগো ডাক্তার খরচ কেউ দেবে না। তাই ভোট দিতেও যামুনা।’
শাহেদ আলির মতো সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না। ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারিয়েছেন এখানকার ভোটাররা, তবে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল পিপিএম বলেন, ‘আগামী ৯ জুন রাজাপুর ও কাঠালিয়ার প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য শান্তিময় পরিবেশ ভোটারদেরকে উপহার দেয়া হবে। ভোটের আগের দিন থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে দুই উপজেলায়।’
আরও পড়ুন:বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন ভোট গণনা চলছে।
সিইসি বলেন, ‘৬০ উপজেলায় ভোট হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ২৮ জনকে গ্রেপ্তার ও ৯ জনকে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘এছাড়া ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভৈরব উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। তবে ইভিএমে ভালো কাজ হয়েছে।’
ভোট নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, এটা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) বিচার বিশ্লেষণ করবো না।
উপজেলায নির্বাচন আয়োজনে এবার চার ধাপে ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল দেয় ইসি। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ ধাপের ৬০টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
এ দিন ভোরে মারা যান উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের রামপুর চতিলা গ্রামে আলমগীর হোসেন ও আবুল কাশেম। সকাল ১০টায় চতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পর্যায়ক্রমে তাদের জানাজা নামাজ হয়।
স্কুলটিতে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সকাল ৮টা থেকে ভোট চলছিল। এমতাবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার খানেক মানুষ অংশ নেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুশফিকুর রহমান সেলিম এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাব ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তারা অনেকটা অলস সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় জানাজা নামাজে গ্রামের হাজার খানেক মানুষকে স্কুল মাঠে উপস্থিত হতে দেখে তারা অনুপ্রাণিত হন। কারণ তারা অধিকাংশই ছিলেন ওই কেন্দ্রের ভোটার।
ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭৮ জন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতাধিক ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র জেলা নির্বাচনি অফিসার মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক।’
আরও পড়ুন:সিলেটে উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে আক্রান্ত উপজেলাগুলোর দুটি কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। এই দুটি উপজেলায়ই বুধবার ভোটগ্রহণ চলছে।
সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের নৌকায় করে আসতে দেখা গেছে, তবে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম চোখে পড়ে।
জকিগঞ্জের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের কক্ষের সামনে পাঁচ থেকে ছয়জন দাঁড়ানো। নারী ভোটারদের কক্ষের সামনে ছিলেন দুজন।
এ ছাড়া প্রেমনগর গ্রামের পুরুষ ভোটারদের ২ নম্বর কক্ষে পৌনে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে দুটি।
উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আসার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় করে অনেক ভোটারকে কেন্দ্রে আসতে দেখা যায়।
এই কেন্দ্রের ভোটার রজত দেব বলেন, ‘বন্যার কারণে সড়ক ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হওয়ারই উপায় নেই। প্রার্থীর লোকজন বাড়িতে নৌকা পাঠিয়েছেন। তাই ভোট দিতে আসছি।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জ্যোতিষ মজুমদার বলেন, ‘বন্যার কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। এ ছাড়া সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে।’
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। এ উপজেলার ১১৩টি গ্রাম এখন পর্যন্ত প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ১৪৭ জন। উপজেলার ৫৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০৮ জন মানুষ অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলাতেও পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। বন্যায় এই উপজেলায় ১৯০টি গ্রাম এখনও প্লাবিত। এসব এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬১০ জন। বুধবার পর্যন্ত ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪১ জন অবস্থান করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কানাইঘাট উপজেলায় দুই লাখ আট হাজার ৯৯৯ জন ভোটার রয়েছেন। এছাড়া জকিগঞ্জে মোট ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৫১৩ জন।
দুই উপজেলায় ২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে জকিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন। অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, ‘পানি উঠে যাওয়ায় জকিগঞ্জের পাঁচটি ও কানাইঘাটের চারটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকিগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য