আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে পারে এমন কোনো সভা-সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ লক্ষ্যে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে আউয়াল কমিশন।
মঙ্গলবার ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ধার্য করা রয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটারগণ ভোটপ্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে, এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সকলকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়।
‘এই অবস্থায় আগামী ১৮ ডিসেম্বর হতে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সকলকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া নতুন তিনজনের মধ্যে দু’জনকে দপ্তর বণ্টন এবং বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্যে ছয়জনের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে।
তবে রোববার সন্ধ্যায় শপথ নেয়া নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোববার রাতে দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে শেখ বশির উদ্দিনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন।
এছাড়া পুরনোদের মধ্যে ছয় উপদেষ্টার দপ্তর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। এখন তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
নতুন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সালেহ উদ্দিন আহমেদের দায়িত্ব কমেছে। এখন তিনি শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এতোদিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। এখন ভূমি মন্ত্রণালয় তার অধীনে থাকলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে তাকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এখন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তার অধীনে থাকলেও শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে তিনি পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এখন থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আগে তার অধীনে ছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
আইনসহ তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দায়িত্বভারও কিছুটা কমেছে। তাকে আর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামলাতে হবে না। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হলেন আরও তিনজন। রোববার সন্ধ্যায় তারা শপথ নিয়েছেন।
নতুন উপদেষ্টারা হলেন- ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক ও নাট্যকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। একইসঙ্গে তারা গোপনীয়তার শপথ নেন।
শপথ গ্রহণ শেষে নতুন তিন উপদেষ্টা শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ২১ জন। নতুন করে আরও তিনজন যুক্ত হয়ে সদস্য সংখ্যা বেড়ে হল ২৪ জন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি।
এরপর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময় নিয়োগ পান ১৬ জন উপদেষ্টা। ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকায় তিনজন উপদেষ্টা ওইদিন শপথ নিতে পারেননি। তারা পরে শপথ নেন। পরে আরও চারজন উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হন।
এদিকে রোববার দিনভর চার থেকে পাঁচজন উপদেষ্টা শপথ নিচ্ছেন- মিডিয়ায় এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান যে নতুন করে তিনজন উপদেষ্টা শপথ নেবেন। তার ধারাবাহিকতাতেই অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন নতুন উপদেষ্টা যুক্ত হলেন। এবার তাদের দপ্তর বণ্টনের পালা।
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করেছে অন্তর্ভুক্তি সরকার।
রোববার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হককে সভাপতি করে চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নতুন করে তিনজন যুক্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন উপদেষ্টাদের শপথ পড়াবেন।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ তথ্য জানালেও নতুন উপদেষ্টা হিসেবে কারা পরিষদে যুক্ত হচ্ছেন তা শপথের আগে জানাতে চাননি।
অবশ্য এর আগে খবর ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নতুন করে চার থেকে পাঁচজন সদস্য যুক্ত হচ্ছেন।
শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত শপথ গ্রহণ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে কারা নতুন করে উপদেষ্টা হচ্ছেন। কারণ শেষ মুহূর্তেও এটা রদবদল হতে পারে। যেটুকু জেনেছি আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা বঙ্গভবনে যাব, ওখানে চূড়ান্ত হবে এবং আজকে শপথ অনুষ্ঠিত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টাসহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ২১ জন সদস্য রয়েছেন। নতুন করে আরও তিনজন যুক্ত হলে সদস্য সংখ্যা বেড়ে হবে ২৪ জন।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ৪৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮৩৭ জন। নিহতদের মধ্যে ৭৪ জন নারী ও ৬৬টি শিশু।
মোট ২০৮টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং মোটরবাইক দুর্ঘটনার হার ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এছাড়া ১০২ জন পথচারী (২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ) এবং ৬৭ জন যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী (১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ) নিহত হন।
এ সময় চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু এবং তিনজন আহত হন। আর ২১টি রেল দুর্ঘটনায় ১৮ জন মারা যান এবং ছয়জন আহত হন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং এর নিজস্ব রেকর্ডের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
যানবাহন অনুযায়ী মৃত্যুর হিসাব
যানবাহনের ধরন অনুযায়ী মৃত্যুর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটরবাইক চালক বা যাত্রীদের মধ্যে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে (৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ)। বাসযাত্রীদের মধ্যে ৩১ জন (৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) মারা গেছেন এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রলি বা লরির যাত্রীদের মধ্যে ২০ জন (৪ দশমিক ২৬ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
এছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রীদের মধ্যে ১২ জন (২ দশমিক ৫৫ শতাংশ) মারা গেছেন। আর তিন চাকার যান (যেমন অটোরিকশা, সিএনজি, টমটম) যাত্রীদের মধ্যে ৯৪ জন (২০ দশমিক ০৪ শতাংশ) প্রাণ হারিয়েছেন।
নসিমন ও করিমনের মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন দুর্ঘটনা ১০ জন (২ দশমিক ১৩ শতাংশ) এবং সাইকেল চালক ও রিকশা যাত্রীদের মধ্যে চারজন (০ দশমিক ৮৫ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার স্থান অনুযায়ী সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭৩টি (৩৯ দশমিক ০৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে ঘটেছে, ১৬২টি (৩৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৪টি (১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ) শহুরে এলাকায় এবং এছাড়া অন্যান্য অপ্রত্যাশিত স্থানে ৬টি (১ দশমিক ৩৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল ১১২টি (২৫ দশমিক ২৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭১টি (৩৮ দশমিক ৬০ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ) পথচারীকে আঘাত, ৪২টি (৯ দশমিক ৪৮শতাংশ) পেছন থেকে ধাক্কা এবং ১৪টি (৩ দশমিক ১৬ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটে।
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহন
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে ২৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্র্যাক্টর, ট্রলি, লরি ও ড্রাম ট্রাক জড়িত ছিল।
মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ দুর্ঘটনা ছিল ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ছিল ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মোটরবাইকের ছিল ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং তিন চাকার যান (যেমন অটো-রিকশা) ছিল ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সাইকেল ও রিকশা ছিল ১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ছিল ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।
যানবাহনের সংখ্যা
মোট ৭৭৩টি যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। এর মধ্যে ১১২টি বাস, ১১৯টি ট্রাক, ২২টি কাভার্ড ভ্যান, ২৫টি পিকআপ, সাতটি ট্র্যাক্টর, ছয়টি ট্রলি, নয়টি লরি, আটটি ড্রাম ট্রাক, একটি ১৮-চাকার লরি, ১২টি মাইক্রোবাস, ১৪টি প্রাইভেট কার, পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স, তিনটি জিপ, ২১৭টি মোটরবাইক, ১৩৬টি তিন চাকার যান, ৪২টি স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ১৪টি সাইকেল বা রিকশা এবং ২১টি অজ্ঞাত যানবাহন।
দুর্ঘটনার সময়
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছিল ভোরে, ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ সকালে, ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ দুপুরে, ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ সন্ধ্যা, ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ গোধূলি এবং ২৬ দশমিক ১৮ শতাংশ রাতে।
বিভাগ অনুযায়ী দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ গটেছে ঢাকা বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়েছে রাজশাহী বিভাগে।
দুর্ঘটনার ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮ দশমিক ১০ শতাংশ ঘটেছে খুলনা বিভাগে। বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ১৩১টি ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২টি এবং প্রাণ হারিয়েছে ২৪ জন।
বিভিন্ন জেলা অনুযায়ী চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অপরদিকে মাগুরা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পঞ্চগড়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকা শহরে ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু এবং ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
মৃত্যুর পেশাগত বিশ্লেষণ
প্রকাশিত গণমাধ্যম তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য, দুজন আনসার সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়জন শিক্ষক এবং চারজন সাংবাদিক ছিলেন।
দুর্ঘটনা ও হতাহতের এসব ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
আরও পড়ুন:গণঅভ্যুত্থানই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রোববার সচিবালয়ে বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারকে বৈধতা দেয়ার অধ্যাদেশ ও সংস্কার নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘এই সরকারের বৈধতা হলো গণঅভ্যুত্থান। যেটা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে লিগ্যাল রেটিফিকেশন এবং অন্যান্য বিষয়।
‘গত তিন মাস আমাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি আপনারা দেখেছেন। সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত বসছেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম চলবে।’
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্যই সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার রূপরেখা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আশা করি একটি নতুন বাংলাদেশ যেটার কথা আমরা মুখে বলছি, সেটার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’
এরই মধ্যে সরকার গঠনের আগেই ১০৬-এ (সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ) এই সরকারের বৈধতা দেয়া হয়েছে। যে অর্ডিন্যান্সের কথা বলা হচ্ছে সেটার মাধ্যমে আরও লিগ্যাল রেটিফিকেশন হবে বলে উল্লেখ করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যে অফিসিয়াল পেজ আছে, দেশের বাইরে বসে পোস্ট করে, সেখানে শ্রমিকদের উস্কে দেয়ার মতো কিছু পোস্ট আমার চোখে পড়েছে। ষড়যন্ত্র তো ঘোষণা দিয়ে হচ্ছে ভাই। সেটা তো সোশ্যাল মিডিয়ার সবাই দেখছে। এগুলো কাউন্টার করার ক্ষেত্রে আপনাদের (সাংবাদিক) একটা ভূমিকা থাকা উচিত, আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘(আওয়ামী লীগের) এই কথায় বিশেষ বড় অংশের কেউ কনভিন্সড না। না হলে আওয়ামী লীগের আহ্বানে শ্রমিকরা আজকে মিছিল নিয়ে আসতো ঢাকার দিকে। কেউ তো আসেনি।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধার এবং অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য অভিবাসন ব্যয় কমাতে সহায়তা প্রদানের জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকায় নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক হাইকমিশনার ডেরেক লো রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। এগুলো ফেরত আনতে আমাদের সিঙ্গাপুরের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রদূত লো প্রধান উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর লক্ষ্যে ঢাকার সঙ্গে কাজ করার জন্যও সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা যেন তাদের পরিবারের কাছে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে পারেন সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে চায়। আমরা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে নিয়োগের খরচ কমানোর জন্য একটি মডেল কাঠামো তৈরি করতে পারি।’
হাইকমিশনার এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অবৈধ অর্থ আদান-প্রদান রোধ করতে আগ্রহী।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে বৈদেশিক নিয়োগ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করার পরামর্শ দেন, যাতে করে মানব পাচার ও শ্রমিক শোষণের আশঙ্কা কমে যায়।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা ও হাইকমিশনার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, শিপিং, শিক্ষা ও নিজ নিজ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বৈরাচারী সরকার পতনের মাত্র তিন মাসের মাথায় অর্থনীতি ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। এখন এদেশে ব্যবসা করার উপযুক্ত সময়।
সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর ফ্রান্সিস চং বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবিত এফটিএ’র ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং উভয় দেশই এখন কীভাবে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করা যায় তার সুযোগ নির্ধারণ করবে।’
লো বলেন, সিঙ্গাপুর পানি শোধন এবং বর্জ্য শক্তি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাদের দক্ষতা ভাগাভাগি করতে পারলে খুশি হবে। তিনি উভয় দেশের খাদ্য সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার সরকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে এবং সার্ককে দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য সিঙ্গাপুরের সমর্থন চান। প্রতিক্রিয়ায় ডেরেক লো এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমাদের সর্বত্র বন্ধুত্ব করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ঢাকা তার পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মিত্রদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় সিঙ্গাপুরের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মাইকেল লি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য