রাত ১২টা কি সাড়ে ১২টা। আধো ঘুমে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে চোখ মেলেন ৪০ বছর বয়সী নারগিছ। জানালা দিয়ে হঠাৎ একটি আগুনের গোলা আসতে দেখেন। মুহূর্তেই আগুন লেগে যায় মশারিতে৷ জ্বলন্ত মশারিতে পেঁচিয়ে যায় জানালার পাশে থাকা ঘুমন্ত কন্যা মাহিদা জান্নাত তিশা।
১০ বছর বয়সী সন্তানেক বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেন নারগিছ। মশারি থেকে আগুন ছড়িয়ে যায় বিছানায়। আগুনে ঝলসে যায় মা-মেয়ের পুরো শরীর।
গেল ২৮ নভেম্বর রাতে এই ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকায়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় দুর্ঘটনার প্রায় দশদিন পর।
ঘটনার চারদিন পর ২ ডিসেম্বর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান তারা। মৃত্যুর আগে নারগিছ সেই রাতের ঘটনা বলে যান স্বজনদের।
স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানালার পাশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) শক্তিশালী সঞ্চালন লাইন ও ভবন থেকে অনিরাপদ দূরত্বে বৈদ্যুতিক খুঁটি দেখেন। তাই তাদের সন্দেহ, পিডিবির সঞ্চালন লাইনে কোনো গোলযোগ থেকে জানালা দিয়ে নারগিছের দেখা সেই আগুনের গোলা প্রবেশ করেছে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কথার সঙ্গেও মিলে যায় স্বজনদের সন্দেহ।
গার্মেন্টকর্মী নারগিছ দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে নগরীর বায়েজিদ থানার অক্সিজেন চাঁদনি গলির মুখ এলাকার আল আরাফাত ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। এর আগে ২০১৪ সালে প্রথম স্বামী ইসমাইলের সঙ্গে ডিভোর্স হয় তার। ইসমাইল ও নারগিছের ঘরে দুই ছেলেমেয়ে। দুই সন্তান আদালতের নির্দেশে বাবার সঙ্গে থাকলেও মায়ের বাসায়ও ইচ্ছেমেতা যাতায়াত ছিল।
ঘটনার দিন বিকেলে আড়াইশ মিটার দূরের বাবার বাড়ি থেকে মায়ের কাছে যায় তিশা। রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে সে। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুর্ঘটনার পর প্রতিবেশীরা মা-মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ছুটে যান ইসমাইল।
তিনি বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে শুরুতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে শুনি তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেছে। দ্রুত হাসপাতালে চলে যাই। সেখানে ডাক্তার বললেন, বার্নে আইসিইউ নেই। তাই ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে।
‘আমি সকালের মধ্যে দুজনকে একসঙ্গে ঢাকায় নিয়ে যাই৷ সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ তারিখ ভোরে নারগিছ ও সকাল ১০টার দিকে তিশা মারা যায়।’
মৃত্যুর আগে নারগিছ দুর্ঘটনা সম্পর্কে ইসমাইলকে বিস্তারিত জানান। ইসমাইল বলেন, “আমি তো ওর সঙ্গে কথা বলতাম না। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে তো কথা বলতেই হবে। সে বললো, ‘ঘুম ভাঙার পর দেখি হঠাৎ জানালা দিয়ে একটা আগুনের গোলা আসছে৷ পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গেছে। মশারিতে আগুন লেগে গেছে। আর জ্বলন্ত মশারি তিশার গায়ে পেঁচিয়ে গেছে। সেটা টান দেয়ায় আমার গায়েও আগুন লেগে যায়।’ তারা দুজন দগ্ধ অবস্থায় নিচে নেমে যায়। তখন দুজন প্রতিবেশী ছেলে তাদের দেখে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
শুক্রবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মাহাসড়কে অক্সিজেন এলাকার চাঁদনী গলির মুখে পাঁচতলা আল আরাফাত ভবন। ওই ভবনের সামনের (উত্তর-দক্ষিণ) দেয়াল ঘেঁষে চলে গেছে পিডিবির ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের সঞ্চালন লাইন।
আবার ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ঘেঁষা দুটি খুঁটি থেকে একটি ১৩ হাজার কিলোভোল্টের সঞ্চালন লাইন চলে গেছে পূর্বদিকে। তাছাড়া ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ঘেঁষা খুঁটি দুটিতে একটি ট্রান্সফরমারও দেখা গেছে। তবে ওই ট্রান্সফরমারের তিনটি ফিউজই বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পিডিবির শক্তিশালী সঞ্চালন লাইনের তার রীতিমতো ঘিরে রেখেছে ওই ভবন।
ট্রান্সফরমারের কয়েক ফুট উপরে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোর সঙ্গে লাগোয়া বাসায় থাকতেন নারগিছ। ওই বাসার দুটি জানালাই দক্ষিণ পাশের দেয়ালে- একটি রান্না ঘরের এবং অন্যটি নারগিছের কক্ষের। দুই জানালার মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, খুঁটি ও ট্রান্সফরমারের কাছাকাছি রয়েছে রান্না ঘরের জানালা। দুর্ঘটনার পর কাঁচ ভাঙা ছাড়াও ওই জানালের নিচের দিকের পাত উঠে অনেকটা দূরে চলে গেছে। নারগিছের কক্ষের জানালার পাতও কিছুটা উঠে গেছে। তবে এটি তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসমাইলের দাবি, পিডিবির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটি বা তারে কোনো গোলযোগ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জানালা দিয়ে ঢুকেছে বাসায়। সেখান থেকেই আগুন লেগেছে মশারিতে।
তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন লাইনের তিনটি তারের মধ্যে একটি রুমের কাছাকাছি। তাছাড়া খুঁটিও কাছে। সেখানে কোনো গোলযোগের কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে। আর ওই বিস্ফোরণ থেকে জানালা দিয়ে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাসায় ঢুকেছে৷ সেখান থেকেই মশারিতে আগুন লেগেছে৷ আগুন কিন্তু বেশি না। বাসার কিছু কাপড়-চোপড় ছাড়া বাকি সব তো ঠিক আছে দেখা যাচ্ছে।’
ঘটনার সময় ওই বাসার জানালার ঠিক নিচে একটি টিনের ছাদওয়ালা টঙ দোকানের বেঞ্চে বসে ছিলেন স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী আসাদ। তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ তীব্র বিস্ফোরণ হয় আমার মাথার উপর। বিস্ফোরণের পর মাথার ওপর টিনের ছাদে ঝনঝন করে কিছু পড়ার শব্দ পেয়েছিলাম। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হবে হয়তো। সেদিন উপরে টিন না থাকলে হয়তো আমারও মৃত্যু হতো।’
তবে ওই ভবনের কেয়ারটেকার রফিক ও ভবনের নিচে থাকা পান দোকানি আব্দুল গনির দাবি, বিস্ফোরণটি ঘটেছিল ভবনের পাশে থাকা ট্রান্সফরমারে। মাঝেমধ্যেই ওই এলাকায় ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পিডিবির খুঁটি কিংবা ট্রান্সফরমার- বিস্ফোরণ যেখানেই হোক না কেন এর পেছনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
তবে নিজেদের দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে পিডিবি। পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা আমি শুনিনি। আমাদের বিদ্যুৎ লাইন থেকে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না৷ তাছাড়া ট্রান্সফরমার থাকলেও সেটার বিস্ফোরণে এত উপরে (তৃতীয় তলার সমান উচ্চতায়) সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে আমরা খোঁজ নেব, আমি লোক পাঠাব সেখানে।’
দুর্ঘটনার বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ওইদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন পাইনি৷ মা-মেয়ে দগ্ধ ছিল, তাদেরও পাইনি। মূলত বিদ্যুতের তার (সঞ্চালন লাইনের) থেকে কিছু একটা ঘটেছে।’
এর আগে ২০ নভেম্বর বন্দর নগরীর বায়েজিদ থানার বালুচরা এলাকায় কোচিং করতে গিয়ে ভবনের সঙ্গে লাগোয়া পিডিবির সঞ্চালন লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে দগ্ধ হয় স্কুলছাত্র আবির হোসেন। এর তিনদিন পর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। আবির বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে শহরমুখী লেনের পাশ দিয়ে যাওয়া সঞ্চালন লাইনে।
বছর দেড়েক আগে সড়কটি প্রশস্ত করায় সঞ্চালন লাইনটি সড়ক থেকে আরও দূরে সরাতে হয়। এতে সড়কের পাশে থাকা বেশ কয়েকটি ভবন বিপজ্জনকভাবে ঘেঁষে স্থাপন করা হয় লাইনটি। এতে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।
এই দুর্ঘটনার ৭ দিন পর ২৭ নভেম্বর একই এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করতে গিয়ে পিডিবির উপ-সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান এক শ্রমিক। সবশেষ মারা যান গার্মেন্টকর্মী নারগিছ ও তার মেয়ে তিশা৷
পিডিবির অবহেলা ও তদারকির অভাবে ২০ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর- এই ৮ দিনে পিডিবির একই সঞ্চালন লাইনে দুটি ও এই লাইনের একটি উপ-সঞ্চালন লাইনে একটিসহ মোট তিনটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান চারজন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য