চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসন থেকে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রধান তিন নেতা এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ে বৈধও হয়েছে তাদের মনোনয়নপত্র।
তিন প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারী।
তাদের মধ্যে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও সৈয়দ সাইফুদ্দীন মাইজভাণ্ডারী সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের কারণে ফটিকছড়ির আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ফটিকছড়ির ভোটারদের মধ্যে একটি বড় অংশ মাইজভাণ্ডার দরবারের অনুসারী হলেও ভোটাররা জাতীয় রাজনীতির মতোই দুই ধারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভক্ত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। শরিক দল হিসেবে সৈয়দ নজিবুল বশর ভাণ্ডারী গেল দুবার নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি নৌকা পাওয়ার আশায় রয়েছেন। অন্য দুই দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও (বিএসপি) সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১৯ নম্বরে নিবন্ধন পায় তরিকত ফেডারেশন। ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘ফুলের মালা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
নির্বাচন কমিশনে ৩৫ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘মোমবাতি’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন।
নির্বাচন কমিশনে সবশেষ নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৪৯। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘একতারা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে। দলটির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ তিনজনই প্রার্থী হয়েছিলেন। তার মধ্যে ফটিকছড়ি আসনে মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীকে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। একই আসনে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ১৭৪ ভোট পান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা এম এ মতিন বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করছি। ফটিকছড়ি এবং পটিয়া আসন থেকে এককভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।
‘ফটিকছড়িতে আমাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। ইসলামী ফ্রন্টের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে। আমাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে এখানে।’
বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
অপরদিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেয়া হলেও এবারও ১৪ দলীয় জোটের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
তিনি বলেন, ‘আমরা জোটে আছি। জোটের বাইরে কোনো হিসাব নেই। জোট আগেও ছিল,এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে চাচা-ভাতিজা দুজনের একজনকে এই আসন থেকে সমর্থন জানানো হতে পারে। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তিনি গতবারও মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জোটের কারণে সরে দাঁড়ান। এবারও তাকে সরে দাঁড়াতে হতে পারে।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন দল থেকে প্রার্থী দেয়ার জন্য। বাইরের কাউকে যাতে এই আসনটি ছাড়া না হয়।
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের দাবি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারাও এ মতের পক্ষে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় জনপ্রতিনিধিরা নেই। তাদের দায়িত্বগুলো বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা পালন করছেন।
‘সেই জায়গা থেকে তাদের যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, আজকের ডিসি সম্মেলনে আমরা সেগুলো শুনেছি এবং এগুলো অ্যাড্রেস করেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যেকেই মূল দায়িত্বের বাইরে কিছু না কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একজন অফিসার যখন নিজ দায়িত্বের বাইরে আরও দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করেন, তার পক্ষে কোনোটাই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যে কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনও চলমান আছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও সরকার নেয়নি।
‘আশা করছি খুব দ্রুতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। হয় আমরা দ্রুতই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করব, অন্যথায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নয়, নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে দেওয়া প্রস্তাব ও তা বাস্তবায়নে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের করণীয় নিয়ে এ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠনের (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করা হয়নি; বরং এ সংস্থার ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।’
ফেরারি আসামি, বিচারিক আদালতে দোষী হলেই অযোগ্য, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বা অর্থ পাচারকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিষয়টি বিতর্কিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘হত্যাকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এটা জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতায় আনতে গিয়ে তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে না বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড় সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র। চোখ এবং আঙুলে ক্ষতিগ্রস্তদের ইসির নির্দেশনায় দেওয়া হবে এনআইডি। নতুন ভোটার ছাড়াও স্মার্ট কার্ড এবং ভুল সংশোধনের সুযোগও পাবেন আহতরা।
‘এ ছাড়াও সারা দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পাবেন এ সেবা।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা জানান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
নির্বাচন ভবনের অনুষ্ঠানে সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি।’
ওই সময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সব সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সংশয় দূর করার জন্য আমরা এটা (ভোটার তালিকা হালনাগাদ) করছি। আমরা মাঠে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার ও ৪ হাজার ৩০০ ব্যাগ সিইসির কাছে হস্তান্তর করেন।
নাছির উদ্দিন জানান, তারা ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বিশাল এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে।’
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য (বিতর্ক) করেন না এবং আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না এবং আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে কি না, তা সময় বলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘সময় আসলে দেখা যাবে কোন কোন দলের নিবন্ধন থাকে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সময় আসলে দেখা যাবে। সে জন্য কাজ করছে ইসি।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিলেট সার্কিট হাউসে শনিবার সকালে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অনেকে এক দিনে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এক দিনে সব নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব না।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময় অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য কাজ করছে ইসি, যা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে দিয়ে হবে। এবার নির্বাচনে প্রবাসীরা অংশ নিতে পারবেন।’
এর আগে সিইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন:সংসদীয় পদ্ধতিতে সব নির্বাচন করার প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এই উদ্দেশ্যে আমরা একটি একীভূত আইন করতে চাই। বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পৌরসভাগুলোর আয় নেই, বেশির ভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলনকক্ষে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
ড. তোফায়েল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করতে হবে, আমরা এমন প্রস্তাব করব। এদিকে বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পৌরসভারগুলোর আয় নেই; বেশির ভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হতে পারে। পাশাপাশি জেলা পরিষদগুলোর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এর বাজেট বা প্রজেক্টগুলোর কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। তাই একে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে জেলা পরিষদের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন দরকার রয়েছে।
‘আমরা চাই জেলার আন্ডারে যতগুলো উপজেলা আছে, সেই উপজেলাগুলো থেকে মেম্বার নির্বাচিত হবে। এ ছাড়া একটি জেলা প্ল্যানিং নামে সংস্থা হবে। তারা সব উন্নয়ন প্ল্যান করবে এবং বাস্তবায়নের দিকটা দেখবে। এভাবে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত লোকাল গভর্নমেন্টের ইলেকশনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিতভাবে যদি এই নির্বাচন করা হয়, তাহলে খরচ ৬০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসত।
‘সংসদসহ সব নির্বাচন একসঙ্গে করা হলে মোট খরচ এক হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তাই আমাদের প্রস্তাব হবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে ফেলা। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে আমরা আমাদের প্রস্তাব সরকারের কাছে দিতে চাই। নির্দিষ্ট করে বললে ২৪ ফেব্রুয়ারি।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় কাজে এমপিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টা সংবিধান সংস্কার কমিশন দেখছেন, তবে আমাদের ওখানে সাজেশন থাকবে এমপিরা যাতে লোকাল গভর্মেন্টের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ না রাখে।
‘স্থানীয় সরকারের আয় বাড়াতে ট্যাক্স কীভাবে লোকাল গভর্নমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করা যায়, সে বিষয়টাও দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দেশের মানুষের ভোটবঞ্চনার দুঃখ ঘোচানোর অঙ্গীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববার দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
ভোট নিয়ে সিইসি বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের বঞ্চনার দুঃখ বলার জন্য আমরা আছি। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ তাদের বঞ্চনা যাতে আমরা দূর করতে পারি; ঘোচাতে পারি।
‘তারা যে এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সেটা ঘোচাতে চাই। তাদের বঞ্চনার কষ্ট দূর করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কমিটমেন্টে (অঙ্গীকার) অটল আছি। আমাদের মূল লক্ষ্য একটা ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন (অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন)। সেই পর্যন্ত যাতে পৌঁছাতে পারি, সেটি লক্ষ রাখবেন।
‘এটি একটি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা, যা আজ থেকে শুরু হয়েছে। সাফল্য আসার আগ পর্যন্ত চলবে।’
বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৬ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ২ জানুয়ারি যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখের বেশি ভোটার।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য