আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ারকার্স পার্টি ও জাসদের দুই শীর্ষ নেতা।
রাজধানীতে জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাসায় মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠক করেন তারা। বৈঠক থেকে বের হয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, আসন ভাগাভাগি যেন জোটের জন্য সম্মানজনক হয়, সেটাই প্রত্যাশা। আমাদের এখন ১০ জন সংসদ সদস্য আছেন। প্রত্যাশা ২০ জনের।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জোটের মর্যাদা সম্মান রক্ষা করে আসন যেনো চূড়ান্ত হয় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে
ইনু আরও বলেন, জোটের প্রার্থীরা নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। জোটের প্রার্থীর আসনে আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিভ্রান্তি দেখা দেবে। সে বিষয়টি আওয়ামী লীগ বিবেচনা করবে বলে আশা করি।
তিনি উল্লেখ করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা হয়নি, এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমির হোসেন আমুকে। সে ধারাবাহিকতায় বৈঠক। অল্প কয়দিনের মধ্যে জানা যাবে জোটের প্রার্থী কারা হবেন।
রাশেদ খান মেনন জানান, জোটের পক্ষ থেকে একটা তালিকা দেয়া হয়েছে, আগের চেয়ে কিছু আসন বেশি চেয়েছে ১৪ দল।
বৈঠকে এ দুই নেতাও ছাড়াও জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা নিতে অন্তর্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। সূত্র: ইউএনবি
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘উগ্রবাদীরা ভারতের বিজেপির উস্কানিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিষ্ক্রিয় উপস্থিতিতে আগরতলার কুঞ্জবনে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে তাতে আগুন দেয়া, পতাকার খুঁটি ভাঙচুর ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় অন্তর্বতী সরকারের উচিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া। মানুষদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনে এহেন নজিরবিহীন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন, ১৯৬১-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
‘ভারত সরকার হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘ভারতের হিন্দুদের বলব- আপনাদের বন্ধুত্ব তো হাসিনার সঙ্গে। সেই বন্ধুত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যে শত্রুতায় নেমেছেন, সেটা সৎপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে আপনাদের বন্ধু হাসিনা আপনাদের কাছে আশ্রয় পেয়েছে। তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।
‘মনে রাখবেন, বাংলাদেশ লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে, দিল্লির দাসত্ব করতে নয়। বরং যিনি সেবাদাসী হতে চেয়েছিলেন, সেই দাসী এখন আপনাদের পদতলে।
বিএপির এই নেতা আরও বলেন, ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি পাগল হয়ে গেছে বিজেপি সরকার ও উগ্রবাদীরা। মরিয়া হয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠাতে বলছেন।
রিজভী বলেন, ‘ভারতেই তো বাংলাদেশের মিশনগুলো অরক্ষিত। মিশনের একজনকে আমরা ভিডিওতে ভাইরাল হতে দেখেছি, কী বেদম প্রহার করা হচ্ছে! তারপরও মমতা ব্যানার্জি বলবেন, বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার না ভারতে শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার?’
একই সঙ্গে কাশ্মীর, আসাম এবং মনিপুরেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো প্রয়োজন বলে মনে করেন রিজভী।
মমতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আগে নিজের দেশ সামলান। শান্তিরক্ষী বাহিনী আপনার দেশ ভারতে মোতায়েন করুন। বিশেষ করে কাশ্মীর, আসাম ও মনিপুরে। নরেন্দ্র মোদির এক দশকের শাসনামলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার ক্রমশ কমে আসছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) মুসলিমবিরোধী বলে অভিযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করেছে মোদি সরকার। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে নির্মিত হয়েছে রামমন্দির। একাধিক রাজ্যে গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে মুঘল আমলের বিভিন্ন নাম ও স্মৃতিচিহ্ন।’
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগগুলো তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা।
‘ভারতের পরিকল্পনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখা’
রিজভী বলেন, ‘ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত…। সেসব নিয়ে দেশটির কোনো সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মাস্টারপ্ল্যানের পরিস্থিতিতে তারা অযাচিত উদ্বেগ-উগ্রতা প্রকাশ করছে। সেই পরিস্থিতি কিছুই না, দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
‘কিন্তু ভারতের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হচ্ছে- বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করো, বাংলাদেশ যাতে সঠিকভাবে চলতে না পারে…। এটাই হচ্ছে তাদের আন্তর্জাতিক মাস্টার প্ল্যান এবং এখানে বাইরের একটি দেশ জড়িত বলে বাংলাদেশের জনগণ মনে করে।’
ভারতকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত। কিন্তু শত্রুতা করতে চাইলে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মেনে নেবে না। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন না।’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবৈধ কর্মে লিপ্ত থাকার অপরাধে ইসকন থেকে বহিষ্কারের উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘চিন্ময়কে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কি শিশুর ওপর অত্যাচারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়? এটা তো বড় প্রশ্ন দেশের মানুষের। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইসকনই করেছে।’
‘দেশের সব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান- যারাই নিরাপত্তাহীন মনে করেন তারা সরকারকে জানান। সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লাভ নেই।
‘জন্মভূমির প্রতি অনুগত থাকুন। এই মৃত্তিকায় যদি আপনার জন্ম হয় এই মৃত্তিকার প্রতি এই মাটির প্রতি আপনি ভালোবাসা প্রকাশ করুন। বিজেপি ভারতকে ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ ভারতের মতো উগ্রবাদী কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশ ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র ভেবে কত কিছু দিয়েছে। কিন্তু ভারত সীমান্তে রক্ত, লাশ আর আগ্রাসন ছাড়া কিছু দেয়নি।’
‘বাংলাদেশে অস্থিরতার অপচেষ্টা বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদে’
রিজভী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ভারতের চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদে ও উসকানিতে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান- এই উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করুন।
‘ভারতের সাধারণ জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু চরম উগ্রবাদী বিজেপি যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সম্মান-আত্মমর্যাদা রক্ষায় রুখে দাঁড়াবে।’
আরও পড়ুন:ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে এই বিক্ষোভ ও মিছিল করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই। আমাদের ১৫ কোটি মানুষের শক্তিশালী ৩০ কোটি হাত সাম্যের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই হামলার তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা সীমান্তে বাংলাদেশিদের নির্যাতনের খবর পেয়েছি। তারা সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। আমরা ভারতের পক্ষ থেকে এই ধরনের আচরণ সহ্য করব না।’
সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়। ভারতীয় মন্ত্রীদের আত্মমূল্যায়ন করতে হবে। মুসলিম, খ্রীষ্টান, হিন্দু সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।’
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ভারত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে সংঘাত উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে।’
ভারত প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মুকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা হয়ে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে গত সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সমর্থকরা।
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক শ্রেণীর ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী উস্কানিমূলক অপপ্রচারের ফলে সৃষ্ট আঞ্চলিক উত্তেজনায় দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল (এক্স ও ফেসবুক)-এ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমে উস্কানিমূলক ও রাজনৈতিক বক্তব্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা এই বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে তারেক রহমান এ ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি করেন, ‘ভারতীয় ভাষ্যকাররা অপতথ্যের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
‘আগরতলায় বাংলাদেশি কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলা বিভ্রান্তির ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার প্রমাণ। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ আরও গভীর করার ঝুঁকি তৈরি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে ঠিক কী কারণে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলেন, তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে কী ঘটছে এবং কেন বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা অপরিহার্য- তা বস্তুনিষ্ঠভাবে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অংশীজনদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে তা কোনো দেশের স্বার্থে আসবে না।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দ থেকে মুক্ত হয়ে দু’দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
তারেক রহমান শেখ হাসিনার প্রস্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভারতে তার ফ্লাইটের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘বাংলাদেশ মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের দেশ ছিল এবং থাকবে। এদেশে জাতি, বর্ণ ও ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে।’
তারেক রহমান উস্কানির ফাঁদে বাংলাদেশিদের পা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জানান।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি আমার সহকর্মী বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের জন্য ও কোনো ধরনের উস্কানির ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
জাতি যখন হাসিনা-পরবর্তী রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবিলা করছে, ঠিক সেই সময়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই বিবৃতি দেয়া হলো।
তারেক রহমান বিরোধীদের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার এই অপচেষ্টাকে মোকাবিলা করে সবার প্রতি শান্তি বজায় রাখা এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে বলেন।
আরও পড়ুন:ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে উগ্রবাদীদের হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
ফখরুল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের উত্তর আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে উগ্রবাদীদের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামের সংগঠনের সদস্যরা সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে আক্রমণ করেছে, তা পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা হয়।
“সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেয়া এবং ভাঙচুর করা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।”
ভারত সরকার ও জনগণের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে যে, আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে ঘৃণার ব্যবহার উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে।
‘আমরা আশা করব যে, নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন ও বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনকালে যে সকল নেতা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বিচারে সহায়তা করবেন।’
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সোমবার রাতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অ্যাকটিভিস্ট জাহিদ আহসান বলেন, ‘আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, ভারতের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমান। কোনো রাজা-প্রজার সম্পর্ক থাকবে না। শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা ভারতের আধিপত্য মেনে নেব না।’
সমাবেশের একপর্যায়ে সেখানে মিছিল নিয়ে যোগ দেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় তারা ‘হিন্দু মুসলিম ঐক্য করো, বাংলাদেশ রক্ষা করো’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, চলবে না চলবে না’, ‘দূতাবাসে হামলা, জগন্নাথ হল মানবে না’ ধরনের স্লোগান দেন। ওই সময় বাকি শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
সমাবেশে জগন্নাথ হলের ছাত্র জয় পাল বলেন, ‘ধর্ম,বর্ণ, জাত-পাত নির্বিশেষে আমরা সকলেই বাংলাদেশি। এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সকলেই এক।
‘বাংলাদেশের সনাতনীসহ সকল নাগরিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে যে হামলা হয়েছে, সেটির বিরুদ্ধে শুধু জগন্নাথ হল নয়, সকলের উচিত প্রতিবাদ জানানো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে আমাদের উদ্দেশে বলা হয়, আমরা নাকি ভারতের দালাল।
‘আমরা যদি ভারতের দালালই হতাম তাহলে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সংহতি জানাতে আমরা এখানে আসলাম কেন?’
পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন বিভাজন না করা হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান জয় পাল।
ছাত্রদলের প্রতিবাদ
ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভারত সরকার ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কূটনীতিকদের সুরক্ষা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সহিংস ঘটনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত অবস্থান উক্ত ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের মৌন সম্মতির স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
‘বিগত ২৮ নভেম্বরে কলকাতায়ও একই ধরণের সহিংস ঘটনা ঘটেছে, যা একটি বিপজ্জনক পরম্পরা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান, হামলার ঘটনার যথাযথ তদন্তপূর্বক দায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য ভারত সরকার ও রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘নতুন অধ্যায় হতে হবে এমন, যেখানে কারও জীবন ও পরিবার রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ধ্বংস হবে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ও ফেসবুকে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে রোববার দেয়া পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
পোস্টে তারেক রহমান একই বিষয়বস্তুর ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আসুন রাজনৈতিক হানাহানি ভুলে আমরা ঐকবদ্ধ হই, যেখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে কারও জীবন ও পরিবার ধ্বংস হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সত্যের সৌন্দর্য হলো যে, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী এবং মানুষকে আশ্বস্ত করা যে, ন্যায়বিচার এবং সত্য আপনাআপনি জয় লাভ করে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘এই অভিযাত্রায় আমরা প্রত্যাশা করি আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহনশীল এবং আইনভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অধিকার থাকবে।’
আরও পড়ুন:জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের জাতীয় বীর আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শহীদদের স্বপ্ন পূরণে জামায়াত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
খুলনা নগরীর ইস্টার্ন জুট মিল শ্রমিক মাঠে জামায়াতের খানজাহান আলী থানা ইউনিটের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদরা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা তাদের স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেছে এবং স্বৈরাচারের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই- যেখানে জাতি, দল, ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এদেশের নাগরিক হিসেবে সব মানুষ মর্যাদার সঙ্গে তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে।’
তিনি বলেন, ‘শত শত ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। বাংলার মাটিতে স্বৈরাচারীরা যাতে আর ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর বলেন, ‘দেশের মানুষ গত ১৭ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ‘লগি-বৈঠা’র মাধ্যমে তাদের হত্যা যাত্রা শুরু করে।
‘ফ্যাসিবাদী এই শাসক বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৫৭ জন প্রতিভাবান সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে এবং তাদের অনেককে গুম করে- যা এ বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা এই অঞ্চলের সব পাটকল ও কৃষি জমি ধ্বংস করেছে। সব বন্ধ পাটকল পুনরায় চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি গাজী মোরশেদ মামুনের পরিচালনায় এবং থানা আমির সাঈদ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
জামায়াতের আমির এর আগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা জামায়াত খুলনা সিটি ইউনিটের মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য