নির্বাচন জমিয়ে তুলতে দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রেখেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিয়েছেন। আর দলীয় প্রধানের এ সিদ্ধান্তকে লুফে নিয়েছেন নির্বাচন করতে ইচ্ছুক দলের নেতাকর্মীরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অর্ধশতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রাপ্তরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হতে পারেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রায় সাড়ে চারশ’ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা দলের সভাপতির এমন নির্দেশনাকে ভোটের মাঠে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রংপুর-৫ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী জাকির হোসেন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দল অবশ্যই ত্যাগী-নিবেদিতদের মূল্যায়ন করে। কিন্তু অনেক সময় কৌশলগত কারণে মূল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারে না। তারপরও দলের আদেশ শিরোধার্য মেনে নৌকাকে জেতাতে সর্বোচ্চ ঢেলে দিয়ে কাজ করে এসেছি। কিন্তু এবার সুযোগ এসেছে নিজের সক্ষমতা প্রমাণের। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এবার আওয়ামী লীগের তিন হাজার ৩৬২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিপরীতে নৌকার টিকেট পেয়েছেন ২৯৮ জন। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে বাদ পড়েছেন ৭১ জন, যাদের মধ্যে ৬৩ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও মনোনয়নবঞ্চিত হেভিওয়েট নেতাদের অনেকেই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাই জনপ্রিয়। তারা পেশি, অর্থ বা অন্য শক্তিতে কুলাতে না পেরে দলের মনোনয়ন হারান। দল স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ রাখায় তারা এবার নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি কেন্দ্রকে বার্তাও দিতে পারবেন যে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। আর এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী হলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
জানা যায়, শাহীন আহমেদ পেশি, টাকা এমনকি স্থানীয় সাংগঠনিক সক্ষমতায় শক্তিশালী। তিনি কামরুলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করবেন।
অন্যদিকে ঢাকা-১৯ আসনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর বিপরীতে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ। তিনি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং স্থানীয়ভাবে অনেক শক্তিশালী।
ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন ওই আসনের চারবারের সংসদ সদস্য প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল।
একইভাবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ফরিদপুর অঞ্চল ফরিদপুর-৪ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ। বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সন চৌধুরী। যিনি এর আগের দুই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাফর উল্লাহকে পরাজিত করেছিলেন।
ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী শামীম হক। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ, যার সঙ্গে রয়েছে দলের একাংশ।
ফরিদপুর-১ আসনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান মনোনয়ন পেলেও চ্যালেঞ্জে পড়বেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনের কাছে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
ফরিদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন নগরকান্দা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন, যিনি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয়।
জামালপুর-৪ আসনে আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানও মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিপরীতে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন জনপ্রিয় আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। নৌকা চেয়ে না পেয়ে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
কুমিল্লা-৬ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন।
যশোর-৩ (সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম।
রংপুর-৬ আসনে আবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। নৌকা না পেয়ে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম।
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তিনি আওয়ামী লীগের বর্ষীয়াণ নেতা তোফায়েল আহমেদের জামাতা হলেও রাজনীতি করেননি কখনোই। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির।
চাঁদপুর-৪ আসনে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়া।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১২ আসনে সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বদলে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে মাঠ ছাড়ছেন না সামশুল হক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়বেন তিনি।
সিলেট-১ সদর আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
কুমিল্লা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া। তার পরিবর্তে এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে সুবিদ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে গত তিন নির্বাচনে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার। রতন এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান সংসদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য।
তাদের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে মাজাহারুল হক প্রধান, গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নওগাঁ-৪ আসনে এমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, রাজশাহী-৩ আসনে আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনে এনামুল হক, ঝিনাইদহ-৩ আসনে শফিকুল আজম খান, যশোর-৪ আসনে রণজিৎ কুমার রায়, সাতক্ষীরা-২ আসনে মীর মোশতাক আহমেদ রবি, বরিশাল-৪ আসনে পঙ্কজ নাথ, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সানোয়ার হোসেন, গাজীপুর-৩ আসনে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্ত, হবিগঞ্জ-১ আসনে গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, চট্টগ্রাম-৪ আসনে দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-১২ আসনে শামসুল হক চৌধুরী এবং কক্সবাজার-১ আসনে জাফর আলম উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নয়, নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে দেওয়া প্রস্তাব ও তা বাস্তবায়নে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের করণীয় নিয়ে এ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠনের (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করা হয়নি; বরং এ সংস্থার ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।’
ফেরারি আসামি, বিচারিক আদালতে দোষী হলেই অযোগ্য, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বা অর্থ পাচারকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিষয়টি বিতর্কিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘হত্যাকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এটা জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতায় আনতে গিয়ে তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে না বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড় সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র। চোখ এবং আঙুলে ক্ষতিগ্রস্তদের ইসির নির্দেশনায় দেওয়া হবে এনআইডি। নতুন ভোটার ছাড়াও স্মার্ট কার্ড এবং ভুল সংশোধনের সুযোগও পাবেন আহতরা।
‘এ ছাড়াও সারা দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পাবেন এ সেবা।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা জানান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
নির্বাচন ভবনের অনুষ্ঠানে সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি।’
ওই সময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সব সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সংশয় দূর করার জন্য আমরা এটা (ভোটার তালিকা হালনাগাদ) করছি। আমরা মাঠে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার ও ৪ হাজার ৩০০ ব্যাগ সিইসির কাছে হস্তান্তর করেন।
নাছির উদ্দিন জানান, তারা ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বিশাল এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে।’
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য (বিতর্ক) করেন না এবং আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না এবং আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে কি না, তা সময় বলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘সময় আসলে দেখা যাবে কোন কোন দলের নিবন্ধন থাকে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সময় আসলে দেখা যাবে। সে জন্য কাজ করছে ইসি।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিলেট সার্কিট হাউসে শনিবার সকালে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অনেকে এক দিনে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এক দিনে সব নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব না।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময় অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য কাজ করছে ইসি, যা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে দিয়ে হবে। এবার নির্বাচনে প্রবাসীরা অংশ নিতে পারবেন।’
এর আগে সিইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন:সংসদীয় পদ্ধতিতে সব নির্বাচন করার প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এই উদ্দেশ্যে আমরা একটি একীভূত আইন করতে চাই। বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পৌরসভাগুলোর আয় নেই, বেশির ভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলনকক্ষে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
ড. তোফায়েল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করতে হবে, আমরা এমন প্রস্তাব করব। এদিকে বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পৌরসভারগুলোর আয় নেই; বেশির ভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হতে পারে। পাশাপাশি জেলা পরিষদগুলোর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এর বাজেট বা প্রজেক্টগুলোর কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। তাই একে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে জেলা পরিষদের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন দরকার রয়েছে।
‘আমরা চাই জেলার আন্ডারে যতগুলো উপজেলা আছে, সেই উপজেলাগুলো থেকে মেম্বার নির্বাচিত হবে। এ ছাড়া একটি জেলা প্ল্যানিং নামে সংস্থা হবে। তারা সব উন্নয়ন প্ল্যান করবে এবং বাস্তবায়নের দিকটা দেখবে। এভাবে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত লোকাল গভর্নমেন্টের ইলেকশনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিতভাবে যদি এই নির্বাচন করা হয়, তাহলে খরচ ৬০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসত।
‘সংসদসহ সব নির্বাচন একসঙ্গে করা হলে মোট খরচ এক হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তাই আমাদের প্রস্তাব হবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে ফেলা। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে আমরা আমাদের প্রস্তাব সরকারের কাছে দিতে চাই। নির্দিষ্ট করে বললে ২৪ ফেব্রুয়ারি।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় কাজে এমপিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টা সংবিধান সংস্কার কমিশন দেখছেন, তবে আমাদের ওখানে সাজেশন থাকবে এমপিরা যাতে লোকাল গভর্মেন্টের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ না রাখে।
‘স্থানীয় সরকারের আয় বাড়াতে ট্যাক্স কীভাবে লোকাল গভর্নমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করা যায়, সে বিষয়টাও দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দেশের মানুষের ভোটবঞ্চনার দুঃখ ঘোচানোর অঙ্গীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববার দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
ভোট নিয়ে সিইসি বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের বঞ্চনার দুঃখ বলার জন্য আমরা আছি। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ তাদের বঞ্চনা যাতে আমরা দূর করতে পারি; ঘোচাতে পারি।
‘তারা যে এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সেটা ঘোচাতে চাই। তাদের বঞ্চনার কষ্ট দূর করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কমিটমেন্টে (অঙ্গীকার) অটল আছি। আমাদের মূল লক্ষ্য একটা ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন (অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন)। সেই পর্যন্ত যাতে পৌঁছাতে পারি, সেটি লক্ষ রাখবেন।
‘এটি একটি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা, যা আজ থেকে শুরু হয়েছে। সাফল্য আসার আগ পর্যন্ত চলবে।’
বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৬ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ২ জানুয়ারি যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখের বেশি ভোটার।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে।
আরও পড়ুন:দেশের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ সব সংস্কার শেষে নির্বাচন চান বলে ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) এক জরিপে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সারা দেশে জরিপটি চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি।
এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। আর সবগুলো সংস্কার করার পরই নির্বাচন আয়োজন করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
জরিপে দেখা যায়, ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোক চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য