চট্টগ্রামে পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬ আওয়ামী লীগ নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন সাবেক সংসদ সদস্যও। ইতোমধ্যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাই, বাঁশখালী, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বন্দর-পতেঙ্গা ও পটিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে তারা প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আরও দুটি আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টি (হাটহাজারী) ও তরিকত ফেডারেশনের (ফটিকছড়ি) সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ দুটি আসনেও শেষ পর্যন্ত কারা আওয়ামী লীগ বা এ জোটের প্রার্থী হবেন, তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হতে পারে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের বিপরীতে প্রার্থী হতে ৫২ জন নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ১৬ আসনের মধ্যে এবার ৯ আসনেই দলটির পুরনো নেতারা রয়ে গেছেন আর পাঁচটি আসনে দেখা গেছে নতুন মুখ। ২ আসনে পুরনো সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন পাননি।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। নিজের আসনে ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলের জন্য মনোননয়পত্র সংগ্রহ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত রুহেলই পেয়েছেন নৌকার টিকিট।
এ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। এর আগেও তিনি দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন।
এ বিষয়ে মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ইনশাল্লাহ! আমি নির্বাচন করব। মীরসরাইয়ের মানুষ ভীষণভাবে চায়- আমি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নৌকা যেহেতু দেয়নি, তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করব। মীরসরাইয়ের মানুষ আমার সঙ্গে আছে।’
চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান। না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি আবু রেজা নিজামুদ্দিন নদভী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বনফুল ও কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব।
নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে তিনি এরই মধ্যে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এবং আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পরে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন এমপি এম এ লতিফ। ওই আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন কাউন্সিলর ও এবারের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেও না পাওয়া জিয়াউল হক সুমন। পাশাপাশি যুবলীগ নেতা আলতাফ হোসেন বাচ্চুও এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
সবচেয়ে চমক হচ্ছে চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি জনতার সঙ্গে আছি। আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। জনগণও আমার সঙ্গে আছে। জনগণ চাইলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই জয়লাভ করব।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না এবং আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে কি না, তা সময় বলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘সময় আসলে দেখা যাবে কোন কোন দলের নিবন্ধন থাকে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সময় আসলে দেখা যাবে। সে জন্য কাজ করছে ইসি।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিলেট সার্কিট হাউসে শনিবার সকালে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অনেকে এক দিনে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এক দিনে সব নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব না।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময় অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য কাজ করছে ইসি, যা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে দিয়ে হবে। এবার নির্বাচনে প্রবাসীরা অংশ নিতে পারবেন।’
এর আগে সিইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন:সংসদীয় পদ্ধতিতে সব নির্বাচন করার প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এই উদ্দেশ্যে আমরা একটি একীভূত আইন করতে চাই। বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পৌরসভাগুলোর আয় নেই, বেশির ভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলনকক্ষে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
ড. তোফায়েল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করতে হবে, আমরা এমন প্রস্তাব করব। এদিকে বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পৌরসভারগুলোর আয় নেই; বেশির ভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হতে পারে। পাশাপাশি জেলা পরিষদগুলোর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এর বাজেট বা প্রজেক্টগুলোর কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। তাই একে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে জেলা পরিষদের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন দরকার রয়েছে।
‘আমরা চাই জেলার আন্ডারে যতগুলো উপজেলা আছে, সেই উপজেলাগুলো থেকে মেম্বার নির্বাচিত হবে। এ ছাড়া একটি জেলা প্ল্যানিং নামে সংস্থা হবে। তারা সব উন্নয়ন প্ল্যান করবে এবং বাস্তবায়নের দিকটা দেখবে। এভাবে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত লোকাল গভর্নমেন্টের ইলেকশনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিতভাবে যদি এই নির্বাচন করা হয়, তাহলে খরচ ৬০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসত।
‘সংসদসহ সব নির্বাচন একসঙ্গে করা হলে মোট খরচ এক হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তাই আমাদের প্রস্তাব হবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে ফেলা। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে আমরা আমাদের প্রস্তাব সরকারের কাছে দিতে চাই। নির্দিষ্ট করে বললে ২৪ ফেব্রুয়ারি।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় কাজে এমপিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টা সংবিধান সংস্কার কমিশন দেখছেন, তবে আমাদের ওখানে সাজেশন থাকবে এমপিরা যাতে লোকাল গভর্মেন্টের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ না রাখে।
‘স্থানীয় সরকারের আয় বাড়াতে ট্যাক্স কীভাবে লোকাল গভর্নমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করা যায়, সে বিষয়টাও দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দেশের মানুষের ভোটবঞ্চনার দুঃখ ঘোচানোর অঙ্গীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববার দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
ভোট নিয়ে সিইসি বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের বঞ্চনার দুঃখ বলার জন্য আমরা আছি। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ তাদের বঞ্চনা যাতে আমরা দূর করতে পারি; ঘোচাতে পারি।
‘তারা যে এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সেটা ঘোচাতে চাই। তাদের বঞ্চনার কষ্ট দূর করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কমিটমেন্টে (অঙ্গীকার) অটল আছি। আমাদের মূল লক্ষ্য একটা ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন (অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন)। সেই পর্যন্ত যাতে পৌঁছাতে পারি, সেটি লক্ষ রাখবেন।
‘এটি একটি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা, যা আজ থেকে শুরু হয়েছে। সাফল্য আসার আগ পর্যন্ত চলবে।’
বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৬ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ২ জানুয়ারি যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখের বেশি ভোটার।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে।
আরও পড়ুন:দেশের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ সব সংস্কার শেষে নির্বাচন চান বলে ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) এক জরিপে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সারা দেশে জরিপটি চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি।
এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। আর সবগুলো সংস্কার করার পরই নির্বাচন আয়োজন করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
জরিপে দেখা যায়, ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোক চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।
আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে রাজাপুর উপজেলায় মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মিলন মাহমুদ বাচ্চু ২১ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে এবং কাঠালিয়া উপজেলায় দোয়াত কলম প্রতীকের এমাদুল হক মনির ২০ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সরকারের গেজেট এবং শপথ অনুষ্ঠানের পরেই এই দুই মসনদে বসবেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ ছাড়া কাঠালিয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াজী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা আক্তার বিন্দু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাতে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাজাপুরেরর মিলন মাহমুদ বাচ্চু এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর কাঁঠালিয়ায় এমাদুল হক মনির এবার টানা দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও ছিলেন। তারা সেখানকার সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমরের লোক। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বিএনপির অনুসারীরা (ওমর সেনা) শাহজাহান ওরমরকে তাদের দলের লোক মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ১১০ বছর বয়সী এরফান ফকির। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগা এ ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমন অবস্থায় রোববার দুই ভাতিজার কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে গিয়ে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের ভোট।
গরমের মধ্যে আংগারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দেন এরফান। যে স্কুলটিতে তিনি ভোট দিয়েছেন, সেটি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন এ ব্যক্তি। স্কুলের পাশের মসজিদ নির্মাণকাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরফান ফকির বলেন, ‘জীবনে কোনো ভোটই মিস করি নাই। তাই শতকষ্টের মধ্যেও এবার আসছি ভোট দিতে। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি না জানি না।’
এ বয়সে ভোট দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এরফান।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানে ভোট দিতে এলাম।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দীপংকর চন্দ্র শীল বলেন, ‘সকাল থেকে আমার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি যে, উনার মতো (এরফান ফকির) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিকে আমি নিজে বুথে নিয়ে তার ভোটটা প্রয়োগ করাতে পেরেছি।
‘যেহেতু তার হাত এবং পাঁ কাপতেছিল, সেহেতু তিনি যেখানে সিল মারতে বলেছেন, আমি সেখানেই সিল মেরে উনাকে দেখিয়েছি। ১১০ বছর বয়সী উনার মতো একজন ভোটার আমার কেন্দ্রে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছে। তাতে আমি ধন্য হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
উপজেলাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯টি উপজেলায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোটের এলাকায় টহলে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮ জন ভোটার এক হাজার ১৮১ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে দেশের উপজেলাগুলোয় ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুন তা শেষ হবে, তবে কয়েকটি উপজেলায় মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছর।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য