বিএনপি-জামায়াতকে অপশক্তি আখ্যা দিয়ে এখনই এদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে গৌরব-৭১ ও স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় গৌরব-৭১ ও স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরামের যৌথ আয়োজনে ‘হরতাল-অবরোধ আর আগুন সন্ত্রাস: বন্ধ হোক এই অপরাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত হরতাল ও অবরোধ দিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তারা ১৮৬টি বাস-ট্রাক আগুন পুড়িয়েছে। রাজনীতির সাথে আগুনের সম্পর্ক কি? এগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তারা গণতন্ত্রের রাজনীতি করে না। দেশের মানুষকে ভালোবাসে না, সংবিধানের প্রতিও আনুগত্য নেই। যার কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা তারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়। নির্বাচন বানচাল করতে চায়। বিএনপি-জামায়াত নামক এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেন, ‘বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে, চোরাগোপ্তা হামলা করে দেশের রাষ্ট্রীয় কাজ থামানো যাবে না। এগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মর্সূচি নয়; এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তারা ভেবেছে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সম্পত্তি ধ্বংস করে বোধহয় নির্বাচন বানচাল করা যাবে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। নির্বাচন বানচাল করা যাবে না। এসব কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বিচার করা হবে। তার কি রাজনৈতিক সিল আছে সেটা দেখা হবে না। যারা আগুন দেয় তারা সন্ত্রাসী। এদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবেই বিবেচিত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ১৮৬টি বাস-ট্রাক আগুন পুড়িয়েছে। কেন? রাজনীতির সাথে আগুনের সম্পর্ক কি? এগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। জঙ্গী বা সন্ত্রাসীদের কাজ, এটা কিভাবে গণতন্ত্র হয়। আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, মানবতার কথা বলেন, অন্যদিকে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন, এটা কোন গণতন্ত্র, কোন মানবতা?’
গণমাধ্যমে প্রতি আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনরা খবরে বলেন, বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কোন দুর্বৃত্ত? দুর্বৃত্ত শব্দটা কেন আসে? বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। হাতেনাতে ধরা পড়েছে তারা। সিসিটিভিতে দেখা গেছে কারা আগুন দিয়েছে। গণরমাধ্যমেই তো আমরা দেখেছি। এরপরও কেন বলেন দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে এভাবে বলতে কেন আপনাদের শংকা হয়? কেন আপনারা বলেন না? তারা আগুন দিচ্ছে বলতে অসুবিধা কোথায়?
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সমমনা কিছু দল আছে, নাম সর্বস্ব দল। তাদের নেতারা টকশোতে এসে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেন এটা বিএনপি নেতা-কর্মী করেনি। সরকারের ওপরই দোষ চাপাতে চায়। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকে। আমি অবাক হয়ে যাই, এরা রাজনীতি করে জনগণের জন্য? যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে আবার এদের পক্ষে সাফাইও এরা। লজ্জিত হওয়া উচিত।
আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবো যারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস করে এদের পক্ষে যারা সাফাই গায় তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার।’
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি-জাময়াত গণতন্ত্রের রাজনীতি করে না। এই দল সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নিয়ে। তারা মানুষকে ভালোবাসে না, সংবিধানের প্রতি আনুগত্য নেই। এই স্বাধীনতা তারা চায়নি। যার কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত হরতাল, অবরোধ দিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যে আগুন সন্ত্রাস করেছিল ২৮ তারিখে আবার তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। চোরাগোপ্তা আক্রমণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায় কিন্তু আন্দোলনে জয়ী হওয়ার ইতিহাস নেই। আগামী জাতীয় সংসদ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ‘২৩ দিনে অবরোধের নামে ১৮৬টি গাড়ি পুড়ানো হয়েছে। কারা এই গাড়ি পুড়িয়েছে? যারা নির্বাচনে আসতে চায় না। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। দেশকে অশান্ত করতে চায়। তাদের অবৈধভাবে জন্ম হয়েছে আর এজন্য তারা অবৈধভাবেই ক্ষমতায় আসতে চায়।
জনগণের প্রতি ক্ষোভ থেকে বিএনপি-জামায়াত গাড়ি পোড়াচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য। তারা তাদের জিঘাংসামূলক চেহারা, পুড়িয়ে মারার যে চেহারা ২৮ তারিখে আবার সেই চেহারা দেখানো শুরু করেছে। কিভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে এই গোষ্ঠী। আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী তারা মাঠে থেকে এই অপশক্তিকে প্রতিহত করবো।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করছি। সবাই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করবে এটা স্বাভাবিক। হরতাল, অবরোধ ডাকার অধিকার প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আছে কিন্তু মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বাসে আগুন দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না, এগুলো সন্ত্রাসী কর্মসূচি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা এই অপরাজনীতি করছেন, তাদেরকে এ ধরণের কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহবান জানাই।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা তাদের অগ্নি সন্ত্রাস দেখেছি। তারা অগ্নি সংযোগ কেন করে? কারা করে? জনগণের বিরুদ্ধে কারা অবস্থান নেয়? যারা কোনদিনই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়।’
তিনি বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে তখনি তারা এটা করে। গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ এগিয়ে যেতে চায় তখনই সেই অগ্রযাত্রাকে দাবিয়ে দেয়ার জন্য তাদের অপচেষ্টা শুরু হয়। যারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে সাধারণ মানুষর ক্ষতি করতে চায়, আসুন সবাই মিলে তাদের প্রতিহত করি।’
আলোচনা সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গৌরব-৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাসে চড়ে অফিসে কিংবা বাসায় নিরাপদে পৌঁছাতে চাই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের বাস আগুন দেয়ার ঘটনায় আজ মানুষ শঙ্কা নিয়ে গাড়িতে ওঠে। আমরা তাদের অবরোধের আগুনে ঝলসে যেতে চাই না। আমাদের নিরাপত্তা কে দিবে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি বিদেশি শক্তির ইশারায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে। তারা ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আহত করা হয়েছে। আমরা এ রাষ্ট্র চাইনি। এই বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।’
সভা সঞ্চালনা করেন স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম নেতা ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম।
এর আগে আলোচনা সভার শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে দেয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত দশজন বাস মালিক ও শ্রমিক নিজেদের অবস্থার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বোরাক পরিবহনের চালক মিরাজ হোসেন বলেন, ‘রাত ১০ টার দিকে আমরা গাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। গাড়ি পুরা কঙ্কাল হয়ে গেছে। একেবারে শেষ হয়ে গেছি। এমনভাবে পুড়েছে ঠিক করাও যাচ্ছে না। আমি খুব নিঃস্ব, অসহায়।’
শিকড় পরিবহনের মালিক লিটন মিয়া বলেন, ‘মিরপুর ১১ পার হওয়ার পর আমার গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। তারা যাত্রীবেশে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। গাড়ির সবকিছুই পুড়ে গেছে। আমার ইনকাম সোর্স বন্ধ হয়ে গেছে।’
অছিম পরিবহনের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘২৯ তারিখ রাত তিনটায় খবর পাই গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমার দুইটা স্টাফ গাড়ির ভেতর ছিল। দুই মিনিটে গাড়িটা পুড়ে গেছে। একজন মরে কয়লা হয়ে গেছে। আরেকজন ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের পরিবারের অবস্থাও খারাপ। আর্থিক সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখনো পায়নি।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য