বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চান মন্তব্য করে সমৃদ্ধির পথে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার সকালে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান ও ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন এমন একটি বাংলাদেশ করে তুলি যেখানে একজন মানুষও দরিদ্র থাকবে না। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে। আসুন সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই।’
দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বেশি বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে ওয়ান স্টপ পরিষেবা চালু করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরিষেবা প্রদানকারী সমস্ত অফিস সম্পূর্ণ অনলাইন এবং ডিজিটালাইজড করার পদক্ষেপও হাতে নেয়া হয়েছে।’
একই সঙ্গে কর মওকুফ, রেমিট্যান্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের ওপর ভিত্তি করে আজকের এই টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আশাকরি ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, ২০৪১ সালে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে দিচ্ছি। ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করেছি। এগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এককভাবে যদি কোনো দেশ এক খণ্ড জমি চায় আমরা তাও দেব। আর যদি কেউ যৌথ উদ্যোগে করতে চান সেটাও করা হবে। বিভিন্নভাবে আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকগুলি সংস্থা তৈরি করেছি। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (এইচটিপিএ) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ)। এগুলো অথরিটি করে দিয়েছি। যাতে কাজ করতে সুবিধা হয়। স্বাধীনভাবে সব স্বশাসিত হয়ে কাজ করতে পারে।’
ব্লু ইকোনমি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে এ দেশ। সে সময় যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলো এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে যাতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ও শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক চার-তিন শতাংশে উন্নীত করতে চাই। প্রায় সতের কোটি মানুষ আমাদের বাংলাদেশ। এ ছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছি। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে আমাদের ধারণা। তখন যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশ যাতে ছাড়িয়ে যেতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে সেটাকে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে। আমাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান রয়েছে, সেইভাবে আমাদের অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার, কৌশলগত অবস্থান, উচ্চ মুনাফা, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন:শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব নির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ উত্তরণের পথ’ শীর্ষক একটি গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন, সংকট পর্যালোচনা ও প্রশমনের জন্য কার্যকর উপাত্তভিত্তিক নীতিগুলো নিয়ে কাজ করাই এ গবেষণার মূল লক্ষ্য।
ঢাকায় বুধবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে গবেষণাটির পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তারা গবেষণার ধারণাপত্রের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব ও টেকসই সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপসচিব ও অক্সফ্যামের উপদেষ্টা ড. শরিফুল আলম এ গবেষণার ধারণাপত্রটি উপস্থাপন করেন।
ওই সময় অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গা সংকটের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো তুলে ধরেন এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে সুপারিশ প্রদান করেন।
এসব সুপারিশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোকে চিহ্নিত করে।
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট নিরসন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি।
গবেষণাটির অন্যতম লক্ষ্য, রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান বাস্তবতা এবং ভবিষ্যত, পরিবেশ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক ও সার্বিক নিরাপত্তার ওপর সংকটের প্রভাব খুঁজে বের করা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গবেষণাটির নীতি ও তথ্যের বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে, তবে এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করতে গবেষণাভিত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
‘এই গবেষণা উদ্যোগের মাধ্যমে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের পাশে থাকতে নীতি-সুপারিশের লক্ষ্যে কাজ করছি।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শুরু করে জনসেবা পর্যন্ত সমাজের সকল দিককে প্রভাবিত করছে।
‘গবেষণাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের বাস্তবতাগুলোকে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বয় করতে সহযগিতা করবে।’
অনুষ্ঠানে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে গবেষণাটির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট কেবল একটি মানবিক সমস্যা নয়, এটি একটি পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীদেরও প্রভাবিত করছে।
‘গবেষণাটি এসব বিষয় তুলে আনবে এবং উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি অর্থবহ টেকসই সমধানের দিকে আমাদের নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন:দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা হিসেবে নিজেও চাপে আছেন।
খাদ্য অধিদপ্তরে বৃহস্পতিবার খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ক্রেতা হিসেবে নিজেও চাপে আছি। আমি মধ্যবিত্ত। নিজে বাজার নিজে করে খাই।’
নতুন ধান ও সবজির সরবরাহ বাড়লে বাজারে স্বস্তি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খাদ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমন ধান উঠলে ও শীতের সবজি ভালো করে বাজারে আসলে আশা করি বাজার পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে।’
সাবেক এ সচিব জানান, চলতি বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান সংগ্রহ করা হবে। এবার সাড়ে পাঁচ লাখ টন ধান সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি আমদানি করা হবে দেড় লাখ টন ধান ও গম।
গতবারের চেয়ে কেজিতে তিন টাকা বাড়িয়ে এবার আমন ধান ৩৩ টাকা কেজি দরে কেনা হবে বলেও জানান আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেন, আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম কমতে শুরু করবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘খাদ্য নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। তাই দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়াতে ইতোমধ্যে চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর প্রভাবও পড়বে দামে।’
ধান ও চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এবার বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুন:কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বাসসকে জানান, ওই সময় উভয় নেতা দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বঙ্গভবন মিশনের কাউন্সেলর (শ্রম শাখা) মোহাম্মদ কামরুল ইসলামকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি জেনেভায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের হয়রানির পর তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে ঘটনার সময় কামরুল উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।
আসিফ নজরুলকে ‘হয়রানি’ করার সময় তিনি নীরব ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, জেনেভা বিমানবন্দরে ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দিতে কিছু মানুষ আক্রমণাত্মকভাবে আসিফ নজরুলের মুখোমুখি হন।
কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর ৯ ধারায় দায়মুক্তির বিধান অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
দায়মুক্তির বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলের শুনানি শেষে গত ৭ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছিল হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সিনথিয়া ফরিদ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’-এর ৯ ও ৬ (২) ধারা অনুযায়ী, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন বা মামলা করা যাবে না।
এ ধারা দুটি চ্যালেঞ্জ করে রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্টে বেঞ্চ সোমবার রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে আজ হাইকোর্ট রায় দেয়।
রিটে বলা হয়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে অস্বাভাবিক খরচ আর অনিয়মের কারণেই বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। অথচ সেই অনিয়মকে বৈধতা দেয়ার জন্য আইন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব অনিয়মের কোনো বিচারও চাওয়া যাবে না। এমনটা জনস্বার্থবিরোধী ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা সংস্কারের চেষ্টা করছ। তবে তা হবে স্বল্পমেয়াদি; মধ্যমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি নয়। আমরা একটি ফুটপ্রিন্ট রেখে যাচ্ছি, যেটার ওপর দিয়ে পরবর্তী সরকার হাঁটবে।’
‘আমরা নিশ্চিত যে নির্বাচিত সরকার আমাদের পদচিহ্ন এড়াতে পারবে না। কারণ আমরা যা কিছু করছি তা জনগণের কল্যাণের জন্য। জনগণই এ পথ অনুসরণ করতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।’ সূত্র: ইউএনবি
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবনে পিকেএসএফ দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে পিকেএসএফ।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার নির্বাচিত সরকারের এখতিয়ার হওয়া উচিত। নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ ধরনের সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন নয়।’
বর্তমান সরকার তার কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিদেশি ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আমাদের ক্যাপাসিটি আছে, সৃজনশীলতা আছে। আমরা এগিয়ে যাব।’
স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অনেক সুউচ্চ ভবন-অবকাঠামো থাকলেও দেশে ভালো প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। সততার অভাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠান ভালো না হলে, যতই প্রজেক্ট করা হোক না কেন, সেটার বাস্তবায়ন হয় না।’
পিকেএসএফকে একটি বিশ্বমানের সংস্থা উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু ঋণ দেয়া নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করতেও কাজ করেছে পিকেএসএফ। এর গ্রহণযোগ্যতা দাতা সংস্থাগুলোর কাছে অনেক বেশি।’
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের।
১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত পিকেএসএফ দেশব্যাপী দুই শতাধিক সহযোগী সংস্থাকে (পিও) ঋণযোগ্য তহবিল সরবরাহ করে থাকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থাগুলোর সদস্য সংখ্যা সম্মিলিতভাবে ২ কোটি, যার ৯২ শতাংশই নারী।
বর্তমানে ফাউন্ডেশনের মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫২ লাখ, যার মধ্যে ৯২ দশমিক ৭৬ শতাংশই নারী।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং পৃথিবী ও মানব কল্যাণকর নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে এক নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রয়োজন।
বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি’র উচ্চ পর্যায়ের তিনি একথা বলেন। সূত্র: বাসস
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে পাঁচটি প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ- নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া ও বাংলাদেশের নেতারা যোগ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার, যা পৃথিবী ও মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে।’
একইসঙ্গে বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত ‘সামিট ফর দ্য ফিউচার’-এর প্রতিও সমর্থন জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি যার ভিত্তি হচ্ছে- ভোগ, ভোগ আর ভোগ। এটি শুধু বর্জ্য, বর্জ্য ও বর্জ্য উৎপাদন করে। আমাদেরকে শূন্য বর্জ্যের বিশ্ব গড়তে হবে।’
প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি (বর্জ্য) অপসারণের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
‘আমাদের প্রতি বছর এখানে জমায়েত করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয়কর ও অপমানজনক।’
বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের বলতে চাই যে আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেই। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সংস্থান করতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে জোরালো আলোচনা এবং ঐকান্তিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য