দুটি কারণে আজকে বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘একটি হচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে, সেটির প্রতিবাদ সারা পৃথিবীজুড়ে হয়েছে। এমনকি অনেক ইহুদিও সেটির প্রতিবাদ করেছে। শুধু বিএনপি এবং জামাত সেটির প্রতিবাদ করে নাই। এ দেশের সমস্ত মুসলমানকে তারা আহত করেছে। তারা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের দোসরে পরিণত হয়েছে। আর অপরটি হলো, ইসরায়েলি বাহিনীর অনুকরণে তারা নিরীহ মানুষ, সাংবাদিক, পুলিশ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি-ঘোড়ার ওপর হামলা পরিচালনা করছে, অগ্নিসন্ত্রাস করছে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা অ্যাকাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক আয়োজন ‘রূপসী বাংলা’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।
শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক কাজী বোরহান উদ্দিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি যেভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো গুপ্তস্থান থেকে অনলাইনে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছে, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করছে, এরপর তো মানুষের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নাই। তারা জানে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাদের ভরাডুবি হবে। সে জন্য তারা নির্বাচন প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করছে। বিএনপি নেতা রিজভী অজ্ঞাত স্থান থেকে বলছেন, তারা নির্বাচন হতে দেবে না’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন ২০১৪ সালেও নির্বাচন প্রতিহত করার অনেক চেষ্টা হয়েছিল। নির্বাচন প্রতিহত করে বিএনপি গণতন্ত্রের যাত্রাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিল, তারা পারে নাই। ২০১৮ সালেও সেই অপচেষ্টা ছিল, সেটিও পারে নাই। এখন বিএনপির শক্তি, সামর্থ্য, ক্ষমতা ২০১৪ এবং ২০১৮ তুলনায় অনেক কম।’
হাছান মাহমুদ বলেন, মাঝেমধ্যে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যেভাবে বাস, গাড়ি-ঘোড়া পোড়াচ্ছে এবং মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এগুলো জঘন্য সন্ত্রাসীদের কাজ। বিএনপি এখন আসলে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে, সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের সবার বিরুদ্ধে তো মামলা নাই, সবার বিরুদ্ধে তো ওয়ারেন্ট নাই, কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কারণ তারা ২৮ অক্টোবর যে অপরাধ করেছে এবং এর পরবর্তী প্রতিটি দিন যে অপরাধ সংঘঠিত করে যাচ্ছে, এ জন্য জনগণের কাছে চেহারা দেখানোর সাহসটা তাদের নাই, প্রকাশ্যে আসার সেই সাহসটা নাই।’
বিএনপির অনেক নেতাই নির্বাচনে অংশ নেবে
বিএনপি দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের অনেক নেতাই অংশ নেবেন বলে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তাদের সঙ্গে আরও শতাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সুতরাং এগুলো করে বিএনপির কোনো লাভ হবে না।’
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণের রায় নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে। জনগণ ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও বহু দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, বিএনপির নেতারাও অংশগ্রহণ করবে।’
ডোনাল্ড লু’র চিঠি প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রেরিত চিঠি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনেও সন্ত্রাস দমনের পক্ষে একযোগে কাজ করছি। তাদের পরামর্শকে আমরা অবশ্যই মূল্য দেই। আমাদের কাছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পরামর্শের অবশ্যই মূল্য আছে। পাশাপাশি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হয়, সেগুলো আমরা নিয়ে থাকি।’
সংলাপ প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি তো সংলাপ নাকচ করে দিয়েছে। বিএনপি বলেছে, এখন সংলাপের কোনো পরিবেশ নাই। আমরা অবশ্যই সংলাপের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটল হিলে হামলা হওয়ার পর সেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বা সরকার আলোচনায় বসেছে? তাদেরকে বরং গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিচার হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা গাড়ি-ঘোড়া পোড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে কী করে আলোচনা হতে পারে? আলোচনা হতে পারে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে নয়।’
এর আগে আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য মন্ত্রী ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং শিল্পকলা অ্যাকাডেমিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘একটা সংবাদ যখন কোনো পত্রিকায় ছাপা হয় এবং এর সঙ্গে ছবি যায়, মানুষ সেটা অনেক বেশি পড়ে এবং ছবিই কথা বলে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো যদি না থাকত, তাহলে কি আমরা মুক্তিযুদ্ধকে আজকে যেভাবে জানতে পারছি, নতুন প্রজন্ম যেভাবে জানতে পারছে, সেটি পারত?’
আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বহু কালজয়ী ছবি ফটোজার্নালিস্টরা তুলেছেন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একজন ফটোজার্নালিস্টের ফটো তোলার মুন্সিয়ানার কারণে সংবাদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। ফটোজার্নালিস্টরা অনেক সময় সমাজের অনুন্মোচিত বিষয়গুলো উন্মেচিত করে। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন:খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বুধবার তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। আগে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের মতো দলকে নির্মূল করা উচিত।
এর আগে মঙ্গলবার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে আহত হন অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা জেলা শাখার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন এরই মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
আরও পড়ুন:অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেটি গ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির আয়োজনে বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে রবিবার শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা, ছাত্ররা যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিল, সে সুযোগ আমাদের শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, আমাদের জীবন, সামাজিক জীবন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে গ্রহণ করি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা ভয়ংকর সময় আমরা পার করেছি। প্রায় ১৫ বছর একটা পাথর আমাদের বুকের মধ্যে চেপে ছিল। সেই পাথর সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
‘আমাদের তরুণেরা, ছাত্ররা যে একটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করল, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ করে দিল, তা যেন আমরা গ্রহণ করি। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।’
গণতন্ত্রে নির্বাচনের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রে পৌঁছাতে পারি। সেটাই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনকে বলুন, শিক্ষা ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতি ক্ষেত্রে বলুন, সুশাসনের ক্ষেত্রে বলুন, নির্বাচনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’
আরও পড়ুন:গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বেলা তিনটার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। আসুন প্রতিজ্ঞা করি, আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই।
‘যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল, সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করব তাদের সে স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনো সুযোগ থাকত না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হালদার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেম সেলিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেবেন।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যার সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতি হিসেবে আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
আরও পড়ুন:নির্বাচন কবে হবে, সেটি জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির সামনে শনিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আমাদের নির্বাচনটা কবে হবে। কারণ এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা হয়তো কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারব। আর পরে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, তারা বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, আমাদের আশা থাকবে সব রাজনৈতিক দল এটাতে স্বাক্ষর করবে। সেটা হবে জুলাই চার্টার।’
সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, ‘আর যেসব ক্ষেত্রে প্রধান ঐকমত্য প্রয়োজন, সেটার জন্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এবং এরপরে আমরা যে রাজনৈতিক সমাধানে যাচ্ছি, কীভাবে আমাদের ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনটা হবে, তার জন্য আজকে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে হেফাজতের নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্টচেকিং মিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো তথ্য-প্রমাণসহ উঠে এসেছে। হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে তার আজ্ঞাবাহী বাহিনীর সদস্যরা গুম, খুন ও নির্যাতনে নৃশংসতার সকল সীমা ছাড়িয়েছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, ৫ মে শাপলা চত্বর ও চব্বিশের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার ও জনগণকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেবে নাৎ।
‘তারা একের পর এক স্যাবোট্যাজ ঘটিয়ে ছাত্র নেতৃত্ব ও তৌহিদি জনতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কালচারাল ঘরানার ফ্যাসিবাদপন্থি আওয়ামী লোকজন আবারও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষগুলোর মধ্যে তারা বিভেদ-বিভক্তি ছড়িয়ে দিতে তৎপর।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ভারত এখনও শত্রু রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। হাসিনা পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে এখনও তারা মেনে নিতে পারছে না; বরং তাদের আশ্রয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে একের পর এক ষড়যন্ত্র করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। তাই গুম-খুন ও গণহত্যার দায়ে হাসিনার বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে।
‘সেই সাথে বিভিন্ন বাহিনীতে তাদের অনুগত চিহ্নিত দোসরদেরও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব সুরক্ষিত হবে বলে আমরা মনে করি।’
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বক্তব্য দেবেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে হতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার আগে হতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা সেটাকে সমর্থন করি।’
নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে জামায়াত একটি লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বলেও জানান জামায়াতের সেক্রেটারি।
তিনি জানান, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে নিবন্ধনের শর্তগুলো শিথিল।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি যে আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল করতে, যাতে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বাতিল করার ক্ষমতা পায়।'
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ৩০০ আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এটি জামায়াতের প্রথম কোনো বৈঠক।
এর আগে দলটির নিবন্ধন থাকা অবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে এসেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের সাথে কথা বলব।
আমাদের বক্তব্য তাদের জানাব। পরে গণমাধ্যমের সাথেও আমরা কথা বলব।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
মন্তব্য