নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান এবং আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিশ্চিত করা আছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মকর্তা বদলি
নির্বাচন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে প্রশাসনের মধ্যে রদবদল আনতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না।
অন্যদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বদলি করার প্রয়োজন হলে করলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সে বদলি কার্যকর করতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী যদি সরকার কাজ না করে তাহলে আইনের বরখেলাপ হবে।
‘সাধারণত দেখা যায়, সরকার সবসময় তাদের পছন্দমতো কর্মকর্তাদের সেসব জায়গায় নিয়োগ দেয়। এটা সব সরকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’
তবে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা কিংবা না করা হলে সেক্ষেত্রে কমিশন কী করতে পারে তা নিয়ে আইনে সরাসরি কিছু বলা নেই।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম এ বিষয়ে বলেন, ‘সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।’
ভারতের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেদেশে সরকার নির্বাচন কমিশনের কোনো অনুরোধ উপেক্ষা করলে কমিশন আদালতের শরণাপন্ন হয়। বাংলাদেশে কখনোই কোনো ইলেকশন কমিশন আদালতে যায়নি।’
একই উদাহরণ তুলে ধরে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আইনের ব্যত্যয় হলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে।’
প্রার্থিতা বাতিল
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধির গুরুতর লঙ্ঘন করেন, সেক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়টিতে নির্বাচন কমিশনের পুরোপরি এখতিয়ার রয়েছে।
এমনটা উল্লেখ করে আব্দুল আলীম বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো উদারহণ নেই। নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা ও সতর্ক করার নজির থাকলেও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি দেখা যায় না।’
রিটার্নিং অফিসার নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে উল্লেখ করা আছে, একজন রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে দায়িত্ব দেবে, তিনি সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকবেন।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, সংশ্লিষ্ট জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকই সর্বেসর্বা।
জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা নন। তারা যদি কমিশনের নির্দেশনা মেনে না চলেন সেক্ষেত্রে কমিশন কী করতে পারে?
এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি বাতিল করতে পারে।’
ভোটের ফল বাতিল
গত ১৯ মে গণপ্রতিনিত্ব আদেশের সংশোধনী অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয়- ‘নির্বাচনের পর ফল বাতিল করতে পারবে না কমিশন।’ এতে নির্বাচন কমিশনের ‘ক্ষমতা খর্ব হয়েছে’ বলে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়।
তখন নির্বাচন কমিশনের সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে নির্বাচনী কার্যক্রম ও ভোট চলাকালে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের হাতে আছে। যে সংশোধনী যুক্ত করা হয়েছে সেটি হচ্ছে- নির্বাচনের ফল গেজেট বা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হওয়ার পর পুরো নির্বাচনের ফল বাতিল করা যাবে না।
পরবর্তীতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দাবি করে- ভোট চলাকালে কমিশনের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা আছে। কমিশন আবশ্যিক মনে করলে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা স্থগিত রাখতে পারবে। এই ক্ষমতা আগে ছিল না।
নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে, যেটি আগে পারতো না বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করছে। তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সংগত মনে করলে যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ফল বাতিল করতে পারবে কমিশন।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গাইবান্ধায় একটি আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে সেদিনই ভোটগ্রহণ বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, কমিশনের এই ক্ষমতা বহাল আছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিএনপি’র শীর্ষ ৫ জন নেতা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, বহিষ্কারের তথ্যটি সঠিক।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি, আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোনালি সংসদ মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, শাহ আলমের (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) জন্য আমরা নমিনেশন আনবো। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেবো কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করবো।
তিনি বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ মহলকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ফতুল্লাকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো জোট চলবে না। এই খেলা আর খেলবেন না। ধানের শীষ ছাড়া ফতুল্লায় কিছু চলবে না। ফতুল্লার জনগণের আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ফতুল্লার মানুষদের প্রিয় নেতা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘেরাও করার মন্তব্যটি সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, মন্তব্যটি স্লিপ অব টাং বলতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রায় ৮০ ভাগ ভোটার বিএনপির। এখানে যদি জোটের অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ভোটারদের জন্য কষ্টদায়ক। বিষয়টি কেন্দ্রকে বোঝাতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে এবং একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা না করে কোনও প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা মনে করেন, সংস্কার রাতারাতি বা কয়েকটি বৈঠকের মধ্য দিয়েই হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, যদি সরকার মনে করে যে, তারা চাইলেই কাল থেকে পুলিশ ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে সেটা হবে না। ‘আপনাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে ঘুষ নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
জিয়া পরিষদ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’। এটি গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এটি একটি নেতিবাচক আমলাতন্ত্র এবং এটিকে একটি ইতিবাচক কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তা করতে হলে মূলত জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া, তাদের চাহিদা বোঝা এবং সেই চাহিদাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।
নির্বাচন চাওয়ার কারণে বিএনপিকে ঘিরে চলমান সমালোচনার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বলা হলো, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন ছাড়া প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা যায় না। ‘আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সংসদে যাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে কীভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে বাড়ি ও বিদেশ থেকে কয়েকজন লোক ভাড়া করে আনতে পারেন না। এটি সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জাতির এই শোকের সময়ে আমি সকল গণতন্ত্রপন্থী সহযোদ্ধার প্রতি শান্ত ও সংহত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভেদমূলক সংঘাত কিংবা জনতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করতে হলে আমাদের সহনশীলতা ও আত্মসংযমের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সদস্যের মাধ্যমে জনতা ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি ব্যয় হোক নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা, নিহতদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা, আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার কাজে।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণহানির শিকার নিরীহ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের গভীর সহানুভূতি। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের পাশে কী ধরনের লোকালয় গড়ে উঠবে, তার পরিকল্পনা থাকা উচিত।
ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের দেখতে গতকাল সোমবার বিকাল পাঁচটার দিকে যান রুহুল কবির রিজভী। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ অন্য নেতারা ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এ এলাকার মধ্যে প্রশিক্ষণ বিমান দিয়ে উড্ডয়ন শিখবে, এটা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়। এটা বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হতে পারে। যশোর, কক্সবাজারের মতো জায়গায় হতে পারে। সেখানে পাশে সমুদ্র আছে, বিস্তীর্ণ জায়গা আছে। কিন্তু এ ধরনের ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় প্রশিক্ষণ বিমানে প্রশিক্ষণ নেবে, এটা আমি কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছি না।’
রুহুল কবির আরও বলেন, ‘নেভিগেশন বা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আমি অবশ্যই জানব না। কিন্তু সাদা চোখে যেটা মনে হয়েছে, চারদিকে এত বাড়িঘর, মানুষ থইথই করছে, এর মধ্যে একটা প্রশিক্ষণ বিমানে প্রশিক্ষণ নিতে পারে না। এটা নিয়ে প্রশাসন, সরকারের গুরুদায়িত্ব আছে। দায়িত্বে অবহেলা করলে প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন বিপন্ন হতে থাকবে।’
রিজভী বলেন, ‘বিমানবন্দরের পাশে কী ধরনের লোকালয় গড়ে উঠবে, তার পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমার মনে হয়, যেসব লোকালয় গড়ে উঠেছে, তা পরিকল্পনার অংশ নয়। এত ঘনবসতি এই এলাকায় হতে পারে না।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে জানিয়ে রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা রক্তের জোগান দেওয়াসহ অন্যান্য সহযোগিতা করছে। দলের কয়েকটি কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনে তরুণদের চোখে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে।
সানেম-অ্যাকশনএইড পরিচালিত ‘যুব জরিপ-২০২৫’ শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণে সারা দেশের আট বিভাগের ২ হাজারের বেশি পরিবারের ওপরে এ জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আনুমানিক ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পাবে। বিএনপির পড়েই আছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পাবে বলে মনে করছেন তরুণরা।
অন্যান্য ইসলামপন্থি দল, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান আরও নিচে। এছাড়াও, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারত, তবে ১৫ শতাংশ ভোট পেত বলে মনে করেছেন জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা। বিএনপির প্রতি পুরুষ ভোটারদের সমর্থন নারীদের তুলনায় একটু বেশি। জামায়াতের ক্ষেত্রেও পুরুষ সমর্থন বেশি নারীর তুলনায়। অন্যদিকে, এনসিপির প্রতি নারীদের সমর্থন পুরুষদের চেয়ে বেশি, এবং শহরাঞ্চলে এই দলের জনপ্রিয়তা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি।
উল্লেখ্য, জরিপের ফল গত রোববার প্রকাশ করেছে সানেম, যা তরুণদের রাজনৈতিক ঝোঁক ও আগ্রহের একটি সময়োপযোগী প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেশের তরুণদের মধ্যে ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশই আশাবাদী আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ ইতোমধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ তরুণ, অন্যদিকে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে অনাগ্রহী বলে জরিপে উঠে এসেছে।
জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী রাজনীতি ও সংস্কার নিয়ে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি জরিপে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকে মাত্র ২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ তরুণ নিয়মিত দেশের রাজনীতির হালচাল অনুসরণ করেন, ৩৯ দশমিক ০৯ শতাংশ মাঝে মাঝে করেন, আর ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এ ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী না।
নারীদের মধ্যে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহী না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঘনিষ্ঠভাবে রাজনীতি অনুসরণকারী তরুণের হারও খুব কম—পুরুষদের মধ্যে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র—পুরুষদের মধ্যে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
জরিপে রাজনৈতিক দলের কার্যকারিতা নিয়ে তরুণদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট। মাত্র ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডায় দেশের প্রকৃত সমস্যার প্রতিফলন ঘটে, যেখানে ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ একেবারেই এ বিষয়ে একমত না। দেশের ৫০ শতাংশ তরুণ মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি, আর বিপরীতে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ মনে করেন যে দলগুলো তরুণদের সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েও তরুণদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন সংস্কার ছাড়াই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। তবে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। অপরদিকে, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি দেখছেন এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, কিছুই পরিবর্তন হবে না।
দেশের ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ কোনোভাবেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী না। ১১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ আছে এবং মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ বর্তমানে কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল নিয়ে তরুণদের প্রত্যাশা অনেকটাই আদর্শভিত্তিক। ৬০ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতা দূর করবে। ৫৪ শতাংশ চায় নিয়মিত নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক। পাশাপাশি, ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ তরুণ মনে করেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত নয়।
জরিপ পরিচালনা করা সংস্থা দুটি জানিয়েছেন, জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে তরুণরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের গতিপথ, অন্তর্ভুক্তি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে কীভাবে চিন্তা করছে—তাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে জরিপটিতে। জরিপটি তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। সার্বিকভাবে, এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষাগুলো আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা, যেন তা নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয় এবং যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।
মন্তব্য