দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নামে বর্তমান ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘নাটক’ বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটি একইসঙ্গে তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এ কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একইসঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জনগণের দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করতে সরকার পাগল হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা তার অধীনস্ত নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবৈধভাবে তফসিল ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিলের নামে এই নাটক বন্ধ করতে আমরা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে চাই। আগে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ বাংলাদেশের মাটিতে কোনো প্রহসনমূলক ও নাটকীয় নির্বাচন হতে দেবে না।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে। কারণ দলটি কখনোই সামাজিক সম্প্রীতি বা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
‘তাই তারা তাদের প্রতিপক্ষকে আক্রমণাত্মক ও অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে এবং বিভিন্নভাবে দমন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই মনে করে না যে, এই জবরদস্তিমূলক দুঃশাসন যে কোনো মুহূর্তে উৎখাত হতে পারে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মিলিত বিবেকবোধের (Collective Conscience) চাপ বোধ করেন না বলে জ্যান্ত মানুষ ধরে আগুনে নিক্ষেপ করতে সন্ত্রাসী ভাষায় হুকুম দিচ্ছেন। গত কয়েক দিন ধরে তার এই সহিংস হুংকারে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ চরম আতঙ্কে।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে আগুন-সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ, গুম-খুন-ভাংচুর, সহিংসতার আঁতুড়ঘর আওয়ামী লীগ। আওয়ামী দুঃশাসনে পিষ্ট প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করতে দলীয় ও রাষ্ট্রশক্তিকে দিয়ে সন্ত্রাস-নাশকতা চালানো হচ্ছে।
‘অগ্নি-সন্ত্রাস শব্দটিকে ব্যবহার করে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অবরাধ করে তারা, আর চাপিয়ে দেয় বিএনপির লোকজনের ওপর। বিএনপি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে।’
রিজভী বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশ নয়; এখন গোটা পৃথিবীবাসী জানে যে আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, সহিংসতা, গানপাউডার দিয়ে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আওয়ামী লীগ।
‘এবারও এক দফার সংগ্রাম বানচাল করতে পুলিশ প্রটেকশনে আগুন-সন্ত্রাসে আওয়ামী ক্যাডারদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান; যেমনটা তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা গুলি খাচ্ছে, রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন ভোগ করছে।
‘প্রায় প্রতিটি আগুন-সন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটি প্রকাশ পাচ্ছে, আবার কোনোটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা দিচ্ছে।’
বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানান রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এই অবরোধ গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি অংশ এই অবরোধ। আসুন, আমরা সবাই এই অবরোধ সফল করি।’
তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর জন্য অগ্নিসংযোগে লিপ্ত রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৪২০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
আরও পড়ুন:জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রথম গেইটে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির মাও: হাফিজুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি নুরুজ্জামান বাদল, সাবেক নায়েবে আমির মাও: আব্দুল বাতেনসহ আরো অনেকে।
এসময় বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তারা জামায়াত ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। তবে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং এ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিতে দেখা গেছে হাসিনাকে।
এদিকে ২০২৪ সালের শেষভাগে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত একটি জুম বৈঠককে কেন্দ্র করে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ১৯ ডিসেম্বর ওই ভার্চুয়াল সভায় দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
সিআইডির ফরেনসিক ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন বৈধ সরকার উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ উসকে দেয়ার পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন।
এই তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে, ২০২৫ সালের ৪ মার্চ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত ও অভিযোগ দায়েরের অনুমতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ রমনা থানায় সিআর মামলা নং-২২২/২০২৫ দাখিল হয়, যার ধারাগুলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১২১, ১২১(ক), ১২৪(ক)।
পাঁচ মাসেই সিআইডির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার শুরু হচ্ছে। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি প্রধান এজেন্ডা- সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত ধারায় (১২১/১২১ক/১২৪ক) অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংস্থাটি। এ মামলার বিচারকার্য শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১৮, ঢাকায় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের অধিকাংশ অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে দেশে থাকা সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করে বিভিন্ন জেলা কারাগারে থাকা ৯১ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ১৯৫ জন আসামি এখনো পলাতক বলে জানা গেছে।
গতকালকের শুনানিতে প্রধান আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত আদালতে অনুপস্থিত থাকায়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রকাশ্য সমন ও গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা অনুপস্থিত থাকলে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১২ ধারার আওতায় অনুপস্থিতিতেই বিচার পরিচালনা করা হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন—রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিচার ও দায়বদ্ধতা’ এজেন্ডার বাস্তব প্রতিফলন, তেমনি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দৃঢ় সঙ্কেতও।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে মঙ্গলবার দিনব্যাপী দেবিদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী। এ সময় তিনি খলিলপুর বাজার, নূরপুর, ফতেহাবাদ মোকামবাড়ি ও ফতেহাবাদ বাজার এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন। এছাড়া খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গঙ্গামন্ডল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, নূরপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গণসংযোগকালে এ এফ এম তারেক মুন্সী বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি হলো জাতির পুনর্জাগরণের নকশা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ধানের শীষ কেবল একটি প্রতীক নয়, এটি পরিবর্তন ও আশার প্রতীক। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন মাহফুজ, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম পাঠান, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পূর্ব বিএনপির সভাপতি শাকিল মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, পশ্চিম শাখার সভাপতি এডভোকেট সোহরাব হোসেন, সদস্য সচিব দৌলত খান, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম ইমরান হাসান, উপজেলা যুবদলের সভাপতি নুরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মো. রকিবুল হাসান, জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নেয়ামত উল্লাহ এবং উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কাউছার মোল্লা।
যারা ভারতীয় আধিপত্যের বাইরে থাকবে, তাদের সঙ্গে এনসিপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছে বলে জানিয়েয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
এ সময় তিনি বলেন, এনসিপির শাপলা প্রতীকে আইনি কোনো বাঁধা নেই। তাই আমরা শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করব। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি যেকোনো এলায়েন্সেও যেতে পারে। তবে এনসিপি নিজের প্রতীকে নির্বাচন করবে।
গত সোমবার রাতে শেরপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও উপজেলা নেতা ও কর্মীদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করা। আগামীর রাজনীতির লড়াইয়ের জন্য, গণতান্ত্রিক পথ উত্তরণের জন্য, ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখার জন্য কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় সমন্বয় সভা করছে এনসিপি।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বিএনপি কখনো এককভাবে সরকার গঠন করেনি, আবার জামায়াতও কখনো বড় পরিসরে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি। সে জায়গা থেকে আগামী নির্বাচনে কারা সরকার গঠন করবে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর ভূমিকায় থাকবে এনসিপি। এজন্য আমরা সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সারাদেশে সমন্বয় সভা করছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের সব ওয়ার্ডে এনসিপির কমিটি থাকবে।
শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. লিখন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনসিপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলমসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এনসিপি নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতারা ও জুলাই যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যারা ভারতীয় আধিপত্যের বাইরে থাকবে, তাদের সাথে এনসিপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছে। আজ রাতে শেরপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এনসিপি’র শাপলা প্রতীকে আইনগত কোন বাঁধা নেই, তাই শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি যেকোন এলায়েন্সে যেতে পারে, তবে সেটা এনসিপি নিজের প্রতীকে নির্বাচন করবে।
সারজিস আলম বলেন, এনসিপি উচ্চ কক্ষে পিআর চায়, নিম্নকক্ষে পিআর চায় না। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং উচ্চকক্ষের পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে দেখতে পারি কতটুকু কাজ হলো। একইসাথে এটা দিয়ে বাংলাদেশ উপকৃত হয় কি না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম, শেরপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার লিখন মিয়াসহ অনেকেই।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পিআর পদ্ধতির আন্দোলনের লক্ষ্যই হচ্ছে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা, এটা জনগণ গ্রহণ করবে না।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে এবং আপনারা দেখেছেন এটার জন্য তারা আন্দোলনও করছে। এর একটাই লক্ষ্য তা হচ্ছে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এখনো বলছি, জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না, চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির উদ্যোগে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কমিটমেন্ট হলো ২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন হবে। আমরা সেটাই দেখতে চাই। জনগণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় এবং গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েই জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করতে চায়।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা জানি যে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যেকোন দল জয়ী হতে পারে জনগণের ইচ্ছার উপর দিয়ে। কিন্তু সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে, যে দল পরীক্ষিত অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারে ছিল কাজ করেছে। যেই দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, যেই দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে।’
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই এই দেশে প্রথম সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন, তিনিই প্রথম এই দেশের সংবিধানে আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি রেখেছিলেন।
এখন কিছু দল সেগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্নভাবে এই বিএনপিকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা বয়স কম তারা জানে না, যাদের বয়স একটু বেশি তারা দেখেছেন ১৯৭৫ সাল নভেম্বর কী অবস্থার প্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের মানুষ সেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে তখন স্বনির্ভর বাংলাদেশ তৈরি করার কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক একইভাবে আজকে আবার আমরা সবাই এক হয়েছি আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে আবার একটা স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাব, এমন বাংলাদেশই নির্মাণ করতে চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। সমস্ত ষড়যন্ত্র চক্রান্তকে পরাজিত করবার শক্তি বাংলাদেশের মানুষের আছে।’
সামনে কঠিন পরীক্ষা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন আপনাদের এই ইউটিউব, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া এগুলোতে বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ আমার বিশ্বাস আপনারা এখান থেকে সঠিক তথ্যটি বেছে নিতে পারবেন। এই দেশের মানুষ কখনো ভুল করে না, সবসময় সঠিক পথে এগিয়ে যায়। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চাই।
যেখানে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার আস্থা প্রকাশ করবে এবং তাদের একটা পার্লামেন্ট ও তাদের সরকার বেছে নেবে। আপনাদের আবার অনুরোধ করব যে, সুযোগ আমরা পেয়েছি বাংলাদেশকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার সেই সুযোগ যেন আমরা না হারাই।’
একাত্তর মুছে ফেলা যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু সংখ্যক মানুষ চেষ্টা করে আমাদের ১৯৭১ সালের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে। এটাও সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই আজকে আমরা নতুন রাষ্ট্রের নতুন চিন্তা করতে পারছি, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই কিন্তু আমরা আজকে এই বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করবার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামে অংশ নিতে পারছি।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমরা যুবক ছিলাম, লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি। আমাদের মধ্যে এখানে অনেকে আছেন যারা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে অংশ নিয়েছেন, এই চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, আমরা সবাই এই যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়েছি। শুধু একটা লক্ষ্য আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ একটা বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই কথাটি মাথায় রেখে সকলে যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স এক বছর পার হয়েছে, এই ১৪ মাসে রাতারাতি আলাদিনের চেরাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা খুব সুন্দর বানিয়ে ফেলবে এই আশা জনগণ করে না এই সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু প্রক্রিয়ার শুরুটা চায়... চায় যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হোক যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাব।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, যে তারেক রহমান একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছে বিবিসিতে।
সেখানে তিনি এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছেন এবং কিভাবে তিনি দেশের সমস্যার সমাধান করতে চান সেই সমস্যাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। ফিন্যাশনাল টাইমসেও তিনি একইভাবে কথাগুলো বলেছেন।’
বেকার সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিএনপি ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে এবং ‘অনেক কাজ সম্পন্ন’ করে রাখা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাগপার খন্দকার লুফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদিকী বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআর পদ্ধতি এ দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। চাপিয়ে দেয়া কোনকিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করে না।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে ডিআরইউ মিলনায়তনে এক 'স্মরণসভা'য় তিনি এসব কথা বলেন। ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভা আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
তিনি বলেন, বিএনপি বিরুদ্ধে অপ্রচার চলছে, বিএনপি নাকি সংস্কার চায় না। বিএনপি সংস্কারের পক্ষে। আপনারা অপ্রচারে কান দিবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতির বিষয়ে জনগণ বোঝে না, সেই পদ্ধতি নিয়ে কয়েকটি দল আন্দোলন করছে। এর কারণ হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।
মন্তব্য