কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বহুল প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এখানে বাণিজ্যিক এবং এনার্জি হাব তৈরিরও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে মাতারবাড়ী ঘিরে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটা শুরু করল বাংলাদেশ।
মাতারবাড়ী বন্দরের প্রথম প্রকল্প পরিচালক জাফর আলম বলেন, ‘আজ (শনিবার) আমাদের জন্য আনন্দের দিন। বাংলাদেশের জন্য গভীর সমুদ্র বন্দর প্রয়োজন ছিল। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মেরিটাইম বিশ্বে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।’
মাতারবাড়ীর যেখানে এখন কয়লা জেটি হয়েছে সেটি ১০ মিটার নিচে ছিল। অনেক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এখন মাতারবাড়ী চ্যানেল শুধু দৃশ্যমান নয়, শতাধিক জাহাজও সফলভাবে ভিড়েছে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আরিফ বলেন, ‘মেরিটাইম বিশ্বে নতুন দিগন্ত মাতারবাড়ী। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানিকারকদের আর ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট ব্যবহার করতে হবে না। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সরাসরি বড় জাহাজ ভিড়বে মাতারবাড়ী জেটিতে। তাতে করে সময় এবং ব্যয় দুই-ই কমে যাবে।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের প্রথম ব্রেক ওয়াটারের মাধ্যমে নীল জলরাশির চ্যানেল আজ দৃশ্যমান।
‘এই চ্যানেল দিয়ে কয়লা বোঝাই বড় বড় সব জাহাজ জেটিতে আসা-যাওয়া করে রেকর্ড করেছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা আজ প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন করলেন। এখন আমাদের চাওয়া, টার্মিনালটি দ্রুত তৈরি হোক।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম, মোংলা এবং পায়রা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যও বেড়ে যাবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের কারণে। এই বন্দরের কল্যাণে সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।’
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যয় ও সময় দুই-ই কমবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে আরও বেশি করে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
‘এ ছাড়া গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে বাণিজ্যিক ও এনার্জি হাব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিণত হচ্ছে মাতারবাড়ী।’
দেশের আমদানি-রপ্তানি গতিশীল এবং ব্যয় কমাতে মহেশখালীতে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২৬ সালে এই বন্দর পুরোদমে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
গভীর সমুদ্রবন্দরে থাকবে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি, একটি ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জাহাজ বার্থিং জেটি। থাকবে তিনটি টাগ বোট, একটি পাইলট বোট, একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম।
গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। একে কেন্দ্র করে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বাণিজ্যিক হাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অত্র অঞ্চলে উন্নত যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আনা হচ্ছে।
মাতারবাড়ীকে ‘এনার্জি হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, অ্যামব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজও চলছে।
মাতারবাড়ীর সঙ্গে দেশ-বিদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেয়া হয়েছে। সম্প্রসারণ প্রকল্পটি চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যটন নগরী ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রাক্বলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
জাইকা, সরকার ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও সওজের ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রয়েছে।
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতাসম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার কাজ চলছে।
মাতারবাড়ী বন্দরকে ঘিরে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ আবর্তিত হবে তা বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা জিডিপিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেন, সোমবার বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন তলব করার জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চিঠিতে তলব করা ব্যক্তিদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা কোথায় ও কীভাবে এসেছে, পরে ওই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এবং নগদে উত্তোলন করা হয়েছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে এই ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং তার বোন শেখ রেহানা একজন ট্রাস্টি।
এ ছাড়া এই ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বা ট্রাস্টের হিসাব থেকে যেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর বা জমা হয়েছে, তাদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ সচল করার লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সরকার নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, এখন থেকে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদিত এডিপি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে আমরা চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের হার বাড়াতে পারব বলে আশা করছি।’
সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী যেকোনো দিক থেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঠিকাদার নিয়োগসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা অনিয়ম হয়। এর ফলে বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সরকারি অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়েছে। এতে বাস্তবায়নের হার অনেকাংশে কমে যায় এবং অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করব। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব ভালো প্রকল্পের কথা ভাবছি এবং যেগুলো নতুন প্রকল্প পরিচালক পেয়েছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে।’
গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে উন্নয়ন বাজেটের মাত্র আট শতাংশ বাস্তবায়ন করে সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের রেকর্ড গড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।
বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়।
এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বাজেট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিসহ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকায়।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৭ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও একই হারে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫৭ টাকা লিটার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরে তুলনামূলক কম রেমিট্যান্স এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এই খাতে সুবাতাস বইছে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাতদিনে দেশে এসেছে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি ডলার।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে উঠা-নামার প্রবণতা দেখা গেছে। গত জুনে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ডলারে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ ও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সের পালে ফের হাওয়া লাগতে শুরু করে।
আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২২ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এক মাসে সর্বোচ্চ।
এরপর অক্টোবরে (২৩৯ কোটি ডলার) ফের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে, যা নভেম্বরেও (২১৯ কোটি ডলার) অব্যাহত থাকে। তবে ডিসেম্বরে ফের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বের বৃহত্তম পিৎজা ব্র্যান্ড ডোমিনো’জ পিৎজার ব্যবসায়িক যাত্রার ৬৪ বছর উদযাপন করা হবে সোমবার।
প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ডোমিনো’জ পিৎজা তাদের ব্যবসার ৬৪ বছরের অসাধারণ যাত্রা উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল পিৎজাপ্রেমীদের জন্য ডোমিনো’জ পিৎজার ৩৬টি রেস্টুরেন্টে ৩৬টির বেশি পিৎজার ওপর ৩৬% আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
‘ক্রেতাগণ এই অফার উপভোগ করতে পারবেন ডোমিনো’জ পিৎজার অ্যাপ (অ্যাপ স্টোর ও প্লে স্টোরে উপলব্ধ) অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করে। অফারটি ডাইন-ইন, টেকঅ্যাওয়ে এবং ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ উদযাপন শুধু একটি অফারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক অসাধারণ যাত্রার ৬৪ বছরে পদার্পণ উদযাপন, যা শুরু হয়েছিল একজন ব্যক্তির স্বপ্ন দিয়ে।
শুরুর গল্প
এই গল্প শুরু হয় ১৯৬০ সালে, যখন টম মোনাহ্যান ও তার ভাই জেমস ৯০০ ডলারে মিশিগানের সিল্যান্টিতে একটি ছোট পিৎজা রেস্টুরেন্ট ডোমিনিক’স পিৎজা কিনে নেন। খাবারের ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই এবং সামান্য কিছু মূলধন নিয়ে টম শুরুতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। কিছুদিন পর তার ভাই ব্যবসা ছেড়ে চলে যান এবং টম একাই রেস্টুরেন্ট চালাতে থাকেন।
টম প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং নিজে ডেলিভারিও দিতেন।
এক বছরের মধ্যে টম ব্যবহৃত একটি ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ির বিনিময়ে তার ভাইয়ের শেয়ার কিনে কোম্পানির সম্পূর্ণ মালিকানা লাভ করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই ডোমিনো’জ পিৎজার সাধারণ স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বৈশ্বিক পিৎজা সাম্রাজ্যে পরিণত হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।
টমের লক্ষ্য ছিল একটি পিৎজা ব্রান্ড তৈরি করা, যা শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং সেবার জন্যও পরিচিত হবে। তিনি গরম ও ফ্রেশ পিৎজা ডেলিভারি নিশ্চিত করার দিকে জোর দেন, যা সেই সময়ে এক বিপ্লবী ধারণা ছিল।
১৯৬৫ সালে তিনি ব্যবসার নাম বদলে ‘ডোমিনো’জ পিৎজা’ রাখেন। ডোমিনো'জ-এর লোগোর তিনটি ডট তখনকার তিনটি রেস্টুরেন্টকে নির্দেশ করত এবং তার পরিকল্পনা ছিল ভবিষ্যতে নতুন রেস্টুরেন্ট যোগ হলে লোগোতে একটি ডট বাড়ানো হবে। তবে দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে এটি আর সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে ডোমিনো’জ পিৎজা বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন গ্রাহকদের নিকট লক্ষাধিক পিৎজা পরিবেশন করে।
বাংলাদেশে ডোমিনো’জ পিৎজা
ডোমিনো’জ পিৎজা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে।
সম্প্রতি মিরপুরের সনি স্কয়ারে নিজেদের ৩৬তম রেস্টুরেন্ট খুলে শাখার সংখ্যার দিক দিয়ে রাজধানীর সর্ববৃহৎ রেস্টুরেন্ট চেইনে পরিণত হয়েছে ডোমিনো’জ পিৎজা।
আরও পড়ুন:বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, জ্বালানি খাতে প্রতি বছর প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। সে হিসাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দেশের মানুষের মাথাপিছু ভর্তুকির হার প্রায় ৩ হাজার টাকা।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮ দশমিক ৫৫ টাকা দিলেও সরকার তা ১২ থেকে ২৫ টাকা দরে কিনে থাকে। এলএনজি আমদানিতে প্রতি ইউনিট ৭০ টাকা খরচ পড়লেও শিল্প খাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে। মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়।’
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের অধিক মূল্যে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। আমাদের চার হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস প্রয়োজন। অথচ রয়েছে তিন হাজারেরও কম।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তেল আমদানিতে উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া গেছে। এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপির পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে।
‘পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। সরকারি কিছু সংস্থা যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে। এই জমিগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে এ ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করা হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিবিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ব্যবহারিক হবে না। বরং এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা অধিক কার্যকর। বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হয়। তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে জ্বালানি স্বনির্ভর করা ও জ্বালানির মূল্য হ্রাসে নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল আক্তার, আইএফডিএল বাংলাদেশ পার্টনার ব্যারিস্টার শাহওয়ার জামাল নিজাম এবং বিএসআরএমের হেড অফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি।
আরও পড়ুন:‘বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে অসহযোগিতা করলে আমরা একা ক্ষতিগ্রস্ত হবো না, ভারতও হবে। ভারত আমাদের বিনা পয়সায় কিছু দেয় না, টাকার বিনিময়ে দেয়। কাজেই তারা যদি রপ্তানি বন্ধ করে তাহলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এর সঙ্গে দু’দেশের লাখ-লাখ লোক জড়িত।’
নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেছেন।
শনিবার দুপুরে ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত।
তিনি বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে তারা রপ্তানি বন্ধ করবে বলে আমার মনে হয় না। তবে যা হচ্ছে তা সবই রাজনৈতিক।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা প্রশ্নের সুরে বলেন, ‘কখনও কি শুনেছেন যে সব পলিটিক্যাল পার্টি এক জায়গায় বসে কথা বলেছে। আজ হোক কাল হোক রাজনীতিবিদরা দেশ চালাবেন। সে জায়গাতে যদি রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐকমত্য না হয় তাহলে জাতীয় যে পথ নির্ধারণ করার কথা সেটা তখন এলোমেলো হয়ে যায়। একদল একরকম বলবে, আরেক দল সেটা অপোজ করবে। এখন সবাই একত্রে বসেছেন- এটা একটা বড় অর্জন। এটা একটা উদাহরণ হয়েছে।’
পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ভোমরার কার্যক্রম চালু করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংকটের বিষয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এক হাজার ১০০ কোটি টাকার চলমান উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে ভোমরা স্থলবন্দর তার কার্যক্রম পুরোদমে চালাতে পারবে।’
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি আবু হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খানসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন এর আগে ভোমরা স্থল বন্দরের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য