রাজধানীর পুরান ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। লাল ইটের বাতিঘর খ্যাত এই বিদ্যাপীঠটি ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিক্ষক সংকটসহ ভৌত অবকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে কলেজটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ৭৪ বছর পূর্ণ করেছে।
৭৪ বছরের ইতিহাস
১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর নালগলার জুম্মন ব্যাপারী লেনের ভাওয়াল রাজ এস্টেটে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুসারে শুরুর দিকে এই কলেজটির নাম রাখা হয়েছিল ‘কায়েদ-ই-আজম কলেজ’। পরবর্তী সময় লক্ষ্মীবাজারে জমি ক্রয় করে কলেজটিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। আর নালগলার ভবনটিকে ছাত্রাবাসে রূপান্তর করা হয়।
১৯৫০ সালে সৈয়দ জহির আহসান কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’।
১৯৮৪ সালের পহেলা নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নাম হয় ‘সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ও শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার যে সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
এই কলেজটিতে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নের ব্যবস্থা রয়েছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পরই শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত বদলাতে থাকে পুরো পুরান ঢাকার চিত্র। কিন্তু সেই সোহরাওয়ার্দী কলেজই এখন নানা সংকট আর সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সংকট আর সমস্যা
সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্যাম্পাস এক একরের কিছু বেশি।
শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসটিতে লাইব্রেরির জন্য আলাদা কোনো ভবন বা সুপরিসর কক্ষ নেই। কলেজ লাইব্রেরিতে ক্যাটালগ নেই, বই ইস্যু এবং ফেরত নেয়ার ব্যাপারেও অব্যবস্থা বিদ্যমান। নেই ক্লাস নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা, যেগুলো আছে তাও আবার আয়তনে পর্যাপ্ত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নানা রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের মধ্যে ছয়টিতেই রয়েছে একাধিক আবাসিক হল, কিন্তু সোহরাওয়ার্দী কলেজে নেই কোনো হলের ব্যবস্থা।
আবাসিক এই সমস্যার সমাধান কবে মিলবে তা আদতে কেউ জানেন না।
কলেজ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ আসে গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আশপাশের এলাকায় মেস বা বাসা ভাড়া করে শুধু পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তাদের অধিকাংশের পক্ষে সম্ভব হয় না।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বাধ্য হয়ে খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দিতে হচ্ছে তাদের। এ জন্য তারা পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই ব্যাহত হচ্ছে তাদের পড়াশোনা।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের কোনো নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ঢাকার অদূরের শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। তারা চায় দ্রুত যেন এই সমস্যার সমাধান হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজের জায়গা বৃদ্ধিকরণ, ডি.আই.টি. মার্কেটে হল নির্মাণ, কলেজে খেলার মাঠ সম্প্রসারণ করা, যাতায়াতের জন্য কলেজের বাসের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরি সংস্করণ করা, ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন চালু করাসহ দীর্ঘ দিন ধরেই বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে আসছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের নানা অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ ও সম্প্রতি ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ ব্যতীত ক্রিয়াশীল কোনো ছাত্র সংগঠন নেই।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি স্থিতিশীল হলেও শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ সংগঠনগুলো।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে জায়গা ও স্থাপনা। কলেজটির এত বছর পেরিয়ে গেলেও ভৌত অবকাঠামোর সমস্যা সমাধান হয়নি। আর আমাদের কলেজে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পদ নেই। তবুও শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কলেজের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য মাউশি থেকে কিছু অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
কলেজটি নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শিফট করে ভাগ করে ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছি। আমাদের অতি শীঘ্রই একটি ভবন প্রয়োজন। সে জন্য আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলাপ আলোচনা করে নতুন জায়গার জন্য চেষ্টা করছি যেন আমাদের সংকটগুলো কিছুটা হলেও দূর করা যায়।’
শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক সংকট
কলেজটিতে বর্তমানে তিনটি অনুষদে সর্বমোট ১৭টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘদিন যাবত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। যার ফলে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম।
কলেজ প্রশাসনের দাবি, তুলনামূলক অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছেন না তারা।
বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী, ১০১ জন শিক্ষক ও বিভিন্ন অনুষদের ১৭টি বিভাগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজটির বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। কলেজটিতে প্রতিটি বিভাগে অনার্সের চারটি শিক্ষাবর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন খুবই নগণ্য।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা তাসরিন জানায়, ‘বর্তমানে আমাদের বিভাগে দুইজন শিক্ষিকা রয়েছেন এবং একজন অতিথি শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের নন-মেজর বিষয়ের ক্লাসগুলো অন্য ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে হলেও মেজর বিষয়গুলোর ক্লাস ঠিকভাবে হয় না। রুটিন অনুযায়ী সময়মতো ক্লাস হয় না।’
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র পারভেজ তানবিন বলেন, ‘একজন অতিথি শিক্ষকসহ ডিপার্টমেন্টে মাত্র চারজন শিক্ষক। ক্লাস ঠিকভাবে হয় না। এত বড় ডিপার্টমেন্টে মাত্র তিন থেকে চারজন শিক্ষক কীভাবে ঠিকভাবে ক্লাস নিবেন।’
ইসলাম শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাত্র পাঁচজন শিক্ষক। এই পাঁচ শিক্ষকই ইন্টারমিডিয়েট, অনার্স-মাস্টার্সের কাস নিয়ে থাকে।’
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোহসিন কবীর বলেন, ‘শিক্ষকদের স্থায়ী যে পদ তা আমাদের কলেজে অনেক কম। বিষয়টি আমি শিক্ষামন্ত্রীকে অবগত করি। উনি বিষয়টি অনুধাবন করেন এবং যেহেতু পদ সৃষ্টি অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে সংযুক্তির মাধ্যমে বাইরে থেকে বেশ কিছু শিক্ষক দিলে এখন শিক্ষক সংখ্যা আগে তুলনা দ্বিগুণ হয়েছে। এর পরও কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক স্বল্পতা স্বল্প সময়ের মধ্যেই সাময়িকভাবে নিরসন করেছেন এ জন্য শিক্ষামন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী কলেজের পক্ষ থেকে সাধুবাদ এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সময়কালের সব থেকে যোগ্য অভিভাবকগণ উপস্থিত রয়েছেন। উনারা এ কলেজের শিক্ষক সংখ্যাসহ শিক্ষকের স্থায়ী পদের সংখ্যাও খুব দ্রুত বৃদ্ধি করবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। আশা করি তাদের যুগ্ম সহযোগিতায় আমরা এ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পারব।’
কলেজে নেই পরিবহন সুবিধা
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছরেও শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত তিতুমীর কলেজ ৯টি, ঢাকা কলেজ আটটি, ইডেন মহিলা কলেজে ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে চারটি, কবি নজরুল সরকারি কলেজ দুইটি এবং বাঙলা কলেজে একটি বাস রয়েছে।
সরকারি সাতটি কলেজের ছয়টি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস থাকলেও সোহরাওয়ার্দী কলেজে যাতায়াতের জন্য কোনো বাস নেই।
এদিকে কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
অনেকেই উত্তরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর থেকে যাতায়াত করে। ক্যাম্পাসের নিজস্ব বাস না থাকায় রাস্তায় অনেক শিক্ষার্থীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে প্রায়সময়ই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাস্তায় যানজটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তায় যানজটের কারণে অনেকে ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। আবার অনেকে পরীক্ষা কিংবা ল্যাব ক্লাস থাকলে আসতে দেরি করে ফেলে। কেউ কেউ সকাল ৯টার ক্লাস করার জন্য সকাল ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েও ক্লাসে এসে দেখে ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।
দর্শন বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবাইদা আমান লিজা বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে আসি। সকালে আমি বাসা থেকে অটোরিকশা করে নদীর ঘাট পর্যন্ত যাই। তারপর নদী পার হই। সেখান থেকে একটা বাসে করে নতুন বাজার যাই। পরে নতুন বাজার থেকে বাসে করে সদরঘাট যাই। আবার সেখান থেকে হেঁটে কলেজ পর্যন্ত আসি।
‘যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হয়, আসা যাওয়া মিলিয়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ব্যয় হয়। ক্লাস করার জন্য সকাল ৬টায় বের হই এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত ৮টা বেজে যায়।’
গাজীপুর থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ক্লাস করেন কলেজের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুজ্জামান খান ইমরান।
তিনি বলেন, ‘অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে আমাদের কলেজ সব দিক থেকে অবহেলিত। বাকি ছয়টি কলেজ বাস থাকলেও আমাদের কলেজে নাই। বাস না থাকায় প্রতিদিন ক্লাস করতে পারি না।
‘একদিন ক্লাস করতে আসলে বাসায় যেয়ে খুবই ক্লান্ত হয়ে যাই। আসা-যাওয়া করতে যানজটের জন্য অনেক সময় লেগে যায়। কলেজ বাস পেলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।’
সাভার থেকে ক্লাস করতে আসা ফিওনা এশা সরকার জানান, ‘বাসে হাফ ভাড়া নিতে চায় না। আইডি কার্ড দেখানো হলেও দুর্ব্যবহার করে। মেয়ে শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে বাসে নিতেও আপত্তি করে, দাঁড়িয়ে ধাক্কা কিংবা ঠেলাঠেলি করে আসতে হয়। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে প্রায় সময় লাগে সাত থেকে আট ঘণ্টা।’
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মোহসিন কবীর পরিবহন সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের সব সমস্যার মূলে হলো জায়গার সংকট। আমাদের আগে জায়গার সংকট নিরসন করতে হবে। এই জায়গার সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যদি দুইটি বাস আনা হয় তাহলে দুইটা চালক, দুইটা হেলপার লাগবে। গাড়ি রাখার জন্য একটা গ্যারেজ লাগবে, কিন্তু এখানে গ্যারেজ তৈরি করার মতো জায়গা নেই।
‘আর ক্যাম্পাসে বাস আনলে হয়ত ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সুযোগ পাবেনা।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘বাস আনলে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেয়া লাগবে। অনেকেই ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে থাকে, তারা বলবে আমরা তো বাসে চড়ি না, তাহলে আমরা কেন চাঁদা দেব। এসব দিকও আমাদের বিবেচনা করতে হবে।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেই কোনো আয়োজন
কলেজটির ৭৪ বছর পূর্তি এবং ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষেও কোনো আয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর।
তিনি বলেন, ‘কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনুষ্ঠান করতে হবে এমন কোনো রেওয়াজ নেই। ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর পূর্তিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়।’
শিক্ষার্থীরা জানান, এত পুরোনো একটা প্রতিষ্ঠান অথচ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে না, বিষয়টি মানা যায় না। ছোটখাটো করে হলেও একটা কিছু করার প্রয়োজন ছিল।
আরেক শিক্ষার্থী জবা চৌধুরী বলেন, ‘সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও আমাদের উচিত কলেজে অনুষ্ঠান করা। অত বড় পরিসরে না পারলেও ছোট করে করা। কারণ ছোট প্রোগ্রামগুলো সবাই একত্রে হলে সবার মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। কলেজের সবাই তো একটা পরিবারের মতোই।’
আরও পড়ুন:নতুন বছর, নতুন সম্ভাবনা এবং বাঙালিয়ানার ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উদ্যাপন করল পহেলা বৈশাখ ১৪৩২। রাজধানীর প্রগতি সরণি, বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন এই প্রাণবন্ত উৎসবে। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল বৈশাখী রঙে রাঙানো আলোকসজ্জা, মুখরিত পরিবেশ এবং বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত মানুষের উপস্থিতি।
আয়োজনের মধ্যে ছিল সংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, হস্তশিল্প প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল, নৃত্য, শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বৈশাখী সাংস্কৃতিক পটভূমির ওপর আলোচনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান, প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফত, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক, উপ-উপাচার্য ড. জি ইউ আহসান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ এস এম জি ফারুক এবং বিভাগীয় প্রধানরা।
পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে এবং এক অনন্য মিলনমেলায় পরিণত হয়। সাংস্কৃতিক মনোরম পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোডম্যাপ অনুযায়ী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। তবে নির্বাচন কমিশন কতদিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে তা রোডম্যাপে উল্লেখ নেই।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই রোডম্যাপ এর কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন মনে করে, ডাকসু প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদেরও ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। সে কারণেই বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুচারুভাবে আয়োজনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এবং অগ্রগতি সংবলিত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হলো।
গণমাধ্যমে পাঠানো রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, ডাকসু নিয়ে অংশীজনদের আলোচনা শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
একই মাসে ডাকসু সংশোধিত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করে তা ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এর আগে এ বিষয়ে ছয়টি সভা করা হয়। এই গঠনতন্ত্র এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, গত জানুয়ারি মাসে ‘ডাকসু ইলেকশন কোড অব কনডাক্ট রিভিউ কমিটি’ করা হয়। তারা সাতটি সভা করে। এটিও চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন তা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, মে মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। একই সঙ্গে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। একই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস), ‘বি’ ইউনিট (কলা ও আইন অনুষদ), ‘সি’ ইউনিট (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) এবং ‘ডি’ ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, শাখা পরিবর্তন) ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবিবার দুপুরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’ ইউনিটের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লগইন করে নিজ নিজ ফলাফল দেখতে পারবেন। এ ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.jnu.ac.bd অথবা https://jnuadmission.com অথবা www.admission.jnu.ac.bd -এ জানা যাবে।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আগামী ৮ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উল্লিখিত ওয়েবসাইটে (www.admission.jnu.ac.bd) লগইন করে বিষয় পছন্দ (Subject Choice) দিতে পারবেন।
‘এ’ ইউনিটের তিন শিফটে মোট আসন ৮৬০টি। সবগুলো আসন বিজ্ঞান বিভাগের জন্য।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৮৪টি। দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৮৭টি। তৃতীয় শিফটে মোট আসন ২৮৯টি।
এ ইউনিটে ৮৬০ আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় বসেন ৪৪ হাজার ২২৩ জন।
‘বি’ ইউনিটের তিনটি শিফটে আসন ৭৮৫টি। প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিকে ২১৬, বাণিজ্যে ৩৭, এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৪১টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯২টি, যার মধ্যে মানবিকে ২১৮, বাণিজ্যে ৩৫ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৩৯টি।
তৃতীয় শিফটে মোট আসন ১৯৯টি, যার মধ্যে মানবিকে ১২৪, বাণিজ্যে ১০ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৫টি।
‘সি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন ৫২০টি।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৩০টি, যার মধ্যে শুধু বাণিজ্য বিভাগে ২৩০টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯০টি, যার মধ্যে বাণিজ্যে ২৩১, মানবিকে ১৬ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৪৪টি।
‘ডি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন ৫৯০টি।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিকে ১৯২, বাণিজ্যে ৩৩ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৯টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯৬টি, যার মধ্যে মানবিকে ১৯৩, বাণিজ্যে ৩২ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৭১টি।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ডি’ ইউনিট, ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘বি’ ইউনিট, ২২ ফেব্রুয়ারি ‘এ’ ইউনিট এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
রাত দুইটায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, জুলাই গণহত্যায় আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত এবং প্রধান উপদেষ্টার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে হল থেকে রাস্তায় বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে একদল শিক্ষার্থী।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শুরু হয়ে মলচত্বর, ভিসি চত্বর হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চায় না ছাত্রজনতা। আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া মানে জুলাই শহীদের সঙ্গে প্রতারণা করা।
মিছিলে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম বলেন, আওয়ামী লীগকে ফেরাতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রে যারা মদদ দেবে, তারা যেই হোক না কেন, ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়াবে।
ঢাবির ছাত্রী তাবাসসুম বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। দেড় হাজার মানুষ হত্যার পর তারা ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। অথচ সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অন্তর্ভুক্ত করতে এখন থেকে নানা ফন্দি-ফিকির হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবে না ছাত্রসমাজ।
যতদিন পর্যন্ত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ না হবে, ততদিন পর্যন্ত লড়াই চলবে জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার হতেই হবে। গণভোটের মাধ্যমে হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি শুক্রবার বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাইমুর রহমান সীমান্তের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় মৃত্যু হয় তার।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন বলে জানান তার সহপাঠীরা। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুমাইয়া ফারাহ খান বলেন, ‘আজ ভোর ৫টায় সীমান্ত শ্যামলীতে কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। সে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। আমরা যতটুকু জেনেছি গত দুই দিন আগে পেটে ব্যথা নিয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়।
‘গতকাল ওর একটা সাজার্রি করার কথা ছিল। ওর বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছে। মা এবং বোন আছে। বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওদের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। তবে ওকে দাফনের জন্য কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
সীমান্তের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যে ১২৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
এ তালিকায় চিহ্নিত অনেক হামলাকারীর নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী।
বহিষ্কৃত এসব শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১২৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই তালিকায় রয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান ও ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নসহ আরও অনেকে।
তালিকায় নাম নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবি জুবায়ের বলেন, ‘তানভীর হাসান সৈকত, ইউনুসসহ স্পষ্ট ফুটেজ থাকা অনেক সন্ত্রাসীর নামই লিস্টে নাই। কাদের ইশারায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, প্রশাসনকে তা স্পষ্ট জানাতে হবে। অপূর্ণাঙ্গ এই লিস্ট আমরা মানি না।’
সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা ১২৮ জনের লিস্ট কারা তৈরি করছে, এইটা আমরা জানতে চাই। চোখের সামনে আমাদের যারা জসীম উদ্দীন হলের মাঠে ফেলে আমাকে আর হামজা ভাইকে পিটিয়ে মাথা ফাটানো মেহেদী হাসান শান্তের নাম নাই। আমার বোনদের যারা ভিসি চত্বরে পেটাল, তাদের নাম আসে নাই।’
তিনি লিখেন, ‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হইলো একটা সিঙ্গেল নারীকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করে নাই। অথচ নির্যাতনের মাত্রা হিসাব করলে এরা পুরুষ ছাত্রলীগের থেকেও ভয়ংকর ছিল। নারী ছাত্রলীগার সন্ত্রাসীদের কারা শেল্টার দিচ্ছে?’
স্মৃতি আফরোজ সুমি লিখেন, ‘বহিষ্কৃতদের তালিকা করার তদন্তের দায়িত্ব কি কোনো লীগারকে দেওয়া হয়েছিলো? লিস্ট দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। না হলে স্পষ্ট ফুটেজ, প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রতি হল থেকে ১০ থেকে ১৫ জনের নাম বাদ পড়ে কীভাবে?’
সুমাইয়া ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সবচেয়ে অমানবিক কাজ ছিল ঢাকা মেডিক্যালে হামলা। সেই হামলায় বেশির ভাগ হামলাকারী ছিল জগন্নাথ হলের। অথচ জগন্নাথ হল থেকে মাত্র দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রিভু মন্ডল, রাজিব বিশ্বাসের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও বাদ পড়ে গেল!’
এদিকে এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন এবি জুবায়ের।
১২৮ জনের তালিকায় দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই ছিলেন না, এমন নামও এসেছে।
তাদের কীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এসবসহ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ১৬ মার্চ (রবিবার) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাবির জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেওয়াজ অনুযায়ী তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ‘একজন প্রাক্তন উপাচার্য ও অধ্যাপকের মৃত্যুতে পরিবারের সম্মতিক্রমে জানাজার সময় ও স্থান সম্পর্কে সকলকে অবহিত করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে মাইকিং, শোকবার্তা প্রকাশ, কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ মোনাজাতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত সকল প্রথা অনুসরণ করা হয়েছে।
‘উল্লেখ্য, পরিবারের সিদ্ধান্তক্রমেই অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা ও দাফনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবারের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অসুস্থ হয়ে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পরের দিন ৭ মার্চ শুক্রবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান হাসপাতালে তাকে দেখতে যান এবং তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
‘ইন্তেকালের পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এবং প্রশাসনের অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ মরহুমের জানাজা ও দাফন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন এবং দাফন প্রক্রিয়ায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য