সিলেটের গোলাপগঞ্জে একটি রেস্তোরাঁয় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে সাত কিশোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পুরো ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
গোলাপগঞ্জের চৌমুহনী এলাকার কাজি ফার্মস নামক রেস্তোরাঁয় গত ৩০ অক্টোবর সকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে সাত কিশোরীকে তাদের জিম্মায় তুলে দেয়া হয়।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবার।
অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যরাই মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন এবং কিশোরীদের নেকাব খুলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়, তবে কারা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায় হয়নি।
রেস্তোরাঁের ওই ভিডিওচিত্রটি নিউজবাংলার এসেছে।
সেখানে দেখা যায়, রেস্তোরাঁঁয় আলাদা কেবিনে বসে আড্ডা দিচ্ছেন সাত জোড়া কিশোর-কিশোরী। এরপর কিছু সংখ্যক লোক ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম এবং পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন।
এরপর দেখা যায়, একাধিক ব্যক্তি ওই কিশোর-কিশোরীকে নানা প্রশ্ন করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এবং একজন প্রমিত বাংলায় প্রশ্ন করছেন, তবে ভিডিওতে প্রশ্নকর্তাদের চেহারা দেখা যায়নি, কেবল কিশোর-কিশোরীদের দেখা গেছে।
ওই সময় একজন এক এক করে সব কিশোর-কিশোরীদের প্রশ্ন করছেন, ‘তোমার বাড়ি কই? বাবার নাম কী? কোন স্কুলে পড়ো?’
ওই সাত কিশোরীর মুখেই নেকাব ছিল। এ অবস্থায় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মুখ খোলো, পর্দা খোলো।’
কিশোরীরা পর্দা খুলতে প্রথমে অনীহা জানালে ওই ব্যক্তিকে আবার বলতে শোনা যায়, ‘এই খুলতে বলছি না? মুখ খোলো।’
নেকাব খোলার পর আরেকজন প্রশ্ন করেন, ‘এইখানে কেন আসছো? এইখানে আসছো কেন? এইটা কি স্কুল?’
কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ঘটনার দিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে রেস্তোরাঁে থাকা সাত কিশোরের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
অভিযানে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের দায়ে কাজি ফার্মসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ওই রেস্তোরাঁয় থাকা এক কিশোরীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে কোনো অপরাধ করে থাকলে তার শাস্তি হতে পারে। কিন্তু তার ভিডিও কেন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হলো।
স্থানীয়রা জানান, এই কাজি ফার্মস রেস্তোরাঁর একটি তলায় কেবিনের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আড্ডা দেয়। তাদের কারো কারো আচরণে রেস্তোরাঁয় যাওয়া অন্য গ্রাহকদের বিব্রত হতে হয় এমন অভিযোগ এনে স্থানীয় কয়েজন মেয়র, পুলিশ ও প্রশাসনকে জানান। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতেই মোবাইল কোর্ট অভিযান চালায়।
তবে অভিযানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া অনুচিত হয়েছে বলে জানান তারা।
অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেস্তোরাঁয় অভিযানে গিয়ে গোলাপাগঞ্জ থানার এসআই নুর মিয়া এবং ফেসবুক পেজ পরিচালনাকারী কয়েকজন ভিডিও ধারণ করেন। এ ছাড়া কিশোরীরে নেকাব খুলতেও বাধ্য করেন এসআই নুর মিয়া।
তবে এসআই নুর মিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার খবর পেয়ে আদালতকে সহায়তা করতেই ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম। আমি কোনো ভিডিও করিনি। এ ছাড়া ভিডিওতে যে কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে সেটাও আমার কণ্ঠ না।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পুলিশ কেন ভিডিও করবে? পুলিশ এতো বোকা না কি? সবারই তো মা-বোন আছে।’
অভিযানের সময় উপস্থিত সাংবাদিকরাই এই ভিডিও করেছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র ও পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমার উপস্থিতিতে কোনো ভিডিও হয়নি। ভিডিওর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওসিকে বলেছি এই ভিডিও কারা ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’
ছেলেদের কেন জরিমানা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা আপত্তিকর অবস্থায় ছিল। যদিও আমি তেমন কিছু দেখিনি, তবে পুলিশ, মেয়র ও স্থানীয়রা এমন অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরাও এটা স্বীকার করেছে। তাই তাদের জরিমানা করা হয়েছে।’
‘আপত্তিকর অবস্থা’ মানে কী, এমন প্রশ্নে অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আপত্তির মানে অসামাজিক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে অফিসে আসেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়রা আড্ডা দেবে, রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবে এতে আমাদের আপত্তি নেই। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ আসায়ই অভিযান চালিয়েছি।’
তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা অস্বীকার করে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, ‘আমি তাকে অভিযোগ করব কেন, তিনি আমার চাকরি করেন না কি?
রাবেল বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছ থেকে শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জরিমানা করা ও ভিডিও ধারণের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। কে ভিডিও করছে তাও দেখিনি।’
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালতকে সহযোগিতা করতে সেদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল, কিন্তু ভিডিও কারা করেছে তা জানি না। তাদের আমরা খুঁজছি, তবে কোনো পুলিশ সদস্যের আইডি থেকে এই ভিডিও ফেসবুকে দেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
ভ্রাম্যমান আদালতের ভিডিও এভাবে ছড়ানো অনুচিত হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘আমাদের আদালতের কার্যক্রমের ভিডিও কখনো প্রকাশ করা হয় না। যাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে তিনি আপিল করলে তো নির্দোষও প্রমাণিত হতে পারেন। তাই আদালতের কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র ধারণ ও প্রকাশ অনুচিত।’
তিনি বলেন, ‘অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে সাজা দেয়ার বিধান আমাদের আইনে রয়েছে। একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নারীর পরিচয় গোপন রাখার কথাও বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য