সিলেটের গোলাপগঞ্জে একটি রেস্তোরাঁয় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে সাত কিশোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পুরো ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
গোলাপগঞ্জের চৌমুহনী এলাকার কাজি ফার্মস নামক রেস্তোরাঁয় গত ৩০ অক্টোবর সকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে সাত কিশোরীকে তাদের জিম্মায় তুলে দেয়া হয়।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবার।
অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যরাই মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন এবং কিশোরীদের নেকাব খুলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়, তবে কারা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায় হয়নি।
রেস্তোরাঁের ওই ভিডিওচিত্রটি নিউজবাংলার এসেছে।
সেখানে দেখা যায়, রেস্তোরাঁঁয় আলাদা কেবিনে বসে আড্ডা দিচ্ছেন সাত জোড়া কিশোর-কিশোরী। এরপর কিছু সংখ্যক লোক ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম এবং পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন।
এরপর দেখা যায়, একাধিক ব্যক্তি ওই কিশোর-কিশোরীকে নানা প্রশ্ন করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এবং একজন প্রমিত বাংলায় প্রশ্ন করছেন, তবে ভিডিওতে প্রশ্নকর্তাদের চেহারা দেখা যায়নি, কেবল কিশোর-কিশোরীদের দেখা গেছে।
ওই সময় একজন এক এক করে সব কিশোর-কিশোরীদের প্রশ্ন করছেন, ‘তোমার বাড়ি কই? বাবার নাম কী? কোন স্কুলে পড়ো?’
ওই সাত কিশোরীর মুখেই নেকাব ছিল। এ অবস্থায় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মুখ খোলো, পর্দা খোলো।’
কিশোরীরা পর্দা খুলতে প্রথমে অনীহা জানালে ওই ব্যক্তিকে আবার বলতে শোনা যায়, ‘এই খুলতে বলছি না? মুখ খোলো।’
নেকাব খোলার পর আরেকজন প্রশ্ন করেন, ‘এইখানে কেন আসছো? এইখানে আসছো কেন? এইটা কি স্কুল?’
কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ঘটনার দিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে রেস্তোরাঁে থাকা সাত কিশোরের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
অভিযানে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের দায়ে কাজি ফার্মসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ওই রেস্তোরাঁয় থাকা এক কিশোরীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে কোনো অপরাধ করে থাকলে তার শাস্তি হতে পারে। কিন্তু তার ভিডিও কেন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হলো।
স্থানীয়রা জানান, এই কাজি ফার্মস রেস্তোরাঁর একটি তলায় কেবিনের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আড্ডা দেয়। তাদের কারো কারো আচরণে রেস্তোরাঁয় যাওয়া অন্য গ্রাহকদের বিব্রত হতে হয় এমন অভিযোগ এনে স্থানীয় কয়েজন মেয়র, পুলিশ ও প্রশাসনকে জানান। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতেই মোবাইল কোর্ট অভিযান চালায়।
তবে অভিযানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া অনুচিত হয়েছে বলে জানান তারা।
অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেস্তোরাঁয় অভিযানে গিয়ে গোলাপাগঞ্জ থানার এসআই নুর মিয়া এবং ফেসবুক পেজ পরিচালনাকারী কয়েকজন ভিডিও ধারণ করেন। এ ছাড়া কিশোরীরে নেকাব খুলতেও বাধ্য করেন এসআই নুর মিয়া।
তবে এসআই নুর মিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার খবর পেয়ে আদালতকে সহায়তা করতেই ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম। আমি কোনো ভিডিও করিনি। এ ছাড়া ভিডিওতে যে কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে সেটাও আমার কণ্ঠ না।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পুলিশ কেন ভিডিও করবে? পুলিশ এতো বোকা না কি? সবারই তো মা-বোন আছে।’
অভিযানের সময় উপস্থিত সাংবাদিকরাই এই ভিডিও করেছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র ও পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমার উপস্থিতিতে কোনো ভিডিও হয়নি। ভিডিওর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওসিকে বলেছি এই ভিডিও কারা ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’
ছেলেদের কেন জরিমানা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা আপত্তিকর অবস্থায় ছিল। যদিও আমি তেমন কিছু দেখিনি, তবে পুলিশ, মেয়র ও স্থানীয়রা এমন অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরাও এটা স্বীকার করেছে। তাই তাদের জরিমানা করা হয়েছে।’
‘আপত্তিকর অবস্থা’ মানে কী, এমন প্রশ্নে অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আপত্তির মানে অসামাজিক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে অফিসে আসেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়রা আড্ডা দেবে, রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবে এতে আমাদের আপত্তি নেই। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ আসায়ই অভিযান চালিয়েছি।’
তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা অস্বীকার করে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, ‘আমি তাকে অভিযোগ করব কেন, তিনি আমার চাকরি করেন না কি?
রাবেল বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছ থেকে শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জরিমানা করা ও ভিডিও ধারণের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। কে ভিডিও করছে তাও দেখিনি।’
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালতকে সহযোগিতা করতে সেদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল, কিন্তু ভিডিও কারা করেছে তা জানি না। তাদের আমরা খুঁজছি, তবে কোনো পুলিশ সদস্যের আইডি থেকে এই ভিডিও ফেসবুকে দেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
ভ্রাম্যমান আদালতের ভিডিও এভাবে ছড়ানো অনুচিত হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘আমাদের আদালতের কার্যক্রমের ভিডিও কখনো প্রকাশ করা হয় না। যাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে তিনি আপিল করলে তো নির্দোষও প্রমাণিত হতে পারেন। তাই আদালতের কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র ধারণ ও প্রকাশ অনুচিত।’
তিনি বলেন, ‘অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে সাজা দেয়ার বিধান আমাদের আইনে রয়েছে। একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নারীর পরিচয় গোপন রাখার কথাও বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় পূজার অঞ্জলি দিতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলো হরিণধরা গ্রামের সঞ্জয় তালুকদার ও বাসন্তী তালুকদার দম্পতির মেয়ে ঋতু তালুকদার (১৮) এবং বিপ্লব তালুকদার ও রুপা চন্দ্র তালুকদার দম্পতির ছেলে অমিত তালুকদার (৮)।
ঋতু কলমাকান্দা সরকারি কলেজের বিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে অমিত হরিণধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুজন সম্পর্কে ফুফু (পিসি) ভাতিজা হন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে হরিণধরা গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে পশ্চিমপাড়ায় একই পরিবারের ছয়জন মিলে দুর্গাপূজার অঞ্জলির উদ্দেশ্যে ছোট একটি নৌকায় করে বের হয়। পথে কালীবাড়ি খাল পার হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। ওই সময় চারজন সাঁতরে খালপাড়ে উঠলেও ঋতু তালুকদার ও অমিত তালুকদার উঠতে পারেনি।
পরে দুজনকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীম আরা নিপা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফুফু ভাতিজার মৃত্যুর সংবাদে ওই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৃতের স্বজন স্বপন তালুকদার জানান, ঋতু তালুকদার সাঁতার জানত, কিন্তু ভাইপো অমিত তালুকদারকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনই পানিতে তলিয়ে যায়। জীবিতদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে শুক্রবার এক পর্যটকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
শহরের হোটেল-মোটেল জোনের মরিয়ম রিসোর্ট নামের আবাসিক হোটেল থেকে দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফয়জুল আজীম।
নিথর অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অমিত বড়ুয়া (৩২) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা এলাকার রণজিত বড়ুয়ার ছেলে।
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বরাতে ওসি ফয়জুল আজীম জানান, গত ৮ অক্টোবর সকালে অমিত বড়ুয়া কক্সবাজার ঘুরতে আসেন। তিনি রিসোর্টটির ১০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন। শুক্রবার সকালে তার হোটেল কক্ষ ছাড়ার কথা ছিল।
তিনি আরও জানান, বেলা ১১টার দিকে অমিত বড়ুয়ার অবস্থান করা কক্ষটি ছাড়ার বিষয়ে হোটেলের এক কর্মচারী কথা বলতে যান। ওই সময় সেটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার ডাকার পরও সাড়াশব্দ না পাওয়ায় হোটেল কর্মচারীর সন্দেহ জাগে। পরে তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে বাহিনীর একটি দল কক্ষটির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে রশি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই সময় তার পকেটে চিরকুট পাওয়া যায়।
তিনি জানান, চিরকুটটি খুলে পড়া সম্ভব হয়নি। তাই কী কারণে যুবক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন এবং চিরকুটে কী লিখেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
ফয়জুল আজীম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তারপরও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।
পুলিশ আরও জানায়, মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিন্দুদের কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
খুলনার গল্লামারী হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দির ও বাগমারা গোবিন্দ মন্দির পরিদর্শন করে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসিফ বলেন, ‘ধর্মকে ব্যবহার করে অতীতে বিভিন্ন দল রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেখানে সকল ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবে।’
উপদেষ্টা চট্টগামের একটি পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা ও সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দিরে সোনার মুকুট চুরি যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রশাসন দোষীদের আটক করেছে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
গল্লামারী হরিচাঁদ মন্দিরে সাংবাদিকরা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম সংস্কার করে বিপিএলসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু আবু নাসের স্টেডিয়াম নয়, দেশের সকল স্টেডিয়াম খেলার উপযোগী করে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।’
আরও পড়ুন:চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার বিচার শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে শুক্রবার বিকেলে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এর আগে দেয়া বক্তব্যে আসিফ নজরুল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ও আমরা এই দেশে কেউ সংখ্যালঘু না। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক; সবার সমান অধিকার।
‘সবাই ধর্মের প্রতি সম্মান ও ভালবাসা নিয়ে থাকব ও শান্তিতে থাকবে। আমরা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াব। দূর্গাপূজা অনুষ্ঠান যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন দেব ও সকল প্রকার সহযোগিতা করব।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে সিরাজগঞ্জে আসা হয়েছিল। আবারও এসে ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে পাঁচ শতাধিক মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখনও কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই।
‘এখানে যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্বন্বয়করা রয়েছেন ও অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল মিলে পূজার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সাহায্য করছেন। সেনাবাহিনী,পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সবাই মিলে দিন ও রাত্রি পরিশ্রম করছেন। সবাই মিলে এক আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। এটা দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই, আগস্ট এই দেশে যে নৃশংস গণহত্যা হয়েছিল, এই বিচার আমরা অচিরেই শুরু করব। আমরা ন্যায়বিচার সম্পন্ন করতে ও নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমি আগেই বলেছি সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়ে যাবে।
‘আমাদের প্রসিকিউশন টিম গঠিত হয়েছে এক মাস হয়ে গেল। ইনভেস্টিগেশন টিম গঠিত হয়েছে দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। প্রচুর আলামত পেয়েছি। তখন আমাদের অনেক দ্বিধা, অনেক প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম নগরের একটি পূজামণ্ডপে ইসলামি ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ‘পেছনের উদ্দেশ্য’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দীন শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য দুটি গান পরিবেশন করেন।
সংগঠনটির সদস্যরা শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ গান দুটি পরিবেশন করে।
গান দুটির মধ্যে ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’ গানটির খণ্ডাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে সংগঠনটি মঞ্চে গান পরিবেশন করে। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে বৃহস্পতিবার রাতে সজল দত্তকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পুলিশ জানায়, মণ্ডপে গান গাওয়ার ঘটনায় শহীদুল ইসলাম ও নুরুল করিম নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজনই মাদ্রাসার শিক্ষক।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে।
রইছ উদ্দীন বলেন, ‘এই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটক দুজন হলেন তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক শহীদুল করিম ও দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক নুরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে নগরের পৃথক স্থান থেকে এই দুজনকে আটক করা হয়।
‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি সজল দত্তের আমন্ত্রণে তারা সেখানে সংগীত পরিবেশন করেছেন। সজলের অনুরোধে তারা ছয়জন মঞ্চে উঠে সংগীত পরিবেশন করেন।’
উপকমিশনার রইছ উদ্দীন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সজল দত্তের খোঁজ করছি। এখনও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা জানতে আমরা কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, এই সংগীত পরিবেশনের কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার বিষয়টি রয়েছে।’
রইছ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। যিনি গান গাইতে ডেকেছেন, পূজা কমিটির সেই নেতা সজল দত্তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের নৌবাহিনীর হাতে বাংলাদেশি এক জেলে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় শুক্রবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা।
সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের নৌবাহিনীর হাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের কোনাপাড়ার উসমান (৬০) নামের বাংলাদেশি জেলেকে হত্যার ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমার সরকারের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’
এতে বলা হয়, মিয়ানমারকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের জলসীমার অখণ্ডতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করতে এবং কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতিবাদে টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে মাছ ধরার সময় উসমানের মালিকানাধীন একটি নৌকাসহ ৫৮ বাংলাদেশি জেলে ও ছয়টি মাছ ধরার নৌকা অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও মিয়ানমার নৌবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার দুই দফায় নৌকাসহ জেলেদের ছেড়ে দেয়া হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা এ ধরনের অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে মাহফুজা আক্তার নিপা (২৬) ও মোহাম্মদ মইনুদ্দিন (৬৫) নামের দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
তাদের কাছ থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মইনুদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে। আর নিপার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার অলিপুরার নবিয়াবাদ গ্রামে। দুজনই ঢাকার ডেমরা এলাকায় থাকেন।
হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় বৃহস্পতিবার সকালে ব্লাড ব্যাংকের সামনে থেকে দুজনকে আটক করা হয়।
রোগীর স্বজন মোহাম্মদ নোমান হোসেন বলেন, ‘গত (বুধবার) রাত থেকেই অভিযুক্ত দুইজন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ঘোরাফেরা করছিলেন। আমার রোগীর রক্তের প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংকের সামনে গত রাত থেকে রক্তের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
‘এ সময় অভিযুক্ত নারী ও ওই ব্যক্তি কৌশলে আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জকে জানাই। পরে তারা এসে ওই নারীসহ ওই ব্যক্তিকে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ ও পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার ব্লাড ব্যাংকের সামনে থেকে অভিযুক্ত ওই নারীসহ ওই ব্যক্তিকে আটক করে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসি। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
‘এরা সক্রিয় চোর ও দালাল চক্রের সদস্য। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন এবং সন্দেহজনক কথাবার্তা বলে তারা। তারা একবার স্বীকার করে ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে মাত্র ১৩ হাজার ৫০০ টাকা আমরা উদ্ধার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাকি টাকা হয়তো এই চোর চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে তারা পাচার করে দিয়েছে। বিষয়টি শাহবাগ থানাকে অবগত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য