ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিশ্চুপ থেকে বিএনপি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে ফিলিস্তিনে পাখি শিকারের মতো করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, হাজার হাজার অসহায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, এ নিয়ে বিএনপি ও মির্জা ফখরুলের মুখে কোনো কথা নেই, আপনারা এদের চিনে রাখুন।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে রোববার সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জনসভায়’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমিও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আর বিএনপির মুখে কোনো কথা নাই। একটা বৃহত্তর গোষ্ঠি অখুশি হতে পারে সে কারণে বিএনপি এই নিয়ে কোনো কথা বলে না। অর্থাৎ তাদের অবস্থান ইসরায়েলের পক্ষে।’
ফিলিস্তিন ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘হামাসের ওপর কিংবা ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর হামলা নিয়ে কথা বলার সময় নাই, আমরা দেশে অনেক সমস্যায় আছি’ – এ বক্তব্যটি উল্লেখ করে তাদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তার মানেটা কী?’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বলেছিল অক্টোবর মাসে নাকি ফাইনাল খেলা। তারা বলেছিল খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। সেটিও হয় নাই। অর্থাৎ তারা সেমিফাইনালেই হেরে গেছে। তাদের সাথে তো আর ফাইনাল খেলা হয় না। তারা যদি চায়, যুবলীগের সাথে খেলতে পারে। আওয়ামী লীগ তাদের সাথে খেলবে না।’
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে জন্য সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে দুই থেকে তিন হাজার উপকারভোগী সরকারের নানা ধরনের ভাতা পাচ্ছে। আগেও খালেদা জিয়া, এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের সরকার ছিল, কিন্তু এসব ছিলনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান তখন থেকে এসব ভাতা চালু হয়েছে।
তিনি সর্তক করে বলেন, ‘২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া এসে ভাতা সংকুচিত করেছিলেন, তাই আবারও যদি সেই বিএনপি ক্ষমতায় আসে, এ ধরনের ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে।’
শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেনের সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন খোকনের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হুদা, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সেকান্দর আলম বাবরসহ আরও অনেকে।
শেখ হাসিনা বাকশালকে নতুন আঙ্গিকে করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে প্রধান বিচারপতিকে তরবারি উপহার দিচ্ছেন গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক প্রধান। ছাত্রলীগের ছেলেরা গিয়ে ফুল দিচ্ছে প্রধান বিচারপতিকে। এ ধরনের ঘটনার নজির কি পৃথিবীর আর কোথাও আছে?
‘এটাই হচ্ছে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার। কর্তৃত্ববাদী সরকার তার কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে আইন, বিচার ও প্রশাসনসহ সবকিছুকে একাকার করেছিল। শেখ হাসিনা ঠিক বাকশালকে নতুন আঙ্গিকে করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকালে বিচার বিভাগের বিচারকরা অনেকেই রাজনীতিবিদের মতো কথা বলেছেন। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কথা শুনে মনে হতো, তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।’
রিজভী বলেন, ‘একদিকে স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে অন্যদিকে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করতে হবে। এই দু’টিকে সামনে রেখেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিদিন সীমান্তে হত্যা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত সরকার তার একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারেনি।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল হক, কর্নেল (অব.) তৌহিদ পাঠান, কর্নেল (অব.) আব্দুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুল রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ডাকবাংলা মোড়ে অবস্থিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে ডাকবাংলা মোড়ে আসে। তারা ডাকবাংলা মোড় পার হয়ে জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল ও ফ্যাসিস্টের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর করে এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায় বলে আমরা খবর পেয়েছি। এগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'
খুলনা জেলা জাপার সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজের সময় পার্টি অফিসে কেউ ছিল না। তখন ৫০-৬০ জনের একদল ছাত্র-যুবক তাদের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর তারা পার্টি কার্যালয়ে ঢুকে সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান ও টিভি ভাঙচুর করে। তারা কয়েকটি ফাইল ও কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া তারা কয়েকটি চেয়ার, ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে পার্টি অফিসের সামনের রাস্তায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা করে। তারা অফিসকে কেন্দ্র করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্লাস্টিকের দুটি চেয়ার বাইরে বের করে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা এখনও জানা যায়নি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা? জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
বিভিন্ন মহলে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠা নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে শনিবার প্রয়াত কূটনীতিকের পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদ স্মরণে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মির্জা ফখরুল।
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে, বিএনপি এই দাবির সঙ্গে একমত কী না এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আমার কথা বহু আগেই স্পষ্ট করেছি, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করবার আমরা কারা? জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণের মতামত প্রতিফলনের বিষয় আছে, সেটা পরে হবে।
‘এটা তো আরেকটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টির জন্য এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। যেটা কোনো ইস্যু না, সেটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটাতে সবার সচেতন হওয়া দরকার।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর কাকরাইলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবারের সমাবেশ স্থগিত করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
জাপাপ্রধানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালীর সই করা এক বিবৃতিতে শুক্রবার রাতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে জাপা জানায়, পরবর্তী সময়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ শনিবার কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করায় জাতীয় পার্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এর আগে শুক্রবার সকালে জাপা চেয়াম্যান জানান, হামলার পরও শনিবার পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে।
এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করে ডিএমপি।
ঢাকার কাকরাইলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেলমেট পরা ও লাঠিসোঁটা হাতে একদল ব্যক্তি ফটক দিয়ে জাপা কার্যালয়ে প্রবেশ করে। স্লোগান দিতে দিতে তারা ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং ভবনের সামনের অংশ ও ভেতরের কয়েকটি কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় শনিবার সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শুক্রবার ডিএমপি কমিশনার ময়নুল হাসানের সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারা অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’ ব্যানারে মশাল মিছিল বের হয়। জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলটির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগর এলাকায় মিছিল নিয়ে যায় ছাত্র-জনতা। এ সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা করেন। কার্যালয় থেকে মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন মিছিলকারী আহত হন।
পরে মিছিলকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাংচুর করে। এ সময় কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আগামীকাল শনিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টি সমাবেশ করবে।’
জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ১৯৯০ সাল থেকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘মনে করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এটা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র থামেনি, এখনও চলছে।’
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জরুরিভিত্তিতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, ‘জীবন গেলেও অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদ করে যাবো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আগামীকাল শনিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টি সমাবেশ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর অপবাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বিগত সরকারের কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
‘দেশে আমরা কী রাজনীতি শুরু করেছি! আমি রাজনীতি করবো আমার দল নিয়ে। আমার দল বিবেচনা করবে কার সঙ্গে যাবো আর কার সঙ্গে যাবো না, নির্বাচন করবো নাকি করবো না।’
কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি জাতীয় পর্যায়ের একটি রাজনৈতিক দল। বার বার আমাদের কবরস্থ করার পরও আমরা কবর থেকে উঠে এসেছি। কেউ আমাদের ধ্বংস করতে পারেনি। আমরা সহাবস্থানের রাজনীতি করি, আমরা দখলদারি করিনি, সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না, হাট-মাঠ-ঘাট দখল করিনি, মানুষকে অত্যাচার-দলীয়করণ করিনি।
‘আমরা মানুষকে সুশাসন দিয়েছি, উন্নয়ন দিয়েছি, সংস্কার দিয়েছি, গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছি। মানুষ তা স্মরণ করে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি, ২০১৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। এরশাদ সাহেবকে জোর করে সিএমএইচে ভর্তি করে, দলের ভেতরে বিভক্তি সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র একটি অংশকে নির্বাচনে নেয়া হয়েছে।
‘বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও তারা একই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছে। এটাতে কি সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়নি? ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনও আমরা করতে চাইনি। কিন্তু নির্বাচনে যেতে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। এ ঘটনা অনেকে দেখেছেন এবং জানেন।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’ ব্যানারে মশাল মিছিল বের হয়। জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলটির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগর এলাকায় মিছিল নিয়ে যায় ছাত্র-জনতা। এ সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা করেন। কার্যালয় থেকে মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন মিছিলকারী আহত হন।
পরে মিছিলকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাংচুর করে। এ সময় কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দফার আক্রমণ দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করলেও দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে দলটির কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে একদল লোক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর শাহবাগ থেকে মশাল হাতে একদল লোক এসে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে। তবে শনিবারের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে আজ দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিলো। তাদের প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
‘আধ ঘণ্টা পর সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে তারা কার্যালয়ে আগুন দেয়। খবর পেয়ে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস এসেছিল। কিন্তু তাদেরকে আগুন নেভাতে দেয়া হয়নি।’
প্রসঙ্গত, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। সেই মিছিলটি শাহবাগ হয়ে বিজয়নগরে যায়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেঈমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেঈমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’
এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে ৮টায় মিছিল নিয়ে তারা বিজয়নগরে যাবেন। ‘জাতীয় বেঈমানদের’ নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একই রকম একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাচ্ছি।’
রাত সোয়া ৮টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আগুন নিভিয়ে ফেলে বলে জানান দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ব্যক্তিগত সহকারী আবু তৈয়ব। তিনি জানান, দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
মন্তব্য