২০১৫ সালের ৭ মে সকাল সাড়ে ১০টা। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া দুই ভাই হৃদয় ও রিয়াদ তখন ক্লাসে। হঠাৎ খবর আসে- বাসায় একটা সমস্যা হয়েছে, দ্রুত যেতে হবে। শিশু দুটি তখনও কিছু আঁচ করতে পারেনি। দ্রুত এক কিলোমিটার দূরে সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসার উদ্দেশে ছোটে দুই ভাই।
বাসার নিচে পৌঁছেই ওরা দেখতে পায় মানুষের ভিড়। স্থানীয় লোকজন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জটলা। বাসায় প্রবেশ করে দেখে স্বজনরা আহাজারি করছেন। আর ড্রয়িংরুমের মেঝেতে পড়ে আছে মায়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ।
বাথরুমে পড়ে আছে ফাল্গুনীর নিথর দেহ। আদরের একমাত্র ছোট বোনটিরও গলাকাটা। দু’জনের রক্তে ভেসে গেছে ড্রয়িংরুম ও বাথরুমের মেঝে।
ঘণ্টা দুয়েক আগেও হৃদয় ও রিয়াদকে ঘুম থেকে ডেকে হালুয়া-পরোটা খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন মা। ছোট বোন ফাল্গুনী ছিল ঘুমে।
ঘটনার আকষ্মিকতায় সেদিন মুষড়ে পড়েছিল দুই শিশু। মা ও বোনকে হারানোর শোকে কাঁদতেও ভুলে যায় ওরা। ধপ করে বসে পড়ে পাশের খাটে। সে সময় ওদের সঙ্গে ছিলেন দূর সম্পর্কীয় চাচা মো. বেলাল হোসেন। এই বেলাল সেদিন চারতলার ওই ফ্ল্যাটে পাশে বসে স্বজনহারা শিশু দুটিকে সান্ত্বনার বাণী শোনান।
বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দীর্ঘ ৯ বছর পর ওই মা-মেয়ে হত্যার মামলার রায় হয়েছে বৃহস্পতিবার। রায়ে ঘটনার দিন হৃদয়-রিয়াদের সঙ্গে খাটে বসে থাকা বেলালের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
আদালতের রায়ের খবরটিও সেদিনের মতোই ক্লাসে বসে জানতে পারেন রিয়াদ হোসেন। তবে সেদিনের মতো স্কুলের বেঞ্চিতে বসে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে।
সময় পরিক্রমায় রিয়াদ এখন বড় হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগে লেখাপড়া করেন তিনি। আর তার বড় ভাই হৃদয় হোসেন এলাকায় ব্যবসা করেন।
রিয়াদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রায় শুনে খুব খুশি হয়েছি। এখন আমাদের চাওয়া- রায়টা দ্রুত কার্যকর করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘এখন একটু বড় হয়েছি। অনেক কিছুই আজ বুঝতে পারি। তখন (ঘটনার সময়) ছোট ছিলাম, কিছুই বুঝতাম না। আম্মু থাকলে জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আব্বু সবকিছু পূরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মা তো মা-ই; মায়ের অভাব কখনোই অন্য কিছুতে পূরণ হয় না।’
আসামি বেলালের উল্লেখ করে রিয়াদ বলেন, ‘আমার মা-বোনকে খুন করে লোকটা স্বাভাবিক মানুষের মতো আমাদের সঙ্গেই বসে ছিল। কত বড় অমানুষ হলে কেউ এমন আচরণ করতে পারে! তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, এটাই চাওয়ার ছিল।’
যা ঘটেছিল সেদিন
সদরঘাটে দক্ষিণ নালাপাড়ায় মোবাশ্বের মিয়ার বাড়ির চতুর্থ তলার ওই বাসা থেকে ছাগলের মাংস ব্যবসায়ী শাহ আলমের স্ত্রী নাছিমা বেগম ও তার ১০ বছর বয়সী কন্যা রিয়া আক্তার ফাল্গুনীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সদরঘাট থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন নাছিমার স্বামী শাহ আলম। মামলায় হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি নগদ ১ লাখ ১১ হাজার টাকা ও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুটের কথা উল্লেখ করা হয়। সেই মামলার তদন্তে নেমে হিমশিম খান সদরঘাট থানার তৎকালীন পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছিলো না।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান তৎকালীন নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক সৈয়দ আব্দুর রউফ৷ তদন্তে নেমে প্রতিবেশী ও সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি শাহ আলমের সঙ্গেও নতুন করে কথা বলেন তিনি।
এই পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন যে নগদ টাকা আর স্বর্ণালংকার ছাড়াও সেদিন দুটি মোবাইল ফোন ওই বাসা থেকে লুট হয়। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে মূল আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের পর একই বছরের নভেম্বরে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মো. বেলাল হোসেন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার বেলাল নিহত নাছিমা ও ফাল্গুনীকে হত্যা করে লুট করা স্বর্ণালঙ্কার নগরীর কালামিয়া বাজারে মৌমিতা জুয়েলার্সে বিক্রির কথা জানান।
পরবর্তীতে বেলালের দেখানো মতে মৌমিতা জুয়েলার্সের কর্মচারী টিটু সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কেনার পর ওই স্বর্ণালংকার গলিয়ে নতুন স্বর্ণালংকার তৈরির কথা জানান। তাছাড়া লুট করা দুটি মোবাইল সেটের একটি নিজের কাছে রেখেছিলেন বেলাল। অন্যটি উপহার দিয়েছিলেন বান্ধবীকে।
মো. বেলাল হোসেন সম্পর্কে শাহ আলমের খালাতো ভাই৷ ঘটনার তিনদিন আগে নিজের মাংসের দোকানের টিউবওয়েল মেরামতের জন্য বেলালকে ডেকে বাসায় নেন শাহ আলম। পরদিন টিউবওয়েল মেরামতের সময় দুপুরের খাবারের জন্য শাহ আলমের সঙ্গে বাসায় যান বেলাল। সেখানে আলমারি থেকে টাকা নিয়ে নাছিমা তার স্বামী শাহ আলমকে দেয়ার সময় বিষয়টি খেয়াল করেন বেলাল। পরবর্তীতে ওই টাকা লুটের পরিকল্পনা করে তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ফাঁকে শাহ আলমের মাংসের দোকান থেকে একটি ধারালো ছুরি নিয়ে পাশ্ববর্তী ডাস্টবিনে রাখেন বেলাল।
৭ মে সকালে শাহ আলমকে দোকানে দেখে ডাস্টবিন থেকে ছুরিটি শরীরের পেছনে লুকিয়ে বাসার সামনে যান বেলাল। সেখানে দাঁড়িয়ে শাহ আলমের ১৪ ও ১২ বছর বয়সী দুই ছেলে হৃদয় হোসেন ও রিয়াদ হোসেন স্কুলের উদ্দেশে বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি।
হৃদয় ও রিয়াদ বেরিয়ে যাওয়ার পর বাসায় প্রবেশ করে নাছিমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন বেলাল। এসময় ফাল্গুনী এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। পরে ওই বাসায় হাত-মুখ ধুয়ে আলমারি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান।
হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর স্বজনদের সঙ্গে শাহ আলমের বাসায় এসে নিহতদের মরদেহ ভবন থেকে নিচে নামানোসহ বিভিন্ন কাজে অংশ নেন বেলাল।
বেলালের মৃত্যুদণ্ড ও টিটুর ৩ বছরের জেল
নাছিমা ও তার মেয়ে ফাল্গুনীকে গলাকেটে হত্যার ওই মামলায় বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বেগম সীরাজম মুনিরা। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ সাগর রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি দীর্ঘতম বড়ুয়া দীঘু বলেন, ‘মর্মান্তিক ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ে মো. বেলাল হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাছাড়া লুট করা মালামাল কেনায় স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী টিটু সাহাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। দণ্ডের অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাসের জেল দেয়া হয়েছে।’
রায়ের আদেশ নিয়ে স্ত্রী-কন্যার কবরের পাশে যাবেন শাহ আলম
নিহত নাছিমার স্বামী শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী-কন্যা বলে বলছি না, ঘটনার মর্মান্তিকতা সেদিন উপস্থিত সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। পুরো এলাকার মানুষ কেঁদেছে। আবার আজ (বৃহস্পতিবার) রায় শুনে এলাকার গাছপাতা পর্যন্ত খুশি।’
তিনি জানান, নিহত স্ত্রী-কন্যাকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে সমাহিত করা হয়। আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার রায়ের কপি ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে দুই ছেলেসহ মুরাদনগরের পূর্ব ধইর এলাকায় নিজেদের পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রী ও কন্যার কবর জিয়ারতে যাবেন তিনি।
আরও পড়ুন:দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি তাকে গ্রেফতার করেছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। আজ বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ২০১৬ সাল থেকে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৩ সালে তিনি বৃহত্তর ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ১ বার ও ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
২০২০ সালের ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা গেলে শূন্য আসনে একই বছরের ১৭ অক্টোবর উপ-নির্বাচন তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মন্তব্য