নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বদ্ধপরিকর এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে।
বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে কমিশনের বৈঠক শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। খবর বাসসের
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমশের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে ও দলের নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদাসহ নেতারা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সচিব বলেন, তৃণমূল বিএনপি বাংলাদেশের নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। ওই দলের চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে ১২টি সুপারিশ তুলে ধরেছেন। সুপারিশগুলো তারা পরবর্তী সময়ে লিখিত আকারে আমাদের জানাবেন।
তিনি জানান, ১২টি প্রস্তাবের মধ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের আইনগত যেসব দিক রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রে ফলাফল প্রকাশ, ভোটকেন্দ্র থেকে রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষরিত ফলাফল প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের কাছে হস্তান্তর। এসব বিষয় আলোচনায় এনেছেন তারা।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন এবং সংবিধানের আলোকে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কমিশন সে ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করবে এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে মর্মে কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে। কমিশনকে সংবিধানে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, সেটার শতভাগ প্রয়োগ করে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।
সচিব বলেন, উনারা যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন সে প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু রয়েছে কমিশনের এখতিয়ারে, আবার কিছু রয়েছে সরকারের এখতিয়ারে। সুতরাং যাদের সঙ্গে যেটার সম্পর্ক রয়েছে তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন বসবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা চাইবেন। তার আলোকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সব কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও একটি আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ৪ মিলিয়ন ইউরোর একটি সহায়তা প্যাকেজ দেবে বলে ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি একটি সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করবে, যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে।’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ছয় সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
মাইকেল মিলার বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
‘আমরা ২০২৬ সালের শুরুর একটি সময়সীমার দিকে এগোচ্ছি,’ তিনি যোগ করেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন আলোচনার বিষয় হলো আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসে নির্বাচনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে যে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে নেওয়া প্রয়োজন।
‘এবং এ কারণেই আমরা এখন আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছি। কারণ আমরা চাই আপনাদের নির্বাচনগুলো অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হোক, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হোক এবং অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হোক,’ তিনি বলেন।
মিলার আরও বলেন, তিনি শুধু ইইউ প্রতিনিধি দলের সহকর্মীদের সঙ্গেই আসেননি, বরং ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এসেছেন। তারা বাস্তবায়নকারী অংশীদার ও নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ, যারা আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণে জোরালো মনোযোগ নিশ্চিত করতে এখানে থাকবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া হবে—যার মধ্যে অপারেশনাল পরিকল্পনা ও বিরোধ নিষ্পত্তির মতো ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের কাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ‘এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব,’ তিনি উল্লেখ করেন।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মাইকেল মিলার বলেন, আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে এ বিষয়টি বিবেচনা করতে যে এখানে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর মতো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমরা সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করছি। তবে আমি আপনাদের যা বলতে পারি তা হলো রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে একটি অগ্রাধিকার, বিশেষ করে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েনের ক্ষেত্রে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি মনে করেন বেশ কিছু বিষয় সমাধান করা প্রয়োজন, কারণ বাংলাদেশ এখন একটি গভীর রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অবশ্যই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা রাখে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই নির্বাচনগুলো পরিচালনা ও ফলাফলের দিক থেকে অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (১) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৭নং বিধির আলোকে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী তাদের সম্পদ ও দায়-দেনার হিসাব বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
যে ১৭ কর্মকর্তার হিসাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন- কর কমিশনার (কর অঞ্চল-৩) এম এম ফজলুল হক, কর আপিল ট্রাইব্যুনালের কমিশনার লোকমান আহমেদ, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাহেলা সিদ্দিক, অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারিক রিকাবদার, যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা সাহরিন সুস্মিতা, কর একাডেমির যুগ্ম-কর কমিশনার মো. মোরশেদ উদ্দিন খান, কর অঞ্চল ৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, কর অঞ্চল ১৬-এর উপকর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, রেলওয়ে কাস্টমসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট পূর্বাঞ্চলের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু, এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার মো. তারিক হাছান, এনবিআরের সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, এনবিআরের সদস্য মো. লুৎফুল আজিম ও সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম।
এর আগে গত জুলাই মাসে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল দুদক। ওই সময়ে দুদকে জমাকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিছু অসাধু কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘এখন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে সেনারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। আগে এত দীর্ঘসময় মাঠে থাকতে হয়নি। তাই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব থাকলে তা দূর করতে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান। এতে পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সব সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সেনাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারত্ব দেখাতে হবে। প্রতিশোধমূলক কোনো কাজে জড়ানো যাবে না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইস্যুতে নানা কটূক্তির জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এসব মন্তব্যে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তাদের বয়স কম। তারা আমাদের সন্তানের বয়সি। তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বোঝতে পারবে। তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।’
নাম উল্লেখ না করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘একজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না। আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে। নৈতিক স্খলনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মিডিয়া ট্রায়ালের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া হবে না, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘একজন সেনা কর্মকর্তাকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আগেভাগেই খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মনোনয়ন নেওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার। এ ঘটনায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
গত সোমবার মধ্যরাতে দেওয়া পোস্টে মাহিন লিখেছেন, ‘আমি তাদের একজন যার হাতে অভ্যুত্থানের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত হয়েছিল। অন্তত আমার কথাগুলো বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘মাহিন সরকারের তার অনাগত সন্তানের কাছে বলার মতো গল্প আছে। মাহিন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তার রক্ত দিয়ে রাঙিয়েছে। গান পয়েন্টে ৬ জন সমন্বয়কের কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর মাহিন সরকার বলেছিল ‘মানি না’। মাহিন সরকারসহ চারজন সমন্বয়কই বাকি সমন্বয়কদের বৈধতা দিয়েছে। মাহিন সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায়বিচারে মাঠে নেমেছিল, কেউ আসেননি পাশে। আজকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কার করে দিলেন।’
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুতর আর্থিক অনিয়ম কিংবা চারিত্রিক সংখলনের মতো অভিযোগ থাকে, তার পরও সংগঠনগুলো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি সে সুযোগও পাইনি, এটা সামগ্রিকভাবে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে গেল।’
সবশেষে মাহিন বলেন, ‘আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি বিজয় আসমান থেকেই আসে, জমিনে তার প্রতিফলন হয় মাত্র।
গত সোমবার দিবাগত রাতে ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এনসিপি। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাতের পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকারকে নিজের পদ ও দায়িত্ব থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নির্দেশক্রমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো। এই বহিষ্কারাদেশ আজ (সোমবার) থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন মাহিন সরকার।
ভারতের অর্থনীতির বড় একটা অংশ ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত মোট ৫০ শতাংশ ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হচ্ছে। যেসব ব্যবসা এত দিন টিকে ছিল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় সেগুলো দ্রুতই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের ভাদোহি এলাকার কার্পেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক ইশতিয়াক আহমদ খান বলছিলেন, ‘২৫ শতাংশ শুল্কে আমরা হতবাক হয়েছিলাম। কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করব, সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। কিন্তু সেই ২৫ শতাংশই হয়ে গেল এখন ৫০ শতাংশ। এটি অনেকটা অসম্ভব হয়ে গেল। আমরা ভয় পাচ্ছি, অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাবে।’
ভারতে কার্পেট একটি বড় ব্যবসা। মোট উৎপাদনের ৯৮ শতাংশই বিদেশে রপ্তানি হয়। হাতে তৈরি কার্পেটই এই বাণিজ্যের বড় অংশ। আর পারস্য ধাঁচের হাতে বোনা গালিচা সবচেয়ে দামি। বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৬০ শতাংশ কার্পেটই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। মার্কিন আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে আগে ৫০০ ডলার দামের গালিচায় ১২৫ ডলার শুল্ক যোগ হতো। এখন সেটা দ্বিগুণ ২৫০ ডলারও হতে পারে।
ভাদোহি উত্তর ভারতের কার্পেট তৈরির মূল কেন্দ্র। এখানে ইশতিয়াকের মালিকানাধীন আজাজ কার্পেটসের মতো শত শত, এমনকি হাজারও কার্পেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান সামান্য লাভ করে টিকে আছে। তাই তাদের পক্ষে মার্কিন ক্রেতাদের ওপর পড়া এত বড় শুল্কের চাপ নিজেদের কাঁধে নেওয়া সম্ভব নয়। এই শিল্পের রপ্তানি উন্নয়ন পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়া ইশতিয়াকের হিসাব, অঞ্চলের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্য অবস্থায় পড়ে যেতে পারেন।
মার্কিন শুল্কের কারণে আরও যেসব খাত বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়তে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বস্ত্র ও পোশাক, মাছ বিশেষ করে চিংড়ি এবং আসবাব। এগুলো ভারতের সবচেয়ে দামি খাত না হলেও এসব খাতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করে। সংকটের সময়ে এগুলোর উপার্জিত শত শত কোটি ডলার ভারতের আর্থিক অবস্থাকে শক্ত রেখেছে।
ভারতে কার্পেট একটি বড় ব্যবসা। মোট উৎপাদনের ৯৮ শতাংশই বিদেশে রপ্তানি হয়। হাতে তৈরি কার্পেটই এই বাণিজ্যের বড় অংশ। আর পারস্য ধাঁচের হাতে বোনা গালিচা সবচেয়ে দামি। বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৬০ শতাংশ কার্পেটই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে।
পণ্য বাণিজ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গত বছর মোট বাণিজ্য ছিল ১২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। তবে এসব পণ্যের মধ্যে কার্পেট যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়, এমনও নয়। তবে এখন প্রশ্ন আরও অনেক বড়। দুই দেশের কৌশলগত বাণিজ্য সম্পর্ক অনেকটা ঝুলে আছে।
উদাহরণ হিসেবে ওষুধশিল্পের কথা বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত জেনেরিক ওষুধের প্রধান উৎপাদক ভারত। আর এই শিল্পের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই খাতে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কে ‘বিশেষ ছাড়’ থাকায় একটা অনিশ্চিত অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ মুহূর্তে ভারতীয় ওষুধ আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো শুল্ক নেই। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিগগিরই ১৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। পরে হয়তো সেটা ২৫০ শতাংশও হতে পারে। তাঁর মতে, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করবে।
সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ছাড় থাকায় বোঝা মুশকিল হচ্ছে, ভারতের দ্রুত বিকাশমান ইলেকট্রনিকস উৎপাদন টিকতে পারবে কি না। এ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, অ্যাপলের আইফোনের উৎপাদন চীন থেকে ভারতে সরিয়ে আনা। এই খাত এখনো শুল্কের বাইরে আছে। কিন্তু আইফোন এখন কি ভারতে টিকে থাকতে পারবে কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
তেল-গ্যাসও জটিল, কারণ জ্বালানি পণ্য এখনো শুল্কমুক্ত। ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনাকাটার কারণে জরিমানা হিসেবে ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের যুক্তি দেখাচ্ছেন ট্রাম্প। এই হুমকি দেওয়ার আগপর্যন্ত, ভারতের মার্কিন পণ্য কেনার সুযোগ বৃদ্ধির দরজা খোলা ছিল।
এ মুহূর্তে ভারতীয় ওষুধ আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো শুল্ক নেই। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিগগিরই ১৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। পরে হয়তো সেটা ২৫০ শতাংশও হতে পারে। তার মতে, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ভারতের আরেক বড় খাত রত্ন ও গয়নাশিল্পে কতটা ক্ষতি ডেকে আনবে, তা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে ভেতরকার লোকজন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের রত্নের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
৭ আগস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারতের পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন, তখন রত্ন ও গয়নাশিল্পের মূল সমিতির চেয়ারম্যান কিরীট বানসালি লিখেছিলেন, ভারতের বৈশ্বিক রত্ন-বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বানসালি লিখেছেন, ‘এত বড় পরিসরে একযোগে শুল্ক আরোপ এই শিল্প খাতের জন্য ধ্বংসাত্মক।’ এই খাতে প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ক ও থাইল্যান্ডের শিল্প অনেক ছোট হলেও এসব দেশ ভারতের বিরুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুবিধা পাবে। কারণ, ভারতের তুলনায় তাদের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক কম।’
বানসালির মতে, ভারতের রত্ন ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে সরকারের সহায়তা লাগবে এবং ভারতের ব্যাংকগুলোকেও এগিয়ে আসা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ঝুঁকিতে পড়া ব্যবসাকে বাঁচাতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা থাকলেও তা চোখে পড়ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোকে বলেছে, নিজেদের কোম্পানির খেয়াল নিজেরাই রাখুক।
নয়াদিল্লির চিন্তন প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’-এর অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, বিদেশে রপ্তানি বাণিজ্যে রাজ্য সরকারগুলো সব সময়ই কেন্দ্রের নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করে থাকে। তার মতে, একইভাবে ভারতের ব্যাংকগুলো ঋণ মওকুফে না–ও রাজি হতে পারে।
এত বড় পরিসরে একযোগে শুল্ক আরোপ এই শিল্প খাতের জন্য ধ্বংসাত্মক। এই খাতে প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ক ও থাইল্যান্ডের শিল্প অনেক ছোট হলেও এসব দেশ ভারতের বিরুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুবিধা পাবে। কারণ, ভারতের তুলনায় তাদের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক কম
—কিরীট বানসালি, ভারতের গয়না রপ্তানিকারক
গত শুক্রবার সকালে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ শতকের লালকেল্লা থেকে ভাষণ দেন। তিনি দীর্ঘ ১০৩ মিনিট কথা বলেন। ভাষণে তিনি পাকিস্তানের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ থেকে শুরু করে মহাকাশ কর্মসূচির সাফল্য, খেলাধুলা ও স্থূলতা কমানোর মতো নানা সাফল্যের কথা বলেন।
কিছুদিন আগেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজনৈতিক বন্ধু মনে করতেন নরেন্দ্র মোদি। ওই দিনের ভাষণে তাঁর নামোল্লেখ না করে শুল্ক প্রসঙ্গেই বার্তা দিয়েছেন মোদি। বলেছেন, সামনে কঠিন সময়। ভারতের ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’ প্রয়োজন। মোদির ভাষায়, ‘তাতে কোনো স্বার্থান্ধ শক্তি আমাদের কখনো ফাঁদে ফেলতে পারবে না।’
ভাষণে মোদি আত্মনির্ভরতার পক্ষে অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি দেশ যত বেশি অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়, তার স্বাধীনতা তত বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ে।’
ভারতের ১৪০ কোটি মানুষকে সাহস জোগাতে মোদির এই চেষ্টা থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে ‘আক্রমণ’ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে। ভাষণে মোদি যে কয়েকটি নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন, তার একটি হচ্ছে তরুণদের জন্য বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যারা ভারতকে সমৃদ্ধির সোপানে উঠতে ‘মুক্ত বাণিজ্যই শ্রেষ্ঠ পথ’ বলে যুক্তি দিয়ে এসেছেন, সেসব প্রযুক্তিবিদ ও অর্থনীতিবিদের কানে নরেন্দ্র মোদির এই ‘উজ্জীবনী’ স্লোগান এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার মতোই শুনিয়েছে।
কার্পেট রপ্তানিকারক ইশতিয়াক বলছিলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কতটা কল্যাণ বয়ে এনেছে, সেটা তাদের ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্রতম অঞ্চলটির দিকে তাকালে ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়।
ইশতিয়াকের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘আজাজ কার্পেটস’-এর প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিক আজও বছরের বড় সময় গম, ধান ও সবজি ফলান। দেশের ৮০ কোটির বেশি মানুষের মতো তারাও সরকারের বিনা মূল্যের পাঁচ কেজির খাদ্যশস্যের রেশনে নির্ভর করেন। কিন্তু সুতা কাটা, রং করা, নকশা করা, বোনা ও কার্পেট ফিনিশিং—এ ধরনের টুকরো কাজ করে বেশির ভাগ পরিবারের মাসে বাড়তি প্রায় ১৭০ ডলার আয় হয়।
এই বাড়তি আয়ই পার্থক্য গড়ে দেয়। শুধু সরকারি রেশনে টিকে থাকার মধ্যে এটিই পার্থক্য করে দেয়। সন্তানের পড়াশোনা, ভোগ্যপণ্য কেনার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে তারা অবদান রাখছেন।
ইশতিয়াক বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মানুষ, শ্রমিক ও তাঁতিদের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হবে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমাধান না হলে, তাদের জন্য কোনো সমাধান থাকবে না।’
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষ নয় বিএনপি এমনটা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়, এতে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আছে তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন। যারা সংস্কার চাচ্ছে না, সেটা তাদের দলের ব্যাপার।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এর আগে গত বুধবার সকালে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীসহ চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে সুস্থ আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রতিরোধ, প্রতিহিংসা ও কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত রাজনীতির ধারার গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক মা-বাবা তার সন্তানের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ রেখে যেতে চান। প্রত্যেক মা-বাবার চাওয়া-পাওয়া কিংবা প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
কারণ বিএনপি মনে করে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই আমাদের প্রচলিত ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ, প্রতিহিংসা ও কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত রাজনীতির ধারার গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) যুগে প্রবেশ করছে। এই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিন্তু আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো রকম সুযোগ নেই।
এই সময়ের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে বিএনপি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরকে চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নির্ধারণ করছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর অথবা কোনো কারণে ড্রপআউট (পড়াশোনা শেষ করতে না পারলে) হলে তাকে যাতে বেকার জীবন কাটাতে না হয় সেই পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই শিক্ষা কারিকুলামে স্কুল পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত অন্তত একাডেমিক স্টাডির পাশাপাশি ব্যাবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ দেড় দশকের বেশি সময় পর নিজেদের এজেন্ডা-ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে।
তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর কিছু সদস্যের বক্তব্যে গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।’
দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দূরত্ব তৈরি হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পতিত, পরাজিত ফ্যাসিস্ট চক্রের পুনর্বাসনের পথ সহজ হয়ে উঠবে, তাদের সুযোগ তৈরি হবে। তাই সতর্ক ও সজাগ থাকতে গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাই।’
মন্তব্য