বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের কী করুণ দশা, ইউরেনিয়াম কী জিনিস তা জানেন না। আসলে দলে নিজের মনিবের প্রতি তোষামোদি করতে গিয়ে, মনিবকে খুশি করতে গিয়ে তিনি আগ বাড়িয়ে বিনোদনমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।’
বেশি লাফালাফি করলে ইউরেনিয়াম মাথায় ঢেলে ঠাণ্ডা করে দেব- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। ‘গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদের একাংশ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সভা-সমাবেশে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কাজে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের কথা ‘ভূতের মুখে রাম নাম’। আজ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এক মুহূর্তের জন্যও এই সরকারকে দেখতে চায় না।”
ফখরুল বলেন, ‘মানুষ বেশি কিছু চায় না, শুধু নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। কিন্তু দেশে নির্বাচনই তো হয় না। আওয়ামী লীগ বলে যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে। মানুষ সেসব দেখেছে। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি।
‘২০১৮ সালে বিএনপি ভুল করে হলেও কিছুটা বিশ্বাস করে সরকারের সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিল। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দর সুন্দর কথা বলেছিলেন। অথচ আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি।’
ডান-বাম উত্তর-দক্ষিণ বুঝি না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকে দেশরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এবার মানুষ জেগে উঠেছে।’
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে লুটেরাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্গিদের মতো আচরণ করছে সরকার। এখন পুরনো মামলায় বিএনপি নেতাদের সাজা দেয়া হচ্ছে। আইনমন্ত্রী তালিকা করে দিচ্ছেন কার কার বিচার আগে হবে। বিশেষ সেল গঠন করতে বলা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সব সূচক নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। রিজার্ভের পরিমাণ এত কমেছে যে কয়েক মাস পর আমদানি করার টাকা থাকবে না। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চার গুণ বেশি খরচ করেছে শুধু কমিশন খাওয়ার জন্য, দুর্নীতির জন্য। পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথ উদ্বোধন করা হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু কত টাকা বেশি খরচ করেছে খোঁজ নেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। একই কায়দায় আবারও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানের দোহাই দেয়া হচ্ছে।
‘আর কোনো কথা না বলে, কালবিলম্ব না করে দল-মত নির্বিশেষে যারা দেশকে ভালোবাসেন দেশকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে সমস্যা নেই। কিন্তু বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নির্বাচন আর হবে না। ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আরও পড়ুন:সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে এক নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান হোসেন শিশিরকে রোববার তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ওই পত্রে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ইমরান হোসেন শিশিরকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির রোববার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।’
ইমরান হোসেন শিশিরের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের সাফাইশ্রী এলাকায়। তার এক প্রতিবেশী নারীর তিন মিনিট ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রোববার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ওই নারী ইমরান হোসেন শিশিরের সঙ্গে প্রায় ছয় বছর ধরে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন।
দুজন ভারতে ৯ দিন এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে একসঙ্গে আবাসিক হোটেলে একই কক্ষে রাত্রিযাপন করেছেন বলেও দাবি করেন ওই নারী।
শিশিরের চাপে একাধিকবার গর্ভপাত করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তার অভিযোগ, এতদিন পর্যন্ত তাকে বিয়ের আশ্বাস দিলেও গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে শিশির তার সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্ন করে নানা রকমের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে ওই নারী শ্রীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় সংবাদ সম্মলন করে তার বক্তব্য সংবলিত ভিডিও সুপার এডিট করে বানানো হয়েছে বলে দাবি করেন। এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারও দাবি করেন তিনি।
যদিও স্থানীয় কেউ কেউ বলছেন, শিশিরের চাপে পড়ে ওই নারী সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা কারও ওপর কোনো জুলুম ও অবিচার চাই না। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে যেসব কালাকানুন করেছে তার ভিত্তিতেই তাদের বিচার হোক। তারা যেন তাদের সঠিক পাওনাটা পায়।’
রোববার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াত ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
জামায়াতের আমীর বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা, গণতন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছিল। ওইদিনই সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল।
‘তারা সেদিনের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। বহু শিশু এই দৃশ্য দেখার পর একনাগাড়ে অনেকদিন রাতে ঘুমাতে পারেনি, চিৎকার দিয়ে উঠেছে। কিন্তু মজলুমরা তার বিচার পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিলেন। আর মজলুমদের সামনের কাতারে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
‘দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ আবার আপন পথ ফিরে পেয়েছে।’
ডা. শফিকুর বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে সাজানো-পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তারা। এখন তাদের নাম সাহস করে কেউ নেয় না। তাদের দল (আওয়ামী লীগ) যারা করে তারাও সেই নাম নিতে চায় না। আমরা মজলুম জনগণ তাদের নাম নেব কেন?
‘তাদেরকে তারা নিজেরা নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে। তারা যখন বাকশাল কায়েম করে তখন তাদের দলসহ সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। আর এবার আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জনগণ তাদের দলকে নিষিদ্ধ করেছে।’
জামায়াতের আমীর বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সাথে তারা দেশ শাসন করেছে। ক্ষমতায় আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর গায়ে তারা আঘাত করে ৫৭ জন চৌকস ও দেশপ্রেমিক, প্রতিশ্রুতিশীল সেনা কর্মকর্তাকে বেদনাদায়কভাবে হত্যা করেছিল।
‘সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনায় তদন্তের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছিল, তা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। নেপথ্যের নায়কদের, হুকুমদাতাদের, দৃষ্কৃতকারীদের আড়াল করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক-নায়িকারা তাদের অপরাধের পাওনা এখনও পায়নি। এ পাওনা তাদেরকে পেতে হবে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব হত্যার বিচার করতে হবে।
‘তবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে আগে সাম্প্রতিক গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করতে হবে। তাদের বিচার এজন্য করতে হবে- শহীদদের তাজা রক্ত এখনও ভাসছে। আহতরা কাতরাচ্ছে। সাক্ষী মজুদ। আলামত জীবন্ত ও স্পষ্ট। যত দ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ওদেরকে সঠিক পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।’
জামায়াতের প্রধান বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হেফাজতের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল। তা ছিল আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এটি ছিল আরেকটি গণহত্যা। কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তা আজও জাতি জানতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘অতীত অপকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে আনসার লীগ, বিচার লীগ ও নানারকম দাবিদাওয়ার লীগ নামে তারা আরেক রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।
‘তাদের অনেকে দাড়ি ও টুপি পরছে (আর্টিফিসিয়াল কিনা জানি না)। একদিকে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে ও বিশ্ববাসীকে মেসেজ দেয়া যে, আমরা যতদিন ছিলাম ততদিন চরমপন্থার উত্থান হতে দেইনি। আমরা নাই তাই এখন বাংলাদেশে চরমপন্থা আছে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রতিশোধ নেব না। কিন্তু ন্যায়বিচার পেতে আমরা বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে জুলুমের প্রতিকার চাইব। আমরা সেই প্রতিকারটিই চাচ্ছি।
‘গণঅভ্যত্থানের পর মজলুম দল হিসেবে প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার ছিল জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের। কিন্তু ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশের কোথাও একটিও প্রতিশোধ নেয়া হয়নি।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে চাই। তাই আমাদের সীমাহীন ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সরকার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছুই বদলায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ‘সরকার বদলে গেছে; কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।’
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর রায় এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘দুর্যোগ প্রশমনে বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী প্রচার দল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হলেও বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। অধিকারের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তানহারা হয়েছে- এরা সব হারিয়েছে। মাঝে শেখ হাসিনা নেই। আর সব আগের মতোই আছে।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগের সব মামলা যদি উঠে যেতে পারে তাহলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল। এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপর এতো অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন বর্তমান সরকারের বিবেচনায় আসছে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্যতম এই সদস্য বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথী হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেননি। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনও উইদাউট নির্বাচন কমিশন, সেখানে আমি কীভাবে বিশ্বাস করব আপনি নির্বাচন করবেন? নির্বাচন যত শিগগির হবে, জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের মধ্যে হবে।
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংস্কার দরকার সেটুকু বিবেচনা করবেন। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। এসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে। জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবেন, তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেসব সংস্কার করবেন।’
তিনি বলেন, ‘কোটা-বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলন সেটি ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক না, একই ধারার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের (ছাত্রদের) আলাদা করতে চায় কেন?
‘ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেন? কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সতর্ক করবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর যদি আরেকটি বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার মাশুল কে দেবে?’
গয়েশ্বর রায় সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে তা বলেন না কেন? সেনাপ্রধান বলেছেন ১৮ মাস, পরের দিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সরকারের কথা না। তাহলে সরকারের কথাটা কী? ৩৬ মাস? ৩০ মাস? তাই বলেন না! বলতে তো হবে আপনাকে।
‘আমরা যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন, আমাদের তো কাজ আছে। জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের বোঝাতে চেষ্টা করব– আমি এই করব, সেই করব। আমাদেরও তো আকাঙ্ক্ষা আছে জনগণকে কনভিন্স করার। সুতরাং আপনাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে।’
জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকসহ জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের নেতারা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:সারাদেশে এবার দুর্গাপূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে এবার দুর্গাপূজা পালন করেছে। পূজা নিয়ে পরাজিত শক্তির সব অপকৌশল রুখে দিয়েছে বিএনপি।
রোববার দুপুরে মহম্মদপুর উপজেলার হাটবাড়িয়ার নিজ বাড়িতে দূর্গাপুজা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরি।
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘মাগুরায় এবার দুর্গাপূজায় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে পরিদর্শন করেছেন। জেলার কোথাও কোন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জেলায় এবার দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সম্প্রতি বজায় রেখে আমরা চলতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির নেতা মনোয়ার হোসেন খান, সাবেক জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক খান হাসান ইমাম সুজা, মিথুন রায় চৌধুরি, আলমগীর হোসেন, সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন কুতুব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে তর্কের মধ্যে ঘি ঢেলেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শনিবার রাতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ফেসবুকে লেখেন, “আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি কয়েক দিন পর শোনা যায় যে, আসল ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়।”
সম্প্রতি সরকারের পতনের আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কে তা নিয়ে নানা পক্ষ থেকে কৃতিত্বের দাবি উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বমঞ্চে তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে ‘ব্রেইন বাহাইন্ড দ্য হোল রেভ্যুলুশন’ তথা গোটা বিপ্লবের নেপথ্যের ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। মূলত এর পর থেকেই ‘মাস্টারমাইন্ড’ শব্দটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু শনিবার দাবি করেন, “এই আন্দোলনের একমাত্র ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছেন তারেক রহমান। কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যা করা দরকার, সবই করেছেন তিনি।”
ফেসবুক পোস্টে সোহেল তাজ লিখেছেন, “আজকে পত্রিকায় পড়লাম বিএনপির নেতা শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ তারেক রহমান। আবার জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সাহেব বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার, কোনো দলের নয়। আবার কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছে মাহফুজ।”
তিনি আরও লেখেন, “আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি কয়েকদিন পর শোনা যায় যে আসল ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়।”
সোহেল তাজ স্মরণ করিয়ে দেন, ‘আমাদের সবার নিশ্চই মনে আছে, বেচারা প্রিন্স চার্লসের কত বছরই না অপেক্ষা করতে হয়েছিল রাজা হওয়ার জন্য।’
তার পোস্টে আবদুর রহিম খাঁন বাবু নামের একজন কমেন্ট করে লেখেন, ‘পচানোর একটা ডিপ্লোমেটিক সিস্টেম থাকে, কিন্তু আপনি সজীব ওয়াজেদ জয়কে পচাতে এসে আপনি নিজেই চরম হীনমন্যতায় ভুগছেন তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিলেন।’
তার মতো অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সোহেল তাজের এ পোস্টের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেন।
আরও পড়ুন:দ্রুত নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্মরণসভায় তিনি এ কথা জানান।
৯০-র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
ওই সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সংস্কারে মানুষের মধ্যে নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে। নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে।
‘একটা নির্বাচিত সরকার লাগবে। সংবিধানে বর্তমানে যেখানে যা কিছুই থাকুক না কেন, তা অকার্যকর।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এ সদস্য বলেন, ‘গণপরিষদ গঠনের কথা অপ্রাসঙ্গিক। সুতরাং এই গণপরিষদের ভাবনা যারা বলছেন, তাদের আবারও ভাবা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য পতিত ফ্যাসিবাদ কিছুদিন পরপর প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। বিদেশে বসে দেশে অস্থিরতা চালাচ্ছেন শেখ হাসিনা, কিন্তু এটি সফল হবে না।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর মুক্তি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে সাবের হোসেনের বিচারের দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
রিজভী বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। তিনি আইন উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় একজন খুনি কীভাবে জামিন পান? এই এলাকায় কী রকম জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়েছে।
‘কতজন হাত-পা হারিয়েছে। জনির মতো তরুণ ছেলে জীবন দিয়েছে। তাকে বাড়ি থেকে তুলে এই জায়গায় নিয়ে এসে ১৬টি গুলি করে হত্যা করেছে। সাবের হোসেন চৌধুরী এর জন্য দায়ী নন কি? তার নির্দেশেই (সাবের হোসেন চৌধুরী) ওই এলাকায় ১১ জন গুম, খুনের শিকার হয়েছে। এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা গণহত্যা চালিয়েছেন। তার সহযোগী এ সাবের হোসেন। তিনি তো শেখ হাসিনার চেতনায় লালিত।
‘তাদের আমলে কেউ গণতন্ত্রের পক্ষে টুঁ শব্দ করতে পারেনি। বিএনপির পক্ষে, খালেদা জিয়ার পক্ষে, তারেক রহমানের পক্ষে কথা বলতে পারেনি। এ জন্যই তিনি (সাবের হোসেন চৌধুরী) গুম, খুনের কর্মসূচি সফল করেছেন।’
ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের আসিফ নজরুলের মতো মানুষ আছে। তারা থাকা অবস্থায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে সাবের হোসেন চৌধুরী জামিনে মুক্তি পান। তাহলে এ সরকার কাকে প্রটেকশন দিচ্ছে?’
রিজভী আরও বলেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী বিনা ভোটে বছরের পর বছর এমপি থেকেছেন। তার নির্দেশেই এতগুলো খুন, বিচার-বহির্ভূত হত্যা হয়েছে। তিনি যদি জামিনে মুক্তি পান, তাহলে যারা অর্থ কেলেঙ্কারিকে যেসব পুলিশ ক্রসফায়ার দিয়েছে, বাসা থেকে তুলে নিয়ে আঙুলের নখ তুলে ফেলেছে, মাথায় বন্দুক রেখে গুলি করে হত্যা করেছে, তারা তো কয়েক দিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে যাবে। এর উত্তর কী দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
পরে সাবের চৌধুরীর গ্রেপ্তারের দাবিতে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, মহানগর বিএনপির নেতা ইউনূস মৃধা, সাবেক কাউন্সিলর লিটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি জাহিদুল কবির, যুবদলের মেহেবুব মাসুম শান্তসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য