বিএনপির নেতারা দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘রাজনীতির গিনিপিগ’ বানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি কয়েকদিন থেকে বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া যতবার অসুস্থ হয়েছেন, বিএনপি বলেছে- উনাকে বিদেশ না নিলে উনি মারা যাবেন, কিন্তু ততবারই উনি হাসপাতাল থেকে ভালো হয়ে বাড়িতে ফেরত গেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আসলে খালেদা জিয়াকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাতে করে বেগম জিয়াকে বিএনপি নেতারা গিনিপিগ বানিয়েছেন, রাজনীতির দাবার গুটি বানিয়েছেন। আসলে বেগম জিয়া সুস্থ হোক সেটা তারা চান না। তারা চান, তিনি আরও অসুস্থ থাকুন, যাতে তারা রাজনীতিটা করতে পারে।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের আহবায়ক কামরুজ্জামান লেলিনের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং স্বজনহারা ব্যক্তিবর্গ এ সময় বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার সর্বোতভাবে কাজ করছে। বিদেশ নেয়াটা আদালতের এখতিয়ার। আদালতের আদেশ ছাড়া তিনি তো বিদেশ যেতে পারেন না। সুতরাং এ নিয়ে দয়া করে রাজনীতি করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে দেশ জুড়ে ‘মায়ের কান্না’ কেঁদে চলছে। আমি প্রশ্ন রাখি যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের কর্ণকুহরে এই কান্না কেন পৌঁছে না? আপনাদের কাছে দেখা করার দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল, আপনারা এখনও পর্যন্ত দেখা করেন নাই। অর্থাৎ মানবাধিকার এখন কিছু কিছু রাষ্ট্রের একটি অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সমস্ত দেশ উন্নয়ন-অগ্রগতি করে কিন্তু তাদেরকে ঠিক মতো ব্যবসা দেয় না, তাদেরকে দমিয়ে রাখার জন্য মানবাধিকার এখন একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করা, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা দেশে-বিদেশে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই অগ্রযাত্রা অনেকের পছন্দ নয়। সে জন্য নানা ছলছুঁতায় প্রথমে আনে মানবাধিকার, তারপর বলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের দেশে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে। সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে।’
বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না। আমাদের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়ে, ঘেরাও করে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নাই। আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরাজয় মেনে নেয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরাজয় মেনে নেন নাই। যারা গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে চান তাদের অনেকের দেশেই গণতন্ত্র নাই। সুতরাং আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।’
ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং যারা মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের কথা বলে দেশে দেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে, তারা দয়া করে আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলে, ১৯৭৭, ৭৮, ৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যার শিকার নিরপরাধ সেনা সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র আর্তনাদ, ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের স্বজনদের কান্না তাদের কানে কেন পৌঁছে না?’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আবার সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি আবার অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এভাবে উঠে, বসে, দৌড়ে, কিম্বা হামাগুড়ি দিয়ে, ক’দিন হাঁটা কর্মসূচি, ক’দিন বসা কর্মসূচি, ক’দিন দাঁড়ানো কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে যে সম্পৃক্ত করা যায় নাই, সেটি তারা বুঝতে পেরেছে। তাই এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এবং বিশ্ববেনিয়ারা যাতে ফায়দা লুটতে পারে সেজন্য তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে।
‘তবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিতে চাই- আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে, রাজপথে থাকবে, কাউকে আর ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনী কাছে হস্তান্তরসহ পাঁচ দাবি নিয়ে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার প্রথমে শিক্ষা ভবনের সামনের মোড় অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীরা। পরে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দাবির স্মারকলিপি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে প্রবেশ করে। তবে শিক্ষা সচিব প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা না করায় শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও করেন।
জবি শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি হলো- স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনা ও সাতদিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ কর্মকর্তার হাতে এই প্রকল্পের দায়িত্ব অর্পণ; শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের ঘোষণা; অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ ও পুএনা ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সব চুক্তি বাতিল; সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট সর্বনিম্ন পাঁচশ’ কোটি টাকা নির্ধারণ।
জানা গেছে, শিক্ষা সচিবকে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিতে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান, সংগঠক একেএম রাকিব, রাইসুল ইসলাম নয়ন, আসাদুল ইসলাম, আবু বকর খান, নওশীন নাওয়ার জয়া, সোহান প্রামাণিক, মাসুদ রানা, নূর নবী, ওমর ফারুক, ফেরদৌস শেখ ও অপু মুন্সী। কিন্তু ১২ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল সচিবের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি।
দেখা না পেয়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের বাইরে এসে ‘শিক্ষা সচিবকে ক্ষমা চাইতে হবে’ বলে স্লোগান দেয়া শুরু করেন। এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টাকে আন্দোলনস্থলে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, ‘আমরা স্মারকলিপি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে ঢুকেছিলাম। কিন্তু তিনি নিজে দেখা না করে তার প্রতিনিধি পাঠান আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা এটা মানি না।
‘এখন আমাদের দাবি, শিক্ষা উপদেষ্টা সশরীরে এসে আমাদের দাবি শুনবেন। আমরা দাবিগুলোর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তিনদিনের আল্টিমেটাম দিচ্ছি।’
হিট প্রকল্পের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে আজকের মধ্যেই লিখিত দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাফরুলে রোববার রাতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন।
দগ্ধরা হলেন মোহাম্মদ রাজিব মিয়া (২১ ), সুমি আক্তার (১৮), সাহানা আক্তার (২২), মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৫) ও সুবর্ণা আক্তার (২২)।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে তাদের উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আনা হয়।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, রাতে কাফরুল থেকে দগ্ধ নারীসহ পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে দগ্ধদের জরুরি বিভাগের অবজারভেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের সবাই শঙ্কামুক্ত।
দগ্ধদের বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা প্রতিবেশী আসাদুল মন্ডল বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ লোক পোশাকশ্রমিক। গত রাতে গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তন করে চুলার সঙ্গে সংযোগ দেয়ার সময় চুলায় ম্যাচের কাঠি ধরানোর সাথে সাথে বিস্ফোরণ ঘটে।
‘এতে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন নেভাতে গিয়ে তারা দগ্ধ হন। পরে আমরা আগুন নিভিয়ে ফেলে দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসী কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ লাউঞ্জ উদ্বোধন করেছেন।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকরা দেশ গড়ার কারিগর। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে তারা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এটিই প্রথম প্রবাসী লাউঞ্জ।’
এ লাউঞ্জ অভিবাসীদের ভ্রমণকে সহজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
লাউঞ্জে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য জায়গা এবং সুলভ মূল্যে খাবার পাওয়া যাবে এবং সরকার এতে ভর্তুকি দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত আইওএম মিশনের ডেপুটি চিফ ফাতিমা নুসরাত গাজালি জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তা করতে লাউঞ্জটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
আরও পড়ুন:নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর জিপিও সংলগ্ন জিরো পয়েন্টে জমায়েত হতে পারেনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কারণ জিরো পয়েন্ট ছিল বিএনপি, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দখলে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় অবস্থান ছিল বিএনপি ও ছাত্রদলের।
তবে এদিন নগরীতে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী। এ সময় বেশকিছু নেতাকর্মী মারধরের শিকার হন। বেশ কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বিক্ষোভ শুরু করে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করেন যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উল্টো পাশের গলি থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একদল নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জিরোপয়েন্ট অভিমুখে রওনা হয়। এ সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া ও মারধরের শিকার হন তাদের অনেকে।
রোববার সকাল ৯টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সকালে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর থেকে জিরো পয়েন্টে অবস্থান না নিলেও বিএনপি ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতেই জিরো পয়েন্টে ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে একদল মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে রোববার ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল করার কথা থাকলেও জিপিও মোড়ে ছাত্র-জনতা এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে তা এক ঘণ্টা পিছিয়ে বিকেল সোয়া ৪টায় নির্ধারণ করেছিল আওয়ামী লীগ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে তাদেরকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
মারধরের শিকারদের কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ‘শেখ হাসিনা সরকার, বার বার দরকার; ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু; ‘শেখ শেখ শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখে সেখানে অবস্থান নেয়া বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করেন। ধাওয়ার মুখে তারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন মারধরের শিকার হন।
এছাড়া রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বর অভিমুখে রওনা হওয়ার পরই বাধার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আরেকটি মিছিল।
সড়কে সমবেত হয়ে তারা স্লোগান দিতেই মিছিলটিকে ধাওয়া করে একদল তরুণ-যুবক।
আরও পড়ুন:রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশ থেকে তাদের ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ’ বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
নূর হোসেন চত্বর নামে পরিচিত জিরো পয়েন্টে রোববার ভোর থেকেই নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানান তারা।
আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শনিবার শহীদ নূর হোসেন দিবস পালনের ঘোষণা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের জিরো পয়েন্টে আসার আহ্বান জানায়।
এরপর তাদের প্রতিহত করতে পাল্টা সমাবেশ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
এদিকে শহীদ নূর হোসেন দিবসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে ১৯১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সারাদেশে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
রাজধানীতে সচিবালয়ের আশপাশ এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে কিছু ব্যক্তিকে মারধর করতে দেখা যায় পুলিশকে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেখানে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলা সম্ভব নয়।’
ইউএনবির প্রতিবেদক রোববার ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন।
‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের স্থান নেই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’—এমন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
নাইমুর নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দেশে যেই দল ও সরকার ফ্যাসিবাদকে চরমে নিয়ে গেছে, যারা আমার ভাই-বোনদের হত্যা করেছে, তাদের জন্য কোনো দয়া নেই। আমরা কোনো লীগ চাই না, আর এ কারণেই আমরা আজ এখানে এসেছি।’
বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ মিছিলে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন।
তার বুক ও পিঠে লেখা ছিল, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান।
আরও পড়ুন:দেশে বিদ্যমান সংবিধানের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে সেগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে শনিবার বিকেলে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংবিধান ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তারা এ মত দেন।
জনস্তরে সংবিধান চিন্তার প্রসারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (বিআইআরই) এ আলোচনা সিরিজের আয়োজন করে, যার প্রথম পর্ব হয় গতকাল।
আলোচনায় বক্তাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মনযুর রাব্বি বলেন, রিপাবলিকের বাংলা অনুবাদ প্রজাতন্ত্র ঠিক নয়। সংবিধানে প্রজা কথাটি থাকায় তা ‘রাজা’র জন্ম দিয়েছে।
তিনি এ ধরনের শব্দ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে জনগণের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য দরকার।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সংবিধানের ১৮টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে ১৫টিই শর্তসাপেক্ষ (কনডিশনাল)। ফলত এক হাতে অধিকার দিয়ে অন্য হাতে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি এ ধরনের শর্তারোপের বিরোধিতা করে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এটি সঞ্চালনা করেন মেহেরবা সাবরিন।
স্বাগত বক্তব্যে মো. জহির উদদীন সোহাগ কেন জনস্তরে সংবিধান চিন্তা প্রয়োজন, কীভাবে তা সম্ভব, সে বিষয়টি তুলে ধরেন।
পরে সংবিধান নিয়ে জনমত জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপের ফল প্রকাশ করে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাঈদ সারওয়ার জানান, অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী চান নতুন সংবিধান। প্রায় সবাই চান এ সংবিধানের সংস্কার।
ব্যতিক্রমী এ আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশগ্রহণকারীরা সংবিধান নিয়ে তাদের মতামত দেন। তাদের অনেকে সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলেন। কেউ কেউ সংস্কারের পরামর্শ দেন।
অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য শেষে তিন বক্তা সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন দরকার, সে বিষয়ে তাদের মত দেন।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টারসহ সমাবেশের অডিও ক্লিপ ভাইরাল করার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তালেবুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যেকোনো প্রান্তে যেকোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
উসকানিদাতা, অর্থদাতা এবং এসব অপকর্মের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হওয়া সাম্প্রতিক একটি অডিও ক্লিপে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের নেতা-কর্মীদের অবৈধ সমাবেশে ঢাল হিসেবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ছবি ও প্ল্যাকার্ড এবং মার্কিন পতাকা বহন করার নির্দেশ দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেগুলো ভাঙচুর ও অবমাননার ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশনাও দেন তিনি।
‘বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টার অংশ হিসেবে তারা এই অপকর্মের পরিকল্পনা করেছে।’
এতে উল্লেখ করা হয়, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
‘এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বিপুলসংখ্যক উসকানিমূলক পোস্টার, ছবি, প্ল্যাকার্ড এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য