গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন বিপর্যন্ত। শরতকালে যেখানে হুটহাট বৃষ্টির কারণে পরিবেশে শীতলতা বজায় থাকার কথা, সে সময় এমন গরমে অস্বস্তি রয়েছেন সবাই। সারাদেশে কমবেশি বৃষ্টি ঝরলেও রাজধানীতে তার দেখা নেই একদমই।
শুক্রবার বিকেলের দিকে হালকা বৃষ্টির পর ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। ফলে গরমের মাত্রাও বাড়ে। তবে রাত বাড়তে বাড়তে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসে। টানা বৃষ্টি না হলে এই গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তবে গরম নিয়ে সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকায় দুদিন টানা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে রাজধানীর তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।
লঘুচাপের প্রভাবে সাগর ও নদী কিছুটা উত্তাল থাকায় নদীবন্দরগুলোয় ১ নম্বর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোয় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, গতকাল বৃষ্টি হওয়ায় আজকে গতকালের তুলনায় তাপমাত্রা কমে এসেছে। সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি জানান, ঢাকায় আগামী ৩ ও ৪ অক্টোবর বেশি বৃষ্টি হবে। এতে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমে আসবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর ও পঞ্চগড় জেলাসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল নিকলিতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ঢাকায় ৩৫ দশমিক ৫ রাজশাহীতে ৩৬, রংপুরে ৩৬ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে ৩৬ দশমিক ৪, সিলেটে ৩৬, চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৮, খুলনায় ৩০ দশমিক ৫ এবং বরিশালে ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে সাগরের বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, মধ্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে আজ রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:টানা বর্ষণ আর ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সবক’টি পাহাড়ি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবল চাপে মহারশি, চেল্লাখালি ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাতটি স্থানে ভেঙে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদী বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মহারশি, সোমেশ্বরী, মৃগী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মহারশি নদীর বাঁধের খৈলকূড়ায় তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। বাঁধ উপচেও প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে ঝিনাইগাতি উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মন্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই এবং চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী গাজিরখামার সড়ক।
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির অন্তত ১০টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম।
তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছে না এসব এলাকার লোকজন। ফলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইগাতী বাজারের আকতার আলী বলেন, ‘আমার দোকানে পানি উঠেছে। এতে দুই লাখ টাকার বই নষ্ট হবে। শহর রক্ষা বাঁধ থাকলে মহারশি নদীর পানিতে তাহলে আমাদের এমন ক্ষতি হতো না।’
বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমির আলী বলেন, ‘দোকানে মধ্যে পানি সকাল থেকেই। একটু ঢল এলেই পানি বাড়ছে। আমরা ঝিনাইগাতীর মানুষ আগে থেকেই এটার ভুক্তভোগী। কিন্তু প্রশাসনিক নজর কখনোই এদিকে পড়ে না।’
ঝিনাইগাতী সদরের হোসেনে আরা বলেন, ‘রান্না করতে পারছি না। রাস্তায় পানি ওঠায় চলাচলও করতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি।’
ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, ‘আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছে। অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কেউ এদিকে দেখে না। নদীর তীর জুড়ে স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।’
নালিতাবাড়ীর রফিক বলেন, ‘এবার শহরে পানি থৈ থৈ করছে। জীবনে এই সময়ে উপজেলা শহরে এমন পানি দেখিনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।’
নালিতাবাড়ীর কৃষক খাইরুল বলেন, ‘আমাদের সব ফসল এখন পানির নিচে। এই ধান এহন খাইয়া গেলেগা আমরা বাচমু কেমনে?’
ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি অফিসার হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে চৌদ্দ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে অনেক ক্ষতি হবে।’
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘মহারশি নদীতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ফিজিবিলিটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। সকাল থেকে আমাদের টিম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আছে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান বৃষ্টির আবহ সহসাই বন্ধ হচ্ছে না। আরও সাতদিন অর্থাৎ চলমান অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মোটামুটি সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার দেয়া পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া বার্তায় আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন:উজানের পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীতে নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে তিস্তা।
সোমবার সকাল থেকে তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
ডালিয়া পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন জানান, দু’দিন আগে উজানের ঢল আর বর্ষণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছি। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তা বিধৌত লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ডুকে পড়ে। তবে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট থেকে পানি দ্রুতই নেমে যাচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা বইছে বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।
বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্টকে (বিসিএপি) সহায়তায় ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য বায়ুর গুণমান ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা।
ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের অংশ হিসেবে ক্লিন কুকিং ইনিশিয়েটিভের জন্য একটি সম্ভাব্য অনুদানসহ একটি আইডিএ ঋণের মাধ্যমে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে।
পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রোববার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার ও বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক আবদৌলায়ে সেক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তা এবং ঢাকার খাল পুনরুদ্ধারের জন্য একটি ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ তৈরির আহ্বান জানান। তিনি আরও একটি লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের জন্য সহযোগিতার সম্ভাবনার পাশাপাশি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নে সহায়তার উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টা পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সমন্বিত পদ্ধতির গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার প্রগতিশীল পরিবেশ নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই প্রচেষ্টাকে বৈশ্বিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করতে ব্যাংকের সমর্থন নিশ্চিত করেন।
আবদৌলায়ে সেক দীর্ঘমেয়াদি টেকসই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
বৈঠকে পরিবেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সিলেট ও সুনামগঞ্জে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের মধ্যে সিলেটে দুজন ও সুনামগঞ্জে চারজন মারা গেছেন।
রোববার ভোরে সিলেটের বিশ্বনাথে বজ্রপাতে এক কলেজ ছাত্র প্রাণ হারান। ভোর ৫টায় বিশ্বনাথের দশঘর ইউনিয়নের সাড়ইল গ্রামে ওলিউর রহমানের ছেলে রেদওয়ান আহমদ মারা যান। রেদওয়ান সিলেটের এমসি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা যায়, বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হন রেদওয়ান। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্বনাথ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামান উদ্দিন জানান, মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে সকাল ১০টার দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের রাজনগর ঢালারপাড় এলাকায় কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য রাজনগর গ্রামের কৃষক মাসুক মিয়া।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, ‘মাসুক মিয়া জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে প্রাণ হারান। মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।’
এছাড়া সুনামগঞ্জেৱ হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে চারজন জেলের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় দুজন এবং জামালগঞ্জ ও ছাতক উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছিল। এ সময় দোয়ারাবাজার উপজেলার দেখার হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন জেলেরা। তখন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিরচর গ্রামের জালাল মিয়া ও জসিম উদ্দিন।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক বজ্রপাতে এই দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একই সময় জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালাগুজা গ্রামের শরিফ মিয়া বজ্রপাতে মারা যান। তিনি বাড়ির পাশের পাগনার হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন হাওরে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
জামালগঞ্জ থানার ওসি শ ম কামাল হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ছাতক উপজেলায় বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তি হলেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের সুন্দর আলী। তিনি বাড়ির পাশে হাওরে সকালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন ছাতক থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান।
আরও পড়ুন:টানা চার দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়ালেও কমতে শুরু করেছে। রোববার বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়ার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, রোববার ভোর ৬টার দিকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে সকাল ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় তিন সেন্টিমিটার ও বিকেল ৩টায় পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তা বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে রাত ১২টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার।
স্থানীয়রা জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীবেষ্টিত ১৫টি চর গ্রামের চার হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি কমায় ধীরে ধীরে বসতবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল শনিবার তিস্তা নদীর পানি বাড়ে। তা আজ রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এতে আমার ইউনিয়নের পূর্ব ছাতনাই ও ঝাড়সিংহেরস্বর মৌজার প্রায় এক হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে।’
খালিশাচাপানী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দুদিন ধরে তিস্তায় পানি বাড়ছে। আজ সকাল পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তাপাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পূর্ব ও পশ্চিম বাইশপুকুর গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন উপ-বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রীতম কুমার সরকার বলেন, ‘আজ রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
‘পূর্বাভাস অনুযায়ী বর্তমানে পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকার খালগুলোকে উদ্ধার করে ব্লু নেটওয়ার্ক করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরে ‘বিগত ১০০ বছরে ঢাকা শহরের নগর প্রতিবেশ, ভূমি ব্যবহার এবং জীববৈচিত্র্যে স্থানিক ও সময়ানুক্রমিক পরিবর্তন এবং কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বৃহৎ পরিকল্পনামাফিক সময়সাপেক্ষ কাজ করার সুযোগ কম। তবে এই সরকার কয়েকটি বিষয় গুরুত্বসহকারে ভাবছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ব্লু নেটওয়ার্কের পরিকল্পনা।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে সিটি করপোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে যারা দীর্ঘদিন খাল নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লু নেটওয়ার্কের প্ল্যান আমরা করতে পারি সেই উদ্যোগ নেয়া হবে।’
উপদেষ্টা এ সময় খালগুলো দখল থেকে পুনরুদ্ধার করতে সুসংহত বাজেট তৈরির আহ্বান জানান।
রাজধানী ঢাকার সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক বিশেষ এই কর্মশালায় গবেষণালব্ধ একটি বিশদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের টিম লিডার ও সিইজিআইএস-এর প্রিন্সিপাল স্পেশালিস্ট ড. ফারহানা আহমেদ।
সিইজিআইএস-এর মাধ্যমে পরিচালিত এই গবেষণা ঢাকার বাস্তুতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে পুনরুদ্ধারের সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ ইত্যাদির ভিত্তিতে সিইজিআইএস কাজটি সম্পন্ন করে একটি খসড়া কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে।
প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনাটিতে ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ১৯টি স্থানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে তিনটি বৃহত্তর কর্মসূচির আওতায় ১৯টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। কৌশলগত এই কর্মপরিকল্পনাটি যাচাই-বাছাইপূর্বক বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
সিইজিআইএস-এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ. খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অব.), বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর সহযোগিতা এবং ইউএনডিপি, বাংলাদেশের উদ্যোগে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য