চট্টগ্রামের পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না কোনোভাবেই। বিদ্যমান বাঁধটুকুও অস্তিত্ব হারাচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি সাগরের বুকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকায় সাগর বুকে দিনে দিনে মিলিয়ে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ। প্রকল্প কাজে ধীরগতি ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এর বড় কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে।
বেড়িবাঁধ না থাকার কারণেই ১৯৯১ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে এই জনপদে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর ঘূর্ণিঝড় আয়লা, সিডর, কোমেন, রোয়ানুর কবলে পড়ে প্লাবিত হয়ে শত শত একর ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্লক তৈরি ও লুটপাট-দুর্নীতি বেড়িবাঁধ টেকসই না হওয়ার অন্যতম কারণ। উপকূলীয় এই বেড়িবাঁধ নিমাণ কাজের বাজেট যা ছিল তা কেবল ছোট থেকে ছোট হয়ে এসেছে। এসব ঢাকতে অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন ও যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণে মাত্র এক বছরের মাথায় তা হারিয়ে যাচ্ছে সাগর বুকে।
অনেকের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। আর নতুন গতিপথে স্রোত এখন সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধে। প্রবল স্রোতের ধাক্কায় বাঁধের কিনারাতে তৈরী হচ্ছে গভীর খাড়ি (কূপ)। তা ক্রমশ বেড়িবাঁধের ভিত নড়েবড়ে করে দিয়ে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, স্রোতের গতিপথ বদল, চর জেগে ওঠা- এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের। তারা এটার সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ টাইপের কাজ কেন করবে? আর তার খেসারত কেন উপকূলবাসী দেবে?
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) তা পাস হয়। বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণের পাশাপাশি ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণের কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার মধ্যবর্তী দুটি স্থান ধসে গিয়ে বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ সাগরে মিলিয়ে গেছে। সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের যেটুকু টিকে আছে তাতে বিশালাকার ফাটল সৃষ্টি হয়ে নিচের দিকে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে।
ভারী কোনো জোয়ার এলেই পুরোপুরি মিশে যাবে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি হলে তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে বিষয়টি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে পাউবো। অধিকন্তু জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে বাঁধের খুব কাছ থেকে বালু নিয়ে। আবার কোথাও ২০০ মিটার দূরত্বে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জিও ব্যাগ পূর্ণ করার জন্য।
সম্প্রতি সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় সৃষ্ট বন্যার পানি সাঙ্গু হয়ে নেমে এসেছে বঙ্গোপসাগরে। বলতে গেলে এরপর থেকে এই বাঁধে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তবে, এই জিও ব্যাগ ভাঙন কতটা ঠেকাতে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার সচেতন মহল।
পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন কফিল বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধ। কোনো বড় জোয়ার এলে বা আবহাওয়ার ভারি পূর্বাভাস পেলে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি বেড়ে যায় আমাদের মধ্যে। এই আতংক আমাদের সারাজীবনের সঙ্গী।
'ভেবেছিলাম স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে আমাদের সেই দুঃখটা ঘুচবে। কিন্তু বছর না যেতেই বেড়িবাঁধের এই হাল কেন, তার জবাব সংশ্লিষ্টরাই দিতে পারবেন। আমি কারও দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে চাই না। যেটা চাই তা হলো এটির যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ী একটা সমাধান।’
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যডভোকেট মাইনুল হোসেন সোহেল বলেন, ‘খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা ভয়াবহ। বড় জোয়ার এলেই প্লাবিত হবে গোটা ইউনিয়ন। এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় যে ভয়াবহ বন্যা ও প্রাণহানি হল সে বিষয়টা ইউনিয়নবাসীকে ভাবাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোপূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ ধানি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। উপকূলের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। দীর্ঘদিন এই বেড়িবাঁধ অরক্ষিত ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল একটি টেকসই বেড়িবাঁধ হবে। উল্লেখযোগ্য বরাদ্দও আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু যে কাজ দেখছি তাতে মনে হয় না কাঙ্ক্ষিত মান অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। আশা করি সংশ্লিষ্ট পক্ষ এসব অভিযোগের সুরাহা করবে এবং দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ভূমিকা রাখবে।’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন অবস্থা ঠেকাতে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধের অবশিষ্ট অংশ ঠেকাতে কাজ করছে। সাঙ্গু নদীর মোহনায় যে চর জেগে উঠেছে তা অপসারণ করা না হলে এই বাঁধের ভাঙন রোধ করা যাবে না। যেকোনো মুহূর্তে আমরা পুরো ইউনিয়নের সবাই বিলীন হয়ে যাব।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক দল খুব তাড়াতাড়ি পরিদর্শনে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এরপর এটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেলে বেড়িবাঁধ ভাঙন রোধ করা যাবে।’
পাউবোর চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।
তবে ওই দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা ওই চর। এটা ড্রেজিং করা না হলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরাই ভাল বলতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন শুধু বিনোদনের স্থান নয়, এটি প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এসব উদ্যানকে প্রকৃতির সংরক্ষণস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, কেউ এ সংক্রান্ত কার্যকর প্রস্তাব দিলে তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার অনুষ্ঠিত বার্ষিক বোটানিক্যাল কনফারেন্সের উদ্বোধন অধিবেশনে ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা বলেন, ‘দেশের পাহাড়ি ও উপকূলীয় বনসহ বিপন্ন বনাঞ্চল রক্ষায় সরকার কাজ করছে। বন সংরক্ষণে ট্যুরিজম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ দখলমুক্ত করে পুনরায় বনায়ন করতে হবে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বন উজাড় হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় বৃক্ষরোপণ নিশ্চিত করতে হবে।’
উপদেষ্টা জানান, শালবন পুনরুদ্ধারে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু দেশীয় গাছ রোপণ করলেই হবে না। এগুলো টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থাও জরুরি।
তিনি আরও জানান, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই কোনো বনায়ন প্রকল্পের কারণে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করা যাবে না।
আরও পড়ুন:পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকার ১৯টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্ষার আগে আপাতত ছয়টা খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হব এবং খুব শিগগিরই আরও চারটা খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ শুরু করব এবং এই বর্ষার আগেই বাকি আরও ৯টির কাজ শুরু হবে।
‘অর্থাৎ, এ বছরের মধ্যেই ১৯টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
রাজধানীর বাউনিয়ায় (পুলিশ স্টাফ কলেজের পেছনে) রবিবার ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসির আওতাধীন ছয়টি খাল দখল ও দূষণমুক্ত করে খালকেন্দ্রিক ব্লু নেটওয়ার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা বলেন, ‘এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হয়তো এই ১৯টি খালকেন্দ্রিক মাস্টার প্ল্যান করে ফেলা হবে। কোথায় কোথায় আমাদেরকে একদম সুনির্দিষ্ট আরও কিছু কাজ করতে হবে, সেটা ঠিক করে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে কাজগুলো ঠিক করে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থের সংস্থান করতে পারব বলে আশা করি।’
খালের পাড়ে চাষাবাদ করা যায় কি না তা নিয়ে একটা পরিকল্পনা আছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খালের পাড়গুলোতে সবুজ ফিরিয়ে আনতে পারি কি না আর খালের মধ্যে মাছ আনা যায় কি না, এটা আমরা দেখতে চাচ্ছি। সেটা কেমন করে ফিরিয়ে আনব, কেমন করে খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টাটা আমরা করব। এটা আমাদের মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক উদ্যোগ হলেও নগরবাসীকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
তিনি বলেন, ঢাকার খালগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র।
আজ দখল ও দূষণমুক্ত কার্যক্রমের জন্য উদ্বোধন হওয়া ছয়টি খাল হচ্ছে বাউনিয়া খাল, রূপনগর খাল, বেগুনবাড়ী খাল, মান্ডা খাল, কালুনগর খাল ও কড়াইল লেক। এ ছয় খালের মোট দৈর্ঘ্য ২৩.৬৬ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন:পরিবেশ রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে দেশে যাত্রা শুরু করল অ্যাপ্লায়েড ক্লাইমেট থিয়েটার-বাংলাদেশ তথা অ্যাক্ট বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থার।
রাজধানীর উত্তরায় রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় এর যাত্রা শুরু হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে থিয়েটারকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবে সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পারফর্মিং আর্টস একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার শক্তি রাখে।’
অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর আয়োজন করা হয় জলবায়ু সচেতনতাবিষয়ক সেমিনার। এতে বক্তব্য দেন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
বক্তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ার আর্টস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপিং সাস্টেইনেবিলিটি তথা ল্যান্ডসের চেয়ার এসথার ফেরি-কেনিংটন, এরগন থিয়েটার কোম্পানির কো-আর্টিস্টিক ডিরেক্টর রবিন লায়ন্স, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রধান ড. সাইদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহমান মৈশান।
সেমিনার শেষে মঞ্চস্থ হয় ‘ড্রট ইন দ্য ফেইট অফ ফারমার’ নাটক।
নজরুল সৈয়দের রচনা ও আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশনায় নাটকটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষকদের জীবনে আসা প্রতিকূলতা এবং তা মোকাবিলার সংগ্রাম তুলে ধরে।
নাটকের নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন বন্ধন সাহা। পরিবেশনায় ছিলেন রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
অ্যাক্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘থিয়েটারের শক্তি মানুষের আবেগকে আলোড়িত করার, উপলব্ধিকে চ্যালেঞ্জ করার এবং কর্মে উদ্বুদ্ধ করার মধ্যেই নিহিত।
‘অ্যাক্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই, যা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা তুলে ধরবে না; বরং মানুষকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে এবং তার জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।’
বৈশ্বিক ও স্থানীয় অংশীদারত্ব
অ্যাক্ট বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ার আর্টস নেটওয়ার্ক ও এরগন থিয়েটারের সহযোগিতায় কাজ করবে।
স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ, হেলথ সিকিউরিটি ফাউন্ডেশন ও কারিগরি সহযোগী বাইটকুইলের সঙ্গে কাজ করবে।
অ্যাক্ট বাংলাদেশের এ উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে জনগণকে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের জনবহুল রাজধানী ঢাকা রোববার সকাল ৯টার দিকে একিউআই স্কোর ২৭৫ নিয়ে বিশ্বব্যাপী দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
একিউআই সূচক অনুযায়ী, আজ রোববারের বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর, মিসরের কায়রো ও ভারতের কলকাতা যথাক্রমে ২৮৬, ২৫৬ ও ২০০ একিউআই স্কোর নিয়ে প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে।
যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকে তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেয়া হয়। ১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়।
এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।
আরও পড়ুন:জনবহুল রাজধানী ঢাকা শনিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে একিউআই স্কোর ২২২ নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
একিউআই সূচক অনুযায়ী, এদিনের বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আফগানিস্তানের কাবুল, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সারায়েভো ও মিসরের কায়রো যথাক্রমে ২২৮, ২১৫ ও ২১৪ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে।
যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকে তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়।
একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেয়া হয়।
১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়।
এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো-বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।
আরও পড়ুন:বনভূমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে শনিবার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয়, তা আমরা জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
‘জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্টের পর থেকে গাজীপুরে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বৃক্ষনিধন ও শিল্পকারখানার দূষণ বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেয়ার আগে সব দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের অধিনায়ক, ৬৩ বিজিবির অধিনায়ক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভার আগে অনুমোদিত এই প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত লাঠিটিলা বনের পাঁচ হাজার ৬৩১ একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গত বছরের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়।
কিন্তু জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ওই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একনেক সভায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
মন্তব্য