চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকায় একটি বইয়ের দোকানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এলাকার মসজিদ মার্কেটে ‘প্রতিভা লাইব্রেরি’ নামে একটি বইয়ের দোকানে শুক্রবার সকালে আগুন লাগে।
নন্দনকানন ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নন্দনকানন ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের একটা ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন পুরোপুরি নির্বাপিত হয়।’
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা জানান, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে সোমবার লাভলু মিয়াকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়।
ওই হামলায় বিএনপি কর্মী আলতাফ হোসেন, হিমেল হোসেন, সোহাগ মিয়া, তামিম হোসেন ও সেলিম মিয়া গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত লাভলু মিয়া ঘিওরের কুস্তা এলাকার মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কুয়েত প্রবাসী লাভলু ছুটিতে দেশে এসেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘিওর হাট-বাজার, ধলেশ্বরী নদীর বালুমহাল ও পরিবহন খাত দখল এবং আধিপত্য বিস্তারে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়। সে সময় আলতাফ হোসেন ও হিমেল হোসেন নামে বিএনপির দুই কর্মী গুরুতর আহত হন।
আহত দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু মিয়া তাদেরকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে যান। তিনি হাসপাতালের গেটের ভেতরে প্রবেশের পর প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর আহত লাভলু মিয়াকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময় রাস্তায়ই তার মৃত্যু হয়।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘিওর সদর বিএনপির সঙ্গে কুস্তা এলাকার বিএনপির দ্বন্দ্ব চলে আসছে। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েক দফা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দু’পক্ষকে মিলিয়ে দেন। তবে জেলার নেতাদের সামনে মিলে গেলেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।
ঘিওর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে মংডু শহরও পুরোপুরি দখলে নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চলমান যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় রোববার মংডুতে বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশনের (নাখাখা-৫) শেষ পোস্টটিও হাতছাড়া হয়ে গেছে সামরিক জান্তার।
আরাাকান আর্মির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এমনটা দাবি করে নাফ নদে আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যাতে নাফ নদ অতিক্রম করতে না পারে সেজন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশি জেলে নৌকাসহ কোনো ধরনের নৌযান নাফ নদের ওদিকে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।
ইউএনও বলেন, ‘টেকনাফ সংলগ্ন সীমান্তের ওপারে গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ-সংঘাত চলছে। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে আরাকান আর্মি টেকনাফ বর্ডার সংলগ্ন সেদেশের সীমান্ত এলাকাটি পুরোপুরি দখলে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) থেকে আরাকান আর্মি নাফ নদে সেদেশের জলসীমায় সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই আমরাও টেকনাফের ফিশিং ট্রলার মালিকদেরকে অবগত করেছি, নাফ নদ সীমান্ত এ মুহূর্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেখানে কোনো ট্রলার না যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জোরদার টহল রয়েছে।’
অন্যদিকে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গতকাল (রোববার) সকালে আরাকান আর্মি সফলভাবে আরাকান রাজ্যের মংডু অঞ্চলে অবস্থিত সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশন (নাখাখা-৫)-এর শেষ পোস্টটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
‘সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী সামরিক জান্তার সশস্ত্র সদস্যরা, যারা তাদের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে মিলে, যাদের মধ্যে ইসলামী চরমপন্থী সশস্ত্র দল আরএসও, আরএসএ এবং এআরএ রয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু সদস্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। তারা এখনও এলাকায় লুকিয়ে আছে। এই অস্ত্রধারীরা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘নাখাখা-৫ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসী জান্তার সদস্যসহ আরএসও, আরএসএ, এআরএ এবং অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপ নৌযান ব্যবহার করে নাফ নদ দিয়ে বাংলাদেশ-আরাকান সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছে।
‘অতএব, সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং জননিরাপত্তায় নাফ নদে (আরাকান অঞ্চল) ৮ ডিসেম্বর বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান চলাচল স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হলো।’
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের চট্টগ্রাম মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ বলেন, নাফ নদের মিয়ানমার অংশে আরাকান আর্মি নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি জেনেছি। বাংলাদেশ জলসীমানায় আমরা কাউকে ঢুকতে দেব না। সেটা যে পক্ষই হোক না কেন। জালিয়ার দ্বীপ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত নাফনদ-সাগরে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের জলসীমা অতিক্রম না করতে বলা হচ্ছে।’
রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান টেকনাফ-২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিকনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে যেকোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ ও নিরাপত্তায় নাফ নদের পাশাপাশি স্থলভাগে বিজিবির সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
টেকনাফে আতঙ্ক
এদিকে টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারীরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে রাখাইন মংডুতে চলমান যুদ্ধের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ওপারে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তারা।
রাখাইনের অধিকাংশ এলাকা আরাকান আর্মির দখলে ছিল। তবে মংডু শহরের কিছু অংশ জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেসব জায়গার দখল নিতে যুদ্ধ চলছিল দু’পক্ষে। ইতোমধ্যে সেটিও আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘মংডু শহরও এখন আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে শুনেছি। এছাড়া জেলেদের ওপার সীমান্তে না যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আমরাও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি যে আরাকান আর্মি মংডু শহরও দখলে নিয়েছে। তবে এ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। কেননা এবার আরাকান আর্মি সেদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জান্তা সরকারের সঙ্গে যুদ্ধের কথা বলে বিতাড়িত করার শঙ্কা রয়েছে। কেননা কোনো পক্ষই রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে স্বৃকিতি দেয়নি।’
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়কালে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৮ জন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯৫ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯৬ হাজার ৭০৬ জন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।
নওগাঁর মান্দায় ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাইভেটকারের দুই যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কে মান্দা উপজেলার সাহাপুকুর নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- জেলার সাপাহার উপজেলার চৌধুরীপাড়ার এনামুল হকের ছেলে আলভী রাব্বানী জিহান ও আ. জব্বারের ছেলে মাহিন আহমেদ সাগর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রাইভেটকারটি রাজশাহী থেকে নওগাঁর দিকে আসছিলো। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নওগাঁ থেকে রাজশাহীর দিকে যাওয়া দ্রুতগামী একটি ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে কারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে রাস্তার পাশে পিলারে আটকে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের দুই যাত্রী নিহত হন।
ওদিকে প্রাইভেটকারের পেছনে থাকা একটি বাসকেও ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় ড্রাম ট্রাকটি। তবে বাসে থাকা কোনো যাত্রী হতাহত হননি। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় মরদেহ উদ্ধার করা করেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলায় সোমবার পৃথক এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে ছত্রাজিতপুর বহালাবাড়ি এলাকায় বেলা আড়াইটার দিকে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সংষর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- শিবগঞ্জ উপজেলার কালিনগর লক্ষ্মীপুর এলাকার মিজানুর রহমান ও তার ছেলে সাগর হোসেন।
অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর আড্ডা সড়কের তেঁতুলতলা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় ভ্যানচালক বাবর আলী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া ও গোমস্তাপুর থানার ওসি খাইরুল বাসার সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এখন থেকে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে সোমবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও খুলনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
কোনো রাজনৈতিক দলকে বাড়তি সুযোগ না দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অনেক ভুয়া মামলা হচ্ছে। ভুয়া মামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এবং নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তেলবাজি বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে, কিন্তু অভিযানে এখনও আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় মব জাস্টিস হচ্ছে। অনেকে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যে কারণে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এটা বন্ধে জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পদোন্নতি পাওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ছিল না। অবৈধ উপায়ে পদ বাগিয়ে দফায় দফায় শুরু করেন নানামুখী দুর্নীতি। বিগত কয়েক বছর ধরেই খেয়াল-খুশিমতো বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। পদে পদে তার স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা।
আলোচ্য ব্যক্তিটি হলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিজ জেলাতেই ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করা খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম।
১৯৯৭ সালের ২৮ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন শেখ অহিদুল আলম। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পান তিনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদ থেকে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য ১৯৮৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক গেজেটে কিছু যোগ্যতার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ওই গেজেটের ৩২ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ দ্বিতীয় শ্রেণীর বিএড ডইগ্র অথবা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি থাকতে হবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চলতি বছরের আগস্ট মাসে শেখ অহিদুল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন।
তদন্তকালে শেখ অহিদুল আলম চাহিদা অনুযায়ী বিএড সার্টিফিকেট দিতে পারেননি। তার বদলে ২০০২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে পাস করা এমএড সার্টিফিকেট দাখিল করেন।
তবে বিএড ও এমএড ডিগ্রি সমমান নয় বলে জানিয়েছেন বাউবির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. মোহসীন উদ্দিন। গত ২৮ আগস্ট তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বিএড ডিগ্রির বিকল্প হিসেবে এমএড ডিগ্রিকে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে গত ২০ অক্টোবর বাউবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. হাবিবুল্যাহ মাহমুদ তদন্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বিএড ডিগ্রি অর্জনের জন্য শ্রেণীকক্ষে ৯০টি অনুশীলনী পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের দক্ষতা, শিক্ষার্থী মূল্যয়নের দক্ষতা, শ্রেণী ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের ধারণা অর্জনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
একইসঙ্গে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের প্রাক-যোগ্যতা অর্জনের জন্য পরিসংখ্যানগত ধারণা, শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা দর্শনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের কিছু বিষয় যুক্ত থাকে। কিন্তু এমএড ডিগ্রি প্রোগ্রামে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জনের কোনো সুযোগ নেই।
তবে বিএড ডিগ্রি নেই এরূপ শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টার পূর্ব-প্রস্তুতিমূলক চারটি কোর্স সম্পন্ন করে এমএড ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ ২০০০ সালে এমএড শিক্ষাক্রমে ছিল। এজন্য এমএড প্রোগ্রামকে বিএড-এর বিকল্প বিবেচনার সুযোগ নেই।
এছাড়া ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫৮ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিএড বা ডিপ্লোপা ইন এডুকেশন ডিগ্রি না থাকায় তাদের পদোন্নতি দেয়নি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তদন্তের সত্যতা জানিয়ে মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি গত ২৪ অক্টোবর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) চলে এসেছি। তাই তদন্তের সব কাজ শেষ করে আসতে পারিনি। বাকি কাজটুকু বর্তমান উপ-পরিচালক সম্পন্ন করবেন।’
তবে খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মানতে নারাজ। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এমএড ডিগ্রি থাকলে বিএড আছে কিনা এটা কোনো বিষয় না। আমাদের ব্যাচে ১৩৭ জনের একযোগে পদোন্নতি হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানে কতজনের বিএড ছিল না। আমার বিএড-এর থেকেও উচ্চতর এমএড ডিগ্রি তো আছেই। তাই আমার পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’
শিক্ষক বদলিতে স্বেচ্ছাচারিতা
শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল একযোগে ১৭ জন শিক্ষকে বদলি করেন। তবে পরবর্তীতে অনলাইনে শিক্ষকরা দেখতে পান যে তাদের বদলি আদেশে আন্তঃজেলা বদলির নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেন। একইসঙ্গে খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ওই শিক্ষকদের বদলির আদেশ বাতিলের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে তিনি নামমাত্র একটি সুপারিশ কমিটি করে তাদের বদলি বহাল রাখেন।
৩ জুন অধিদপ্তর বরাবর পাঠানো চিঠিতে অহিদুল আলম উল্লেখ করেন, যেহেতু অনলাইনে তাদের বদলির আদেশ অনুমোদন হয়ে গেছে, তাই এই আদেশ বহাল রাখা যায়।
ওইসব শিক্ষক জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ জারিকৃত পত্রে চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের বদলিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ১৭ জনের মধ্যে চারজন প্রধান শিক্ষককেও বদলি করা হয়েছিল। এটা তিনি করেছিলেন পছন্দের ব্যক্তিদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানানোর জন্য।
প্রতিবাদ করলেই শাস্তি
এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যারা শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের একজন বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়।
তিনি জানান, ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পিআরএল-এ যাওয়ার দিন তাকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে লঘুদণ্ড দিয়ে বেতনের এক ধাপ অবনমিত করা হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল আলমের সঙ্গে মতের মিল না হলেই বিপদে পড়তে হয়। তিনি ২০১২ সালে এক মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে ২৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন।
একই জেলায় ১৪ বছর
শেখ অহিদুল আলম ইতোপূর্বে খুলনা সদর থানার শিক্ষা অফিসার পদে তিন বছর, খুলনা বিভাগীয় অফিসে ছয় বছর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে তিন বছর কর্মরত ছিলনে।
২০২৩ সালের ২০ জুন আবারও খুলনাতে তার বদলি হয়। সে সুবাদে তিনি খুলনাতেই প্রায় ১৪ বছর কর্মরত রয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনাতেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডাটাবেইজের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, শেখ অহিদুল আলমের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের উল্লেখ রয়েছে। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া গেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের দৌলতপুরের কালিবাড়িতে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ অহিদুল আলম খুলনার বিএল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তার শ্বশুরবাড়ি দৌলতপুরের কালিবাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। স্থানীয় সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে আঁতাত করেই তিনি দীর্ঘদিন খুলনায় থাকার সুযোগ পেয়েছেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ অহিদুল আলম বলেন, ‘একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা নানারকম ষড়যন্ত্র করছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য